কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বাংলাদেশ কি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সক্ষমতা অর্জন করেছে?

ড. অজয় কান্তি মন্ডল [সূত্র : ইনকিলাব, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫]

বাংলাদেশ কি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সক্ষমতা অর্জন করেছে?

কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক জার্নালে আমাদের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশের কাহিনী বেশ দীর্ঘ এবং কিছুটা বিচিত্র অভিজ্ঞতাও হয়েছে বলা যায়। যদিও ভালো মানের কোনো আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের ব্যাপারটি সবসময় দীর্ঘ হয়। যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম সেটি বর্ণনার পূর্বে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশের ধাপগুলো একটু সংক্ষেপে বর্ণনা করতে চাই। যেকোন ভালোমানের জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য বেশ কিছু সিস্টেমেটিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়া লাগে।

 

 

যে পদ্ধতির প্রতিটি ধাপ বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং প্রতিটি ধাপে সাবমিটকৃত গবেষণাপত্রটি রিজেক্ট (ঐ জার্নালে প্রকাশের অনুপযোগী) হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। প্রথমে, একটি গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হলে গবেষণার ক্ষেত্র অনুযায়ী সেটি সাবমিটের জন্য নির্দিষ্ট জার্নাল খুঁজে বের করতে হয়। এটি গবেষণাপত্র প্রকাশের প্রথম ধাপ এবং ধাপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সঠিক জার্নাল খুঁজে সেখানে গবেষণাপত্র সাবমিট করতে না পারলে প্রথম ধাপেই গবেষণাপত্রটি রিজেক্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এজন্য জার্নাল খুঁজে বের করার বিষয়টি মোটামুটি গুরুত্ব বহন করে। প্রতিটি জার্নালের নির্দিষ্ট কিছু ‘এইম’স এন্ড স্কোপ’ থাকে। যেখানে ঐ জার্নালে কী ধরনের গবেষণা প্রকাশ করে সেগুলো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকে, কোন গবেষণাপত্র জার্নালে সাবমিট করতে গেলে এজন্য গবেষণাপত্রের কনটেন্ট অনুয়ায়ী ঐ জার্নালের ‘এইম’স এন্ড স্কোপ’ জেনে নিয়ে তারপর সেখানে সাবমিট করতে হয়।

 

 

তবে জার্নাল সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে আরও একটা বিষয় আছে। জার্নালটি ওপেন এক্সেস কিনা সেটি জানার প্রয়োজন আছে। সচারাচার জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের ধরন অনুযায়ী ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন কিছু জার্নাল আছে ওপেন এক্সেস, কিছু সাবস্ক্রিপশন এবং কিছু হাইব্রিড জার্নাল। ওপেন এক্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র পড়তে গেলে কিংবা ডাউনলোড করতে গেলে কোনো ফি লাগে না। অর্থাৎ এই ধরনের জার্নালে প্রকাশিত যেকোন গবেষণাপত্র বিশ্বের যেকেউ যে কয়েকবার ইচ্ছা বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারবেন। কিন্তু এ ধরনের জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য ‘আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ’ নামে একটা মোটা অঙ্কের অর্থ জার্নালকে দিতে হয়। এই ‘আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ’ জার্নালের ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিন্ন হয়।

 

 

 মোটা অঙ্কের অর্থ বলার পেছনে কারণ আছে। কেননা, অধিকাংশ জার্নালে এই ‘আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ’ থাকে ইউএস ডলারের অঙ্কে। এই রেঞ্জ মোটামুটি কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। ওপেন এক্সেস জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশিত করতে গেলে গবেষককে ঐ নির্দিষ্ট অঙ্কের ‘আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ’ পরিশোধ করতে হয়। তবে সাবক্রিপশন জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ’ লাগে না। কিন্তু কেউ অদি গবেষণাপত্রটি পড়তে কিংবা ডাউনলোড করতে চায় তাহলে তাকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে গবেষণাপত্র ডাউনলোড করা লাগে। সেটাও মোটামুটি ভালো অঙ্কের অর্থ এবং জার্নাল থেকে জার্নাল ভিন্ন হয়। হাইব্রিড জার্নাল গবেষকদের উভয়ই সুবিধা দিয়ে থাকে। অর্থাৎ কেউ চাইলে হাইব্রিড জার্নালে ‘আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ’ দিয়ে অথবা না দিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারেন। সেক্ষেত্রেও ‘আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ’ দিয়ে ওপেন এক্সেস সুবিধা নিলে সেই গবেষণাপত্রটি অন্যরা বিনামূল্যে পড়া কিংবা ডাইউনলোড করতে পারেন। আর সাবক্রিপশন অপশনে করলে এই সুবিধা থাকবে না।

 
 

এখন আসি ‘আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ’ দিয়ে ওপেন এক্সেস জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের সুবিধা নিয়ে। যেহেতু ওপেন এক্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রসমূহ বিশ্বের যেকোন প্রান্তের যেকেউ যত ইচ্ছা ততবার বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারে বা পড়তে পারে এজন্য এসকল গবেষণাপত্রের পাঠক তুলনামূলক সাবস্ক্রিপশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অপেক্ষা বেশি হবে। এজন্য ঐ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্রের সাইটেশন সংখ্যা বেশি হবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রকাশিত জার্নালের সাইন্টিফিক কনটেন্টের যথেষ্ট ইনোভেশন থাকতে হবে। সাইটেশনের অর্থ প্রকাশিত গবেষণা থেকে অন্য কেউ কোনো ধারণা নিলে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিকে একনলেজ করা বা ঐ কাজের স্বীকৃতি দেওয়া।

 

 

তবে সাবস্ক্রিপশন জার্নালের সাইটেশন যে বাড়বে না ঠিক তেমনটা নয়। আমাদের মতো গরিব দেশে সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে গবেষণাপত্র ডাউনলোড করা লাগলেও বিশ্বের বহু দেশের বহু প্রতিষ্ঠান ঐসব জার্নালের সাবস্ক্রিপশন কিনে নিয়েছে। ফলে সেসব প্রতিষ্ঠান অনায়াসেই সাবস্ক্রিপশন জার্নাল থেকেও গবেষণাপত্র ডাউনলোড করতে পারে। বিষয়টি আর একটু সহজ করে বললে এমনটি দাঁড়ায়, বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য বেশ কিছু প্রকাশনা সংস্থা আছে। এসব প্রকাশনা সংস্থাকে সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে অনেক দেশের অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফুল এক্সেস নিয়েছে, যাতে করে ঐ প্রতিষ্ঠানের যেকেউ সহজেই যেকোন ধরনের গবেষণাপত্র সহজে ডাউনলোড করতে বা পড়তে পারে। চীনের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুবিধা আছে। পিএইচডি চলাকালীন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যে গিয়ে যেকোন জার্নালে সহজে যেকোন গবেষণাপত্র আমরা দেদারছে ডাউনলোড করতাম।

 

 

তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সত্যিকার অর্থেই একটি ব্যয়বহুল বিষয়। যেদেশ এর পিছনে যত বেশি ব্যয় করে, তারা তত উন্নত। একটি গবেষণার কাজ সম্পাদন শেষে যখন গবেষণা লব্ধ ফলাফল চূড়ান্তভাবে লিপিবদ্ধের বিষয়টি আসে তখন সেই ফলাফলকে সাইন্টিফিক জার্নালে প্রকাশের বিষয় আসে। এই জার্নালগুলো বিভিন্ন আঙ্গিকে র‌্যাঙ্কিং করা হয়। তারমধ্যে ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর, সাইটস্কোর, জার্নালের কোয়ারটাইল (Q1/Q2/Q3/Q4) ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। তবে Q1 এর একটি ওপেন এক্সেস জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে গেলে কম করে হলেও ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা দরকার হয়। আর আমরা গবেষণার জন্য খুব কম ব্যক্তিই বছরে ৫ লক্ষ টাকা সরকার থেকে বরাদ্দ পাই। তার অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় যে, আমাদের জন্য আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ দিয়ে ওপেন এক্সেস জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করার মতো সক্ষমতা আমাদের দেশের খুব কম গবেষকের আছে। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য জার্নালগুলোর প্রকাশনা সংস্থা এ ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে।

 

 

এখন আমাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশের সময়ে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি সেটি বলার চেষ্টা করি। গবেষণাপত্রটি যে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সেটি মূলত ওপেন এক্সেস। অর্থাৎ আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ দিয়ে জার্নালটিতে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। জার্নালটিতে প্রতিটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে ট্যাক্স বাদে ৩৪৭০ ইউএস ডলার আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ দিতে হবে। ট্যাক্স যোগ হলে এই চার্জ ৪০০০ ইউএস ডলার অতিক্রম করবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। যাইহোক, মন্দের ভালো আমাদের দেশের গবেষকদের এই চার্জ দেওয়া লাগে না। বাংলাদেশ এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এই সুবিধা আমাদের দেশের গবেষকগণ পেয়ে থাকেন।

 

 

 

কিছু ওপেন এক্সেস জার্নাল স্বল্পোন্নত দেশের জন্য সামান্য চার্জ আরোপ করলেও বেশিরভাগ জার্নাল শতভাগ ওয়েভার দিয়ে থাকে। তবে গবেষণাপত্রের কোনো অথর স্বল্পোন্নত দেশের বাইরের হলে সেখানে আর এই সুবিধা থাকে না। প্রতিটি গবেষণাপত্র যখন প্রথমে জার্নালে সাবমিট করা হয় তখন এই আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জের ব্যাপারটি ডিল করতে হয়। স্বল্পোন্নত দেশের ভিতরে পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাবমিশন সিস্টেম থেকে শতভাগ ওয়েভার দিয়ে দেয়। তবে গবেষণাপত্রটি ঐ জার্নালে প্রকাশের জন্য গৃহীত হওয়ার পরে আবারো আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জের বিষয়টি সামনে আসে। চূড়ান্ত পর্যায়ে মূলত জার্নালের সাথে প্রকাশের একটা এগ্রিমেন্ট বা চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের সময় আসে। তখনো স্বল্পোন্নত দেশের আওতায় হওয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ শূন্য দেখায়। এটা আমাদের জন্য একটা সুবিধা বলা যায়। যদিও সুবিধাটি মূলত গরিব দেশের জনগণ হওয়ার শর্তে পেয়ে থাকি।

 

 

তারপরেও আমি বলব, আমাদের দেশের জন্য এটি একটি আশীর্বাদ। এখন আমরা যখন গবেষণাপত্রটি প্রাথমিক পর্যায়ে জার্নালে সাবমিট করেছিলাম তখন আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জের উপর শতভাগ ওয়েভার দেওয়া হয়েছিল। সাবমিট করার পর পিয়ার রিভিউ প্রসেস অতিক্রম করে অবশেষে গবেষণাপত্রটি যখন ঐ জার্নালে চূড়ান্তভাবে প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে, তন্মধ্যে প্রায় আড়াই মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। যখন জার্নালের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের বিষয়টি আসল তখন দেখাচ্ছে আশিভাগ আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ মওকুফ করা হয়েছে এবং বাকি বিশ ভাগ আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ আমাদের দিতে হবে। অর্থাৎ প্রায় ৭০০ ইউএস ডলার যেটা দেশি টাকায় ৮৬,০০০ টাকার মতো। মজার বিষয়, গবেষণাপত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত গবেষণার জন্য আমাদের বরাদ্দ ছিল দেড় লক্ষ টাকার মতো। যেটি গবেষণার জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ক্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না।

যাইহোক, হঠাৎ শতভাগ ওয়েভারের যায়গায় কেন বিশ ভাগ চার্জ দিতে হবে বুঝতে চেষ্টা করলাম এবং জার্নালটির ওপেন এক্সেস পলিসির বিষয়টি একটু বিস্তারিত পড়লাম। দেখলাম বাংলাদেশের নাম নি¤œমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় চলে এসেছে। পলিসি অনুযায়ী নি¤œমধ্যম আয়ের দেশের আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ বিশ ভাগ দিতে হবে। আমরা ওই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে লাগলাম। ধার্যকৃত বিশ ভাগ আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ আমাদের পক্ষে কোনভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য এডিটরকে লিখলাম এবং আমাদের সমস্যাটি ওনাকে বুঝিয়ে বললাম। এডিটর আমাদের উপর দয়া করলেন। অর্থাৎ অবেশেষে আমাদের গবেষণাপত্রটি শতভাগ ওয়েভার দিয়েই প্রকাশ করল। এক্ষেত্রে যদি এডিটর সদয় না হতেন তা হলে আমাদের গবেষণাপত্রটি উক্ত জার্নাল থেকে উইথড্রো করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় ছিল না।

 



তবে দেশ উন্নয়নশীল এর আওতায় আসলে বৈশ্বিক অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অগ্রাধিকারমূলক ও শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, তা আর পাবে না। এলডিসি হিসেবে দাতা দেশগুলো থেকে যে সহজ শর্তে ঋণ পায়, তা বন্ধ হবে। প্রযুক্তি খাতে উন্নত দেশের প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের প্রদত্ত বিভিন্ন সহায়তা ও প্রণোদনা প্রদান বন্ধ হবে। ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ কর্তৃক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য প্রবর্তিত এলডিসি ফান্ড থেকে আর সহায়তা পাবে না। ওষুধ খাতে বড় একটি প্রভাব পড়বে। ট্রেড রিলেটেড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস চুক্তি অনুসারে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ক্রান্তিকালীন সুবিধা পাবে।

 

 

এতে বাংলাদেশ ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব কেনা ছাড়াই ওষুধের ফর্মুলা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশকে প্রতিটি ওষুধ উৎপাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ফর্মুলার মেধাস্বত্ব কিনে নিতে হবে। যার ফলে পেটেন্ট, প্রযুক্তি এবং ফার্মাসিউটিক্যালস রাইট আমদানির জন্য উচ্চ খরচ হবে। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে বহুগুণ। এর প্রভাব পড়বে খুচরা বাজারে। উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত বর্ধিত খরচ এবং কঠোর মেধা সম্পত্তি আইন মেনে চলতে হবে। সব ধরনের পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার, বই, গবেষণাপত্রের ফ্রি মুদ্রণ এবং ফ্রি মেধাস্বত্ব ব্যবহার বন্ধের বাধ্যবাধকতা আসবে। যেকোনো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির জন্য বিধিবদ্ধ খরচ বাড়বে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাইকা, এডিবি এবং অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় দাতাদের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে রেয়াতযোগ্য ঋণ এবং অনুদানের প্রবেশাধিকার হ্রাস পাবে, যা দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ও সুদের হার বাড়াবে। দাতারা অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশকে অগ্রাধিকার দেবে বলে অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্সের সম্ভাব্যতা হ্রাস পাবে।

 

 

যদি এলডিসি থেকে উত্তরণ হয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা অব্যাহত রাখে এবং সে ধারাবহিকতায় উন্নত দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেজন্য মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে হবে। প্রযুক্তি খাত, ওষুধ খাতসহ বিভিন্ন শিল্পে উদ্ভাবনের জায়গায় যাওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে বেকারত্ব যথাসম্ভব দূর করতে হবে।

 

 

 

 

 

 গবেষণা ও উদ্ভবনে ব্যাপক বিনিয়োগ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা-উদ্ভাবন দিয়ে শিল্পখাতে গবেষণাফলের প্রয়োগ করতে হবে। প্রযুক্তি-আইটি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদেশে দক্ষ শ্রমশক্তি প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে। রপ্তানি পণ্যে উচ্চমূল্য সংযোজন করতে মান ও ডিজাইনে ব্যাপক উন্নতি করতে হবে। উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ইকোসিস্টেম স্টার্টআপ ফান্ডিং ও মেন্টরশিপ সংস্কৃতি চালু করতে হবে। প্রকৃত প্রস্তুতি না থাকলে, লাভের তুলনায় লোকসান অনেক বেশি হলে প্রয়োজনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দিতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিষয়টি যাতে সস্তা ও আবেগধর্মী না হয়ে আর্থিক ও মেধাস্বত্ব সুরক্ষার পরে হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। সর্বোপরি লাভ-ক্ষতির নিখুঁত হিসাব কষে সামনে এগোনই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।