কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

গাজার ফিলিস্তিনিদের কি শেষ রক্ষা হবে

এ কে এম আতিকুর রহমান । সূত্র : কালের কণ্ঠ, ১০ মার্চ ২০২৫

গাজার ফিলিস্তিনিদের কি শেষ রক্ষা হবে

আমরা জানিপ্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্দানে পাঠিয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা হিসেবে পুনর্গঠিত করার একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই ঘোষণা দেন।

 

 

 ট্রাম্পের ওই ঘোষণায় শুধু আরব রাষ্ট্রগুলো বা মুসলিম দেশগুলোই নয়বিশ্বের অনেক দেশই তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। এমনকি গত মাসে ইসরায়েল সফরকালে মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের ছয় সিনেটরের একটি প্রতিনিধিদলের সদস্য সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আরব অঞ্চলের নেতাদের গাজা পুনর্গঠন সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা হাজির করার আহ্বান জানানযা মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসনে বাস্তবসম্মত হবে এবং ফিলিস্তিনিদের স্বাধিকারের অধিকারকে সমুন্নত রাখবে।

 

 

 

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য গত মাসেই মিসরে আরব দেশগুলোর সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটি স্থগিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২১ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আরব নেতাদের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। বৈঠকে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনসহ ফিলিস্তিনিদের যাতে সেখান থেকে না সরিয়ে নেওয়া যায়, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে নেতারা ৪ মার্চ কায়রোতে জরুরি আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনের ব্যাপারে একমত হন। সেই ধারাবাহিকতায় ৪ মার্চ কায়রোতে অনুষ্ঠিত হলো আরব লীগের জরুরি শীর্ষ সম্মেলন।

 

 

 

সম্মেলনে আরব লীগের সব সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জাতিসংঘের মহাসচিব এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনে ট্রাম্পের বিকল্প পরিকল্পনা সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করে আরব দেশগুলো। এ ছাড়া আরব নেতারা ৫৩ বিলিয়ন ডলারের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেন, যা গাজার প্রায় ২০ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিকে তাদের ভূখণ্ডে থাকার সুযোগ করে দেবে। সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ‘সত্যিকার শান্তি’ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

 

 

 

তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রশংসা করে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনের অবদান ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হতো না, যা আমরা আশা করি অব্যাহত থাকবে।’ পরিকল্পনাটিতে লোকজন না সরিয়েই ২০৩০ সালের মধ্যে গাজা পুনর্নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলের সামরিক আক্রমণ ও গোলাবর্ষণের ফলে পাঁচ কোটি টনেরও বেশি ধ্বংসাবশেষের স্তূপ পরিষ্কার করা এবং একই সঙ্গে অবিস্ফোরিত বোমা অপসারণ করা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই পরিকল্পনায় পরবর্তী বছরগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেকসই, সবুজ ও চলাচলের উপযোগী আবাসন এবং নগর এলাকা নির্মাণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কৃষিজমি সংস্কারসহ শিল্প অঞ্চল এবং বৃহত্ পার্ক এলাকা তৈরি করার কথাও তাতে রয়েছে।

 

 

তা ছাড়া একটি বিমানবন্দর, একটি মাছ ধরার বন্দর এবং একটি বাণিজ্যিক বন্দর স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

 

এই পরিকল্পনা সম্পর্কে আরব লীগের মহাসচিব বলেছেনফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মিসরের দেওয়া প্রস্তাবটি সম্মেলনে অনুমোদন পাওয়ায় এটি একটি আরব পরিকল্পনায় পরিণত হয়েছে। তিনি জানানশীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানানো হয়েছে। তাঁর মতেমিসরীয় পরিকল্পনা গাজায় একটি নতুন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পথ তৈরি করেছে।

 

 

পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত না করার এ ধরনের পরিকল্পনায় সমর্থন দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসও পরিকল্পনাটিকে সমর্থন জানিয়েছে। এমনকি তারা ফিলিস্তিনের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার পদক্ষেপকে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে। কার্যত তারা গাজার শাসনভার ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। মিসরের পরিকল্পনাটি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সমর্থনও লাভ করেছে। 

 

 

অন্যদিকে হোয়াইট হাউস তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় আরব দেশগুলোর মতামতকে স্বাগত জানালেও জোর দিয়ে বলেছে যে হামাস এই অঞ্চলে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। হোয়াইট হাউস জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস ইঙ্গিত দেনপ্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন যে হামাস গাজা শাসনের দায়িত্বে থাকতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে কায়রো পরিকল্পনায় হামাস একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেযতক্ষণ না একটি সংস্কারকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারে। স্বাভাবিক কারণেই ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনাকে ‘পরিস্থিতির বাস্তবতা উপেক্ষা করার শামিল বলে উল্লেখ করে এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।

 

 

প্রেসিডেন্ট সিসি বলেনগাজায় প্রশাসন পরিচালনা করবে স্বতন্ত্রপেশাদার টেকনোক্র্যাটদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি। তিনি বলেনফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএহাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য মানবিক সহায়তা তদারক এবং উপত্যকাটির বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করবে এই কমিটি। মিসরের দেওয়া প্রস্তাবে গাজার শাসনভার অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে হস্তান্তর করতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ পুনর্গঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত শাসনভার ওই অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে থাকবে।

 

 

কায়রো পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন বিষয়টি হলো গাজা পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ। পুনর্গঠন তহবিলের জন্য তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রযেমনসংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকেই হয়তো বেশি পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেনপুনর্গঠন তহবিল আন্তর্জাতিক অর্থায়ন এবং তদারকির পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের অধীনে থাকবে। গাজা নিয়ে যাদের ঘুম নেইসেই যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে কি কোনো দায়িত্ব নেবে না?

যে বিষয়গুলো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠবেসেগুলোর মধ্যে রয়েছে

 

১. যেহেতু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার ধারাবাহিকতায় কায়রো পরিকল্পনা করা হয়েছেতাই তাঁর কাছে এই পরিকল্পনাটি উত্থাপন করার কথা রয়েছে। উথাপনের পর কী ঘটে অর্থাত্ ট্রাম্প তাঁর প্রতিক্রিয়ায় কী বলেনসেটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ট্রাম্পের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়তাহলে বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক কাঠামো ও পুনর্গঠন তহবিল নিয়ে তাঁর চিন্তা-ভাবনা কী হবে।

 

২. যদিও ইসরায়েল পরিকল্পনাটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেতবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো কিছু শর্ত সাপেক্ষে পরিকল্পনাটি মেনে নিতে পারে।

 

 

৩. কায়রো সম্মেলনে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব মনে করেগাজায় হামাসের সশস্ত্র উপস্থিতি থাকলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কোনো পরিকল্পনায়ই সায় দেবে নাতারা আপত্তি জানাবেই। তাই হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রইসরায়েল এবং কিছু আরব রাষ্ট্র একমত হয়ে অন্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে কি না এবং কিভাবে করা হবে সে ব্যাপারে মূল দায়িত্ব নিতে হবে আরব রাষ্ট্রগুলোকেই।

 

 

৪. মিসরীয় কাঠামোতে প্রাথমিকভাবে গাজার দায়িত্বে টেকনোক্র্যাট এবং হামাসের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের চিন্তা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পরামর্শ দিলে তা গ্রহণ করা সম্ভব হবে কি না। এ ছাড়া পরিকল্পনায় গাজা এবং ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরকে সুরক্ষিত করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। বিষয়টিতে জাতিসংঘ কী ভূমিকা নিতে পারবেতা নির্ভর করবে ভেটো ক্ষমতার সদস্য দেশগুলোর ওপর।

 

 

৫. সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারা সম্মেলন এড়িয়ে গিয়ে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। এতে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিকল্পনাটির প্রতি ঐক্যবদ্ধ আরব সমর্থন নিয়ে। যেখানে পুনর্গঠন তহবিলের জন্য এই দুটি দেশ থেকেই বেশি পরিমাণ অর্থ পাওয়ার চিন্তা-ভাবনাসে ক্ষেত্রে এই বিষয়টি কি অন্য কিছুর ইঙ্গিত দেয়নাকি এর পেছনে অন্য কোনো সমীকরণ কাজ করছে৬. যদি ট্রাম্প এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে তাঁর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেনসে ক্ষেত্রে আরব লীগের পক্ষে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে কিনাকি তাদের ঐক্যে ফাটল ধরার সম্ভাবনাই বেশি৭. এদিকে ১ মার্চ ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ জারি করেছে ইসরায়েল। ফলে সেখানে খাদ্যজ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খাদ্য সরবরাহ স্থগিত করায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে। সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে যে এর মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না। 

 

 

কায়রো বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট সিসি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘এই পরিকল্পনার সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেকোনো প্রস্তাব বা ধারণাকে আমরা স্বাগত জানাইযা শান্তির জন্য একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার পাশাপাশি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তাঁর এই আহ্বান কতটুকু কার্যকর হবে জানি না। তবে যতটুকু মনে হয়যুক্তরাষ্ট্র যদি মানবিক ভূমিকা নেয় এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করতে আগ্রহী হয়তাহলেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ফিলিস্তিনি নিধন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অটল থাকেনতাহলে ইসরায়েলের মাধ্যমেই তিনি তাঁর সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হবেনতাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সেটি ঘটলে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করা কেউ ঠেকাতে পারবে না। বাস্তবতা হলোযুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশই ইসরায়েলের হাত থেকে ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে পারবে না।

 

লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব