কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

জুলাই বিপ্লব ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার বিপ্লব, যা ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লব’ নামে পরিচিত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় সৃষ্টি করেছে-ড. আবুল বাশার ভূঁইয়া । সূত্র : নয়া দিগন্ত, ১৭ মার্চ ২০২৫

জুলাই বিপ্লব ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

ভূমিকা : বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সবসময়ই পরিবর্তনশীল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উত্থান-পতন, সামরিক শাসনের অভিজ্ঞতা, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা এবং নীতিগত পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার বিপ্লব, যা ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লব’ নামে পরিচিত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় সৃষ্টি করেছে। এই বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এই প্রবন্ধে আমরা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের প্রেক্ষাপট, কারণসমূহ, ফলাফল ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ আলোচনা করব।

 

জুলাই-আগস্ট বিপ্লব : পটভূমি ও কারণ : বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে নানান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের সম্মুখীন হচ্ছিল। বিশেষ করে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্কোচন, শিক্ষা ও চাকরির সঙ্কট এবং মূল্যস্ফীতি জনগণের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি করে। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে, যেখানে জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার কার্যত বাতিল হয়ে যায়। বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে, তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখে। একচেটিয়া শাসনের কারণে প্রশাসনের অভ্যন্তরে দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে সরকারি বিভিন্ন খাতে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সঙ্কট ভয়াবহ রূপ নেয়, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও বিনিয়োগ সঙ্কট জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে। বিশেষত তরুণ সমাজের মধ্যে হতাশা বাড়তে থাকে, কারণ সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি প্রকট হয়ে ওঠে। শিক্ষার মানের অবনতি, উচ্চশিক্ষার ব্যয়বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের অভাব শিক্ষার্থী ও যুবসমাজকে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করে। একই সাথে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত করা হয়, যেখানে বিরোধী মতকে দমন করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করা হয়। মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের ফলে সত্যিকার তথ্য প্রবাহ ব্যাহত হয় এবং জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আরো বাড়তে থাকে।

 

এই প্রেক্ষাপটে, ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি বৃহৎ আন্দোলন গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে জনসমর্থন লাভ করে এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে রূপ নেয়। আন্দোলনটি প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলেও দ্রুতই দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে। শ্রমিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণ তাদের সাথে যোগ দেয়। আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর স্বতঃস্ফূর্ততা এবং সব শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণ। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যা ন্যূনতম সংস্কারের পর যত দ্রুত সম্ভব অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেয়।

 

ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সম্ভাবনা ও পূর্বাভাস : জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এবং এটি ভবিষ্যতের রাজনীতিকে একটি নতুন ধারায় প্রবাহিত করতে পারে। প্রথমত, নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এক অনিবার্য বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ প্রজন্ম, যারা এই বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি ছিল, এখন রাজনৈতিকভাবে আরো সচেতন ও সক্রিয়। তারা কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেনি; বরং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করেছে, যেখানে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে, এটি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ বাংলাদেশের প্রথম ছাত্র নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটি নিজেকে মধ্যপন্থী ও বহুমতের প্রতি সহনশীল হিসেবে বর্ণনা করে, যা ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

 

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরুতেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। যদিও বিপ্লব-পরবর্তী দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এই সরকার গঠিত হয়েছিল, তবে উপদেষ্টারা প্রত্যাশিত দক্ষতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রশাসনিক অদক্ষতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারায় জনমনে হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে, অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য গৃহীত নীতিগুলো কাক্সিক্ষত ফল আনতে ব্যর্থ হচ্ছে, আর নীতিনির্ধারণে অসঙ্গতি ও সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একই সাথে, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ (ঘঈচ) অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে সংবিধান সংশোধন, নির্বাচনী সংস্কার এবং সময় নির্ধারণের বিষয়ে মতবিরোধ আরো প্রকট হচ্ছে, যার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো তীব্র হয়ে উঠছে।

 

অন্যদিকে,বর্তমানে বিএনপির কর্মীরা অতীতের আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী নীতির অনুকরণ করে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি এবং নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে, যা সারা দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার কারণ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, ভারতের সাথে বিএনপির গোপন সমঝোতার অভিযোগও বাতাসে ভাসছে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামগ্রিক অশান্তি আরো প্রকট করে তুলছে।

 

ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল ‘ন্যাশনাল চেঞ্জ পার্টি’ (ঘঈচ) জনগণের সমর্থন পেলেও কিছু বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছে। বিভিন্ন গুঞ্জন রয়েছে, দলটি আগের সরকারের সুবিধাভোগী কিছু ব্যবসায়ীর অর্থায়নের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিপরীতদিকে জামায়াত তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং দুর্নীতিহীন, আদর্শবাদী অবস্থান এর জন্য প্রশংসিত হচ্ছে যা বর্তমান বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য আবশ্যক। বিএনপি উপলব্ধি করছে যে, তারা তাদের নিয়ন্ত্রণহীন কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিদিন জনগণের সমর্থন হারাচ্ছে। অন্যদিকে, জামায়াত ও এনসিপি মনে করছে- নির্বাচনের জন্য আরো সময় নেয়া হলে তারা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে এবং বিজয়ের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। ফলে বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও জামায়াত ও এনসিপি সময় নিতে চাচ্ছে, যা রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরো গভীর করছে।

 

 

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মেরুকরণ কেবল দেশীয় নীতিনির্ধারণেই প্রভাব ফেলবে না; বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভারতের সাথে কূটনৈতিক টানাপড়েন, চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব, যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থানকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, কারণ তারা নতুন সরকারের প্রতি কেমন মনোভাব পোষণ করে, সেটিই ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। একইসাথে, সেনাবাহিনী ও কৌশলগত সংস্থাগুলোর ভূমিকা কিভাবে রাজনৈতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করবে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে সামনে আসবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াও নতুন প্রশাসনের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতির তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকারিতা বৃদ্ধিই নয়; বরং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য হয়ে উঠবে। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে কিছু চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কিছু দল বা গোষ্ঠী অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে, যা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, দলীয় সহিংসতা বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আজ আরো বেশি অনুভূত হচ্ছে। একটি টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সুসংগঠিত কাঠামো দরকার। নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হয়ে উঠলে বাংলাদেশে নতুন ধরনের রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যেখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা থাকবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চিত্র অনেকটাই নির্ভর করবে জনগণের সচেতনতা, রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতার ওপর। যদি নতুন সরকার জনগণের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে আবারো গণ-আন্দোলনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি দমন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো অবহেলা নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। তবে, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুন প্রশাসন যদি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে এটি দেশের গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করতে পারে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

 

 

রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ নির্বাচন এবং কার্যকর শাসনব্যবস্থা যেখানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হয়। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বিনিয়োগবান্ধব নীতি, দুর্নীতির দমন এবং সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে এবং সামাজিক অস্থিরতা কমিয়ে আনে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বিএনপিকে বোঝাতে হবে যে, ভারতের সাথে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জনগণের দৃষ্টিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তাই তাদের কূটনৈতিক কৌশল পুনর্বিবেচনা করা উচিত। জামায়াতকে শুধু ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় রাজনীতির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না রেখে বৃহত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতা উপলব্ধি করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, এনসিপিকে আরো গতিশীল হতে হবে এবং তাদেরকে রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে দেশের সব রাজনৈতিক দলের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা জাতীয় রাজনীতিতে একটি কার্যকর ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ এবং কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা এসব কৌশল গ্রহণ করাই রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে।

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সানওয়ে ইউনিভার্সিটি, সেলাঙ্গর, মালয়েশিয়া