বৈশ্বিক সংকটের সমাধান হউক আলোচনার টেবিলে
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের ভাষণে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া বলিয়াছিলেন, ‘এই যুদ্ধ আঞ্চলিক অস্থিরতা উসকাইয়া দিতেছে এবং সেই সঙ্গে বিশ্ব জুড়িয়া উত্তেজনা ও বিভেদ সৃষ্টি করিতেছে।’ ভাষণের শেষাংশে তিনি আহ্বান জানাইয়াছিলেন, ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরিয়া আসার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ, যে কোনো ধরনের আত্মতুষ্টি সংকটকে আরো গভীর করিয়া তুলিবে।’ জাতিসংঘ মহসচিবের সেই ভবিতব্যের মর্মকথা আমরা আজ অনুধাবন করিতেছি প্রতিটি মুহূর্ত! বিশ্ব আজ এক গভীর সংকটে নিপতিত। যুদ্ধ চলিতেছে ইউরোপের মাটিতে। সংঘাতের আগুনে পুড়িতেছে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল। আত্মতুষ্টির বশবর্তী হইয়া প্রতিপক্ষের উপর প্রথম আঘাত হানিয়া সংকট ডাকিয়া আনিল কোন পক্ষ—ইহা পুরাতন, অমীমাংসিত ও তর্কসাপেক্ষ বিষয়। তবে বৃহত্তর সংঘাতের ঘেরাটোপে পড়িয়া সমগ্র বিশ্ব যে কাহিল হইতে কাহিলতর হইয়া উঠিতেছে, ইহাই আজিকার দিনের বাস্তবতা। ইউক্রেনে হামলা বাড়াইয়াছে রাশিয়া। এই যুদ্ধ কখন, কীভাবে শেষ হইবে, তাহা কাহারো জানা নাই! বরং দুই বত্সরেরও অধিক সময় ধরিয়া চলিতে থাকা এই যুদ্ধ পক্ষগুলিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়া দিয়াছে। ইহার অভিঘাতে বিশ্বব্যাপী যেই অর্থনৈতিক সংকটের অবতারণা ঘটে, তাহা হইতে উত্তরণ তো ঘটেই নাই, উপরন্তু আরম্ভ হইল নূতন সংকট—ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ। ঘটনা এইখানেই থামিয়া থাকে নাই, গাজা যুদ্ধের পটভূমিতে বিশ্ব নূতন করিয়া প্রবেশ করিয়াছে দুই চিরশত্রু ইরান ও ইসরাইলের সংঘাতের যুগে। দুশ্চিন্তা মূলত এইখানেই! কারণ, বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে মধ্যপ্রাচ্য। এই অঞ্চলে অস্থিরতা শুরু হওয়ার অর্থ হইল সমগ্র পৃথিবীতে তাহার ঢেউ আছড়াইয়া পড়া। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হইয়া উঠিলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসংকট তীব্রতর হইয়া উঠিবে।