কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ইরান বনাম ইসরায়েল : কার সামরিক শক্তি কত

জামিউর রহমান ১৬ জুন ২০২৫

ইরান বনাম ইসরায়েল : কার সামরিক শক্তি কত

মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী রাষ্ট্র- ইরান ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই একে অপরের বিরুদ্ধে সামরিক ও কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত। রাজনৈতিক উত্তেজনা, ভূরাজনৈতিক সংঘাত, গোপন অভিযান ও সাইবার যুদ্ধ- সব মিলিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা একাধিকবার বিশ্বকে চিন্তিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আরও বেড়েছে। এখানে তুলনামূলকভাবে উপস্থাপন করা হলো তাদের সামরিক শক্তি ও কাঠামোর বিস্তারিত বিশ্লেষণ। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- জামিউর রহমান

 

 

প্রতিরক্ষা বাজেট

সামরিক বাজেট একটি দেশের সামরিক প্রস্তুতির ভিত্তি গঠন করে। ইসরায়েলের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ২৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা ইরানের ৯৯৫ কোটি ডলারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। বাজেটের দিক থেকে ইসরায়েল শুধু ইরানের চেয়ে নয়, বরং বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায়ই সামরিক ক্ষেত্রে অনেক বেশি অগ্রসর। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ১৪৫ দেশের মধ্যে ইসরায়েল রয়েছে ১৯তম স্থানে, আর ইরান অবস্থান করছে ৩৩তম স্থানে। এই বাজেট ব্যয় হয় অস্ত্র আধুনিকীকরণ, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধ প্রস্তুতি ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে।

 

 

নিয়মিত সৈন্য ও রিজার্ভ ফোর্স

সেনাসংখ্যার দিক থেকে ইরান অনেকটাই এগিয়ে। ইরানের সক্রিয় ও রিজার্ভ মিলিয়ে সেনাসংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ৮০ হাজার, যার মধ্যে নিয়মিত সৈন্য রয়েছে প্রায় ৮ লাখ এবং রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে সাড়ে তিন লাখ। বিশাল এই জনবল কেবল সংখ্যায় নয়, সাংগঠনিক দিক থেকেও বহুমাত্রিক, যার মধ্যে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) একটি শক্তিশালী উপাদান। অন্যদিকে ইসরায়েলের সেনাসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমÑ ৬ লাখ ৭০ হাজার। তবে দেশটি একটি শক্তিশালী রিজার্ভ কাঠামো গড়ে তুলেছে, যেখানে রিজার্ভ সৈন্যসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৬৫ হাজার। বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ ও নিরবচ্ছিন্ন রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ইসরায়েলকে প্রতিটি নাগরিককে যুদ্ধ-প্রস্তুত করে তোলে। প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং উচ্চ প্রশিক্ষণ ইসরায়েলি বাহিনীকে কার্যকর করে তোলে, এমনকি কম সংখ্যায়ও।

 

 

আকাশ প্রতিরক্ষা

 

ইরান ও ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ ও আধুনিক হলেও তাদের কৌশলগত ফোকাসে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ইসরায়েল অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম, আয়রন ডোম এবং ডেভিডস স্লিংয়ের মতো বহুস্তরীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আকাশ থেকে আগ্রাসন রুখতে সক্ষম। তাদের সিস্টেম দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং সঠিক নিশানায় আঘাতের জন্য বিশ্বখ্যাত। অন্যদিকে ইরান বেশ কিছু নিজস্ব ও রাশিয়া-চীন থেকে আসা সিস্টেমের মাধ্যমে এয়ার ডিফেন্স বজায় রাখে, যেমন বাভর-৩৭৩, খোরদাদ-১৫, আরমান, আযারাখশ, এস-৩০০, টর-এম ১। যদিও ইরানের ডিফেন্স প্রযুক্তি ইসরায়েলের তুলনায় কিছুটা পুরনো, তারা বিস্তৃত জঙ্গলের মাধ্যমে তাদের আকাশসীমা ঢেকে রাখে এবং বিরোধী বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে চেষ্টা করে। দুটি দেশের এয়ার ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজি তাদের সামগ্রিক সামরিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 

যুদ্ধবিমান

 

আকাশ প্রতিরক্ষা ও আক্রমণে আধিপত্য বিস্তারে ইসরায়েল সুপরিচিত। তাদের কাছে রয়েছে ৬১২টি সামরিক বিমান, যেখানে ইরানের রয়েছে ৫৫১টি।

যুদ্ধবিমান : ইরান ১৮৬টি, ইসরায়েল ২৪১টি।

 

 

অ্যাটাকিং বিমান : ইরান ২৩টি, ইসরায়েল ৩৯টি।

 

 

পরিবহন বিমান : ইরান ৮৬টি, ইসরায়েল ১২টি।

 

 

প্রশিক্ষণ বিমান : ইরান ১০২টি, ইসরায়েল ১৫৫টি।

 

 

সংখ্যায় ইরান প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও ইসরায়েল মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, যেমন F-35, F-15 এবং F-16 দিয়ে নিজেদের আকাশবাহিনীকে আরও কার্যকর করে তুলেছে।

 

হেলিকপ্টার

 

হেলিকপ্টার ব্যবহারে ইসরায়েল প্রযুক্তিগত দিক থেকে এক ধাপ এগিয়ে।

 

ইরানের মোট হেলিকপ্টার রয়েছে ১২৯টি, ইসরায়েলের রয়েছে ১৪৬টি।

 

অ্যাটাক হেলিকপ্টার : ইরান ১৩টি, ইসরায়েল ৪৮টি।

 

ইসরায়েলের হেলিকপ্টার বহরে আধুনিক Apache হেলিকপ্টারের সংখ্যা বেশি, যা দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে অসাধারণ দক্ষ।

 

পারমাণবিক অবস্থান ও কৌশলগত ক্ষমতা

 

ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণু শক্তিধর হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যে বলা হয়, দেশটির কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। তারা নিজেরা এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকলেও তাদের কৌশলগত সাবমেরিন এবং গোপন স্থাপনার মাধ্যমে পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখে। অন্যদিকে ইরান পরমাণু অস্ত্র নেই বলে দাবি করে এবং জানায় তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং পশ্চিমা দেশগুলো সন্দেহ করে যে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায়। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার এবং পরিকাঠামো ইঙ্গিত দেয় যে, দেশটি চাইলে কয়েক মাসের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী অবস্থানে যেতে পারে।

 

কে কার চেয়ে শক্তিশালী?

 

ইরান ও ইসরায়েল- এই দুই রাষ্ট্র সামরিক দিক থেকে ভিন্ন কৌশলে নিজেদের প্রস্তুত করেছে। ইরান সংখ্যায় বড় এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। তাদের বৃহৎ সৈন্যবাহিনী, সাঁজোয়াযান ও নৌবহর এই লক্ষ্যে সক্রিয়। অন্যদিকে ইসরায়েল প্রযুক্তিনির্ভর, ক্ষুদ্র কিন্তু শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তুলেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত।

 

স্থল সেনা ও ভারী অস্ত্র

 

ইরান স্থলবাহিনীর ভারী অস্ত্রে সংখ্যায় এগিয়ে।

ট্যাংক : ইরান ১৯৯৬টি, ইসরায়েল ১৩৭০টি।

সাঁজোয়াযান : ইরান ৬৫,৭৬৫টি, ইসরায়েল ৪৩,৪০৩টি।

 

 

আর্টিলারির দিকেও ইরান কিছুটা এগিয়ে :

 

রকেট আর্টিলারি (MLRS) : ইরান ৭৭৫টি, ইসরায়েল ১৫০টি।

 

সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি : ইরান ৫৮০টি, ইসরায়েল ৬৫০টি।

 

তবে প্রযুক্তির দিক থেকে ইসরায়েলের মারকাভা ট্যাংক গুণগত মানে বিশ্বের অন্যতম সেরা বলে বিবেচিত হয়।

নৌশক্তি ও সাবমেরিন


যুদ্ধজাহাজ : ইরান ১০১টি, ইসরায়েল ৬৭টি।

 

ফ্রিগেট : ইরান ৭টি, ইসরায়েল ০টি।

 

টহল জাহাজ : ইরান ২১টি, ইসরায়েল ৪৫টি।

 

সাবমেরিন : ইরান ১৯টি, ইসরায়েল ৫টি।

 

ইরান সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও ইসরায়েলের ডলফিন শ্রেণির সাবমেরিন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সুসজ্জিত, যেগুলো পরমাণু সক্ষমতাসহ নানা অপারেশনে ব্যবহৃত হয় বলে জানা যায়।

 

ইরানীয় নৌবাহিনী তাদের অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে হরমুজ প্রণালি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।