কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

আফ্রিকার উঠতি ড্রাগন ইথিওপিয়া এবং বাংলাদেশ

মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বাদল [প্রকাশিত : জনকণ্ঠ, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫]

আফ্রিকার উঠতি ড্রাগন ইথিওপিয়া এবং বাংলাদেশ

‘আফ্রিকার উঠতি ড্রাগন’- এই বিশেষণটি ইথিওপিয়ার জন্য গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে আলোচিত নাম। নানা বিশ্লেষণে দেখা যায়, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত দেশটি আজ আফ্রিকার অন্যতম সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগভিত্তিক উন্নয়ন মডেল বা SOE-driven growth তাদের অগ্রযাত্রাকে নতুন আলোচনার কেন্দ্রে তুলে এনেছে।

 

 

আফ্রিকার হৃদয়ে একসময় যে দেশকে দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো, আজ সেই ইথিওপিয়াকেই বলা হচ্ছে- আফ্রিকার সম্ভাবনাময় স্বপ্ন। আশার কথা অস্থিরতা, রাজনৈতিক অশান্তি, গৃহযুদ্ধের দীর্ঘ ইতিহাস মুছে দিয়ে দেশটি স্বপ্নপূরণের পথে এগোচ্ছে। যে কারণে আফ্রিকার ‘গেট-ওয়ে’ বলা হয় ইথিওপিয়াকে। প্রশ্ন হলো, ইথিওপিয়ার এই মডেল কীভাবে কাজ করছে? আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন- বাংলাদেশ কতটুকু শিখতে পারে এই অভিজ্ঞতা থেকে? আমাদের রাষ্ট্রীয় শিল্প ও প্রতিষ্ঠানগুলো কি নতুন চিন্তা ও কাঠামোর অধীনে আবারও দেশটির উন্নয়নের শক্তিতে পরিণত হতে পারে? 

 


গত মাসে ইথিওপিয়া ও কেনিয়ায় ব্যবসা সংক্রান্ত এক কাজে আমার যাওয়ার সুভাগ্য হয়েছিল। অতি সম্প্রতি আমার এক লেখায় সেখানকার সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার তুলনামূলণক কিছু চিত্র ওই লেখায় তুলে ধরছি। এ কথা সত্য যে, দেশ দুটি অর্থনীতির নানান সূচকে আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকলেও যোগাযোগ খাতের অগ্রগতি সত্যি অবাক করার মতো।  ইথিওপিয়া বিগত এক দশক ধরে আফ্রিকার অন্যতম বিকাশমান দেশটির অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মতো কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ইথিওপিয়ার প্রধান অবলম্বন হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাকশিল্প, টেক্সটাইল, লেদার ইন্ডাস্ট্রি এবং লাইট ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়ছে। আমার দেখা হাওয়াসা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ কয়েকটি শিল্পাঞ্চল বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে।

 

 

 

সড়ক, রেল, টেলিকম এবং বিদ্যুতে বড় ধরনের সরকারি বিনিয়োগ অর্থনীতিতে নতুন গতি এনে দিয়েছে। ১১ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশটিতে বিশাল অংশই তারুণ্যনির্ভর। বিশেষ করে তরুণদের প্রচেষ্টা দেশটির অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার সম্ভাবনা তৈরি করছে। শিল্পের রূপান্তর দেশটির আগামী দিনে লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক অবকাঠামোগত অগ্রগতি যে কাউকে অনুপ্রাণিত করবে। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দূরের গাদা (GADA) ইকোনমি পার্ক ও জোন ভিজিটে গিয়ে আমি সেসব অগ্রগতি ও সম্ভাবনা দেখে বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়েছি।
ইথিওপিয়ার অর্থনীতির উত্থানের প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০১৯- টানা প্রায় এক দশক ইথিওপিয়া ৮-১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখে। এমন প্রবৃদ্ধি আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত। তাদের উন্নয়ন কৌশল কয়েকটি নির্দিষ্ট স্তম্ভের ওপর দাঁড়ানো- 

 

 


বৃহৎ অবকাঠামো বিনিয়োগ: ইথিওপিয়া রেল, সড়ক, বিমানবন্দর ও শিল্পনগরী নির্মাণে বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আদ্দিস আবাবা- জিবুতি রেললাইন বা গ্র্যান্ড রেনেসাঁ ড্যাম-উভয়ই রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন মেগা প্রকল্প। এগুলো শুধু উৎপাদনশীল খাতকে উজ্জীবিত করেনি, বরং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণেও ভূমিকা রেখেছে।

 

 


রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পায়ন : সেখানে বিদ্যুৎ, টেলিকম, ব্যাংক, বিমান, শিপিংসহ অধিকাংশ কৌশলগত খাত এখনো রাষ্ট্রের হাতে। কিন্তু পরিচালনা সম্পূর্ণ পেশাদারীকরণের মাধ্যমে করা হয়। এই মডেলের সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ Ethiopian Airlines- যা আজ আফ্রিকার সবচেয়ে সফল বিমান সংস্থা- লাভজনক, দক্ষ, প্রফেশনাল এবং আন্তর্জাতিক রুটে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। দেশটির একমাত্র বিমান পরিবহন, যা সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানায় ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে আসছে। 

 


রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল: ইথিওপিয়া নিজস্ব বিনিয়োগে আধুনিক শিল্পাঞ্চল নির্মাণ করেছে। হাওয়াসা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক বিশ্বমানের অবকাঠামো ও শ্রমশক্তির সমন্বয়ে পোশাক ও হালকা শিল্প উৎপাদনে সারা বিশ্বের বড় ব্র্যান্ড আকৃষ্ট করেছে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সেখানে উৎপাদনের ভিত্তি তৈরি করে, বিনিয়োগকারীরা শুধু আসে এবং কাজ শুরু করে। রাষ্ট্রই এসব পার্ক নির্মাণ করে স্বল্পমূল্যে ভাড়া দিয়েছে।

 

 


দক্ষ পরিচালনা ও কর্পোরেট সংস্কৃতি: ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, ইথিও টেলিকম বা ইথিও ইলেকট্রিক পাওয়ার- প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট শৃঙ্খলা, পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিশ্বাসী। সরকার মালিক হলেও দৈনন্দিন পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সীমিত। ফলে নিয়োগ, নীতিনির্ধারণ, প্রকল্প বাছাই- সবই পেশাদার গাইডলাইনের ভিত্তিতে হয়।

 


দীর্ঘমেয়াদি ভিশন: ইথিওপিয়া ২০৩০ সালকে সামনে রেখে উৎপাদনশীলতা, শিল্পায়ন, রপ্তানি ও সেবাখাতে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ করেছে। ইথিওপিয়া দেশটিকে শিল্পায়িত জাতিতে রূপান্তর করার জন্য ‘ট্রান্সফরমেশন প্ল্যান’ চালু করেছে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগগুলো সেই পরিকল্পনার মূল চালিকা শক্তি। তারা বছরে বছরে নয়, ভবিষ্যতের ১৫-২০ বছর সামনে রেখে বিনিয়োগ করে।

 


বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব : প্রযুক্তি, দক্ষতা ও আর্থিক বিনিয়োগ-প্রায় সবক্ষেত্রেই দেশটি চীন, তুরস্ক, ইন্ডিয়া, ইউরোপ- বহু দেশের সঙ্গে প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে রাষ্ট্রীয় খাতকে শক্তিশালী করছে ইথিওপিয়া। ইথিওপিয়া দেখিয়েছে- রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ মানেই লোকসান নয়, কাজের নিয়ম-নীতি ও ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকলে এগুলো জাতীয় সম্পদে রূপ নিতে পারে।

 

 


পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সীমাবদ্ধতা : নিয়ন্ত্রণ রাখলেও সরকার দৈনন্দিন পরিচালনায় হস্তক্ষেপ কম করে। বোর্ডগুলো অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের দিয়ে গঠিত। ফলে সিদ্ধান্ত দ্রুত হয় এবং বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো দক্ষতা তৈরি হয়।

 


বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ে এগিয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান ক্রমে অদক্ষতার চাপে ভুগতে থাকে। আজ আমাদের রাষ্ট্রীয় খাতের বাস্তব চিত্র হলো-

 

 


১. রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেশি : নিয়োগ, বদলি, প্রকল্প বাস্তবায়ন- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দলীয় বা প্রশাসনিক প্রভাব হস্তক্ষেপ করে। ফলে পেশাদার ব্যবস্থাপনা স্থায়ী হতে পারে না।

 


২. প্রযুক্তিগত ব্যবধান ও পুরানো যন্ত্রপাতি: পাটকল, চিনিকল, রেল, ইস্পাত কারখানা- অনেক ক্ষেত্রেই যুগোত্তীর্ণ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে, গুণগতমান কমে।

 


৩. দীর্ঘমেয়াদি ভিশনের ঘাটতি : অনেক প্রতিষ্ঠান বছর বছর লোকসান করে, কিন্তু নতুন পরিকল্পনা আসে না।

 


ইথিওপিয়ার মতো স্বশাসিত বোর্ড নেই; জবাবদিহিও কম।

 


৪. সরকারি ভর্তুকি : লোকসানি প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হয়, যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টি করে। 


বাংলাদেশ একসময় দক্ষিণ এশিয়ার ‘রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ-নির্ভর’ দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা কমে আসে। আজ রাষ্ট্রীয় কারখানা, ব্যাংক, পরিবহন, পাটকল-বেশিরভাগই লোকসানি।

 


বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের সমস্যাগুলো-

 


১. রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্বল পরিচালনা : নিয়োগ, টেন্ডার, সিদ্ধান্ত- বেশিরভাগ জায়গায় রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে। ফলে পেশাদারিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 


২. প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকা : ইথিওপিয়ার মতো আধুনিকীকরণ বা রূপান্তরের চাপ এখানে তেমন নেই। বস্ত্র, লোহা-ইস্পাত, পাট, চিনি- বহু প্রতিষ্ঠানই যুগোত্তীর্ণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

 


৩. পরিকল্পনার ঘাটতি : দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসা পরিকল্পনা ও কর্পোরেট কাঠামো দুর্বল। স্বশাসন ও জবাবদিহিতার সুযোগ কম।

 


৪. রাষ্ট্রীয় সাহায্যের ওপর নির্ভরতা : লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো বছর বছর সরকারি অর্থে টিকে থাকে। ফলে দক্ষ হওয়ার প্রেরণা কমে যায়।

 


তবে সবক্ষেত্রই হতাশাজনক নয়। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান সাম্প্রতিক সংস্কার, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, রেল আধুনিকায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিটিসিএলের ডিজিটাল রূপান্তর, নতুন শিল্প পার্ক- এসবই ইথিওপীয় মডেলের মতো রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণের ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি করছে। 

 


আমার দৃষ্টিতে ইথিওপিয়া থেকে বাংলাদেশের শেখার ক্ষেত্র

 


কৌশলগত খাতে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় দক্ষতা : ইথিওপিয়া রাষ্ট্রীয় মালিকানা রেখে লাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। বাংলাদেশও টেলিকম, বিমান, বিদ্যুৎ, রেল, বন্দর- এই খাতগুলোতে কর্পোরেট সংস্কৃতি ও পেশাদার ম্যানেজমেন্ট আনতে পারে।

 


বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (BEZA)--এর ধারণা ইথিওপিয়ার মডেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাষ্ট্রই জমি ও অবকাঠামো তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিলে রপ্তানি আরও বিস্তৃত হতে পারে।

 


প্রযুক্তি ও ম্যানেজমেন্টে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব : ইথিওপিয়া প্রযুক্তিগত সক্ষমতা গড়তে চীনের ওপর নির্ভর করেছে। বাংলাদেশও ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ বাড়াতে পারে রাষ্ট্রীয় খাতে।

 


রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমিয়ে কর্পোরেট স্বাধীনতা : ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের পরিচালনা বোর্ড রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের জন্য পেশাদার বোর্ড ও স্বশাসিত কাঠামো জরুরি।

 


দীর্ঘমেয়াদি ভিশন : বাংলাদেশের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’- এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগগুলোকে শক্তিশালী করা গেলে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ বাড়বে।

 

 

বাংলাদেশের সামনে সম্ভাবনা


বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যেই বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। রপ্তানি, রেমিট্যান্স, কৃষি ও ভোক্তা বাজার বিশাল। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগগুলো যদি ইথিওপিয়ার মতো পরিবর্তন আনতে পারে, তাহলে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাওয়া সম্ভব-

 


১. শিল্পায়নের দ্বিতীয় ধাক্কা : রপ্তানিমুখী নতুন খাত যেমন ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যাল-এসবের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রাথমিক বিনিয়োগ পথ খুলে দিতে পারে। ২. অবকাঠামো বিপ্লব : রেল, নৌপথ, বিদ্যুৎ, লজিস্টিকস- রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দক্ষ করলেই উৎপাদন খরচ কমবে এবং বিনিয়োগ বাড়বে। ৩. আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড তৈরি : ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের মতো বাংলাদেশ বিমানও নতুন সুযোগ পেতে পারে।

 


আরও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। 

 


তবে এসব ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও কম নয়- দুর্নীতি, জবাবদিহিতার সংকট, দক্ষ জনশক্তির অভাব, স্বশাসনের ঘাটতি দ্রুত প্রযুক্তিগত রূপান্তর না করা, এসব না কাটলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ কখনোই লাভজনক হবে না।

 


ইথিওপিয়া দেখিয়েছে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ যদি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হয়, তবে তা দেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের প্রধান হাতিয়ার হতে পারে। বাংলাদেশেরও সেই সামর্থ্য রয়েছে। কেবল প্রয়োজন- রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আমি মনে করি, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগগুলোকে আধুনিক, স্বশাসিত ও ফলপ্রসূ করে গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশও অর্থনৈতিক নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে পারে। 

 


লেখক : শিল্প উদ্যোক্তা