বাংলাদেশ-ভারত : পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ক্ষতির শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
সূত্র : কালের কণ্ঠ, ০৩ মে ২০২৫

কয়েক মাস ধরে চলা বাগযুদ্ধের পর ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য শঙ্কিত দেশ দুটির ব্যবসায়ীরা। দেশীয় শিল্পকে সস্তা আমদানির চক্র থেকে বের করে আনতে গত মাসে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে স্থলপথে তুলা আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ করেছে। মূলত ভারত হঠাৎ করেই বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিত করার পরপরই ঢাকার তরফ থেকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগে ওই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ ভারতের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারত। কিন্তু ভারত ‘পণ্যের তীব্র জট তৈরি হচ্ছে’—এই অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেয়।
উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থপাচার ও দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ আছে। এগুলোর বিচারের জন্যই দিল্লির কাছে বারবার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি করেছে ঢাকা। তবে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর দিল্লিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
ভারত থেকে এখনো বাংলাদেশে তুলা আসছে, তবে তা কেবল সমুদ্রপথে বা আকাশপথে, যা স্থলপথের তুলনায় অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের নামি-দামি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পোশাক রপ্তানি করা হয়। কিন্তু এত দিন ওই সব পোশাকের একটি বড় অংশ প্রথমে সড়কপথে ভারতে প্রবেশ করত। তারপর ওগুলো ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় ইউরোপ ও আমেরিকায় পাঠানো হতো। ইউরোপের বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে তৈরি পোশাক সরবরাহকারী এমজিএইচ গ্রুপের প্রধান আনিস আহমেদ বলেন, ‘ফাস্ট ফ্যাশন রপ্তানিতে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বিশাল ধাক্কা।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। এর মাঝে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
ভারতের কেউ কেউ মনে করছে, চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নিয়ে যে টানাপড়েন আছে, মুহাম্মদ ইউনূসের একটি মন্তব্যের মাঝ দিয়ে তা ফুটে উঠেছে এবং এই পুরো বিষয়টি দিল্লিকে উদ্বেগে ফেলেছে। কিন্তু বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা বলছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাঁদের মতে, তাঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল, এই অঞ্চলের দেশগুলোর সম্পর্কের উন্নয়ন।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক বিলিয়ন ডলারের তিস্তা নদী প্রকল্পে চীনের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকা। ভারতীয় বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, চীন যদি শিলিগুড়ি করিডরের কাছাকাছি অবস্থিত ওই প্রকল্পে যুক্ত হয়, তাহলে তা দিল্লিকে অস্থির করে তুলতে পারে।