ইরান-ইসরায়েল হামলা : মুসলিম বিশ্ব কী করবে?
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া [সূত্র : দেশ রূপান্তর, ১৯ জুন ২০২৫]

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এখন যে সংঘর্ষ-সংঘাত চলছে, এর জন্য মূলত দায়ী ‘মধ্যপ্রাচ্যের ক্যানসার’ নামে খ্যাত ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা করছে না দেশটি। বছরের পর বছর ফিলিস্তিনে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েল। বিশে^র সবচেয়ে জটিল ও গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর অন্যতম হলো আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব। বিশেষ করে, ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব প্রধানতম সংকট।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে এবং এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রকৃত সুরাহা হয়নি। ইসরায়েল বিভিন্ন হামলায় যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি আগে থেকে ইরানে চোরাপথে প্রবেশ করানো ড্রোনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। এসব হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন আগেই। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের দূত বলেছেন, এসব হামলায় মোট ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ইরানও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলে। এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা তারা ধ্বংস করেছে। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা দপ্তরও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে অসংখ্য মানুষের নিহত-আহত হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। উভয় পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও ইরানের প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ ছিল। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলে যাচ্ছেন, তাদের চালানো হামলা আরও ভয়াবহ। ইসরায়েল তার জনগণকে এই হামলার পক্ষে বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করছে। আসলে সেগুলোর কোনোটারই আসল কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছে না ইসরায়েলি কর্র্তৃপক্ষ।
কেন ইসরায়েল সরকার একতরফাভাবে কোনো উসকানি ছাড়াই এই হামলা চালাল, তার জন্য এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেনি। যদিও ইসরায়েল সরকার তাদের ব্যাখ্যায় বলছে, এই হামলা ‘প্রতিরোধমূলক’ ছিল; লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির এক আসন্ন ও অনিবার্য হুমকি মোকাবিলা করা। কিন্তু ইসরায়েল এমন দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। কোনো হামলাকে প্রতিরোধমূলক হামলা বলতে হলে, সেটিকে আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে প্রমাণ করতে হয় এবং এর পেছনে একটি জরুরি পরিস্থিতি থাকতে হবে।
কিন্তু এমন কোনো জরুরি পরিস্থিতি আসেনি, যা দিয়ে সেই দাবি প্রমাণ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামলার আগে তেহরান এমন কোনো অস্ত্র তৈরির চেষ্টায় সক্রিয় ছিল না, যাতে করে হামলা করতে হবে। ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রথমে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এরপর ইসরায়েলের দিকে একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এই হামলা চলাকালে জেরুজালেম ও তেল আবিবের আকাশ অন্ধকারের মধ্যেও বিস্ফোরণের আলোয় ঝলমল করে ওঠে এবং নিচের ভবনগুলো কেঁপে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনিতেই প্রচ- রকমের জটিল ও অস্থির। দশকের পর দশক ধরে চলমান আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জাতিগত বিভেদ এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এই অঞ্চলকে একটি বিস্ফোরক রূপ দিয়েছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যে প্রত্যক্ষ সংঘাতের জন্ম হয়েছে, তা কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরানের ওপর ইসরায়েলের এই আগ্রাসন পারমাণবিক ঝুঁকির এক নতুন ছায়া ফেলেছে এবং বিশ্ব শান্তিকে এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ইরান-ইসরায়েলের এই সংঘাতের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, পারমাণবিক ঝুঁকি। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা অপ্রত্যাশিত এবং ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে তেজস্ক্রিয় লিক, বিস্ফোরণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশদূষণ। ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে যে, নাতানজ স্থাপনায় হামলার ফলে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় দূষণ সাইটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে একটি পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি সামরিক হামলা, এমনকি যদি তা সফলভাবে মোকাবিলা করাও যায়, তবুও তা পারমাণবিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি করে। ইসরায়েল-ইরান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে বাধ্য। এই সংঘাতের ফলে আঞ্চলিক জোটগুলো নতুন করে সাজতে পারে এবং পরাশক্তিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের ঘটনা নিঃসন্দেহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন, তবে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে ওয়াশিংটনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তারা ইচ্ছা করলেই এর দায় এড়াতে পারে না।
এই সংঘাত আঞ্চলিক মোড়লদের প্রতিক্রিয়াকেও প্রভাবিত করবে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও, একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই দেশগুলো এখন এক কঠিন ভারসাম্যের মুখোমুখি। একদিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগকে সমর্থন করা, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এড়ানো। জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিশ্বনেতারা ইতিমধ্যে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং যেকোনো মূল্যে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে বলছেন। তবে এই আহ্বানগুলো কতটা কার্যকর হবে, তা এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের যে ভয়াবহ পরিণতি দেখা যাচ্ছে, তা শুধু দুই রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি গোটা মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের ভঙ্গুর অবস্থান, কূটনৈতিক দুর্বলতা এবং নীতিহীনতার নগ্ন প্রকাশ। যখন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন মাসের পর মাস ধরে চলছে, যখন সিরিয়ায় নাগরিকদের জীবন ছিন্ন ভিন্ন হয়েছে এবং যখন আজ ইরানের বিভিন্ন শহরে বোমা পড়ে মানুষ নিহত হচ্ছে, তখন মুসলিম দেশগুলোর অধিকাংশ সরকার কেবল মৌনদর্শক কিংবা দ্বিমুখী বিবৃতির আশ্রয় নিয়েছে। এই নিষ্ক্রিয়তা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি ঐতিহাসিকভাবে মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রমাণ। বর্তমান পরিস্থিতি শুধু ইসরায়েল ও ইরানের বিষয় নয় এটা পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক পরীক্ষা। কিন্তু এই পরীক্ষায় কি মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব ব্যর্থ হচ্ছে? যখন গাজার এক শিশু ধ্বংসস্তূপে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়, তখন কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের মুখ থেকে যৎসামান্য ‘দুঃখ প্রকাশ’ ছাড়া কিছু শোনা যায় না। যখন তেহরান, ইসফাহান বা কেরমানশাহে অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হন, তখনো একই নীরবতা। অথচ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সংহতি, কূটনৈতিক চাপ এবং সম্মিলিত অবস্থানই যুদ্ধ প্রতিহত করার প্রধান উপায়।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, তুরস্ক- মুসলিম বিশ্বের এই প্রধান শক্তিগুলো নিজেরা বিভক্ত, স্বার্থপর এবং পশ্চিমা ব্লকের কৌশলগত অংশীদার। কেউ কেউ হয়তো মৌখিকভাবে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা করেছে, কিন্তু তা রাজনৈতিক বলপ্রয়োগ বা কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থানে রূপ নেয়নি।
ইরান ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলেও, বহু মুসলিম দেশের কাছে রাজনৈতিকভাবে একঘরে। সুন্নি-শিয়া বিভাজন, পারস্য-আরব বৈরিতা এবং ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের কৌশল তাকে এক ঘোরতর একাকিত্বে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু আজ যখন ইসরায়েল তার মূল ভূখণ্ডে আক্রমণ করছে, তখন ইরানের প্রতিরোধচেতনা একটি বৈশ্বিক প্রতীক হয়ে উঠছে যদিও এটি দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই প্রতিক্রিয়া মুসলিম দেশগুলোর নয়, বরং ইরানের একক প্রতিক্রিয়া। ইরান যদি একটি পশ্চিমা মিত্র দেশ হতো, তাহলে ইসরায়েলের এই হামলাকে জাতিসংঘে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে ঘোষণা করা হতো।
কিন্তু বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের নীতিমালা শুধু শক্তিশালী রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য নয়। এখানেই মুসলিম বিশ্বের দুর্ভাগ্য তারা নিজেদের জনসংখ্যা, অর্থনীতি ও ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী এক বড় শক্তি হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিকভাবে একবারেই তুচ্ছ। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে, যদিও ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এরাই রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আইন ভাঙার জন্য দায়ী করেছিল। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তাদের এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছে না এবং সম্মিলিতভাবে বিশ্ব ফোরামে প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারছে না।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ হয়তো বা খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে না, হয়তো একসময় আন্তর্জাতিক চাপ বা মধ্যস্থতায় থেমেও যাবে। কিন্তু এমন ঘটনা থেকে যে শিক্ষা নেওয়ার দরকার, তা অনেক গভীর। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে, মুসলিম বিশ্ব আজ অকার্যকর, নীতিহীন ও নিরুপায় এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্বলতা শুধু বাহ্যিক নয়, এটি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, ঐক্যবোধ ও কৌশলগত দিশাহীনতারই ফলাফল।
এখনই যদি আমরা এই অনৈক্য, নির্লিপ্ততা ও আত্মঘাতী নীরবতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার, মুসলিম উম্মাহকে একটি কার্যকর রাজনৈতিক বাস্তবতায় রূপ দিতে না পারি তাহলে সামনে আরও বেশি দুঃসময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। মনে রাখতে হবে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও অনেক তেহরান, গাজা, বাগদাদ বা দামেস্ক ধ্বংস হবে আর আমরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব আর শোক বার্তা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করব। মুসলিম বিশ্বের উচিত, এখনই নতুন করে চিন্তা করা। কীভাবে একটি বাস্তব ও কার্যকর মুসলিম জোট গড়ে তোলা যায় তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ওআইসিকে কাগজের পুতুল না রেখে ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু বিবৃতিমুখী নয়, বরং সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সংগঠনে রূপ দিতে হবে। তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও কাতার এই দেশগুলো মিলে একটি বিকল্প কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট গঠন করার বিষয়টি ভাবতে পারে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে যেকোনো যুদ্ধ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের প্রত্যাশা, বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতি এড়াতে ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে পরিচিত পশ্চিমা শক্তিগুলো এই যুদ্ধ বন্ধে তৎপর হবে। ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনা নিরসনে তো বটেই, ফিলিস্তিন ইস্যুতেও পশ্চিমা শক্তি ইতিবাচক ভূমিকার রাখবে। তবেই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
মুসলিম বিশ্বকে স্মরণ রাখতে হবে, ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধন প্রায় সম্পন্ন, এবার ইরানের পালা। অথচ পাশে নেই মুসলিম বিশ্ব। বিশ্বের অশান্তিকামী গোষ্ঠী ইরানেও কথিত পরিবর্তনে আরব বসন্তের সূচনা করার ষড়যন্ত্র করছে। ইরাক সেই কবেই হারিয়েছে তার সম্ভ্রান্ত জাতিসত্তার গৌরব। লিবিয়ার গাদ্দাফি সরব হয়েছিলেন আফ্রিকার দেশে দেশে পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদের নখর উপড়ে দিতে।
আফ্রিকান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে অভিন্ন মুদ্রা ‘স্বর্ণ দিনার’ চালুর কথা জোরে-শোরে ঘোষণা দিয়ে মাঠেও নামেন তিনি। যার পরিণতি তাকে ভোগ করতে হয়েছে মুসলিম বিশ্বের অসহযোগিতার কারণে। সিরিয়ার ভাগ্যেও ব্যতিক্রম হয়নি। কথিত আরব বসন্তের নামে বাশার আল আসাদের ক্ষমতাচ্যুতি নিকট অতীতের ঘটনা। বাশার আল আসাদ প্রাণে বেঁচেছেন বটে। তবে সিরিয়া আজ ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর গৃহযুদ্ধকবলিত এক জনপদে পরিণত হয়েছে। এবার মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর ইরানকেও মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবুও যদি মুসলিম বিশে^র টনক না নড়ে, তাহলে বিশ্বের মুসলমানদের করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক