বিনিয়োগ আকর্ষণে চট্টগ্রামে মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল হচ্ছে
সাইফুল আলম [সূত্র : শেয়ার বিজ, ১১ মে ২০২৫]

দেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর হচ্ছে মাতারবাড়ীতে। এ বন্দর শুধু বাংলাদেশ নয়, নেপাল, ভুটান, ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে উঠবে। এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণে চট্টগ্রামে মাতারবাড়ী কিংবা আনোয়ারায় ‘ফ্রি ট্রেড জোন’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য সরকার চট্টগ্রাম অঞ্চলে ফ্রি ট্রেড জোন বা মুক্তবাণিজ অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। চট্টগ্রামের মাতারবাড়ী কিংবা আনোয়ারায় এ মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল গড়ার জন্য কমিটি গঠন করা হয়। এ অঞ্চল দেশের অর্থনীতিতে ১০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ এফডিআই যুক্ত করতে পারবে। এ মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল স্থাপনের রূপরেখা তৈরির জন্য ইতোমধ্যে একটি জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হলে এই দল আমাদের অঞ্চলটি কোথায় গড়ে তোলা হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেবে। চলতি বছরে মূল কাজ শুরু হবে। এর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিখ্যাত কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা হচ্ছে। ডিপি ওয়ার্ল্ড বর্তমানে জেবেল আলি বন্দর এবং ফ্রি ট্রেড জোনের সফল মডেল পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৪০০ একর জমির ওপর একটি মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল (এফটিজেড) গড়ে তোলা হবে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ‘গেম চেঞ্জার’ (আমূল পরিবর্তন আনা) হবে। একটি মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল অনেকটা বিদেশি ভূখণ্ডের মতো। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে কারখানা গড়ে পণ্য বিদেশে পাঠাতে পারবে। তারা বাংলাদেশের কোনো দপ্তরে ঘোরাফেরা ছাড়াই কাজ করতে পারবে। দেশের শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে উভয় পক্ষেরই লাভ হবে।’
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় আনোয়ারার এ জায়গাটি প্রাথমিক বিবেচনায় রয়েছে। তবে আমরা এখন এই অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত জমি খুঁজছি। আমরা আনোয়ারায় যে জমি পরিদর্শন করেছি, সেটিই আমাদের প্রাথমিক ভাবনায় রয়েছে।
সময়সীমা নির্ধারণ করে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চাই, এ বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হোক।
অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘দেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষ করে বিজনেস সামিটের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগ আসছে। এর জন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান ও সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধি দল মাতারবাড়ি-মহেশখালী এলাকা পরিদর্শন করে মেরিটাইম অবকাঠামো, নিরাপত্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ, শিপইয়ার্ড নির্মাণসহ নানা খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাই করেছে। এছাড়া ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন’-এ মাতারবাড়ি ঘিরে ‘ফ্রি ট্রেড জোন’ গড়ে তোলার প্রস্তাব আলোচনায় আসে, যেখানে ডিপি ওয়ার্ল্ডের কারিগরি সহায়তায় আবুধাবির জেবেল আলী বন্দর মডেলে নতুন অঞ্চল গড়ার চিন্তা রয়েছে।