কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বিরল ধাতু কিংবা ভূ-রাজনৈতিক কৌশল, কেন গ্রিনল্যান্ড চান ট্রাম্প?

ইত্তেফাক ডিজিটাল ডেস্ক । সূত্র : ইত্তেফাক, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫

বিরল ধাতু কিংবা ভূ-রাজনৈতিক কৌশল, কেন গ্রিনল্যান্ড চান ট্রাম্প?

৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডেনমার্কের অংশ হয়ে থাকা গ্রিনল্যান্ডের 'মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ' নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিস্ফোরক মন্তব্যের মধ্যেই বিশাল আর্কটিক দ্বীপটিতে সফর করছেন তার পুত্র ট্রাম্প জুনিয়র। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) তিনি গ্রিনল্যান্ডে পৌঁছান।


আর্কটিক অঞ্চলটি নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ঠিক কী, এমন ধোঁয়াশার মধ্যে ট্রাম্প জুনিয়রের এই সফর জল্পনা-কল্পনা বাড়িয়ে তুলেছে। বাবা গ্রিনল্যান্ড নিয়ে তীক্ষ্ণ কথা বললেও তিনি এই সফরকে 'কিছুটা মজাদার' হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্পপুত্র গ্রিনল্যান্ড থেকে বলেছেন, একজন বহিরাগত হিসাবে, আমি এই সপ্তাহের জন্য গ্রিনল্যান্ডে থামার জন্য খুব রোমাঞ্চিত।


১৯৭৯ সালে স্বায়ত্তশাসন লাভ করা সত্ত্বেও গ্রিনল্যান্ড বৈদেশিক বিষয়, নিরাপত্তা এবং আর্থিক বিষয়ে ডেনমার্কের ওপর নির্ভরশীল। অঞ্চলটি ইউরেনিয়াম, সোনা, তেল এবং গ্যাসের বিশাল মজুদাগার হিসেবে পরিচিত।

গত ২২ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ একান্ত প্রয়োজন।


গ্রিনল্যান্ড বা পানামা দখলের জন্য ট্রাম্প 'সামরিক বা অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগের' বিষয়টিও নাকচ করেননি ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই দুটির (সামরিক বা অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগের সম্ভাবনা) কোনো বিষয়েই আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। আমি এটা বলতে পারি: অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য তাদের (গ্রিনল্যান্ড) আমাদের প্রয়োজন। গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা মার্কিন নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক।

 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনি গ্রিনল্যান্ডের অন্যান্য দিকগুলোতেও নজর দিয়ে থাকতে পারেন, যেমন প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার। যার মধ্যে বিরল মৃত্তিকা ধাতু।

 

গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান

গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ এবং ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল। একটি প্রাক্তন ডেনিশ উপনিবেশ এবং এখন ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে 'গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান' দখল করে আছে। এর রাজধানী নুক ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের চেয়ে নিউইয়র্কের কাছাকাছি।

 

ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক উলরিক প্রাম গাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করার জন্য। দ্বীপটি গ্রিনল্যান্ড-আইসল্যান্ড-যুক্তরাজ্য গ্যাপের অংশ, একটি কৌশলগত সামুদ্রিক অঞ্চল।

 

ড্যানিশ মিডিয়া প্রথম প্রকাশিত নথি অনুসারে, ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন যিনি গ্রিনল্যান্ড কেনার পরিকল্পনা করেছেন। ১৮৬৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন আলাস্কা গ্রিনল্যান্ড কেনার কথা বিবেচনা করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আরেক প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের প্রশাসন ডেনমার্ক দ্বীপটির জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার অফারও করেছিল।

 

তবে কোনো প্রস্তাবই সফল হয়নি। যদিও ১৯৫১ সালের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পশ্চিম গ্রিনল্যান্ডে 'পিটুফিক স্পেস বেস' নামে একটি বিমান ঘাঁটি গড়েছিল। মস্কো ও নিউইয়র্কের মাঝামাঝি অবস্থিত এই ঘাঁটি মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে উত্তরের ফাঁড়ি এবং ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় সজ্জিত।

 

প্রাম গাদ সিএনএনকে বলেন, কোনো 'বৈরী বৃহৎ শক্তি' যেন গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ না নেয়, তা নিশ্চিত করতেই হয়তো এই আগ্রহ। কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হতে পারে।

 

বিরল খনিজে সমৃদ্ধ

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের রয়্যাল হলোওয়ের ভূ-রাজনীতির অধ্যাপক ক্লাউস ডডস বলেন, ট্রাম্পের কাছে যা আরও আকর্ষণীয় হতে পারে তা হলো, গ্রিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার।

 

এর মধ্যে রয়েছে তেল ও গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি ও বায়ু টারবাইনের জন্য উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন পৃথিবীর বিরল ধাতু, যা সামরিক সরঞ্জাম তৈরির জন্যও ব্যবহৃত হয়।

বর্তমানে চীন বিশ্বব্যাপী পৃথিবীর বিরল সম্পদ সমৃদ্ধ করার দিক দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। অধ্যাপক ডডস সিএনএনকে বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টারা চীনের গলা টিপে ধরা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।

 

বরফ গলে যাওয়া এবং দ্রুত বাড়তে থাকা আর্কটিক তাপমাত্রা গ্রিনল্যান্ডকে জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি করেছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশটি নিয়ে নতুন করে ভাবনার সঙ্গে কেউ কেউ অর্থনৈতিক সুযোগও খুঁজছেন।