জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের গৌরবময় অবস্থান
মরান ইমন [সূত্র : সময়ের আলো, ২৯ মে, ২০২৫]

পারস্পরিক যুদ্ধ-সংঘাত কখনো সুফল বয়ে আনতে পারে না। শান্তির জন্য যুদ্ধ-সংঘাত পরিহার করতে হয়। বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হয়। বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীদের মহান আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত ৫৭/১২৯ প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গানাইজেশন (আন্টসো) দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এখানে বলে রাখা দরকার, জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গানাইজেশন হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। সে হিসেবে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী এ বছর ৭৭ বছর পূর্ণ করল। উল্লেখ্য, এদিনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সব নারী-পুরুষকে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বোৎকৃষ্ট পেশাদারি মনোভাব বজায় রাখা, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের মহান আত্মত্যাগের ঘটনাকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও যথোচিত সম্মান দিয়ে স্মরণ করা হয়। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারীদের অবদান ও ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। শান্তিরক্ষায় নারীর ভূমিকা ও লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যেই মূলত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পৃথিবীর সব দেশে এ দিবসটি যথাযথ তাৎপর্যের সঙ্গে পালন করা হয়। দিবসটির তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এদিন নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দফতরে সম্মানসূচক ‘ড্যাগ হ্যামারশোল্ড’ পদক বিতরণ করা হয়।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৮৮ সালে ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সে থেকে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল পথচলা। পরবর্তী কয়েক বছর বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী বেশ সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে গেছে। ১৯৯৩-৯৪ সালে সবচেয়ে আলোচিত রুয়ান্ডা, সোমালিয়া ও বসনিয়া- এ তিনটি শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশের সেনাবাহিনী দক্ষতা এবং সামরিক জ্ঞানে রুয়ান্ডায় বেলজিয়ান, সোমালিয়ায় আমেরিকান ও বসনিয়ায় ফ্রান্স সেনাবাহিনীকে যে টেক্কা দিতে পারে তা জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট দেশের কর্মকর্তাদের চিন্তার বাইরে ছিল।
১৯৯৪ সালে আফ্রিকার রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড গ্রুপ সেখানে নিয়োজিত ছিল। প্রায় ১০০ দিনের গৃহযুদ্ধে তখন ৬ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল। উল্লেখিত শান্তিরক্ষা মিশনে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে বেলজিয়ানসহ আফ্রো-ইউরোপিয়ান ব্যাটালিয়নগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করে তাদের মিশন গুটিয়ে ফেললেও বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা বুকে সাহস নিয়ে মিশন এলাকাতেই থেকে যায়। ফলে গণহত্যায় মৃত্যুর হার অনেক কম হয়েছিল।
১৯৯৫ সালে ইউরোপের একমাত্র শান্তিমিশন বসনিয়ায় ফ্রান্স ব্যাটালিয়ন প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশি সেনারা তাদের জায়গায় কাজ শুরু করে। ৩৪টি দেশের সেনাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তখন বাংলাদেশের ব্যাটালিয়নকে শান্তিরক্ষার কাজে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়েছিল। সবারই ধারণা ছিল, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের সেনারা ফ্রান্সের সেনাদের জায়গায় কাজ করতে পারবে না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, যেখানে ডাচ আর ইউক্রেন সেনারা বসনিয়ার ‘সাব্রানিৎসা’ ও ‘জাপা’ নামক দুটি শহরে গণহত্যা ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশি সেনারা তাদের তুলনায় অনেক হালকা অস্ত্র নিয়েও শুধু সাহস, দক্ষতা আর দৃঢ় মনোবল দিয়ে বসনিয়ার ‘বিহাচের’ মতো গুরুত্বপূর্ণ বিরাট শহরের জনগণকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল।
সার্বিকভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী চলতি বছরে ৭৭ বছর পূর্ণ করল। অন্যদিকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী পূর্ণ করল ৩৭ বছর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানের শুরু থেকেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সেনারা নিজেদের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়ে সবার কাছ থেকে সুনাম ও ভালোবাসা কুড়িয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, ‘মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাদের ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মহিলা পুলিশ দল সোচ্চার রয়েছেন সামাজিক-সম্প্রীতি সুসংহত করতে। আমি কোনো মিশনে গেলেই উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের সেনাদের কথা বলি।’ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ এক গর্বিত সহযোগী।
স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অর্জন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থানটি ধরে রাখা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর ‘মজ্জা বা সমকক্ষ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হাইতি থেকে পূর্ব তিমুর, লেবানন থেকে ডিআর কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের সব সংঘাতপূর্ণ এলাকার জনমনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। একসময় যেসব দেশের সাধারণ মানুষ ‘বাংলাদেশ’ শব্দটির সঙ্গেই পরিচিত ছিল না, সেসব দেশে এখন বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে অতি ভালোবাসার দেশ, লাল-সবুজের পতাকা হয়ে উঠেছে আবেগ ও শ্রদ্ধার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাদের অংশগ্রহণে ফলে বিশ্বের বুকে বেড়েছে বাঙালি ও বাংলা ভাষার পরিচিতি। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় বিশ্বাস, আঞ্চলিক বৈষম্যকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন বিশ্বমানবতার মহান সেবায়। পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিক আচরণের কারণে তারা আজ সেসব দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় আদর্শ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান রাখা দেশগুলোর অবস্থান সম্পর্কে জাতিসংঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্স’ প্রতিবেদন অনুসারে, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সবার শীর্ষে। ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে তার শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কখনো প্রথম স্থান, কখনো দ্বিতীয় স্থান বা কখনো তৃতীয় স্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য প্রেরণকারী ১২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবসময়ই শীর্ষে থাকে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ৬ জন ফোর্স কমান্ডার ও ৭ জন ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও গৌরব অর্জন করেছেন। তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের ৪৩টি দেশের ৬৩টি মিশনে শান্তিরক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বব্যাপী দেশের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও তারা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলছেন। শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বর্তমানে দেশের রেমিট্যান্স আয় হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকার অধিক।
জীবনের মায়া ত্যাগ করে বিশ্বমানবতার এই সেবায় কাজ করতে গিয়ে জাতিসংঘের ৬৩টি মিশনে বিশ্বের ৪৩ দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এখন পর্যন্ত জীবন বিসর্জন দিয়েছেন ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। এর মধ্যে ১৩১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, নৌবাহিনীর চারজন, বিমানবাহিনীর ৯ জন এবং বাংলাদেশ পুলিশের ২৪ জন সদস্য রয়েছেন। বিভিন্ন মিশনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আহত হয়েছেন ২৫২ জন। বর্তমানে বিশ্বের ১১টি সক্রিয় শান্তিরক্ষা মিশনের মধ্যে ১০টিতে কর্মরত আছেন মোট ৫ হাজার ৬৭৭ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী এই মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছে ১৯৯৩ সাল থেকে। বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা এই মিশনে অংশ নিচ্ছেন ১৯৮৯ সাল থেকে। বাংলাদেশ পুলিশের এ পর্যন্ত ২১ হাজার ৪৫৩ জন শান্তিরক্ষী বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মিশনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৯২৫ জন নারী। বর্তমানে ছয়টি দেশে পুলিশের ১২০ জন নারীসহ ৩৬৪ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। এ পর্যন্ত ২৪ জন পুলিশ শহিদ হয়েছেন।
দেশের প্রায় তিন হাজার নারী শান্তিরক্ষী এরই মধ্যে বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ দেশে সাফল্যের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন সম্পন্ন করেছেন। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ২৭০ জন নারী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ৫১ জন নারী কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পদবির সৈনিক ৬৭ জন, নৌবাহিনীর ৬ জন নারী কর্মকর্তা এবং বিমানবাহিনীর ১১ জন নারী কর্মকর্তা। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সর্বপ্রথম ২০১০ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের নারী দল পাঠায়।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানের ৩৭ বছর ধরে সুনাম, ভালোবাসা, কৃতিত্ব ও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনী।
আঘাত, সংঘাত, ভয়ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা শান্তির বার্তা নিয়ে বিশ্বমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর। তাদের এই মহান ত্যাগের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা সমাদৃত হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অর্জন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষশী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজেদের শীর্ষ অবস্থানটি ধরে রাখা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় অবদান রাখা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও বিনম্রচিত্তে স্মরণ করছি। শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বব্যাপী।