কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ইসরায়েলি প্রোপাগান্ডা কাজে আসছে না

ওয়েন জোনস । সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ২০ মার্চ ২০২৫

ইসরায়েলি প্রোপাগান্ডা কাজে আসছে না

ইসরায়েলের গণহত্যা কার্যক্রম সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত ছিল। ১৭ মার্চ ফিলিস্তিনিরা আবার আকাশপথে হামলার ভয়াবহতার শিকার হলো। অন্তত ৪০০ ফিলিস্তিনি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নিহত হয় যাদের অধিকাংশই শিশু। এ হামলার সবুজ সংকেতটুকু ট্রাম্পই দিয়েছিলেন। আর হামলার পরপরই সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। অর্থাৎ জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। এমনটি আবার নতুন করে ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু করার বিষয়টি ইঙ্গিত করছে। ইসরায়েল বরং বলছে, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির সবটুকু যাচাই করে দেখেনি। অথচ এ চুক্তি ইসরায়েলই বারবার ভেঙেছে। সিএনএন সম্প্রতি প্রতিবেদনে বলেছে, এমন এক হামলা দেখে মনেও হয় না যে এখানে কোনো যুদ্ধবিরতি ছিল। এমনকি যুদ্ধবিরতির সংজ্ঞাও ভেঙে গেছে এখন।

 

 

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে ইরানের সংযুক্তির জন্য ইসরায়েল দায়ী। তারা গাজায় সাধারণ পরিবারগুলোও লক্ষ করে হামলা চালাচ্ছে। এসব পরিবারের বেঁচে যাওয়া অনেকেই প্রতিশোধের জন্য যোগ দিচ্ছে সশস্ত্র সংগঠনে। জেনিন, তুলকারেম ও নেবলুসেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যে প্রতিহত করে চলেছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। ইসরায়েলের তৈরি আতঙ্কই তাদের ওপর আতঙ্ক হয়ে ফিরছে। নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনা ধ্বংসের পরিকল্পনা করছেন। ইরান তো এত সহজে পিছিয়ে পড়ার মতো আঞ্চলিক শক্তি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিজেও সরাসরি ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে আগ্রহী নন। এমনকি ইরানের তেল বাংকারে হামলার বিষয়েও তিনি নিষেধ করেছেন ইসরায়েলকে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র জানে, ফিলিস্তিনের লক্ষ্য ইরানের সংগ্রামের মূল লক্ষ্য নয়। ভূমধ্যসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যত বন্ধুরাষ্ট্র রয়েছে তারা সবাই ইরানে ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে শঙ্কিত। ইতোমধ্যে একাধিক রাষ্ট্র নিজেদের যুদ্ধনিরপেক্ষ অবস্থানে দাবি করেছে এবং জানিয়েছে ইরানে হামলার জন্য তারা কোনো এয়ারবেস দিতে রাজি নয়। ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবে ফিলিস্তিনের সম্পর্ক নেই। ইরান ইসরায়েলের বড় শত্রু নয়। বরং জেনিন কিংবা গাজার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিশোধস্পৃহায় মত্ত তরুণরাই তাদের বড় শত্রু। যদি হামাসের হামলায় একজন ইসরায়েলি সেনাও মারা যেত তাহলে অবশ্যই মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ত। ধারণা করা যায়, অনেকে এ যুদ্ধবিরতি বাতিলই করে দিতেন। কিন্তু গাজার ক্ষেত্রে হয়নি।

 

 

 

গাজায় যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা প্রলম্বিত হতে থাকবে। পরবর্তী প্রজন্ম প্রশ্ন করবে, ‘এতদিন ধরে কীভাবে এত বড় অপরাধ চালায় তারা? তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এখন কিছুই লুকোনো নয়। আমাদের সমাজমাধ্যমের ফিডেই তো আমরা সব দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবীতে আর কোনো অপরাধই এতটা বিপুল আকারে সংগৃহীত হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘ ফিলিস্তিনিদের প্রজননস্বাস্থ্য কীভাবে কাঠামোবদ্ধভাবে ধ্বংস করছে তার একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানেও অনেকটাই বাস্তব চিত্র দেখা যায়। তাদের ধ্বংসযজ্ঞের এমন অনেক নজির আছে। গাজার সুপেয় পানি এবং ত্রাণ সরবরাহের পথ বন্ধ। সম্প্রতি ডেভিড ইগনাটিয়াস গার্ডিয়ানে একটি নিবন্ধে এক হামাস সেনাকে ধিক্কার জানান। ইহুদিদের মেরে তার উল্লাস-উদ্‌যাপনকে সমালোচনা করেন। তিনি কি ভুলে গেলেন, অসংখ্য ইসরায়েলি সেনা প্রতিদিন টিকটকে ফিলিস্তিনিদের মেরে ফেলার পর উল্লাস-উদ্‌যাপন করে ভিডিও দেয়? নাকি এগুলো তিনি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন না। শুধু হলোকাস্টের কথা বলেই ইসরায়েল গণহত্যার অধিকার পেয়ে যায় না। অসলো চুক্তির ৩০ বছর পর গাজা এখন পুরোপুরি আলাদা। তাদের পুরোপুরি দখল করে ফেলেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটির অ্যাডভাইজার মার্ক সুলিভান জানিয়েছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে এখন অসংখ্য সমস্যা। কিন্তু এ অঞ্চলটি এখন বিগত যেকোনো দশকের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত শান্ত। কারণ সংঘাত বন্ধে এখনও কোনো পক্ষেরই উদ্যোগ দেখা যায়নি।’

 

 

 

ভূমি দখল করে ইসরায়েল ভাবতেই পারে তারা বিজয়ী। কিন্তু আসলে তা নয়। হামাস এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে অন্তত হামাসের জন্ম হতো না। এমনকি তাদের আলাদা সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবেও কাজ করতে হতো না। সম্প্রতি লেবাননে নতুন করে যুদ্ধ শুরু করায় ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধ থেকে বের হওয়া এক প্রকার অসম্ভব। হামাসও তাদের কৌশল পাল্টেছে। ফিলিস্তিনি তরুণরা তাদের ট্যাক্সি আর দোকান বিক্রি করে অস্ত্র কিনছে। মাত্র এক বছরেই হামাস পশ্চিম তীর, জর্ডান, ইরাক, মিসর এবং উত্তর আফ্রিকায় হিরোর মতো স্ট্যাটাস পেয়ে গেছে। অর্থাৎ আঞ্চলিক সহযোগিতাও পাচ্ছে। এখন নির্বাচন হলে হামাস আরেক রাজনৈতিক সংগঠন ফাতাহকে উড়িয়েই দেবে। বিষয়টি বাস্তবে আদৌ সম্ভব নয়।

 

 

ইসরায়েলি কোনো প্রোপাগান্ডাই এখন আর কাজে আসছে না। পশ্চিমা মিডিয়া এখন যেভাবেই তা উপস্থাপন করুক না কেন, এমনটি তাদের বিরুদ্ধেই এসে পড়ছে। পরবর্তী প্রজন্ম এ ধ্বংসযজ্ঞের বিবরণ দেখতে পাবে। সব প্রমাণ রয়েছে। তখন তারা তাদের পিতা-মাতাকেই প্রশ্ন করবে, ওই সময় তোমরা কী করছিলে? যুক্তরাষ্ট্রেও আমরা দেখছি ফিলিস্তিনিদের প্রতি ৫৯ শতাংশ সমর্থন বেড়েছে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে, যা ১৬ পয়েন্ট বেশি। আবার ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন ১৪ পয়েন্ট কমেছে। মাত্র ৪৬ শতাংশ মার্কিনি এখন ইসরায়েলের প্রতি কিছুটা সহানুভূতি জানাচ্ছে। গত এক দশকের সংঘাতের ফলে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ইসরায়েল এবং তাদের সমর্থকরা কেন এখন অনেক উত্তেজিত তা বোঝা যাচ্ছে। কারণ তারা ইতিহাসের একদম উল্টো পিঠে অবস্থান করছে। এ যুদ্ধ যখন একেবারে শেষ হবে তখন ফিলিস্তিনিদের স্বর আস্তে আস্তে উঠে আসবে। তখন উদার পশ্চিমা মিডিয়ার অন্ধকার দিকগুলো সবার নজরে আসবে।

 

 

  • কলামিস্ট, গার্ডিয়ান