কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বিসিএস পরীক্ষার সংস্কার চাইলেন চাকরিপ্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক । সূত্র : প্রথম আলো, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

বিসিএস পরীক্ষার সংস্কার চাইলেন চাকরিপ্রার্থীরা

বিসিএস পরীক্ষার তিনটি ধাপ—প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন বিসিএসে অংশ নেওয়া চাকরিপ্রার্থীরা। ‘কেমন বিপিএসসি দেখতে চাই এবং কী কী সংস্কার প্রয়োজন’ শীর্ষক ‘অংশীজনের ভাবনা’য় বিসিএসে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা এ প্রস্তাব দেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রধান কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

 

প্রার্থীর নম্বর খুদে বার্তায়—

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিটি বিসিএসে কতজনকে প্রিলিমিনারি পাস করানো হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে কাট মার্কস উল্লেখসহ প্রার্থী কত মার্কস পেয়েছেন, তা জানিয়ে খুদে বার্তা দেওয়া যেতে পারে। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার পর প্রশ্নের একটি খসড়া উত্তরপত্র পিএসসির ওয়েবসাইটে আপলোড করে সাত দিন সময় দেওয়া যেতে পারে।

 

 

কোনো প্রশ্নের উত্তর ভুল হলে পরীক্ষার্থী সেই প্রশ্নের উত্তর রেফারেন্সসহ পিএসসিকে ই-মেইল করতে পারেন। এ কাজ শেষ হওয়ার পর পিএসসি একটি ফাইনাল উত্তরপত্র ওয়েবসাইটে আপলোড করে ওএমআর চেকিং করার কাজ শুরু করতে পারে। প্রশ্নপত্রের ওপরে রাফ করা যাবে, তা প্রশ্নের নিচে উল্লেখ করে দিলে পরীক্ষার্থীদের সুবিধা হবে। পরীক্ষার শেষে প্রশ্নপত্র দিয়ে দিতে হবে।

 


মৌখিক পরীক্ষায় মনোবিজ্ঞানী রাখার প্রস্তাব—

বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার প্রতিটি বোর্ডে একজন করে মনোবিজ্ঞানী রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রার্থীরা। সংস্কার প্রস্তাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ভাইভার দিন সকালে সবার সামনে উন্মুক্ত লটারির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ভাইভা বোর্ডের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রতিটি ভাইভা বোর্ডে একজন করে মনোবিজ্ঞানীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি বোর্ডের মূল্যায়ন পদ্ধতি একক ও সায়েন্টিফিক করতে হবে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর জন্য সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সময়ের নির্দিষ্ট রেঞ্জে ভাইভা নেওয়া, দুই শিফটে ভাইভা চালু করা অথবা লাঞ্চ আওয়ারের পর ভাইভা অনুষ্ঠিত হলে রিফ্রেশমেন্টের ব্যবস্থা রাখা দরকার।

 

 

ঢাকার বাইরের কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের সর্বদা সবার শেষে ভাইভা নেওয়ার প্রথা বন্ধ করা। আলাদা বিল্ডিং বা আলাদা ফ্লোরে ভাইবার ব্যবস্থা করা, যাতে সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের আগে–পরে কেউ প্রবেশ করতে বা বের হতে না পারে। সেখানে কোনো মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট কানেকশন থাকা যাবে না। এই বিল্ডিং বা ফ্লোরে নেটওয়ার্ক জ্যামারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মৌখিক পরীক্ষার ১০০ নম্বরের সুনির্দিষ্ট কিছু সেগমেন্টে ভাগ করে প্রতি সেগমেন্টে নির্দিষ্ট নম্বরের ওপর মার্কিং করা। ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যদের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে নম্বর কণ্টন করা।

 

 

লিখিত পরীক্ষার সংস্কারে শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবে বলেছেন, লিখিত টেকনিক্যাল পরীক্ষার আগে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের গ্যাপ দেওয়া যেতে পারে। লিখিত পরীক্ষার আগে কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগ রাখা। লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪৫০ নয়, বরং কতগুণ পরীক্ষার্থীকে পাস করানো হবে, তা আগেই ঘোষণা দেওয়া দরকার। বাংলা পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের পরিবর্তে ১০০ নম্বরের প্রস্তাব এসেছে। মুখস্থ রচনা লেখার পরিবর্তে বিশ্লেষণধর্মী ও সৃজনশীল লেখার দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

 


এ ছাড়া বিসিএসের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে এক বছরের মধ্যে একটা বিসিএস শেষ করার প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। নভেম্বরে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ডিসেম্বরে আবেদন শেষ, ফেব্রুয়ারিতে প্রিলিমিনারি, মে/জুনে লিখিত, সেপ্টেম্বর ভাইভা এবং নভেম্বর/ডিসেম্বরে নিয়োগের সুপারিশ করার মাধ্যমে এক বছরে একটি বিসিএস শেষ করার রূপরেখা দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

 

 

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা, পরীক্ষাকেন্দ্রে নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করা, একটি ডেডিকেটেড সেল তৈরি করা এবং প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।