কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মহাসাগরীয় স্রোতের গতি কমে যাচ্ছে কেন

অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট প্রশান্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরজুড়ে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, পানি, তাপ ও পুষ্টি উপাদান পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রকাশ: বণিক বার্তা, ৬ মার্চ ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মহাসাগরীয় স্রোতের গতি কমে যাচ্ছে কেন

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মহাসাগরীয় স্রোত হচ্ছে অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট বা এসিসি। এটি গাল্ফ স্ট্রিমের চেয়ে পাঁচ গুণ ও অ্যামাজন নদীর চেয়ে ১০০ গুণের বেশি শক্তিশালী। অ্যান্টার্কটিকার চারপাশে ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রবাহিত হওয়া স্রোতটি প্রশান্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরজুড়ে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, পানি, তাপ ও পুষ্টি উপাদান পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু অ্যান্টার্কটিকার গলিত বরফ থেকে আসা ঠান্ডা ও মিষ্টি পানি মহাসাগরের লবণাক্ত পানি পাতলা করে দিচ্ছে, যা মহাসাগরীয় স্রোতকে ব্যাহত করতে পারে। এ কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্রোত ২০ শতাংশ পর্যন্ত ধীর হতে পারে। পরিণতি হিসেবে পৃথিবীর জলবায়ু, খাদ্য ব্যবস্থা ও বাস্তুতন্ত্রের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।

উষ্ণ পানিকে অ্যান্টার্কটিকার বরফ স্তর থেকে দূরে রেখে ও আগ্রাসী প্রজাতির প্রাণীগুলোকে মহাদেশটিতে পৌঁছাতে বাধা দিয়ে একটি সুরক্ষামূলক পরিখার মতো কাজ করে অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট। গাল্ফ স্ট্রিম, কুরোশিও ও আগুলহাসের মতো সুপরিচিত স্রোতগুলোর তুলনায় বিজ্ঞানীরা এ স্রোত সম্পর্কে কম জানেন। কারণ এর দুর্গম অবস্থান গবেষণা কাজ কঠিন করে তোলে।

মহাসাগরীয় স্রোত তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, বাতাসের ধরন ও সমুদ্রের বরফের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এসব উপাদানের ওপর প্রভাব ফেলে, যা বৈশ্বিক মহাসাগরীয় পরিবহন ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধ্বংসের পথে থাকতে পারে। এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ লেটারসে প্রকাশিত ‘ডেকলাইন অব অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট ডিউ টু পোলার ওশান ফ্রেশনিং’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

 

তত্ত্ব অনুযায়ী, অ্যান্টার্কটিকার আশপাশের উষ্ণ পানি স্রোতের গতি বাড়াতে পারে। কারণ উষ্ণ পানি তুলনামূলকভাবে হালকা। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বরফ গলার পরও গত কয়েক দশক ধরে এই স্রোত স্থির রয়েছে। বরফ গলা এই প্রক্রিয়াকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা আগে বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দ্রুততম সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করে গবেষকরা একটি উন্নত মহাসাগরীয় মডেলের মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট অধ্যয়ন করেছেন। মডেলটি প্রায়শই উপেক্ষিত হওয়া ছোট ছোট মহাসাগরীয় গতিবিধি বিবেচনায় নিয়ে আরো নির্ভুল চিত্র প্রদান করে।

 

New Project (8)

অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট অ্যান্টার্কটিকাকে বিশ্ব মহাসাগরের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে, ছবি: এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ লেটারস

গবেষণায় পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, অ্যান্টার্কটিকা থেকে প্রবাহিত ঠান্ডা, মিষ্টি গলিত বরফ পানি উত্তরের দিকে চলে যাবে। এ কারণে মহাসাগরের ঘনত্ব পরিবর্তিত হবে। পাশাপাশি ২০৫০ সালের মধ্যে স্রোতের গতি প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে। ফলে জলবায়ুর ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

 

দুর্বল অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট বৈশ্বিকভাবে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি অ্যান্টার্কটিকার চারপাশে পুষ্টিসমৃদ্ধ পানি প্রবাহিত করে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে। যদি স্রোতটি দুর্বল হয়ে যায়, তবে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেতে পারে। পাশাপাশি উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলোর ওপর নির্ভরশীল মৎস্যশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাছাড়া এটি আগ্রাসী প্রজাতির প্রাণীগুলোর প্রবেশের সুযোগও তৈরি করতে পারে, যা স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করবে।

 

ধীরগতির স্রোত আরো বেশি উষ্ণ পানি অ্যান্টার্কটিকায় পৌঁছে দিয়ে বরফের স্তর দ্রুত গলিয়ে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। আর তা হলে স্রোত আরো দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এতে বেশি পরিমাণে বরফ গলা ও স্রোতের গতি কমার একটি চক্র তৈরি হবে। এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। যা মহাসাগরের জন্য অতিরিক্ত তাপ ও কার্বন শোষণ কঠিন করে তুলবে। ফলস্বরূপ জলবায়ু পরিবর্তন আরো তীব্র হয়ে উঠবে।

 

 

গবেষণায় অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট দুর্বল হওয়ার সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যৎ এখনো পরিবর্তন করা সম্ভব বলেও উল্লেখ করা হয়। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার গতি ধীর করতে পারে। গবেষকরা জানান, পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করতে দক্ষিণ মহাসাগরে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা করা জরুরি। বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমে মহাসাগরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো যেতে পারে।