ইসরাইলি ঘৃণ্য রণকৌশল : অন্ধ-বধির পৃথিবী
মুসলিম বিশ্বের সরকারগুলো নীরবে এ হিংস্রতা দেখছে বা কেউবা মৌখিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের দেশগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে ব্যস্ত। একই সাথে নিজেরা নিরাপদে আরাম-আয়েশে রয়েছেন বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন! তাই ইতালির কবি ও মানবাধিকারকর্মী ড. ফ্রাঙ্কা কালোজা বলেছেন, ‘বধির বিশ্বের উদাসীন দৃষ্টির জন্য গাজার এই পরিণতি’ ড. এ কে এম মাকসুদুল হক [সূত্র : নয়াদিগন্ত, ১৪ জুন ২০২৫]

গত ১৩ জুন সুবেহ সাদিকের সময় প্রলয়ঙ্করী শব্দে ঘুম ভাঙে তেহরানবাসীর। সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল ২০০ জঙ্গি বিমান দিয়ে হামলা চালায় ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায়। ইসরাইলের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের অস্ত্রাগার, পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো এবং যুদ্ধ মেশিনের মূল পরিচালকরা। এতে ইরানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাসমূহ অক্ষত থাকলেও ভূমিস্থ লক্ষ্যবস্তুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতি হয় ইরানের যুদ্ধ পরিচালনা প্রক্রিয়ায়। চারজন মেজর জেনারেল, একজন অ্যাডমিরালসহ মোট ২০ জন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও ইরানের অ্যাটোমিক এনার্জি অর্গানাইজেশনের সাবেক প্রধানসহ তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ও থিউরিটিক্যাল ফিজিসিস্ট মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলের এ আক্রমণ ছিল একতরফা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য কৌশলমাত্র।
জন্মের পর থেকে ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনী (আইডিএফ) ফিলিস্তিনবাসীর সাথে যুদ্ধরত রয়েছে। ফিলিস্তিনি শিশুদের ইট নিক্ষেপের উত্তরে ইসরাইল গাজা ও পশ্চিমতীরে বিমান হামলা চালিয়ে নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। প্রতি বছর রমজান এলে তারা ফিলিস্তিনিদের প্রাণের স্পন্দন মসজিদে আকসাকে কলুষিত করে। যখন-যাকে খুশি গ্রেফতার করে ইসরাইলি কারাগারে বন্দী করে রাখে। এসবের উত্তরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অতর্কিতে গাজা সীমান্তবর্তী ইসরাইলি সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। এতে ইসরাইলের মোট এক হাজার ১৯৫ জন সামরিক-বেসামরিক লোক নিহত হয়। এ ছাড়া ২৫৩ জন হামাসের হাতে জিম্মি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ৭ অক্টোবর ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনী গাজায় আকাশ, স্থল এবং নৌপথে সর্বাত্মক হামলা চালায়। আজ ২০ মাস ধরে ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাত্মক হামলা চলানো অব্যাহত রয়েছে।
যুদ্ধ নাকি জাতিগত নিধন? ১৯৪৮ সাল থেকে চলতে থাকা ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নতুন মোড় নেয় ২০ মাস আগে। হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনী যে প্রতি-আক্রমণ শুরু করেছিল তা অল্প দিনের মধ্যে যুদ্ধের খোলনলচে বদলে একটি জাতিগত নিধনের যুদ্ধাপরাধে রূপ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে হামাস যোদ্ধারা ‘অপ্রথাগত’ যুদ্ধ কৌশল নেন। ফলে ইসরাইলি বাহিনী পুরো গাজাবাসীকে হামাস সদস্য হিসেবে ধরে নেয়। নারী-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাইকে সমানতালে হত্যা করতে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় গাজায় যুদ্ধের নামে চলছে একটি জাতির নির্মূলকরণ।
মার্কিন-ইসরাইলি উদ্দেশ্য
হামাসের আক্রমণের পাল্টা আক্রমণ দিয়ে ধ্বংস শুরু করলেও ইসরাইলের উদ্দেশ্য বর্তমানে পরিষ্কার। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার বিভিন্ন বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলছেন, গাজা খালি করতে হবে। তিনি গাজাবাসীদের নিয়ে সৌদি-আরবে পৃথক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। দীর্ঘ ২০ মাস গাজাকে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে সম্প্রতি পুনরায় বিমানবাহিনীর সহায়তায় স্থলবাহিনীর আক্রমণ চালাচ্ছে। একই সাথে মার্কিন উদ্দেশ্যও পরিষ্কার। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে গাজাবাসীদের অনত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আর গাজা সম্পূর্ণ খালি করে ইসরাইল তা আমেরিকার হাতে হস্তান্তর করবে। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন সেনারা গাজায় মোতায়েন হবে। (ডেইলি স্টার : ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের পুরো নিয়ন্ত্রণ মজবুত করার লক্ষ্যে মার্কিনিরা ইসরাইলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে জাতিগত নিধন সম্পন্ন করতে।
ইসরাইলি রণকৌশল
মার্কিন-ইসরাইল কৌশল বাস্তবায়নে ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনী নৃশংস এবং অমানবিক রণকৌশল অনুসরণ করে। মানবতা, মানবাধিকার, যুদ্ধের নীতি-নৈতিকতা পুরোপুরি পদদলিত করে ‘আইডিএফ’ গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা সেখানে পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে। তাদের নিষ্ঠুরতা মধ্যযুগের চেঙ্গিস খান-হালাকু খানদের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এক কথায়, ইসরাইলি বাহিনীর এ রণকৌশল একটি জাতি-গোষ্ঠীকে নিঃশেষ করে দেয়ার পদ্ধতি মাত্র।
গাজার রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিলীন
৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ২৩ লাখ বাসিন্দার গাজায় ১৯ মাস ধরে এক লাখ টন বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। সেই সাথে ট্যাংক, বুলডোজার, রকেট হামলায় গাজার অস্তিত্ব বিলীনপ্রায়। জাতিসঙ্ঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সংস্থার (ওসিএইচএ) প্রতিবেদন মতে, ৯২ শতাংশ বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার লাখ ৩৬ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক লাখ ৬০ হাজার পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। মোট ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ১৯ লাখ মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছেন। স্বাস্থ অবকাঠামো খাতে হামলা হয়েছে ৬৫৪টি। এতে এক হাজার ৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছে। ৫৩৪টি স্কুল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (দৈনিক প্রথম আলো : ২১ জানুয়ারি ২০২৫) এসব ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি টন, যা সরাতে ২০ বছরে ১২০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ লাগবে। (নয়া দিগন্ত : ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) নির্বিচারে বোমা বর্ষণে ৮৩ শতাংশ গাছপালা, ৮০ শতাংশের বেশি কৃষিজমি, ৯৫ শতাংশ গবাদিপশু এবং ৮০ শতাংশের বেশি পানি ও স্যুয়ারেজ লাইন ধ্বংস হয়ে গেছে। (প্রথম আলো : ২০ মার্চ ২০২৫) মোট ৮২৮টি মসজিদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস এবং ১৬৭টি মসজিদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি ৬০টি কবরস্থানের মধ্যে ১৯টি সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (আমার দেশ : ১০ মে ২০২৫)
একটি জাতি-গোষ্ঠীর নির্দয় ধ্বংস
কুড়ি মাস ধরে একটি শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকের ওপর সামরিক অভিযানে ৬২ সহস্রাধিক মানুষ নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক লাখ ৯৬ হাজারের বেশি মানুষ। আহতদের অস্ত্রোপচার করে সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষের অঙ্গচ্ছেদ করে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮০০টি শিশু এবং ৫৪০ নারী। (নয়া দিগন্ত : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫) সবচেয়ে বেশি নৃশংসতার শিকার হয়েছেন নারী ও শিশুরা। গত ১৮ মাসে ১৬ হাজার ২৭৮ শিশু নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯০৮ একেবারে ছোট শিশু এবং ৩১১ নবজাতক। অর্থাৎ প্রতি ৪০ মিনিটে একটি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। (প্রথম আলো : ৭ মে ২০২৫) জাতিসঙ্ঘের তথ্য মতে, প্রতিদিন ১০০ শিশু নিহত হচ্ছে গাজায়। (নয়া দিগন্ত : ৬ এপ্রিল ২০২৫) গত মার্চ পর্যন্ত ১৯ হাজার শিশু নিহত হয়েছে। বাবা-মা হারিয়ে এতিম হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৮৪ শিশু। এর মধ্যে ১৭ হাজার শিশু বাবা-মা দু’জনকে হারিয়েছে। তদুপরি ৯৫ শতাংশ স্কুলে হামলায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। (নয়া দিগন্ত : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫) গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে আর ৫৯৮ জন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। (প্রথম আলো : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪) এ পর্যন্ত মোট নিহতের ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও হত্যা করা হয়েছে। বন্দী মহিলাদের ওপর অবর্ণনীয় যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি নির্যাতনের জন্য সবজি থেকে শুরু করে ঝাড়ুর কাঠি পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। একটি আইভিএফ ধ্বংস করা হয়েছে; যেখানে চার হাজার ভ্রুণ সংরক্ষিত ছিল। (প্রথম আলো : ২০ মার্চ ২০২৫) নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচ হাজার নারী ও শিশু। মোট নিখোঁজের সংখ্যা ১৪ হাজার ২০০ এবং দুই হাজার ৯০০টি লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপাপড়ে সম্পূর্ণরূপে পচেগলে গেছে। (নয়া দিগন্ত : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫) দীর্ঘ ১৯ মাসের ইসরাইলি ধ্বংসলীলায় দুই হাজার ২০০ পরিবার একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতা এমন পর্যায় পৌঁছেছে যে, একের পর এক বোমা বিস্ফোরণের তীব্রতায় মানুষের শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে আকাশে উড়ে ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২৩৮টি শিশু যুদ্ধের মধ্যে জন্ম নিয়ে যুদ্ধের মধ্যে নিহত হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত এক হাজার ৯১ শিশু নিহত হয়েছে যাদের বয়স এক বছরের কম।
ইসরাইলি বাহিনীর আরো একটি ঘৃণ্য কৌশল হলো বোমা ফেলে এবং গুপ্তহত্যার মাধ্যমে ‘হামাস’ নেতাদের হত্যা করা। ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই হত্যা করা হয় মোহাম্মদ দেইফকে। ৩১ জুলাই তেহরানে ইসরাইলি গুপ্ত হত্যার শিকার হন শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া। এর আগে একে একে ইসমাইল হানিয়ার ৯ সন্তানসহ পুরো পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয় বোমার আঘাতে। গত ১৬ অক্টোবর হত্যা করা হয় হানিয়ার উত্তরসূরি ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে। এর আগে সালেহ-আল আরৌরি এবং মারওয়ান ইসাকে হত্যা করা হয়। (প্রথম আলো : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪)
ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হত্যাযজ্ঞ
ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনী ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে আসা ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর ওপর বোমা ফেলে হত্যাকে একটি রণকৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে। প্রায়ই ইসরাইলি বাহিনী ত্রাণকেন্দ্রে সমবেত মানুষের ওপর বোমা ও গোলাবর্ষণ করে থাকে। তবে এবার মার্কিন সহযোগিতায় নতুন ত্রাণকেন্দ্র ‘গাজা হিউম্যানিটরিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) চালু করে গত ২৭ মে। সেই ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে ক্ষুধার্ত মানুষ মাইলের পর মাইল হেঁটে জড়ো হলে গুলি চালিয়ে অন্তত ১৬৩ ফিলিস্তিনিকে নিহত এবং ৪৯০ জনকে আহত করা হয়। মানবতার এমন অধঃপতন সম্ভবত পৃথিবী আর কখনো দেখেনি।
ক্ষুধা যখন রণকৌশল
গাজা উপত্যকা খালি করতে ইসরাইল যুদ্ধকবলিত মানুষের ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রায় ৮০ দিন ধরে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে। বিশ্ববাসীর উদ্বেগ ও সমালোচনার পর তারা অল্প কিছু ত্রাণবাহী ‘বহর’ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়। যেখানে প্রতিদিন ৫০০ ট্রাক ত্রাণ দরকার সেখানে মাত্র ১০০ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এ অবরোধ গাজায় দুর্ভিক্ষ ও স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। এর মধ্যে ২৬ ফিলিস্তিনি অনাহার ও চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। এর মধ্যে ৯ জন শিশু। (নয়া দিগন্ত : ২২ মে ২০২৫) ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, গাজায় পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় তিন লাখ ৩৫ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে ৫৭টি শিশু মারা গেছে। (প্রথম আলো : ৪ মে ২০২৫) এভাবে গাজাকে পুরোপুরি মৃত্যুপুরি বানিয়ে এখন ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনী তাদের নৃশংস হামলা তীব্রতর করেছে।
যুদ্ধের নিষ্ঠুরতম পর্যায়
পশ্চিমা শক্তির তল্পিবাহক জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি বলেছেন, গাজা সঙ্ঘাত নিষ্ঠুরতম পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। (প্রথম আলো : ২৫ মে ২০২৫) জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব গাজার পরিস্থিতি নিয়ে মশকরা করেছেন। ২০ মাস নিরস্ত্র শিশু-নারী-বৃদ্ধকে হত্যা করে সংখ্যা যখন ৬০ হাজারে পৌঁছেছে তখন তার বোধোদয় হয়েছে। তারপরও বলছেন, ‘নিষ্ঠুরতম পর্যায়ে’ পৌঁছাতে যাচ্ছে পরিস্থিতি। অর্থাৎ তার বিবেক এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি! জাতিসঙ্ঘের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘ইসরাইল গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের বসতি মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে সুসমন্বিত অভিযান চালিয়ে বেসামরিক মানুষের ওপর নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে।’ (ডেইলি স্টার : ১২ জুন ২০২৫)
গাজার নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা, নির্বিচারে শিশু-নারী হত্যায় সরাসরি সহযোগিতা করছে পশ্চিমা বিশ্ব! যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য দৃশ্যমানভাবে ‘আইডিএফ’কে সরাসরি সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আর বাকিরা পরোক্ষ সহযোগিতা, সমর্থন ও মনোবল দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে এ নৃশংসতা হলো ইসরাইলিদের আত্মরক্ষার অধিকার!
মুসলিম বিশ্বের সরকারগুলো নীরবে এ হিংস্রতা দেখছে বা কেউবা মৌখিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের দেশগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে ব্যস্ত। একই সাথে নিজেরা নিরাপদে আরাম-আয়েশে রয়েছেন বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন! তাই ইতালির কবি ও মানবাধিকারকর্মী ড. ফ্রাঙ্কা কালোজা বলেছেন, ‘বধির বিশ্বের উদাসীন দৃষ্টির জন্য গাজার এই পরিণতি।’ (নয়া দিগন্ত : ১ জুন ২০২৫) আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, ‘১৯ মাস আগেই পশ্চিমারা গাজার গণহত্যায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। (নয়া দিগন্ত : ২ জুন ২০২৫) অন্য দিকে অতি সম্প্রতি ইরানে হামলায় ইসরাইলকে মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমারা মদদ দিয়েছে। ইসরাইলের প্রায় ২০০ পারমাণবিক বোমা থাকলেও ইরানকে একটি পারমাণবিক বোমাও তৈরিতে অক্ষম করে দিতে এ আক্রমণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তবে পশ্চিমা বিশ্বের মদদে ইসরাইলের এ ঘৃণ্য যুদ্ধ কৌশলের ভয়াবহ পরিণাম অন্ধ-বধির পৃথিবীকে ভোগ করতে হতে পারে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক