কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে পরিবেশ দূষণ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি

ইমার্জিং পলিউট্যান্ট (উদীয়মান দূষক) উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ইমার্জিং পলিউট্যান্ট মূলত প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট রাসায়নিক, যা সাধারণত নিয়ন্ত্রণ বা পর্যবেক্ষণ করা হয় না।

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে পরিবেশ দূষণ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি

ইমার্জিং পলিউট্যান্ট (উদীয়মান দূষক) উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ইমার্জিং পলিউট্যান্ট মূলত প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট রাসায়নিক, যা সাধারণত নিয়ন্ত্রণ বা পর্যবেক্ষণ করা হয় না। যদিও পরিবেশে খুব সামান্য পরিমাণে এদের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তাদের প্রাণীদেহে ক্রমান্বয়ে জমা হওয়ার সম্ভাবনা, স্থায়িত্ব ও বিষাক্ততার কারণে তারা ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। আজকাল ইমার্জিং পলিউট্যান্ট কেবল বর্জ্য পানি শোধনাগার এবং শহরের কঠিন বর্জ্যগুলোয়ই নয় বরং বায়ু, মাটি ও জলজ পরিবেশে আশঙ্কাজনক পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। এ ইমার্জিং পলিউট্যান্টের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, কীটনাশক, মাইক্রোপ্লাস্টিক, কারখানার রাসায়নিক এবং প্রসাধনীর মতো উপকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে এক ধরনের ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে বা তাদের বৃদ্ধিকে বাধা দিয়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসা করতে প্রাণীদেহে ব্যবহৃত হয়। প্রসাধনী সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্য, যেমন সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, পারফিউম, ফেসওয়াশ ইত্যাদি। এসব প্রসাধনীতে সুগন্ধি, প্রিজারভেটিভ ও মাইক্রোবেডের মতো উপাদান থাকে। কীটনাশক হলো আগাছা, ছত্রাক ও ইঁদুরসহ কীটপতঙ্গ মারা বা নিয়ন্ত্রণ করার কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক। এটিকে সাধারণত ফসল রক্ষার জন্য কৃষিতে ব্যবহার করা হয়। শিল্প রাসায়নিক মূলত বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়, যেমন রাসায়নিক দ্রাবক, ভারী ধাতু (যেমন সিসা, ক্যাডমিয়াম ও পারদ), শিখা প্রতিরোধক ইত্যাদি। মাইক্রোপ্লাস্টিক হচ্ছে প্লাস্টিকের ছোট ছোট কণা, যেগুলোর আকার সাধারণত ৫ মিমি থেকে ছোট হয়। এগুলো সাধারণত বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্য, যেমন বোতল, ব্যাগ এবং অন্যান্য প্যাকেজিং উপকরণের বিকৃতি বা ক্ষয় থেকে উৎপন্ন হয়। ক্রিম ও ফেসওয়াশের মতো পণ্যে ব্যবহৃত মাইক্রোফাইবার ও টেক্সটাইল থেকে ফাইবার মাইক্রোপ্লাস্টিক সরাসরি পরিবেশে প্রবেশ করে।

 

বাংলাদেশে ইমার্জিং পলিউট্যান্ট প্রাথমিকভাবে ফার্মাসিউটিক্যালস, শিল্প-কারখানা এবং গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে সৃষ্টি হয়। ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও রাসায়নিক বর্জ্য জলাশয়ে প্রবেশ করছে। টেক্সটাইল ও চামড়া প্রক্রিয়াকরণের মতো শিল্প খাতগুলো বিভিন্ন ধরনের ভারী ধাতু, রঞ্জক ও মাইক্রোপ্লাস্টিক ধারণকারী দূষিত পানি নিষ্কাশন করে জলাশয় দূষিত করছে। অন্যদিকে কৃষিতে কীটনাশক ও সারের অত্যধিক ব্যবহার নদী ও ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করছে। উপরন্তু অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গৃহস্থালির বর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশে শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও কৃষি সম্প্রসারণ দ্রুতগতিতে অগ্রসর হওয়ার ফলে পরিবেশে এ দূষণকারী পদার্থের উপস্থিতি ত্বরান্বিত হয়েছে।

 

বাংলাদেশের নদী-খালগুলো প্রায়ই গৃহস্থালির কাজে, কৃষিজমিতে সেচ ও মাছ চাষের জন্য ব্যবহার হয়। এ জলাশয়গুলো অ্যান্টিবায়োটিক, কীটনাশক, ভারী ধাতু ও মাইক্রোপ্লাস্টিক দ্বারা দূষিত। দূষিত জলাশয়ে মাছ ও অন্যান্য জলজ জীব তাদের টিস্যুতে ভারী ধাতু, কীটনাশক ও মাইক্রোপ্লাস্টিকের মতো ইমার্জিং পলিউট্যান্ট জমা করতে পারে। এসব দূষিত মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার ফলে ক্রমান্বয়ে মানবদেহে বিষাক্ত পদার্থগুলো প্রবেশ ও জমা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া দূষিত পানি দিয়ে সেচ দেয়া কৃষিজ পণ্যও একই ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। শহরাঞ্চলে বায়ুর মাধ্যমে মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে, যা শ্বাসকষ্ট তৈরি করে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য। এছাড়া শিল্প এলাকায় দূষিত মাটি ও পানির সংস্পর্শে এলে কৃষক, মৎস্যজীবী ও আশপাশের মানুষের শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ে।

 

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দেশের অধিকাংশ জনগণ এখনো উন্নত স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসতে পারছে না, ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপুষ্টি, সংক্রামক রোগ এবং বাতাস ও পানি দূষণের কারণে জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এসব সমস্যার প্রতি বেশি সংবেদনশীল। অনুন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব এবং সঠিক তথ্যের অভাবে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইমার্জিং পলিউট্যান্টের ব্যাপক উপস্থিতি জনগণের জীবনমানকে হ্রাস করছে এবং মৃত্যুহার আরো বাড়াচ্ছে।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের হাইড্রোবায়োজিওকেমিস্ট্রি ও পলিউশন কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের নদী, খাল, বিল ও জলাশয়গুলো ইমার্জিং পলিউট্যান্ট দ্বারা দূষিত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে পরিবেশে এর অবশিষ্টাংশ পাওয়া যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এ দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে মানুষ ও পশুর চিকিৎসা বর্জ্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, ক্লিন্ডামাইসিনসহ অনেকগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ নদীর পানিতে পাওয়া গেছে, যার মধ্যে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও ক্ল্যারিথ্রোমাইসিনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল। এছাড়া ডিটারজেন্টের অবশিষ্টাংশ এবং ফ্লুরোসেন্স হোয়াইটিং এজেন্ট নামক এক ধরনের রাসায়নিকও নদীর পানিতে পাওয়া গেছে, যা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। এছাড়া এটি ত্বকে একজিমা, অ্যালার্জি ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। ফ্লুরোসেন্স হোয়াইটেনিং এজেন্ট একটি জনপ্রিয় উজ্জ্বলকারী, যা উজ্জ্বলতা বাড়াতে বাণিজ্যিক ডিটারজেন্টে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শিল্প অঞ্চলের কাছাকাছি নদী-নালা ও জলাশয়গুলোয় ভারী ধাতুর মাত্রা অনেক বেশি। এসব জলাশয়ে বিভিন্ন কীটনাশক যেমন অর্গানোফসফেট, কার্বামেট ও অর্গানোক্লোরিন পাওয়া গেছে, যা সেচকাজে ব্যবহৃত কৃষিজমির কাছাকাছি জলাশয়গুলোয়ও পাওয়া যায়। এছাড়া সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোয় দেখা গেছে যে লবণ, চিনি, চা পাতা, প্যাকেটজাত দুধ এমনকি আটাতেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী, খাল ও বিলেও ব্যাপক পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। মিঠা পানির জলাশয় থেকে সংগ্রহ করা পানি ও পলির নমুনাগুলোয় মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ পাওয়া গেছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মাছের মাংস ও অন্ত্রেও মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা হচ্ছে, যা মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো সাধারণত শহরের বর্জ্য পানি, শিল্প-কারখানার বর্জ্য ও কৃষিজমির পানি থেকে নদীতে প্রবেশ করে। ল্যান্ডফিলিং সাইটগুলো, যেখানে প্লাস্টিকের বর্জ্য জমা হয়, মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের একটি প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল ও প্যাকেজিংয়ের মতো পণ্যগুলো ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়, যা মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়। গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে টেক্সটাইল শিল্পের বর্জ্য শোধনাগারগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। এছাড়া সীমান্তবর্তী নদীগুলো থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ ঘটে। এসব দূষণ পানির গুণগত মান ও জলজ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ইমার্জিং পলিউট্যান্ট বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে এবং ধীরে ধীরে মানবদেহে জমা হতে পারে, যা স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বৃদ্ধি। খাবার, পানি ও পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিকাশে অবদান রাখে। যখন ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের কম মাত্রার সংস্পর্শে আসে, তখন তারা প্রতিরোধের উপায় তৈরি করতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের কারণে সংক্রমণের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ও অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এ সমস্যা আরো খারাপ হচ্ছে। ফলে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়, চিকিৎসার খরচ বাড়ে এবং রোগীদের দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকতে হয়। মাইক্রোপ্লাস্টিকও বাংলাদেশের পরিবেশে একটি বড় বিপদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোয় বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে, যেমন প্যাথলেটস, বিসফেনল এ, পলিভিনাইল ক্লোরাইড, যেগুলো শরীরের হরমোনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, শারীরিক বৃদ্ধি বিলম্ব এবং ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগ হতে পারে। এছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রণ যেমন প্লাস্টিকাইজার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্ট্যাবিলাইজার ও রঙ ব্যবহার হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পলিস্টাইরিন মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এগুলো কিডনির কাজকে ব্যাহত করে, মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্ষতি করে এবং শরীরে প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, কোষের ক্ষতি এবং সাইটোটক্সিসিটি ঘটায়। কিছু গবেষণায় ফুসফুসের ক্যান্সারের রোগীদের ফুসফুসের টিস্যুতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ফাইবার পাওয়া গেছে। এছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো তাদের পৃষ্ঠে নিকেল, ক্যাডমিয়াম, সিসা, তামা ও টাইটানিয়ামের মতো ভারী ধাতু শোষণ করে, যা মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ভারী ধাতুগুলোর মধ্যে যেমন ক্যাডমিয়াম, সিসা ও পারদ অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এগুলো মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া এ ধাতুগুলোর নিউরোটক্সিক প্রভাব রয়েছে, যা বিশেষ করে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে ব্যাহত করে। এর ফলে শিশুদের মধ্যে জ্ঞানীয় সমস্যা, বিকাশে বিলম্ব এবং আচরণগত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির সংকটও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কারণ প্রচলিত পানি শোধনাগারগুলো ইমার্জিং পলিউট্যান্টকে অপসারণ করতে পারে না। দূষিত পানির কারণে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে, বিশেষ করে যেসব মানুষ সরাসরি এ পানি ব্যবহার করছে তাদের মধ্যে।

বাংলাদেশে ইমার্জিং পলিউট্যান্টের কারণে যেসব জনস্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, তা কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পলিউট্যান্টের প্রভাব কমানোর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমত, বর্জ্য পানি শোধনাগারগুলোকে আরো আধুনিক ও কার্যকর করতে হবে। এতে ফার্মাসিউটিক্যালস, শিল্প রাসায়নিক ও মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোকে পানিতে প্রবেশ থেকে প্রতিরোধ করা যাবে। উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্যগুলোকে সঠিকভাবে শোধন ও নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে, যা পরিবেশে দূষণ কমাবে। তাই বাংলাদেশে আধুনিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করে বর্জ্য শোধনাগারগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। দ্বিতীয়ত, ফার্মাসিউটিক্যালস, এগ্রোকেমিক্যালস (কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক) এবং শিল্প বর্জ্যের সঠিক ব্যবহার এবং নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর নিয়ম ও নীতিমালা প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এতে এ পলিউট্যান্টের অনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হবে। পরিবেশের মান নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ আরো জোরদার করতে হবে। এর মাধ্যমে পানি, বায়ু ও মাটিতে দূষকের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত পরিবেশগত মানদণ্ড প্রয়োগ করতে হবে, যাতে দূষণের মাত্রা কমানো যায়। তৃতীয়ত, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। জনশিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে ইমার্জিং পলিউট্যান্টের বিপদ সম্পর্কে জানানো এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, ফার্মাসিউটিক্যাল বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা এবং কৃষিখেতে কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর মতো টেকসই অনুশীলনের দিকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। চতুর্থত, ইমার্জিং পলিউট্যান্টের প্রভাব এবং মানবস্বাস্থ্যের ওপর তাদের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা বাড়ানো জরুরি। নতুন গবেষণা দূষণ নিয়ন্ত্রণের আরো ভালো উপায় বের করতে সহায়তা করতে পারে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন আরো উৎসাহিত করা প্রয়োজন, কারণ এটি নতুন ও কার্যকর সমাধান দিতে পারে। মোট কথা, দূষণের প্রভাব কমানোর জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, কঠোর নীতিমালা প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে, যাতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা যায়।

ড. শফি মুহাম্মদ তারেক: অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ও বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত গবেষক