হাম্বানটোটা নিয়ে ফাঁদে শ্রীলঙ্কা
[প্রকাশ : কালবেলা, ০১ জুন ২০২৫]

চীনা ঋণের ফাঁদে এখনো জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। মূলত বেইজিংয়ের অর্থায়নে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর গড়ে ওঠে। চড়া সুদে ধার নিয়ে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে গড়ে তোলেন এ বন্দর দুটি। কিন্তু সেই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে চক্রবৃদ্ধির ফাঁদে পড়ে কলম্বো। এ-সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি ও হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দরের ইজারা দিয়ে কার্যত গ্যাঁড়াকলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি।
এশিয়ার বর্তমান ভূরাজনীতিতে ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ভূকৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। পশ্চিম থেকে পূর্বগামী সব গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ দেশটির ধার ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। সেটাই কলম্বোকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তবে আর্থিকভাবে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কা ২০১৭ সালে হাম্বানটোটায় ১১০ কোটি ডলারের বিনিময়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের জন্য চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্র মালিকানাধীন একটি চীনা কোম্পানি ৯৯ বছরের জন্য বন্দর এবং তার সংলগ্ন ১৫ হাজার একর জমি শিল্পাঞ্চল তৈরির জন্য ইজারা নেয়।
এর আগে চীনের থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে হাম্বানটোটা বিমানবন্দর করে কলম্বো, যা ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। ১৬ হাজার কোটি টাকার এই ঋণ শোধ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠে দেশটির। পরে বাধ্য হয়ে বিমানবন্দরটি পরিচালনার জন্য ভারত ও রাশিয়ার দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এই হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর নিয়ে দীর্ঘদিন করে বিশ্বরাজনীতিতে কথা উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রায়ই বলছে, মূলত চড়া সুদে ঋণ দিয়ে ফাঁদে ফেলে চীন। যার বাস্তব উদাহরণ হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর।
এভাবে চীনকে সমুদ্রবন্দর দেওয়া ঠিক হয়নি বলে ২০১৯ সালে স্বীকারও করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষে। গোটাবায়া বলেছেন, এখন এই চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতে হবে। বিনিয়োগের জন্য ক্ষুদ্র অঙ্কের ঋণের বদলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পোতাশ্রয় দিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত ছিল।