দ্য গার্ডিয়ানের এক্সপ্লেইনার ট্রাম্পের দাবি তিনি ৬টি যুদ্ধ থামিয়েছেন, এটা কতটা সত্যি
দ্য গার্ডিয়ান [প্রকাশ : প্রথম আলো, ১৯ আগস্ট ২০২৫]

হোয়াইট হাউসে ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনার সময় নিজেকে তথাকথিত ‘প্রধান শান্তিদূত’ হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুটি বড় দাবি করেছেন। একটি হলো, তিনি যুদ্ধবিরতি নয়, বরং স্থায়ী শান্তিচুক্তি চান। আর আরেকটি হলো, চলতি বছর তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতিমধ্যে ছয়টি যুদ্ধ থামিয়েছেন।
তবে ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য তাড়াহুড়ায় থাকা ট্রাম্প এতটাই দ্রুত চলছেন যে তিনি কখনো কখনো সত্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন।
ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসন দাবি করেছে, তারা ইসরায়েল ও ইরান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান, সার্বিয়া ও কসোভো এবং মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সংঘাত মীমাংসায় ভূমিকা রেখেছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন এ দাবিগুলোকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করছে। কিছু ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিগুলো পুরোপুরি সত্যও নয়। যেমন কঙ্গোর মতো দেশগুলোয় সহিংসতা চলছেই। কাতারের দোহায় শান্তিচুক্তির জন্য গতকাল সোমবারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তবে রুয়ান্ডা–সমর্থিত বিদ্রোহীরা তাতে সাড়া দেননি।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ইরানে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এরপর ইরানকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দিয়েছে তারা। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে গত মে মাসের সংঘাত থামাতে ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লি।
ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসন দাবি করেছে, তারা ইসরায়েল ও ইরান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান, সার্বিয়া ও কসোভো এবং মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সংঘাত মীমাংসায় ভূমিকা রেখেছে।
মিসর ও ইথিওপিয়াও তাদের সংঘাতের মূল কারণ সমাধানে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। নীল নদে ইথিওপিয়া নির্মিত একটি বাঁধ নিয়েই মূলত দুই দেশের বিরোধ চলছে। আর সার্বিয়ার দাবি, কসোভোর সঙ্গে যুদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনাই তাদের ছিল না। অথচ ট্রাম্প সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে সংঘাত ঠেকানোর জন্য নিজের কৃতিত্ব দাবি করে থাকেন।
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ট্রাম্প নিজেই বিভিন্ন সময়ে বলেছেন যে তিনি এসব সংঘাতের সমাধানে যুদ্ধবিরতি চান। কিন্তু এখন তিনি তাঁর সুর পাল্টাতে চাইছেন এবং ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন।
ট্রাম্প যে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চাইছেন না, সে ঘোষণা এসেছে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের পর। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনার আগে ইউক্রেনকে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করতে হবে।
ইউক্রেনে চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এ প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। পুতিন চান রাশিয়া কোন কোন এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে, তা নির্ধারণ করতে। আর কিয়েভ চায়, কোনো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হোক।
গতকাল সোমবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এখন আর যুদ্ধবিরতি চাইছেন না।
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, ‘চলতি বছরে আমি যে ছয়টি চুক্তি করেছি, সব কটি যুদ্ধ চলমান অবস্থাতেই হয়েছিল। আমি কোনো যুদ্ধবিরতি করিনি। আমার মনে হয়, আপনার কোনো যুদ্ধবিরতির দরকার নেই।’
তবে এর আগে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্যে তাঁর সুর ভিন্ন ছিল। গত ১০ মে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতের বেলায় এক দীর্ঘ আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সাধারণ বিবেচনাবোধ এবং অসাধারণ বিচক্ষণতাকে কাজে লাগানোর জন্য দুই দেশকে সাধুবাদ জানাই।’
ট্রাম্প যে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চাইছেন না, সে ঘোষণাটি এসেছে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের পর। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনার আগে ইউক্রেনকে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করতে হবে।
গত ২৬ জুলাই ট্রাম্প বলেছিলেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে তিন দিন ধরে সংঘর্ষ হওয়ার পর তিনি দুই দেশের নেতাদের ফোন করে যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প তখন লিখেছিলেন, ‘কম্বোডিয়ার সঙ্গে ফোনালাপ শেষ হয়েছে। তবে থাইল্যান্ড কী বলবে, তার ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধের অবসান ও যুদ্ধবিরতি বিষয়ে আবারও ফোন করব বলে আশা করছি। আমি একটি জটিল পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি!’
ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত থামানোর বিষয়ে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েল ও ইরান চূড়ান্তভাবে সম্মত হয়েছে।’
পুতিন এবং জেলেনস্কির সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকের কয়েক সপ্তাহ ও কয়েক দিন আগে ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য যেসব আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা এক জায়গায় জড়ো করে প্রকাশ করেছে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এমএসএনবিসি।
তবে ট্রাম্প দ্রুত সাফল্য দেখার জন্য নিজের আগের বক্তব্যগুলো থেকে সরে আসছেন। সংঘাত থামাতে তিনি এখন পুতিন–সমর্থিত একটি পরিকল্পনার পথেই হাঁটছেন। ট্রাম্প এখন বুঝে গেছেন যে এ সংঘাত থামানোর কাজটি তাঁর ধারণার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।