আমার দেশ আমার অর্থনীতি
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। সূত্র : আমাদের সময়, ২০ মার্চ ২০২৫

এক দশক আগের ঘটনা। ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আয়োজিত ‘২৫তম ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক বিশ্ব কর্মশালা (১৬-২৬ মার্চ ২০১৫) অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটনে। সাঁইত্রিশটি দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ ও রেগুলেটর অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন প্রতিনিধিকে ইউএস-এসইসির সিনিয়র ও প্রভাবশালী কমিশনার, প্রখ্যাত মার্কিন অর্থনীতিবিদ, মাইকেল এস পাইওয়ার মধ্যাহ্নভোজ সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষে আমাকে (চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের এবং সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান), ভুটান ও করাচি স্টক এক্সচেঞ্জের সিইও অর্থাৎ সার্ক রিজিয়ন থেকে তিনজনকে সে ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। অন্যান্য রিজিওনের দু’একজন করে বিশিষ্ট প্রতিনিধি সেখানে যোগ দিয়েছিলেন।
নো লাঞ্চ ইজ ফ্রি। ভোজসভায় শুধু ভূরিভোজ নয়। আঞ্চলিক তথা নিজ নিজ দেশভিত্তিক উন্নয়ন অর্থনীতির হালহকিকত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা কার কোন পর্যায়ে তা নিয়ে মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ই ছিল প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সেই ভোজসভার অন্যতম মেন্যু। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে অগ্রসর হতে চাইছে, এগোচ্ছে। অন্যদের অবস্থাও জানা হলো। মাইকেল এস পাইওয়ার সবার কথা শুনে উপসংহারে যা বললেন তার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন অভীপ্সা শুধু অনিবার্য প্রত্যাশা উচ্চারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, তা অর্জনে উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনার, ত্যাগ-তিতিক্ষার, অর্জন-বর্জনের, সংস্কারের সাধনায় সাফল্য লাভ করতে হবে। প্রত্যেকেরই উচিত হবে নিজেদের আত্মশক্তি (ঝঃৎবহমঃয), অন্তর্নিহিত দুর্বলতা (ডবধশহবংং), সম্ভাবনা ও সুযোগ (ঙঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃু) এবং হুমকি (ঞযৎবধঃং) বা চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে শনাক্ত করে নিজস্ব সব শক্তি ও সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার এবং চিহ্নিত দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠায় ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মেধাবী ও কৌশলী পথ-পন্থা বের করা এবং তা বাস্তবায়নে রীতিমতো ঐক্যবদ্ধ সাধনা বা সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া।’
মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রয়াস-প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত শক্তি ও সম্ভাবনা শনাক্তকরণ যেমন জরুরি, তেমনি এর অন্তর্নিহিত দুর্বলতা, অসংগতি ও অপারগতার দিকটিও আরও বেশি সতর্কতার সঙ্গে বারবার পর্যালোচনাযোগ্য। কেননা অর্থনৈতিক উন্নয়নসাধন তথা স্বয়ম্ভরতা অর্জন শুধু ভাব-ভাবনার বিষয় হয়ে থাকলে এবং এ ব্যাপারে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যকতার উপলব্ধি যদি অবহেলা-অমনোযোগিতার হাতে বন্দি থাকে তাহলে স্বপ্ন দেখাই শুধু সার হবে, ভাব-ভাবনারা বাস্তবতার বাসর পাবে না।
বাংলাদেশে কয়েক বছর আগে থেকে চলে আসা ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনের মাধ্যমে একটি বিষয় সবার চিন্তা-চৈতন্যের চৌহদ্দিতে এসেছে যে, অবলীলায় আইন অমান্য করে, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে, আমাদের সম্ভাবনা ও সুযোগকে অপব্যয়-অপচয় করে দিব্বি আমরা আমাদের প্রিয় নগর ও প্রান্তরÑ সর্বত্র যাতায়াত ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে হলাহলপূর্ণ পরিবেশ রচনা করে চলেছি। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে মূল্যবান ও কারুকার্যসংবলিত আধুনিক সিগন্যাল বাতি বসানো আছে। ডিজিটাল পদ্ধতির এসব সিগন্যাল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই বেশি। বাস্তবে দেখা যায় এগুলোর প্রকৃত ব্যবহার একেবারে নেই। বিপুলসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ তাদের মান্ধাতা আমলের উপস্থিতি দিয়ে, সম্পূর্ণ অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে, ‘নিজের ব্যক্তিগত খেয়াল-খুশি ও বিচার’ মতো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে চলছে।
একদিকে ডিজিটাল সিগন্যাল লাইটও জ্বলছে, আবার তার বিপরীত বলয়ে ট্রাফিকের ম্যানুয়েল (ব্যক্তিগত) কসরতও চলছে। এ অব্যবস্থাপনায় শুধু ট্রাফিক পুলিশের নয়, সড়ক ব্যবহারকারী লাখ লাখ মানুষের সহস্র শ্রমঘণ্টা বিনষ্ট হচ্ছে। মহার্ঘ মূল্যে ক্রয় করা এবং সংস্থাপিত সিগন্যালিং সিস্টেমের ব্যবহারিক কার্যকারিতা না থাকলেও সেগুলো নিয়মিত জ্বলছে, ইন্ডিকেশন দিয়ে চলছে এবং সেগুলোর সংস্থাপন ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিশ্চয়ই বহন করতে হচ্ছে। এই মশহুর অপচয় ও অপব্যয় একটি মধ্যম আয়ের খায়েশধারী দেশের জন্য ব্যয়বহুল বালসুলভ ব্যবস্থা নয় কি? নিজেরা নিজেদের নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুসরণের ক্ষেত্রে এতটা উদাসীনতা ও দায়িত্বহীন হয়ে পড়েছি যে আমাদের প্রিয় ঢাকা মহানগরীর ‘অবাসযোগ্য শহর’ তালিকায় সব শেষের আগের ক্রমিকে জায়গা মিলেছে।
দেশের টেলিভিশন চ্যানেলে দেশি পণ্যের প্রচারের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা আছে, বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর ওপর হিসাব-কিতাব তদারকি বাবদ বাড়তি ব্যয়ও আছে, যা আলটিমেটলি ভোক্তার ওপর গিয়ে বর্তায়। অথচ অবাধে সম্প্রচারিত বিদেশি চ্যানেলগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে পণ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন, যা আমাদের দর্শক-শ্রোতারা শুধু দেখছেন না গিলছেনও। অথচ এই প্রচারের ওপর কোনো ট্যারিফ, শুল্ক বা ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থাপনা নেই। আপন ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির সম্মান-স্বীকৃতি ও অধিকার আদায়ে রক্তদানকারী এবং এমনকি নিজেদের ভাষার নামে যে দেশের নাম সেই দেশে একদিকে খোলা জানালায় বিদেশি অনুষ্ঠান, ভাষা ও সংস্কৃতির অবাধ অনুপ্রবেশ এবং তার ওপর অন্য অর্থনীতির পণ্যের অবাধ প্রচার দেশীয় ভাষা-সংস্কৃতি ও পণ্যের আত্মরক্ষা ও বিকাশ কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
একদিকে দেশীয় উদ্যোক্তারা ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছেন আর বিদেশি পণ্য প্রচারের ওপর ভ্যাট না থাকার ফলে সেসব সামগ্রী প্রতিযোগিতার বাজারে বিশেষ সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে আরও উদ্বেগের বিষয় এই যে এখানকার পণ্যের প্রচার বিজ্ঞাপন বিদেশে তৈরিতে এবং তাদের সেখান দিয়ে এখানে প্রচার করানোর নামে মহার্ঘ বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের সুযোগ বাড়ছে। এটি ‘সামান্য ক্ষতির’ উদাহরণ মনে হতে পারে, তবে এটি জাতীয় অর্থনৈতিক সার্বিক স্বার্থের দৃষ্টিতে অপঘাত। মধ্যম আয়ের দেশ অভিলাষী একটি দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আর্থিক ‘অন্তর্ভুক্তি’র দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু তা শুধু কথার কথায় কিংবা বিদেশে বিশেষ সেমিনারে স্বীকৃতি ও প্রশংসাপ্রাপ্তির মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে বিকশিত হতে পারে না। অন্তর্ভুক্তির দর্শনকে সার্বিকভাবে টেকসই ও বাস্তবায়নযোগ্য হতে হয়। প্রশাসনিক আর্থসামাজিক পরিবেশে, সংস্থায়, প্রতিষ্ঠানে, দেশজ সংস্কৃতিতেÑ সর্বত্র দল বা গোষ্ঠীভুক্তকরণের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিরোধীপক্ষকে বিচ্যুতকরণ ব্যবস্থাপনার বিবরে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি উন্নয়ন দর্শন যাতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়।
রাষ্ট্রের সেবা ও সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে (ক্ষেত্র, অঞ্চল ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি) বিশেষ প্রাধান্য এবং অন্যায়-অনিয়মে প্রতিকার-প্রতিবিধানের বেলায় পক্ষপাতিত্ব কিংবা অপারগতার মধ্যে অন্তর্ভুক্তির দর্শন বিকশিত হতে পারে না। বিনা বিনিয়োগে ও শ্রমে অবৈধ আয়-উপার্জনের অবারিত সুযোগে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হয়, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটার কারণে যে দুই-তিন গুণ ব্যয় বৃদ্ধি পায় তা তো যে কোনো বিবেচনায় ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিস প্রোডিউস’ না হয়েও ‘অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়’। নানা অস্থিরতায় উৎপাদন ব্যাহত, সরবরাহে বিঘ্ন, নানা দুর্ঘটনায়, দুর্নীতিতে, অস্বচ্ছতায় যে বিপুল অর্থক্ষরণ ঘটে তাতে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে যাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা কঠিন হচ্ছে।
দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীর সংখ্যা কমছে, সার্বিক দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, কিন্তু এ অবস্থার বিপরীতে বিপুল ব্যয়ে (বিদেশিসহ) সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ছাপানো নিম্নমানের (দায়িত্বশীলতার সঙ্গে যথা সম্পাদিত না হওয়ায় তথ্য-উপাত্ত-পাঠ্য ভুলভালে ভরা এবং নিম্নমানে মুদ্রিত) বই ধনী-দরিদ্র সব শিক্ষার্থীকে ‘বিনামূল্যে’ সরবরাহের যৌক্তিকতা প্রতীয়মান হয় না। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় কার্যকর মনোযোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ছাড়া পাবলিক ফান্ড থেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার সব শিক্ষকের পূর্ণ বেতন প্রদান করেও গুণগত শিক্ষাদানে জবাবদিহির আওতায় আনতে না পারাটা মূলত মানবসম্পদ উন্নয়নে অবহেলা ও অমনোযোগিতারই নামান্তর।
বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যাবহুল, স্বল্প কৃষিজমি, বেকারের ভারে ন্যুব্জ, অতি আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে শ্রমঘননির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠা, বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নকারী ও প্রযুক্তিবাহী বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু এ দেশে বিগত পাঁচ দশকে আসা বৈদেশিক বিনিয়োগের স্থিতিপত্র কষলে দেখা যায়, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ সূত্রে বৈদেশিক মুদ্রা ততটা আসেনি যতটা দেশি মুদ্রায় অর্জিত মুনাফা বরং বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে (যেমন- টেলিকম ও ধূমপান সেক্টরে) যাচ্ছে। লক্ষণীয় যে এ দুটি সেক্টরই রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। দেশে আসেনি বা বিকাশমান হয়নি তেমন কোনো শ্রমঘন শিল্প। বাংলাদেশের অদক্ষ শ্রমিকরা যখন অধিক অর্থ ব্যয় করে (বণিক বার্তায় প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন) স্বল্প মজুরিতে বিদেশ গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে মানবেতর জীবন যাপন করছে এবং দেশে শিক্ষিত বেকারের মিছিল যখন দ্রুত বাড়ছে, তখন এ দেশে স্টেট অব আর্ট-এ চালিত কতিপয় বিদেশি শিল্প (যেমন- সিমেন্ট, সিগারেট, টেলিকম, প্রসাধনী, আর্থিক ও শিপিং) গড়ে উঠছে আর গার্মেন্টসসহ প্রায় সব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ে বিদেশিদেরই মোটা বেতনে অধিক কর্মসংস্থান হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশিরা বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার বেতন, পারিশ্রমিক বাবদ নিয়ে যাচ্ছে (ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস, ২১ এপ্রিল ২০১৫)।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, দেশে রেমিট্যান্স আসছে অধিক অর্থ ব্যয় করে বিদেশে যাওয়া অদক্ষ শ্রমিকদের কাছ থেকে। সেকেন্ড হোম কিংবা মেধা পাচার হয়ে যাওয়া শিক্ষিত, পেশাজীবীদের কাছ থেকে অর্থনীতি তেমন কোনো প্রত্যাবাসন পায় না। তারা দেশি পুঁজি বা মুদ্রা বরং বিদেশে নিয়ে যান। আবার অন্যদিকে দেশে প্রত্যাবাসিত অর্থের টাকা বিনিয়োগ ছাড়া অলস হয়ে পড়ে থাকছে । অলস রিজার্ভের ‘প্রশান্তিবোধ’ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় সচেতনতায় শৈথিল্য আনে, ব্যাপক পরিমাণে কঠিন শর্তের বিদেশি ঋণ গ্রহণের আগ্রহ ও সুযোগ সৃষ্টি করে। এভাবে ঋণভারে জর্জরিত অনেক সম্ভাবনাময় অর্থনীতি পরবর্তীকালে বিপাকে পড়েছে, এ উদাহরণ আছে।
একটি বৃহৎ দেশ ও অর্থনীতির পেটের মধ্যে, বিরানব্বই শতাংশ উন্মুক্ত সীমান্ত পরিবেষ্টিত ছোট একটি দেশের সীমান্ত বাণিজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বাজারব্যবস্থাকে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করতেই পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশেষ করে বহির্বাণিজ্য ইনফরমাল ট্রেড আর অসমর্থিত বাণিজ্য বিনিময়-বিনিয়োগ-তাড়িত, শাসিত, শোষিত। এটা বাস্তবতা। যে কোনো স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের উন্নয়ন অভিমুখী অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য পদে পদে আত্মস্বার্থ সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। উৎসবের অর্থনীতির এক হিসাবে দেখা গেছে প্রতিবেশী দেশ থেকে বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শুধু প্রাণিসম্পদ আমদানি হলেও তার সিংহভাগ লেনদেন চলে হুন্ডি বা অসমর্থিত ব্যবস্থায়। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে অন্তর্ঘাতমূলক ব্যবস্থা হলো বাংলাদেশে আমদানিকৃত ওই সব পশুর কাঁচা চামড়া সীমান্ত বিনিময় বাণিজ্যে পাচার হয়ে যায়। নিজস্ব পরিবহনে হজযাত্রীদের পরিবহন করতে না পারায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হাতছাড়া হয়ে যায়। এ বিষয়গুলোর প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিকারমুখী সংস্কার ব্যবস্থাপনা অত্যাবশ্যক হবে মধ্যম আয়ের দেশের পথে হাঁটতে হলে।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : সাবেক সচিব ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক