আট মাসে ৩২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি
সূত্র : বণিক বার্তা, ০৫ মার্চ ২০২৫

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার বা ৩২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে পোশাক রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ডলারের, যা মোট রফতানির ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে মোট পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে পণ্য রফতানির অর্থমূল্য ছিল ২ হাজার ৯৮০ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ওই সময়ে পোশাক রফতানির অর্থমূল্য ছিল ২ হাজার ৪২১ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এ হিসাবে আট মাসে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত পোশাক কারখানাগুলোয় ব্যাহত হয় উৎপাদন। আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে অস্থিরতা ও অসন্তোষ দেখা দেয় শিল্প অধ্যুষিত এসব এলাকায়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে শিল্পাঞ্চলগুলোয় এ পরিস্থিতি অব্যাহত ছিল। তারপরও তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে সাড়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশের রফতানি খাত।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অর্থমূল্য বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, হোম টেক্সটাইল এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। দেশের মোট রফতানির ৮৯ দশমিক ৩১ শতাংশজুড়েই ছিল এসব পণ্য। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা পণ্য পোশাকের অংশ ছিল ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান আশাব্যঞ্জক হলেও তা শিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোর সম্পূর্ণ প্রতিফলন নয়। বিশেষ করে মূল্য ও ব্যয়ের চাপসহ বেশকিছু বিষয় বিবেচনা ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যেমন বাজারভিত্তিক কর্মদক্ষতা, পণ্য ও বাজার কেন্দ্রীভবন।
বাংলাদেশী পোশাকের বড় বাজার পশ্চিমা দেশগুলো। আর একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের (ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি এড়াতে শুধু চীনের ওপর নির্ভর না করে অন্য দেশ থেকেও পণ্য আমদানির মাধ্যমে উৎসে বৈচিত্র্যায়ণের কৌশল) প্রভাব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। সম্প্রতি দেশটির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্কারোপের পর মার্কিন পণ্যেও পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণা এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কানাডাকে অনুসরণ করে মেক্সিকো ও চীন একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর শুল্ক লড়াই, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে বাংলাদেশ থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে ৩৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ২০২৪ সালের একই সময়ে রফতানির অর্থমূল্য ছিল ৩৮৬ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এ হিসাবে গত ফেব্রুয়ারিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর এ চার মাসে ধারাবাহিকভাবে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি ছিল রফতানি খাতে।