কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বিটা: আগামী দিনের প্রজন্ম

ইমতিয়াজ উদ্দিন । সূত্র : শেয়ার বিজ, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

বিটা: আগামী দিনের প্রজন্ম

ইমতিয়াজ উদ্দিন: প্রতিটি প্রজন্মই একটি নতুন গল্পের সূচনা করে। তারা নিজদের সময়পর্ব, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও চাহিদার প্রতিচ্ছবি। সর্বশেষ প্রজন্ম হিসেবে আমরা যখন জেনারেশন জেড সম্পর্কে আলোচনা করছি, তখনই দিগন্তে উঁকি দিচ্ছে নতুন এক প্রজন্ম্তজেনারেশন বেটা। ২০২৫ সাল থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করবে তারা জেনারেশন বিটার অন্তর্ভুক্ত।

 

 

গবেষক মার্ক ম্যাকক্রিন্ডেলের মতে, ২০৩৫ সালের ১৬ শতাংশ জনসংখ্যা হবে জেন বিটা। তিনি এ নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে গবেষণা করে যাচ্ছেন। প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম কেমন হবে এবং কীভাবেই বা তারা ভবিষ্যতের পৃথিবীকে রূপ দেবে- এ নিয়ে অনেকের মাঝেই জল্পনাকল্পনা চলছে ইতিমধ্যে।

 

 

প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে ওঠা:

জেনারেশন বেটা এমন এক সময়ে জন্ম নিয়েছে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর), এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি)-এর মতো প্রযুক্তি তাদের চারপাশ ঘিরে রেখেছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন গ্যাজেটের সহজলভ্যতা এই প্রজন্মকে “ডিজিটালি নেটিভ” হিসেবে গড়ে তুলছে। তারা হয়তো কখনও কাগজ-কলমের যুগ দেখেনি; তাদের জন্য বইপাঠ মানে হয়তো একটি ই-বুক, ক্লাসরুম মানে ভার্চুয়াল রুম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর খুব বেশি নির্ভর করবে এই শিশুরা। এই নতুন প্রজন্মের গোটা জীবনটাই প্রযুক্তি দিয়ে মোড়া হবে। তাদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি স্তরে ঢুকে পড়বে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।

 

 

নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও চাহিদা:

জেনারেশন বিটার দৃষ্টিভঙ্গি হবে বৈশ্বিক। প্রযুক্তি তাদের একদিকে যেমন জ্ঞান ও উদ্ভাবনের সঙ্গে সংযুক্ত করবে, অন্যদিকে তেমনি সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানে তারা তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে হয়ে উঠবে যথেষ্ট আগ্রহী। জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানসিক স্বাস্থ্য্তএসব বিষয় তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।

 

 

এই প্রজন্ম সম্ভবত পুরোনো প্রজন্মের তুলনায় আরও বেশি সৃজনশীল, উদ্ভাবনী এবং সমস্যার সমাধানে দক্ষ হবে। গত ১৪ বছরে বিশ্বে যে শিশুরা জন্মগ্রহণ করেছে তাদের তুলনায় আলাদা হবে এই নতুন প্রজন্ম। গবেষক মার্কের মতে, ২০২৫ সাল থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে যে শিশুরা জন্মগ্রহণ করতে চলেছে তাদের মধ্যে অনেকেই সুস্থভাবে ২১০০ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবে বলে তিনি আশাবাদী। এর কারণ হিসেবে তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থা বা প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতিকে কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আয়ুর দিক থেকে তারা হতে পারে অনন্য।

 

 

চ্যালেঞ্জ ও মানসিক স্বাস্থ্য:

প্রযুক্তির সুবিধা যতই থাকুক, জেনারেশন বিটার সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভার্চুয়াল দুনিয়ার সঙ্গে অতিরিক্ত সংযুক্তি বাস্তব জীবনের মানবিক সংযোগ কমিয়ে দিতে পারে। তাদের মধ্যে কারো কারো মাঝে মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন এবং আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের মতো সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন:

জেনারেশন বিটার জন্য শিক্ষা হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে স্কিল-ভিত্তিক এবং প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার প্রচলন বৃদ্ধি পাবে। তাদের কর্মক্ষেত্রও হবে অত্যন্ত নমনীয়। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে অনেক পেশা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে এবং নতুন পেশার উদ্ভব ঘটবে। ফলে এই প্রজন্মকে সারাজীবন শেখার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

 

 

জেন-বিটার কিছু নেতিবাচক দিক:

জেন-বিটা আধুনিক প্রযুক্তির তীব্র সংস্পর্শে আসার কারণে অনেক মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভোগতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে তথ্যপ্রযুক্তি চালাতে গিয়ে তাদের মাঝে এক প্রকার আসক্তি ও কর্মবিমুখতা দেখা দিতে পারে। তারা যেকোনো কিছুতে শর্টকাট খুঁজতে পারে। আর এই প্রবণতা তাদের কর্মজীবনকে চরমভাবে ব্যাহত করবে। জন্ম থেকে স্ক্রিনে বেশি সময় দিতে গিয়ে তারা দ্রুত দৃষ্টিস্বল্পতা বা হ্রস্ব দৃষ্টির মতো জটিল সমস্যায় ভোগতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তিতে সময় দিতে গিয়ে তারা শারীরিক কর্ম ও শারীরিক বা আউটডোর গেম থেকে দূরে সরে যেতে পারে যা তাদের শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ জীবন তাদের মধ্য থেকে কেড়ে নিতে পারে মানবিকতা ও প্রকৃতির সাথে একাত্ম হবার মানসিকতা।

 

 

একটি আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ:

যদিও এই জেন-বিটার সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ , তবু জেনারেশন বিটা একটি আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ নির্মাণের সম্ভাবনা রাখতে পারে। তাদের উদ্ভাবনী মনোভাব, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, এবং বিশ্বব্যাপী সমস্যার প্রতি তাদের দায়ত্বিবোধ একটি টেকসই এবং ন্যায়সঙ্গত পৃথিবী গড়ার আশা জাগায়।

 

 

জেনারেশন বিটা এমন এক প্রজন্ম, যারা প্রযুক্তি ও মানবিকতার মিলবন্ধনে নতুন পৃথিবীর ভিত্তি গড়বে। তবে তাদের পথচলা সহজ হবে না। এই নতুন প্রজন্ম আগামী দিনের বিশ্বে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সমাজব্যবস্থায় বড় বদল আনতে চলেছে। আগামী দিনগুলোতে সমাজে বদল, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব জনসংখ্যায় বদল, দ্রুততর নগরায়নের মতো সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে জেন-বিটাকে।

 

আমাদের দায়ত্বি হবে তাদের জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে এবং তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারবে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই প্রজন্ম আমাদের আশার আলো। আমরা শুধু প্রার্থনা করতে পারি, তারা যেন সত্যিকার অর্থে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে আরও সুন্দর ও মানবিক করে তুলতে পারে।