কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বর্জ্য থেকে সম্পদ : সার্কুলার ইকোনমির শক্তি

শেয়ার বিজ ডেস্ক| সূত্র : শেয়ার ব্রিজ, ১ জানুয়ারি ২০২৫

বর্জ্য থেকে সম্পদ : সার্কুলার ইকোনমির শক্তি

২০২৩ সালে এশিয়া ছিল আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল, যেখানে বন্যা এবং ঝড়জনিত ঘটনা প্রধান কারণ ছিল হতাহতের এবং আর্থিক ক্ষতির। বিশ্ব আবহাওয়া সংস’ার সামপ্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ায় তাপ প্রবাহের প্রভাব আরও গুরুতর হয়ে উঠছে, যেখানে হিমবাহ গলানোর কারণে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের পানির নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ছে।

জলবায়ুু বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সদ্য সমাপ্ত কপ২৯ সম্মেলন, যা বাকুতে অনুষ্ঠিত হয়, ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর অন্তত ৩০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য গ্রহণ করেছে। এই প্রক্রিয়ায় উন্নত দেশগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসাথে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতি বছর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার সমন্বিত জলবায়ু কার্যক্রমে অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্লাষ্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, ৫ম আন্তঃসরকারি আলোচনার কমিটির (INC-5) অধিবেশন ১ ডিসেম্বর ২০২৪-এ দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে শেষ হয়। তবে, “প্লাষ্টিক দূষণ মোকাবেলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যতামূলক চুক্তি” গঠনে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। ১৭৯টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নেন যে সমস্ত অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন এবং আলোচনার জন্য কমিটির পুনরায় অধিবেশনের প্রয়োজন।

একদিকে পরিবেশগত অবক্ষয় এবং সম্পদের সংকট যখন বৈশ্বিক আলোচনার শীর্ষে, তখন সার্কুলার ইকোনমি এক নতুন সম্ভাবনার আলো দেখা”েছ। ঐতিহ্যবাহী রৈখিক অর্থনীতি যেখানে “নাও-তৈরি করো-ফেলে দাও” মডেলে পরিচালিত হয়, সেখানে সার্কুলার ইকোনমি টেকসই, দক্ষতা এবং সম্পদ পুনঃব্যবহারের উপর জোর দেয়। এটি পণ্য উৎপাদন, ব্যবহার এবং বর্জন পদ্ধতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে, যা বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে।

সার্কুলার ইকোনমি তিনটি প্রধান নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে- বর্জ্য এবং দূষণ দূর করা; পণ্য এবং উপকরণ ব্যবহারে স’ায়ীত্ব নিশ্চিত করা এবং প্রাকৃতিক ব্যবস’া পুনরুদ্ধার করা। এই নীতিগুলো পণ্যের জীবনচক্র বাড়ানো, উপকরণের পুনঃব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ এবং বর্জ্য হ্রাসে কাজ করে। এর ফলে সম্পদ সংরক্ষণ, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস, দূষণ মোকাবেলা এবং নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়।

কয়েকটি উন্নত দেশ ইতিমধ্যে সার্কুলার ইকোনমির সম্ভাবনা দেখাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। নেদারল্যান্ডস ২০৩০ সালের মধ্যে কাঁচামাল ব্যবহারের অর্ধেক কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সুইডেন গৃহস’ালির ৯৯ শতাংশ বর্জ্য শক্তিতে রূপান্তরিত করছে। আউটডোর পোশাক ব্র্যান্ড পাটাগোনিয়া পোশাক মেরামত এবং পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে টেকসই নিশ্চিত করছে, যা বর্জ্য হ্রাস ও সার্কুলার কার্যক্রমের উদাহরণ।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বড় টেক্সটাইল রপ্তানিকারক দেশ। টেকসই ফ্যাশনে নেতৃত্ব দেওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কাপড়ের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং পুরনো পোশাকের বাজার প্রচারের মাধ্যমে শিল্পটি পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে মুনাফা বাড়াতে পারে। কৃষি বর্জ্য, যেমন ধানের তুষ ও পাটের উপজাত, জৈবশক্তি ও জৈব সারের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা টেকসই চাষাবাদে সহায়তা করবে। বৃত্তাকার মডেল (সার্কুলার মডেল) বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যে সহায়ক হতে পারে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারে।

বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টন প্লাষ্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, যার মাত্র ৩০ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, ইলেকট্রনিক বর্জ্য ও কৃষি বর্জের অনিয়মিত ফেলা পরিবেশের ক্ষতি আরও বাড়ায়। পুনর্ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো এবং বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরির প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশ এই সমস্যাগুলো কমাতে পারবে এবং অর্থনৈতিক সুবিধাও অর্জন করতে পারবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে। অনেক কারখানা টেকসই চর্চার জন্য স্বীকৃত, যা বিশ্ব টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের জন্য একটি উদাহরণ স’াপন করেছে।

যাহোক, জলবায়ুু পরিবর্তনের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই সার্কুলার ইকোনমি মডেল গ্রহণ করা শুধু প্রয়োজনীয় নয়, এটি একটি বড় সুযোগও বটে। দ্রুত বিকাশমান একটি দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ বর্জ্য ব্যবস’াপনা, দূষণ এবং সম্পদ হ্রাসের মতো পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হ”েছ। সার্কুলার ইকোনমিতে রূপান্তর এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

●আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়