কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

গাজা গণহত্যা বন্ধে বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ জরুরি

ড. মাহফুজ পারভেজ [প্রকাশ: যুগান্তর, ০৩ আগস্ট ২০২৫]

গাজা গণহত্যা বন্ধে বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ জরুরি

গাজায় গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ১ আগস্ট তিনি গাজায় প্রবেশ করেন ইসরাইলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবিকে সঙ্গে নিয়ে। তার সফর কিংবা ফাঁকা বিবৃতি নয়, গাজায় প্রতিদিন অকাতরে ইসরাইলের গণহত্যামূলক অভিযান থামাতে হলে প্রয়োজন জরুরি ও সরাসরি বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ। হতাশাজনকভাবে তেমন প্রচেষ্টা অনুপস্থিত। বরং বিশ্ব দাঁড়িয়ে আছে এমন একটি অক্ষম, সংবেদনহীন, নিষ্ক্রিয় পরিস্থিতিতে, যেখানে সবাই চেয়ে চেয়ে গণহত্যা দেখছে। কেউ কেউ আগ্রাসী ইসরাইলকে সঙ্গত দিচ্ছে। অনেকেই হয়ে আছে বোবা দর্শক। বাস্তবে গণহত্যা বন্ধে প্রতিরোধমূলক ও কার্যকরী কিছুই করছে না কেউই।

 

 

গাজায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক অভিযানের শুরু থেকেই গণবিনাশের অস্ত্র হিসাবে অনাহারকে ব্যবহার করেছে জায়নবাদী অপশক্তি। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি মন্ত্রীরা প্রকাশ্যেই এ কথা বলছেন। অতএব, গাজায় যে বিপর্যয় চলমান, যা ইসরাইলি অবরোধের ফলে এখন চরম দুর্ভিক্ষের পঞ্চম ধাপে পৌঁছেছে এবং যা হয়তো আর ফিরে আসার মতো নয়, তা দেখে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এ পরিস্থিতি পূর্বপরিকল্পিত এবং জায়নিস্ট শাসকগোষ্ঠী সবসময় এমনটাই চেয়েছিল। এখন তা অবিকল সেভাবেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। কারণ এ বিপর্যয় রোধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষে আদৌ কোনো কার্যকর হস্তক্ষেপ করা হয়নি বা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

 

 

বরং, তথাকথিত ‘মুক্তবিশ্ব’, ‘নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা’ কিংবা ‘সভ্যতার মূল্যবোধে’র ধারক ও বাহকরা গাজায় অব্যাহত মানবিক বিপর্যয়কে উৎসাহিত করেছে, কারণ তারা ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতা থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দিয়েছে এবং তার যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ‘নিজেকে রক্ষার অধিকার’ নামে বৈধতা দিয়েছে। সুতরাং, তথাকথিত আধুনিক ও উন্নত আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের পক্ষ থেকে এ ঘটনার ওপর বিস্ময়, উদ্বেগ, হতাশা বা বেদনা প্রকাশ করা শুধু যে অনেক দেরিতে হয়েছে তাই নয়, বরং তা লজ্জাহীন ও সুযোগসন্ধানীমূলকও হয়েছে বটে। প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর অবস্থানও এ তালিকায় বোবা দর্শকের, যা ইতিহাসে একদিন নিকৃষ্ট, কাপুরুষোচিত ও কলংকিত আচরণরূপে চিহ্নিত হওয়ার যোগ্য।

 

 

গণহত্যার বিপরীতে গৃহীত নানা রকমের কৃত্রিম, লোকদেখানো প্রতিক্রিয়াগুলো কখনোই কোনো বাস্তব পদক্ষেপে রূপ নিচ্ছে না, যা ইসরাইলের মতো বিপথগামী রাষ্ট্রের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, এগুলো মূলত সত্যিকারের বা আন্তরিক নয়। এগুলো নিজেদের মুখ রক্ষা করার ব্যর্থ চেষ্টা-একটি করুণ প্রয়াস, যেন ভবিষ্যতে বিচার ও জবাবদিহির সময় এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না ওঠে।

 

 

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকেই জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা গাজায় চরম মানবিক বিপর্যয়ের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) ইতোমধ্যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে একাধিক নির্দেশ জারি করেছেন, যার বাস্তবায়নের মানে হতো একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়া। এছাড়াও ICJ পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলি দখলদারত্বকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।

 

 

কিন্তু গাজার ঘটনায় যারা কাঁদু কাঁদু মুখে শোক প্রকাশ করছে, তারা এসব আদেশকে বাস্তবে মোটেই গুরুত্ব দেয়নি বা এগুলো বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা ইসরাইলের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, অস্ত্র বিক্রির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, এমনকি গাজার অবরোধ ভেঙে ত্রাণ প্রবেশ করানোর মতো ন্যূনতম নৈতিক বলিষ্ঠতা বা সাহসও দেখাতে পারেনি। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার অন্যান্য মন্ত্রী, যাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন, তারা আজও স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করছে এমন দেশগুলোতে, যারা ICC-এর সদস্য এবং আইনের আওতায় এসব পরোয়ানা কার্যকর করার বাধ্যবাধকতা রাখে।

 

 

এই যদি হয় ‘মুক্তবিশ্ব’, তবে সেটির সংজ্ঞাই প্রশ্নবিদ্ধ। এবং এদের বাহানা চরম তিরস্কারের বিষয়। এরা বিশ্বকে পরিণত করেছে ভণিতার রঙ্গমঞ্চে। সবচেয়ে খারাপ দিক হলো-এ অকার্যকর বিবেকবোধ ও মানবিক উদ্বেগের ভান মূলত একটি বিলম্ব কৌশল, যার উদ্দেশ্য হলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে-এমন মিথ্যা ছায়াচিত্র তৈরি করা, যাতে করে বাড়তে থাকা বৈশ্বিক জনরোষ কিছুটা প্রশমিত করা যায়। অথচ গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ আর কতদিন এভাবে প্রাণ দিতেই থাকবে?

 

 

বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহর-প্যারিস, লন্ডন, বার্লিন কিংবা আঙ্কারা, আম্মান, কায়রোয় বসে থাকা ‘নির্মম, নিষ্ঠুর ও ক্ষণস্থায়ী’ চরিত্রের নেতারা নিঃসন্দেহে এ হিসাব কষে চলেছে-একসময় ক্লান্তি আসবেই; মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যাবে এ গণহত্যায়; এটা তখন প্রতিদিনের স্বাভাবিক বাস্তবতা হয়ে উঠবে। গাজায় হচ্ছেও তা-ই। অতীতের প্রতিবাদ-স্পৃহার লেশটুকুও আজ আর নেই।

 

 

অথচ, এক সময় ২০২৪ সালের মার্চে গাজা সিটিতে ঘটে যাওয়া ‘আটা গণহত্যা’ বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল এবং জনমনে ও সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। কিন্তু এখন, প্রতিদিন এ ধরনের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ঘটছে গাজায়, কিন্তু তথাকথিত মূলধারার মিডিয়া, সিভিল সমাজ, জনমত সেগুলো নিয়ে আর মাথাই ঘামাচ্ছে না। এমনকি আমাদের স্বাভাবিক জীবন ঠিকই চলছে, ঠিক সেই সময়ে, যখন গাজার মানুষ ক্ষুধার তাড়নায় শরীর হারিয়ে পথের ধারে শরতের পাতার মতো ঝরে পড়ছে, শত শত শিশু অনাহারে মারা যাচ্ছে, কেউ কার্ডবোর্ড খেতে বাধ্য হচ্ছে, কেউবা টানা কয়েকদিন ধরে শুধু নুন-মিশ্রিত পানি খেয়ে বেঁচে আছে অবধারিত মৃত্যুর অপেক্ষায়।

 

 

এ সবকিছুই ঘটছে যখন ট্রাকভর্তি ত্রাণ গাজার সীমান্তে আটকে রাখা হয়েছে ইসরাইলি বাহিনীর দ্বারা এবং মিশরের ভূমিকার কারণেও। এমন অকল্পনীয় নৃশংসতা ও নির্মমতা দেখে বিকারহীন বিশ্ব নিজের নপুংসক অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে প্রতিদিন। এর ওপর আবার ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশে গড়ে উঠেছে এক ভয়ংকর খেলা, যেখানে গাজার খাদ্যের জন্য হাহাকার করা মানুষদের লক্ষ্য করে হত্যা চালানো হচ্ছে, সেসব মৃত্যুকূপে, যেগুলোকে ত্রাণকেন্দ্রের ছদ্মবেশে পরিচালিত করছে এ দুই দেশের যৌথভাবে প্রতিষ্ঠিত এক ‘অমানবিক ফাউন্ডেশন’।

 

 

আটার গণহত্যা এখন যেন গাজায় শৈল্পিক পরিসরে ও ব্যাপক অবয়বে ঘটছে। এমন কোনো দিন যাচ্ছে না, যেদিন ইসরাইলি সেনারা ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে না। যেমনটা ঘটেছিল ২০২৪ সালের মার্চের আটা গণহত্যায়। আর এখন এসব হত্যার জন্য তুচ্ছ ও দুর্বল কোনো অজুহাতও প্রয়োজন পড়ছে না। এতটাই গভীর হয়েছে দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবং অমানবিকতার স্বাভাবিকীকরণ আর গাজার বিপর্যস্ত পরিস্থিতি।

 

 

এসবের পাশাপাশি বোমাবর্ষণ, ড্রোন হামলা, গোলাবর্ষণ, কোয়াডকপ্টারের তথাকথিত ‘নির্ভুল হামলায়’ সাধারণ মানুষের প্রাণনাশ, শরণার্থী তাঁবুতে আগুন লাগিয়ে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা-সবই অনবরত চলছে গাজা নামক এক অলিখিত কারাগার কিংবা নরমেধ যজ্ঞের ময়দানে। প্রাচীন ভারতীয় ‘পৌরাণিক নরমেধ যজ্ঞের’ ধারণাটি মূলত সাহিত্য, পুরাণ ও লোককথায় একটি কল্পিত বা প্রতীকী ধারণা হিসাবে প্রচলিত হলেও আধুনিককালের গাজায় সেটারই বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছে ইসরাইলের হন্তারক সেনাবাহিনী।

 

 

ইসরাইলি নেতারা প্রকাশ্যেই বলছে, তারা গাজার মানুষকে একটি ছোট এলাকায় ‘ঘনীভূত’ করতে চায় এবং বাকি গাজা ভূখণ্ড সামরিকভাবে দখল করতে চায়। এটি জাতিগত নিধনের পরিকল্পনার আরেকটি প্রকাশ্য ঘোষণা এবং গাজা নামক বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত বন্দিশালাকে এক কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে রূপান্তরের দৃষ্টান্ত। তবে অবশ্যই এ ঘটনার তুলনা কখনোই ‘আউশভিটসে’র সঙ্গে করা যাবে না, কারণ তাতে ‘অ্যান্টি-সেমিটিক’ হওয়ার অভিযোগ আসবে।

 

 

তারপরও বিশ্বজুড়ে একটি বিপুল জনগোষ্ঠী এ গণহত্যাকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। গাজার অবরোধ ভাঙতে বিভিন্ন সংগঠিত গণউদ্যোগ, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের দ্বারা বয়কট আন্দোলন তীব্রতর হওয়া, রাষ্ট্র কর্তৃক অপরাধ হিসাবে গণ্য করার পরও নাগরিক অবাধ্যতা ও সরাসরি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা এবং হেগভিত্তিক উদ্যোগকে কেন্দ্র করে গ্লোবাল সাউথের একাধিক দেশ ও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে সমন্বিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের উদ্ভব-এসবই ইঙ্গিত দেয়, দশকের পর দশক ধরে চলা ইসরাইলি দখলদারত্ব, বসতিস্থাপন-উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে এক বড় ধরনের মোড় ঘুরতে শুরু করেছে।

 

 

জায়নিস্ট শাসনের সহিংসতার প্রকৃতি যে আরও নগ্ন ও তীব্র হয়ে উঠেছে, তা একদিকে এ পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় তাদের হতাশা ও আত্মবিধ্বংসী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। তারা মরিয়া হয়ে তাদের ‘চূড়ান্ত সমাধান’ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে; এর আগেই যেন একটি ন্যায়সংগত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাধান সম্ভব না হয়ে ওঠে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদিদের এই শতবর্ষী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে ইতি টানার সম্ভাবনা যেন বাস্তবে রূপ না পায়।

 

 

তবে, এ সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ, যার একটি রূপরেখা পাওয়া যায় হেগ গ্রুপের বোগোটা কনভেনশনে ঘোষিত সুপারিশসমূহে, যা দক্ষিণ আফ্রিকা ও কলম্বিয়ার যৌথ সভাপতিত্বে আয়োজিত হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে বারোটি দেশ-বলিভিয়া, কলম্বিয়া, কিউবা, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, নিকারাগুয়া, ওমান, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস এবং দক্ষিণ আফ্রিকা-ঘোষণা করেছে, তারা নিজস্ব আইনগত, প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক কাঠামোর মাধ্যমে ছয়টি পদক্ষেপ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করবে। এ পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্য হলো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক বয়কট এবং আন্তর্জাতিক আইনের সর্বজনীন বিচারিক এখতিয়ার প্রয়োগ; যা দীর্ঘমেয়াদে জায়নিস্ট শাসনের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। যতই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মিত্রদের সমর্থন শক্তিশালী হোক না কেন, এ প্রতিবাদ ইসরাইলের নৈতিক পরাজয়ের শামিল। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের ক্ষেত্রে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে গাজায় চলমান চরম মানবিক বিপর্যয় এবং লাগাতার গণহত্যা থামাতে হলে আরও ব্যতিক্রমধর্মী ও সাহসী পদক্ষেপ প্রয়োজন, যেমন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন; যাতে জেনোসাইডের অবসান নিশ্চিত করা যায়।

 

 

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যতিক্রম বাদ দিলে BRICS দেশগুলোর বাকি সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাজনক। ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তারা কেবল বক্তব্য দিয়েই দায় সারছে। এটা স্পষ্ট যে, নিুস্তরে সংগঠিত ব্যাপক জনচাপ ছাড়া তারা নড়বে না। যে দেশ সাধারণত কোনো আন্তর্জাতিক অপরাধের আনুষ্ঠানিক নিন্দা জানায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয়, এমন দেশও বরং ইসরাইলের সঙ্গে সামরিক ও নিরাপত্তা বাণিজ্য অব্যাহত রাখছে, যা উদ্বেগজনক। বর্তমান আন্তর্জাতিক ক্ষমতার রাজনৈতিক আদর্শগত অবস্থান বিবেচনায়, জনচাপ এলেও তাদের পক্ষপাতমূলক অবস্থান পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব।

 

 

অন্তত গ্লোবাল সাউথের দরিদ্র দেশগুলো আর প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলোর নৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা ও মানবিক দায়বদ্ধতা বজায় রাখার জন্য উচিত আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের পক্ষে দাঁড়ানো-না হলে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের পাশে গণহত্যার সহঅভিযুক্ত হিসাবে ইতিহাসে লেখা থাকবে তাদের নামও।

 

 

গাজা গণহত্যা বন্ধে বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ জরুরি। এ সত্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তথাপি গাজা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্পর্শকাতরতাহীন ও নিস্পৃহ। ভাবলেশহীনতা তাদেরকে গণহত্যার সহঅভিযুক্ত করেছে এবং অমানবিকতার অপরাধে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।

 

 

প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ : চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়