কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বাংলাদেশ : দেশের ৩৩ জেলায় তাপপ্রবাহ চুয়াডাঙ্গায় ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই

মে মাসের শুরুতে দক্ষিণের জেলা চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। এছাড়া আরো ৩২টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তাপপ্রবাহ। [সূত্র : বণিক বার্তা, ০৯ মে ২০২৫]

বাংলাদেশ : দেশের ৩৩ জেলায় তাপপ্রবাহ চুয়াডাঙ্গায় ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই

মে মাসের শুরুতে দক্ষিণের জেলা চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। এছাড়া আরো ৩২টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তাপপ্রবাহ। ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এসব অঞ্চলে সূর্যের কিরণের তীব্রতা বেশি থাকা এবং উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে উত্তপ্ত বায়ু প্রবেশ করার ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

 

 

 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল দেশের ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা বিভাগ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজারহাট, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও রাজশাহীতে ৩৮, খুলনা ও বরিশালে ৩৮ দশমিক ২, মোংলায় ৩৮ দশমিক ৪, যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ও সাতক্ষীরায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে এ তাপমাত্রা আরো ১-২ ডিগ্রি বাড়তে পারে। তবে আগামীকাল ও রোববার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে।

 

 

 

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গতকাল চুয়াডাঙ্গায় ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ। পরে সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫১ শতাংশ। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল গত ২৮ মার্চ। সেদিন ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। মে মাসের শুরু থেকে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা বেড়ে চলছে। আবহাওয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়টির তথ্যমতে, ২ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ৩ মে ৩৫ দশমিক ৬, ৫ মে ৩৫ দশমিক ৬ ও ৭ মে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ৪ ও ৬ মে তাপমাত্রা কিছু কম ছিল।

 

 

 

চুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা ফিরোজ আলম বলেন, ‘‌সকাল থেকে তীব্র গরম পড়ছে। কোথাও থাকা যাচ্ছে না। কয়েক দিন আগেও গরম কম ছিল। এখন বেড়ে গেছে। বৃষ্টি না হলে মানুষের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।’

 

 

 

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌চুয়াডাঙ্গা ও আশপাশ এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। এ সময়ে চুয়াডাঙ্গায় সাধারণত তাপমাত্রা বেশিই থাকে। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গরম বাতাস প্রবেশ করায় তা আরো বেড়েছে। সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। রাতে ২৮-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকে। এছাড়া আর্দ্রতার কারণে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। ১৩ তারিখ পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে। আপাতত বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।’

 

 

 

সারা দেশে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। তবে এপ্রিল-মে মাসে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, এপ্রিল-মে মাস দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। আগে জুন-জুলাইয়ে তাপপ্রবাহ বেশি থাকত। এখন সেটি এপ্রিল-মে মাসে চলে এসেছে, যা অনেক বছর আগস্ট পর্যন্ত চলমান থাকে। আগামী কয়েক দিন এ তাপমাত্রা আরো বিস্তার লাভ করতে পারে। কিছু স্থানে ৩৬-৪০ ডিগ্রি চলমান থাকবে। এছাড়া সারা দেশে ৩০ ডিগ্রির ওপরে থাকবে।

 

 

 

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘‌সারা দেশেই এ সময়ে তাপমাত্রা বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, সাতক্ষীরা অঞ্চলে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে গরম বাতাস প্রবেশ করে। দক্ষিণ দিকের বাতাস অনুকূল থাকে না। আকাশ মেঘমুক্ত থাকা, সূর্যের কিরণের মাত্রা বেশি থাকার কারণে তাপপ্রবাহ হয়। এ সময়ে এ এলাকার জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যই এমন। এটি কয়েক দিন চলমান থাকবে। এরপর বজ্রসহ বৃষ্টি বা ভারি বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা কমবে। এ সময়ে জনজীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাসায় থাকতে হবে, যেখানে উপযুক্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া প্রচুর পানি পান করতে হবে। যতটুকু সম্ভব নিজেদের সুরক্ষিত রাখলে বিপর্যস্ততা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।’

 

 

অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ জনজীবন বিপর্যয়ের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌এখন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বেশি হওয়ায় তাপমাত্রা বেড়েছে। এ সময়ে মানুষের জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ে, স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হয়। যতটা সম্ভব ছায়াযুক্ত ও ঠাণ্ডা স্থানে থাকতে হবে। বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। কারণ পানিশূন্যতা দেখা দেয় বেশি।’

 

 

 

এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি মে মাসে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে কয়েক দফায় তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে দু-একটি তীব্র হওয়ার আশঙ্কা আছে। আবার কালবৈশাখীও আঘাত হানতে পারে কয়েকবার। প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।

 

 

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করছেন চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি রিফাত রহমান)