কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ব্যাপক উৎসাহ সত্ত্বেও বাংলাদেশে জাপানি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ নগণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক [সূত্র : বণিকবার্তা, ২৭ মে ২০২৫]

ব্যাপক উৎসাহ সত্ত্বেও বাংলাদেশে জাপানি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ নগণ্য

বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ সম্ভাবনা অনেক দিন ধরেই আলোচিত। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিবেচনায় বাংলাদেশে অন্যতম বৃহৎ ঋণদাতা দেশও জাপান। শুধু জাপানি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে রয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও। কিন্তু সম্পর্কের এ ঘনিষ্ঠতা বাংলাদেশে জাপানের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগপ্রবাহে তেমন দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে জাপানের এফডিআই স্টকের (পুঞ্জীভূত প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ) স্থিতি ৪৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর সঙ্গে জাপান টোব্যাকোর (জেটি) বিনিয়োগপ্রবাহ বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশে জাপানের এফডিআই ২০০ কোটি ডলারের মতো হবে। কিন্তু অন্য দেশ থেকে আসায় জেটির বিনিয়োগের উৎস দেশ হিসেবে জাপানকে বিবেচনা করা হয়নি। তার পরও বিনিয়োগের এ অংককে সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম বলে মনে করছেন বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্টরা।

 

 


বৈশ্বিক বিদেশী বিনিয়োগ চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপান বিদেশী বিনিয়োগের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, থাইল্যান্ডে জাপানের এফডিআই স্টকের পরিমাণ ৯৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। মালয়েশিয়ায় জাপানের বিনিয়োগ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল ২৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এমনকি কম্বোডিয়ায় জাপানের এফডিআই স্টক প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।

 

 


বাংলাদেশে জাপানের এফডিআই প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। অন্য দেশ থেকে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে জেটির ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না বলে জানিয়েছেন জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সভাপতি তারেক রাফি ভুইয়া (জুন)। অনেক সম্ভাবনা সত্ত্বেও বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগপ্রবাহ কম হওয়ার বেশকিছু কারণ জানিয়েছেন তিনি।

 

 

তারেক রাফি ভুঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতির পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে নীতিগত ও নিয়ন্ত্রক (রেগুলেটরি) অনিশ্চয়তা একটা কারণ। অনেক জাপানি কোম্পানি এখনো সতর্ক থাকে নীতিমালা ও নিয়মকানুন বারবার পরিবর্তিত হওয়ার কারণে। কর আইন, কাস্টমস বিধি বা বিনিয়োগ প্রণোদনার হঠাৎ পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে নিরুৎসাহিত করে।’

 

 

তুলনামূলক অসুবিধাকে আরেকটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তারেক রাফি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের মতো দেশের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। এ দেশগুলোয় ব্যবসা পরিচালনার জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ এবং আরো কার্যকর নীতিমালা বিদ্যমান।’

 

 

অবকাঠামো ও পরিচালনাগত চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তারেক রাফি বলেন, ‘অবস্থার উন্নতি সত্ত্বেও কাস্টমসে বিলম্ব, জটিল কর কাঠামো ও শুল্ক নির্ধারণে অসংগতি—এসব কারণে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যায় এবং সময়নির্ভর কার্যক্রম পরিচালনায় জটিলতা তৈরি হয়।’

 

 

জাপানি বিনিয়োগের জন্য দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তারেক রাফি বলেন, ‘জাপানি কোম্পানিগুলো গুণগত মান ও নির্ভুলতাকে অগ্রাধিকার দেয়। শিল্পে সরাসরি নিয়োজিত হতে সক্ষম প্রযুক্তিবিদ ও জাপানি ভাষা জানা বা জাপানি কর্ম-সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন কর্মীর অভাব অনেক সময় একটি বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।’

 

 

প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে জাপানি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে সমীক্ষা চালায় জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো)। এ সমীক্ষার আওতায় সর্বশেষ জরিপে অংশ নেয়া ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বাংলাদেশে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী। সম্প্রতি একটি সংবাদ সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো নগরী বলেছেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরেও বাংলাদেশে ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।’

 

 

সম্ভাবনা কেন বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ব্যবসায়ী আবদুল হকের কাছে। জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন এবং পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অবদানের জন্য জাপান সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ২০২২ সালে এ স্বীকৃতি পেয়েছেন দেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি খাতের পথিকৃৎ ব্যবসায়ী আবদুল হক। জেবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জাপানিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বাধাকে বড় বাধা মনে করছে। এটাকে যদি একটু খোলাসা করে বলা যায়, এতগুলো মন্ত্রণালয়, কাস্টমস, কর এসব জায়গায় যে আমাদের ট্র্যাডিশনাল হয়রানিগুলো, দীর্ঘসূত্রতাকে তারা প্রধান বাধা মনে করছে।’

 

 

জাপান অনেক আগ্রহ করে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে জানিয়ে আবদুল হক বলেন, ‘বিনিয়োগের জায়গায় আমরা সেভাবে কাজ করতে পারিনি। আমরা ইতিহাস থেকে যদি দেখি, আজকে যে কোরিয়ান ইপিজেড, এটা কিন্তু সূচনা করেছিল জাইকা। সেটা প্রথম পর্যায়ে তারা শুরু করে দিয়েছিল। এটা ছিল জাপানের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য। সেটাকে পরে দেখা গেল গোপনভাবে বেসরকারি কোম্পানি কোরিয়ান ইপিজেডকে দিয়ে দেয়া হলো।’

 

 

জাপানের বিনিয়োগ আরো বেশি আনতে পারলে অনেক বড় পরিবর্তন সম্ভব হতো উল্লেখ করে আবদুল হক বলেন, ‘তাদের চাহিদা মেটাতে পারলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। ১৯৭৩ সালে এক জাহাজভর্তি জাপানি নাগরিক এসেছিলেন বাংলাদেশে। সেখানে জাপানের বড় বড় করপোরেশনের প্রধান ছিলেন। ২০২৫ সালে তাদের একটা বড় টিম আসার কথা ছিল। এর মধ্যে আগস্টের পরিবর্তন। এখানকার পরিস্থিতির কারণে সেটি হয়নি। এখন প্রধান উপদেষ্টা জাপানে যাচ্ছেন। সেখানে কিন্তু অনেক বড় একটা অনুষ্ঠান হবে। তিনি যে সংস্কারের অঙ্গীকার করেছেন সেটি তো এগোচ্ছে না। আমরা এতগুলো মন্ত্রণালয় পাল্টেছি। আমাদের যে রাজস্ব আয় হয় সব তো প্রশাসনের পেছনে খরচ হয়ে যায়। মনে হচ্ছে যে আমাদের বাংলাদেশের যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা আমাদের উন্নয়নের সহায়ক নাকি প্রতিবন্ধক? এ প্রশ্নটা করা উচিত। আমি ৪০ বছর ধরে জাপানকে দেখছি। কিন্তু আমরা কেন পারছি না? এর কারণ হচ্ছে আমাদের সরকার ও প্রশাসন ব্যবস্থা। জনগণ কিন্তু চাচ্ছে।’

 

 

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে নির্মাণ হচ্ছে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন,–যা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের যৌথ উদ্যোগে এক হাজার একর জমিতে নির্মাণ হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি। পর্যায়ক্রমে এ অঞ্চলে জমি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৯০ একর হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ৫০০ একর জমিতে প্রথম ধাপের উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে আরো ৫০০ একর জমি উন্নয়নের জন্য নতুন প্রকল্প শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। এখন রফতানিমুখী কোম্পানিকে প্রাধান্য দিয়ে এফডিআই খুঁজছে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি। তবে উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো সাড়া এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

 

জানা গেছে, বহুজাতিক ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড এরই মধ্যে সেখানে উৎপাদন শুরু করেছে। প্রতিদিন এক হাজার ইউনিট রেফ্রিজারেটর ও টেলিভিশন উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। ৩৩ দশমিক ৪ একর জমি লিজ নিয়ে নির্মিত কারখানায় ৭৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে সিঙ্গার।

 

 

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ অনেক ত্বরান্বিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে জেবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আনোয়ার শহীদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জাপান সফরে নিক্কেই ফোরামে মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিআইপি অতিথি আছেন। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা তো এসব ব্যাপারে আন্তর্জাতিক লেভেলের মানুষ। মূলত এখানে গেলে রথ দেখা কলা বেচার মতো অন্যান্য সরকারি কাজ হবে। আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে যে অবস্থা, তাতে জাপান কিন্তু একটু ধীরে আগাচ্ছে। তারা বুঝতে চাচ্ছে কী হতে যাচ্ছে। তারা আগের সরকারের সময় কিছু বড় বড় উদ্যোগ নিয়েছে। সেগুলো এখন চলছে, কিন্তু এখন তারা আরো বুঝতে চাচ্ছে দ্রুত করতে গিয়ে পরে যেন কোনো ঝামেলা না হয়। আমাদের প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ইমেজে অনেক কিছু করার থাকে। এতে আমাদের কিছুটা সুবিধা থাকবে। জাপানের সঙ্গে যে ইকোনমিক পার্টনারশিপ সেখানে ভালো কাজ হচ্ছে। আগের সরকার করেছে। বর্তমান সরকারও সেটি এগিয়ে নিচ্ছে। এটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু বাংলাদেশে জাপানস এনার্জি ফর আ নিউ এরার (জেরা) বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়ে একটু ঝামেলা আছে। ফলে জেরা চুক্তিটি আগাচ্ছে না। এগুলো আমাদের জন্য নেতিবাচক দিক।’

 

 

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাপানকে যে বিনিয়োগের উৎস হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেটা তারা এখন পর্যন্ত ঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেনি। অর্থাৎ আমরা বাস্তবে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের গুরুত্ব বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি জাপানে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতরাও বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের গুরুত্ব বোঝাতে এখন পর্যন্ত সক্ষমতা দেখাতে পারেননি বলে দাবি করেন জাপানি সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিরা।

 

 

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যতদূর মনে পড়ে জাপানের আগের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে যখন আসেন তখন অনেক জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে আসে। জাপানিরা নিট অ্যান্ড ক্লিন ব্যবসা করতে চায়। সুষ্ঠু পরিবেশ চায়, যা পায়নি বলেই জাপানি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ নিয়ে আর আসেনি। বেসরকারি খাতে জাপানসহ অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক ও পদ্ধতি বা প্রক্রিয়াগত জটিলতা, দুর্নীতি, অনিশ্চয়তা—এগুলো জাপানিরা পছন্দ করে না, তাই তারা আসে না। অর্থনৈতিক অঞ্চল একটি অবকাঠামো, কিন্তু প্রকৃত বিনিয়োগ প্রতিবন্ধকতাগুলো থেকে আমরা এখনো মুক্ত হতে পারিনি। জাপানিরা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও সফিস্টিকেটেড। তারা শান্তিপ্রিয় মানুষ, বিনিয়োগের পরিবেশটাও তেমনই চায়। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখলে তারা হতাশ হয়। সরকারি পর্যায়ে এক নম্বর দাতা হলেও কিন্তু বেসরকারি খাতে জাপানের বিনিয়োগ সম্ভাবনার তুলনায় খুবই নগণ্য। আমি মনে করি, জাপানকে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়ার মতো কাজও আমরা করি না। জাপানকে যে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি এ ধারণাটি জাপানিরা কখনই পায়নি।’

 

 

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নির্বাহী চেয়ারম্যানের অবর্তমানে কোনো বক্তব্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।