কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ফের যেন অর্থ পাচার চাঙ্গা না হয়

ড. মইনুল ইসলাম । সূত্র : কালবেলা, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফের যেন অর্থ পাচার চাঙ্গা না হয়

বেশ কয়েক মাস রেমিট্যান্সের ডলারের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কে ডলারের দাম ১২১-১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পর গত মাসে তা আবার নাটকীয়ভাবে বেড়ে ১২৭-১২৮ টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল। এটা বিপজ্জনক প্রবণতা, কারণ এর ফলে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়াস ভন্ডুল হয়ে যাবে। এই হঠাৎ বৃদ্ধির জন্য এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির অজুহাত তুলে ধরেছে।

 

কিন্তু আমার সন্দেহ হচ্ছে যে, দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার আবার চাঙ্গা হতে শুরু করার সুস্পষ্ট লক্ষণ ফুটে উঠেছে রেমিট্যান্স ডলারের এহেন দামের উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে। সেজন্য কলামের প্রথমেই আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি পুঁজি পাচারের বিষয়ে আরও কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করতে। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ লাই পেয়ে গত এক দশকে বিদেশে পুঁজি পাচার দেশের অর্থনীতিতে ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত হয়েছিল।

 

 

গত ৫ আগস্ট হাসিনার স্বৈরশাসনের উৎখাতের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে। আগস্টের ২৯ তারিখে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। কমিটি গত ১ ডিসেম্বর অধ্যাপক ইউনূসের কাছে তাদের শ্বেতপত্রটির খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শ্বেতপত্রটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়ন বয়ানের ব্যবচ্ছেদ’ (ডিসসেকশন অব এ ডেভেলপমেন্ট ন্যারেটিভ)।

 

ড. দেবপ্রিয় হাসিনার শাসনামলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ‘চামচা পুঁজিবাদ’ (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) থেকে সরাসরি ‘চোরতন্ত্রে’ (ক্লেপ্টোক্রেসি) রূপান্তরিত হওয়ার দাবি করেছেন। হাসিনা তার স্বৈরাচারী শাসনামলে তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, দলীয় নেতাকর্মী, কতিপয় অলিগার্ক ব্যবসায়ী এবং পুঁজি-লুটেরাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারি খাতের প্রকল্প থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। এই পুঁজি-লুণ্ঠনের কেন্দ্রে ছিল হাসিনাপুত্র জয়, রেহানাকন্যা টিউলিপ ও রেহানাপুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও তার পুত্র শেখ ফাহিম, শেখ হেলাল, তার ভাই শেখ জুয়েল ও তার পুত্র শেখ তন্ময়, সেরনিয়াবাত হাসনাত আবদুল্লাহ ও তার পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ, শেখ তাপস, শেখ পরশ, লিটন চৌধুরী ও নিক্সন চৌধুরী এবং হাসিনার অন্যান্য আত্মীয়স্বজন।

 

 

আর ছিল এস আলম, সালমান এফ রহমান, সামিটের আজিজ খান, বসুন্ধরার আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রুপের ওবাইদুল করিম ও নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের মতো লুটেরা অলিগার্ক ব্যবসায়ী এবং হাজার হাজার লুটেরা রাজনীতিবিদ ও দুর্নীতিবাজ আমলা। শ্বেতপত্র কমিটির গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বৈরশাসক হাসিনার সাড়ে পনেরো বছরের লুটপাটতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার হিসাবে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুণ্ঠিত হয়ে দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে ব্যাংকিং ও ফিন্যান্সিয়াল খাত, তারপর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত, তারপর ভৌত অবকাঠামো খাত এবং এরপর তথ্যপ্রযুক্তি খাত। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, ভারত এবং কয়েকটি ‘ট্যাক্স হেভেন’ দেশ সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচারের সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

 

 

লুটেরা রাজনীতিবিদদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় অলিগার্ক ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের খেলোয়াড়, দুর্নীতিবাজ আমলা, ঠিকাদার ও মধ্যস্বত্বভোগী, হাসিনার আত্মীয়স্বজন এবং ‘ইনফ্লুয়েন্স প্যাডলার’ ও ‘হুইলার-ডিলাররা’ এই লুটপাটতন্ত্রের প্রধান খেলোয়াড়। এই লুটেরারা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে দেশের নির্বাহী বিভাগ, সিভিল প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো, সরকারি রাজস্ব আহরণ বিভাগগুলো ও বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগগুলোকে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফায়দা হাসিলের অংশীদার করে ফেলেছে। দেশের বিনিয়োগ ও রাজস্ব আহরণকে এরা দুর্বল করে ফেলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধস নামিয়েছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনকে তছনছ করে দিয়েছে।

 

 


হাসিনার স্বৈরশাসন উৎখাতের পর মাত্র কয়েকজন ব্যতীত ওপরে উল্লিখিত লুটেরা ও পুঁজি পাচারকারীদের প্রায় সবাই নানাভাবে দেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে গেছে। কয়েক লাখ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে এসব পলাতক লুটেরা একেকজন দেশের আন্তর্জাতিক সীমানার নানা গোপন পথে বিজিবি-বিএসএফ এবং সংগঠিত চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের মদদে প্রধানত ভারতে পাড়ি দিয়েছে। কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এখন তাদের বেশিরভাগেরই সাময়িক অর্থ-সংকটে পড়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

 

 

অতএব, তাদের পরিবারের সদস্য-সদস্যা ও আত্মীয়স্বজনদের সহায়তায় তাদের বিদেশে অবস্থানের অর্থায়ন সংকট কাটানোর জন্য সেসব দেশে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ তাদের জন্য প্রয়োজন হওয়াই স্বাভাবিক। আমার জোর সন্দেহ হচ্ছে যে, হঠাৎ করে রেমিট্যান্স-ডলারের বাজারে চাহিদার বড় ধরনের স্ফীতির পেছনে উপরে বর্ণিত ব্যাপারটাই প্রধান ভূমিকা রেখে চলেছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর হুন্ডিওয়ালাদের ব্যবসায় কিছুটা ধস নেমেছিল। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে আগস্ট মাস থেকে যে অভূতপূর্ব জোয়ার পরিদৃষ্ট হয়ে চলেছে, সেটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, এই কয়েক মাসে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থ পাচার বেশ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল।

 

 

কয়েক সপ্তাহ আগে লাফিয়ে রেমিট্যান্স-ডলারের বাজারে দামের বৃদ্ধি আলামত দেখিয়ে দিয়েছে যে, দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর ব্যবসা আবার উল্লেখযোগ্যভাবে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক রেমিট্যান্স-ডলার কেনার জন্য যে কয়েকদিন ধরে উদগ্র আগ্রহ প্রকাশ করে চলেছে, সেটাও তাদের এলসি দেনা পরিশোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে মনে করা যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। অতএব, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প দেখছি না।

 

 

এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ জারি করেছে যে, ডলারপ্রতি ১২৩ টাকার বেশি দাম প্রদান করা যাবে না। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি তারিখ থেকে রেমিট্যান্স-ডলার এবং রপ্তানি আয়ের ডলারের জন্য একই দাম প্রযোজ্য হবে, কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে জরিমানা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার দাম নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি পরিত্যাগ করে দিনে দুবার ডলারের দাম (ভিত্তিমূল্য) নির্ধারণ করে বাজারের ওপর ডলারের দামের ওঠানামাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ১২ জানুয়ারি ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে। আমি এই পদক্ষেপকে সঠিক মনে করছি। (একই সঙ্গে, ৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ থেকে কিছু বড় লেনদেনের রিপোর্ট প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠাতে হচ্ছে)।

 

 

আমি এর সঙ্গে যোগ করতে চাই, শুধু জরিমানা নয় আরও কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা এবং প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের মতো দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এক্সচেঞ্জ হাউস এবং ব্যাংকগুলোর টনক নড়বে। মনে রাখতে হবে, গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী কয়েক মাসে অর্থনীতি ‘মেল্টডাউন’ এড়াতে সক্ষম হয়েছে প্রধানত বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সের জোয়ার, রপ্তানির প্রবৃদ্ধি এবং আমদানি-ব্যয়ের স্থিতিশীলতার কারণে। এ তিনটি ইতিবাচক ধারাকে নস্যাৎ করার জন্য এক শ্রেণির ব্যবসায়ী উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান কঠোর মনিটরিং শিথিল করা যাবে না। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন থামিয়ে রিজার্ভকে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরানো গেছে, যেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অভিনন্দন। কিন্তু ডলারের দামের স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়ার উপক্রম হওয়ার ব্যাপারটিকে কঠোরভাবে চ্যালেঞ্জ করতেই হবে।

 

 

এর ব্যত্যয় হলে আসন্ন রমজানের রোজার আগে মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনার কঠিন সংগ্রামে জয়ী হওয়া যাবে না। আরও বহুদিন ধরে বিদেশে পুঁজি পাচারের চাহিদা চাঙ্গা করার জন্য বিদেশে পালিয়ে থাকা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বড়সড় ‘সাবোটিয়ারের’ ভূমিকা পালন করেই যাবে। ডলার বাজার স্থিতিশীল হয়ে গেলে এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের ইতিবাচক জোয়ার অব্যাহত থাকলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো তারা ঠেকাতে পারবে না। অতএব, আগামী এক বছর ধরে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা শক্তিশালী করা, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত করা, ডলারের বাজারে হুন্ডিওয়ালাদের দাপটকে চ্যালেঞ্জ করা এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণের লাগাম অটুট রাখা সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হতেই হবে।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ড. আহসান মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশকিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে অভূতপূর্ব লুণ্ঠনের শিকার হওয়া আর্থিক খাতকে ‘মেল্টডাউনের’ আশঙ্কামুক্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের ৬১টি ব্যাংকের প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও হাসিনার খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে তার আত্মীয়স্বজন, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় অলিগার্ক ব্যবসায়ী ও ‘রবার ব্যারনে’ পরিণত হওয়া লুটেরাদের পুঁজি-লুণ্ঠনের অবিশ্বাস্য সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এত ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছিল স্বৈরশাসক হাসিনা। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত বারবার আপত্তি জানানো সত্ত্বেও এহেন খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত থেকে হাসিনাকে নিবৃত্ত করা যায়নি।

 

 

একই সঙ্গে এটাও বলা প্রয়োজন যে, হাসিনা চট্টগ্রামের এস আলমকে সাতটি ব্যাংকের ওপর একচেটিয়া মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তার পতনের পর এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, এই সুযোগকে ব্যবহার করে এস আলম এ সাতটি ব্যাংক থেকে দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি বিদেশে পাচার করে নিয়ে গেছে। অতি সম্প্রতি হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান রিমান্ডে স্বীকার করেছেন, এস আলম বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি লুট করেছে তার অর্ধেকটাই দিতে হয়েছে জয় ও টিউলিপকে! সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকোর বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের দায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ২০২৪ সারলর ২৪ সেপ্টেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে, দেশের চলমান ৮২টি প্রকল্পে শেখ হাসিনার কোনো না কোনো আত্মীয়স্বজন জড়িত রয়েছে, যেগুলোর প্রকল্প ব্যয় একান্ন হাজার কোটি টাকার বেশি।

 

 

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গত সাড়ে পাঁচ মাসে অর্থনীতিবিদদের কাছে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়ে চলেছে যে, স্বৈরশাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে ক্ষমতা না হারালেও ‘অর্থনৈতিক মেল্টডাউনে’র অবশ্যম্ভাবী পরিণতি থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে পারতেন না হাসিনা। এদিক থেকে দেখলে মহান আল্লাহতায়ালাকে শোকরিয়া জানাতে হয় যে, তিনি আমাদের আরেকটি শ্রীলঙ্কা হওয়ার লজ্জা থেকে রক্ষা করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়োচিত নীতি পরিবর্তন ধীরে ধীরে অর্থনীতিতে আবার গতি সঞ্চার করতে শুরু করেছে। কিন্তু, বিদেশে পাচার হওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ আদৌ দেশে ফেরত আনা যাবে বলে আমি মনে করি না।

 

 

বর্তমান সরকার হয়তো রপ্তানি আয় এবং ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স প্রবাহের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হবে; কিন্তু কয়েক লাখ কোটি টাকা বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের মাধ্যমে যে হারিয়ে গেল সেটা জাতি কখনোই ফিরে পাবে না। বরং যে আঠারো লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ঋণের সাগরে নিমজ্জিত করে পাচারকৃত অর্থের মাধ্যমে হাসিনা, তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন, কয়েকজন অলিগার্ক ব্যবসায়ী এবং কয়েক হাজার অর্থ পাচারকারী তাদের বাকি জীবন বিদেশে আরাম-আয়েশে কাটিয়ে দিতে পারবে চিন্তা করলে মনের জ্বালা কয়েকগুণ বেড়ে যায় বৈকি!

 

 

লেখক: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি,

একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়