বাংলাদেশঃ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ, সম্ভাবনা ও পদক্ষেপ
তাসমিয়া আক্তার । সূত্র : শেয়ার বিজ, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা একটি দেশ বাংলাদেশ, আমাদের মাতৃভূমি।হাজার স্বপ্নের বীজ রোপণ করার উর্বর ভূমি, বাংলাদেশ। সৎ ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক হওয়ার পাশাপাশি, কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন পুরণের কাঙ্ক্ষিত পথে পৌঁছাতে পারি বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করি।
জনশুমারী ও গৃহগণনা ২০২২ এর তথ্যমতে, এ দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার পথে হাঁটছে।তবে এ যাত্রার শেষ কোথায়? এ নিয়ে হতাশা কাজ করছে বহু নাগরিকের মনেই। শুধু চিন্তা করলেই কি হবে? এ যাত্রার পথকে সংক্ষিপ্ত করতে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ধরন মিশ্র। এ মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পদের রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিমালিকানা উদ্যোগ পাশাপাশি বিরাজ করে।
২৪ নভেম্বর, ২০২১ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়। সেখানে অর্থনীতির ৩টি যোগ্যতা নির্ধারণী সূচক রাখা হয় যার মধ্যে ১ টি ছিল যে,মাথাপিছু আয় সূচকে ১২০৩ মার্কিন ডলার থাকতে হবে । ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে এসব শর্ত পুরণ করার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ।
আমরা জানি এ দেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। তাই কৃষি খাতে ব্যাপক বরাদ্দ রাখতে হবে । আধুনিক চাষাবাদ,কলাকৌশল, উন্নত বীজ,প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও কৃষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলে কৃষকরা আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে চাষাবাদ করতে পারবে যা প্রচুর ফলনে সাহায্য করবে । কৃষকের মুখে হাসি ফুটলে অর্থনীতির চাকা চলবে জোর গতিতে । পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য গুলোর উৎপাদন বাড়াতে হবে যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের জনগণের সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে । বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ তে স্বাস্থ্যসেবার তথ্য অনুসারে রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তার প্রতি জনসংখ্যা (২০১৮) ১৭২৪ জন। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৪০ টি । তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরো বেশি উন্নয়ন আনতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতাল, ক্লিনিক গুলো তেও শহুরে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে । দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ব্যয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে ।
আরো যে খাত টি তে গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছে শিক্ষা খাত। আশার কথা এই যে,২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বাজেট ধার্য করা হয়েছে ১ লক্ষ ১১ হাজার ১ শত ৫৭ কোটি টাকা।জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ এর তথ্যমতে উন্নয়ন বাজেটে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এ বাজেট এর সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সাথে নিশ্চিত করতে হবে শহর থেকে গ্রামে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন সকলে সমান সুযোগ এবং সরঞ্জামাদী ব্যবহার করে আধুনিক ও কারিগরী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে । বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে শিক্ষিত হয়ে সকলেই সাথে সাথে চাকরী পায় এমন টা হয় না । এক্ষেত্রে অনেকেই হতাশ হয়ে যায় । কিন্তু হতাশাগ্রস্ত না হয়ে বেকারত্ব দূরীকরণে তরুণদের নিজস্ব প্রতিভা, দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দক্ষ জনশক্তি তে তৈরি হতে হবে। সরকার কর্তৃক তাদের জন্য কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে । এসব প্রশিক্ষণ ও তরুণ দের সুপ্ত প্রতিভার সন্নিবেশ এর মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তে রুপান্তরিত হওয়া সম্ভব ।
তাছাড়াও নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব । আর এ সমস্ত কাজ এর পাশাপাশি দেশের মানুষকে সুনাগরিক হতে হবে, সচেতন মানুষ হতে হবে, দেশকে ভালো বাসতে হবে। তাহলে অচিরেই স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে একটি সুখি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ হবে বলে আমরা আশাবাদী ।
শিক্ষার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।