কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ইউনূস ম্যাজিকে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমর্যাদা

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সূত্র : নয়া দিগন্ত, ০৮ এপ্রিল ২০২৫

ইউনূস ম্যাজিকে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমর্যাদা

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। একজন বিশ্বনেতা হিসেবে তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বা বডি পোসচার, তার অসাধারণ কথা বলার স্টাইল, তার বাচনভঙ্গি, তার উপস্থাপন শৈলী, বিশ্বনেতাদের সাথে নেটিভদের মতো তার ইংরেজিতে কথোপকথন ও ভাষণ, একজন দক্ষ কূটনীতির মতো অন্য বিশ্বনেতাদের ওপর প্রভাববিস্তার এবং বিশ্ব ফোরামগুলোতে তার আকর্ষণীয় সরব উপস্থিতি ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বাঙ্গনে একটি উল্লেখযোগ্য দেশে পরিণত হয়েছে।

 

গত সাত মাসে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন, আজারবাইজানে ডি-৮ সামিট, চীন সফর, সর্বশেষ থাইল্যান্ডে সদ্য অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলন ইত্যাদি বিশ্ব ফোরামে বাংলাদেশকে তিনি অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে আপাতত অন্য কারো তুলনা করা যাচ্ছে না।

 

ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আগেই বিশ্বে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা আজ বাংলাদেশের ইমেজ সঙ্কটের উত্তরণ ঘটিয়ে অপার সম্ভাবনা তৈরি করছে। রাজনৈতিক অঙ্গনের লোক না হয়েও তিনি যে বিশ্ব রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাতে প্রতিবেশী দেশের ক‚টনৈতিক অস্ত্র ইতোমধ্যে অকার্যকরই হয়ে যাচ্ছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না।

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে বৈঠকে তার উপস্থিতির সময়ে নরেন্দ্র মোদিসহ ভারতীয় দল একযোগে দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জ্ঞাপনে প্রমাণ হয়ে গেছে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ভারতীয়দের চাণক্যনীতিকে হারিয়ে দিয়েছেন। তার মানে তার ব্যক্তিত্বের কাছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীসহ গোটা দলটির পারফরম্যান্স ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে।

 

নরেন্দ্র মোদির সাথে ড. ইউনূসের বৈঠকে তিনি যেভাবে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন- বিশেষ করে ভারতে আশ্রয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি তা দেশের স্বার্থকে সবার ওপরে তুলে ধরেছে।

 

বিশ্বের ৫০টি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে তার বৈঠকটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে। ডি-৮ সামিটে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের সাথে তার কয়েকবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকগুলোতে এরদোগান বাংলাদেশে সামরিক ও বাণিজ্য সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকারের কথা জানা যায়।

 

ইতোমধ্যে তুরস্ক আমাদের দেশকে শক্তিশালী ড্রোন প্রদান করেছে, যা পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে বলে সে দেশের মিডিয়াতে হইচই পড়ে গেছে। তা ছাড়া তুরস্ক আধুনিক মিসাইলসহ সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি দেবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষার দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠবে, যা এতদঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য তৈরিতে ভ‚মিকা রাখবে।

 

ড. ইউনূস ভারতের মোদির সাথে বৈঠকে অমীমাংসিত ইস্যু যেমন- তিস্তা ও গঙ্গার পানিবণ্টন, সীমান্তে বিসএফের বাংলাদেশীদেরকে অহেতুক হত্যাসহ বিভিন্ন মুখ্য ইস্যু তুলে ধরে এর দ্রুত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়ার কথা বলেন।

 

সম্প্রতি তার স্মরণীয় উক্তি সেভেন সিস্টার ‘ল্যান্ডলকড’ এবং সঙ্গতকারণে ওশেনের বা সমুদ্রের অভিভাবকত্বের কথা বলেন। এতে প্রতিবেশী দেশের সর্বমহলে ঝড় বয়ে যায়। বিশ্ব রাজনীতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বর্তমানে আমেরিকা, চীন, ভারত- সবাই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে ড. ইউনূস অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করবেন বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ করায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। এক জরুরি বৈঠকে ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ করার ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠকে জানান। ড. ইউনূস বিশ্বাঙ্গনে বাংলাদেশকে যেভাবে সাহস ও বুদ্ধিমত্তার সাথে রিপ্রেজেন্ট করছেন তা তার সহযোগীরা অতটা পারছে না। তা ছাড়া রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান বিদেশ সফর করে এলে সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা উপদেষ্টা বা মন্ত্রীপর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের সফর সম্পর্কে ব্রিফ করে থাকেন। কিন্তু অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিটি বিদেশ সফরের শেষে ব্রিফ করছেন তার প্রেস সচিব বা তার প্রেস উইংয়ের একজন সিনিয়র উচ্চপদস্থ ব্যক্তি। একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে- সদ্য সমাপ্ত বিমসটেক সামিটে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকটি ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেভাবে তাদের পক্ষে ফলাও করে প্রচার করেছে তা কিন্তু আমাদের দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেনি। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সচিবকে নিষ্প্রভ মনে হয়েছে, যা কারোর চোখ এড়ায়নি। ড. ইউনূস বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব যা আমাদের দেশের জন্য একটি আশীর্বাদ বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরো ঢেলে সাজানো দরকার।

 

ড. ইউনূস একজন ঝানু বিশ্বনেতা হিসেবে দেশ ও জাতির ভাবমর্যাদা বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, যা অতীতে অন্য কারো দ্বারাই এভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। তাই আমাদেরকে দল-মত নির্বিশেষে ড. ইউনূস ও তার অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা অবশ্যই কর্তব্য। আসুন জাতিকে বিভক্ত না করে আমরা একযোগে অধ্যাপক ইউনূসকে দেশ ও জাতির স্বার্থে সহযোগিতা করে যাই।

 

লেখক : সাবেক প্রিন্সিপাল