চট্টগ্রামে হচ্ছে দেশের প্রথম মনোরেল
[সূত্র : শেয়ার বিজ, ২ জুন ২০২৫]

চট্টগ্রাম মহানগরে দেশের প্রথম মনোরেল চালু হতে যাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে নগরে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। চসিকের প্রস্তাবে জার্মানি ও মিসরের জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি ওরাসকম এবং আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ মনোরেল নির্মাণে অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নগরীতে মনোরেল নির্মাণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চসিকের সঙ্গে ওরাসকম গ্রুপ ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে সিটি মেয়র, অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা স্মারকের আলোকে ওরাসকম কোম্পানি ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে।
সিটি মেয়র ডা শাহাদত হোসেন বলেন, মনোরেল হলো আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন রেলব্যবস্থা। মনোরেলের ক্ষেত্রে মেট্রোরেলের চেয়ে ৪০ শতাংশ অর্থের সাশ্রয় হবে। এর জন্য ব্যাপক জায়গার প্রয়োজন হয় না এবং স্থাপনার মধ্যেও লাইনটি চালু করা যায়। মনোরেল এক চাকার ট্রেন। এক চাকার ওপর চলে। দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে মনোরেল স্থাপন করে চালু করা সম্ভব।
চসিক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে মনোরেলের ব্যাপারে ওরাসকম ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ আগ্রহী। তারা চট্টগ্রামে মনোরেল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিদেশি এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে ধরলে তারা নিজস্ব অর্থায়নে নগরীতে মনোরেল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় যানজট নিরসন ও বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে মনোরেল নির্মাণের ব্যাপারে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের আগ্রহে এই প্রকল্পের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হলেও তা মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যায়। তবে মেট্রোরেল নয়, এবার নগরবাসীর প্রতিদিনের চলাফেরায় স্বস্তি ফেরাতে মনোরেল চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে সিটি করপোরেশন। মনোরেলের মাধ্যমে নগরীতে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার নবদিগন্তের সূচনা করতে যাচ্ছে ওরাসকোম ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ। ওরাসকম ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপও বড় প্রতিষ্ঠান। এই দুই কোম্পানি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে। সংস্থা দুটি চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় মনোরেল নির্মাণের নিজস্ব অর্থায়নে মনোরেল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। সিটি মেয়রও নগরীতে মনোরেল নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহী হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ওরাসকম ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপের সমঝোতা চুক্তি সই হয়। এরপর তারা ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে। তারা পুরো প্রকল্পে অর্থায়ন করবে এবং প্রকল্পটির বাস্তবায়নও তারা করবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে মনোরেল নির্মাণ করা হলে নগরীর যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। যানজটও পুরোপরি নিরসন হবে। মনোরেল নির্মাণে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাস্তবায়নে সময়ও কম লাগে। মনোরেল এক চাকার ওপর চলে। নগরীর বিদ্যমান সড়কের একপাশে মনোরেলের একটি ট্র্যাক (লাইন) বসালেই হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৮ জুন নগরীতে মনোরেল চালু করতে চসিককে প্রস্তাব দিয়েছিল চীনের প্রতিষ্ঠান উইটেক। প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রতিনিধিদল ওইদিন টাইগারপাস চসিক কার্যালয়ে তৎকালীন মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ প্রস্তাব দেয়। একই বছরের ১৯ মে মনোরেল চালুর প্রস্তাব করেছিল চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান উইহায় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ কোম্পানি এবং চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানির একটি টিম।