কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

কক্সবাজার থেকে হেঁটে এভারেস্ট জয় : সমুদ্রতট থেকে শৃঙ্গে বিশ্বরেকর্ড শাকিলের

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার [সূত্র : বালের কণ্ঠ, ২০ মে ২০২৫]

কক্সবাজার থেকে হেঁটে এভারেস্ট জয় : সমুদ্রতট থেকে শৃঙ্গে বিশ্বরেকর্ড শাকিলের

সমুদ্র পেরিয়ে পাহাড় জয়—এ যেন গল্পের মতোই অসম্ভব এক যাত্রা। অথচ সেটিকেই সম্ভব করে দেখালেন বাংলাদেশের এক তরুণ। দেশের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে হেঁটে প্রায় এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র ৮৪ দিনে পৌঁছে গেলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে। এই অসাধ্য সাধন করা তরুণের নাম ইকরামুল হাসান শাকিল। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি, যিনি সমুদ্র থেকে হেঁটে সবচেয়ে কম সময়ে এভারেস্টে উঠেছেন। শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি একটি বিশ্বরেকর্ড।

 

 

একজন শাকিলের পথচলা

গাজীপুরের কাশিমপুরের ছেলে শাকিল। জন্ম ১৯৯৪ সালে। ছোটবেলা থেকেই ভিন্ন কিছু করার স্বপ্ন। নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে কাজ করেছেন সুপারশপে বিক্রয়কর্মী হিসেবেও। ২০১৯ সালে বাবাকে হারানোর পর পরিবারের ভার এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। তবু থেমে থাকেননি শাকিল। নাট্যচর্চা, পরিবেশ সচেতনতা থেকে শুরু করে নাট্যদল ও বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেওয়া, সব মিলিয়ে জীবন এক মিশ্র অভিজ্ঞতার গল্প। ২০১৩ সালে ‘বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব’-এ যোগ দিয়ে শুরু হয় পর্বতারোহণের যাত্রা।

 

 

প্রথম জয়, প্রথম স্বপ্ন

২০১৫ সালে এম এ মুহিতের নেতৃত্বে শাকিল প্রথমবার অংশ নেন কেয়াজো-রি অভিযানে। জয় করেন ২০ হাজার ২৯০ ফুট উঁচু শৃঙ্গ। এরপর একে একে জয় করেন হিমলুং, দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২-এর মতো পর্বত। কিন্তু এবারের অভিযান ছিল অন্য রকম। ছিল স্বপ্নের চেয়েও বড়। শুধু শৃঙ্গ জয় নয়, একটি বার্তা নিয়ে তিনি নেমে পড়েছিলেন পথে—পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা।

 

 

 

ইনানী থেকে এভারেস্ট, ৮৪ দিনের দুর্ধর্ষ অভিযান

২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার ও উপ-আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দয়ারাত্নের উপস্থিতিতে যাত্রা শুরু হয় শাকিলের। লক্ষ্য—‘সি টু সামিট’ বা ‘সমুদ্র থেকে শৃঙ্গে’। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল—তিন দেশের প্রায় এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে তিনি পৌঁছান এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে। এরপর শুরু হয় চূড়ায় ওঠার পর্ব। মাত্র ৮৪ দিনে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ফেলেন তিনি।

 

 

 

বিশ্বরেকর্ডের অনুপ্রেরণা

‘সি টু সামিট’ অভিযানের অনুপ্রেরণা ছিল ৩৫ বছর আগের এক অস্ট্রেলিয়ান পর্বতারোহী—টিম ম্যাকাটনি-স্নেপ, যিনি ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে এভারেস্টে পৌঁছেছিলেন। শাকিল সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যান সময়ের হিসাবে।

 

 

 

শুধু রেকর্ড নয়, পরিবেশ বার্তাও

এই অভিযানে শাকিলের সহযোগী ছিল ইউএনডিপি, বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব এবং প্রাণ গ্রুপ (টাইটেল স্পন্সর)। ‘এই অভিযান কেবল একটি বিশ্বরেকর্ড নয়’, বলেন শাকিল। ‘এটি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ। পরিবেশ সংরক্ষণ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং টেকসই অভিযাত্রার বার্তা দিতেই আমি হেঁটে এসেছি এভারেস্ট পর্যন্ত।’

 

 

 

ছয় জয়ীর পরে সপ্তম শাকিল

এর আগে বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এভারেস্ট জয় করেছেন তাঁরা হলেন মুসা ইব্রাহিম, নিশাত মজুমদার, এম এ মুহিত, ওয়াসফিয়া নাজরীন, খালেদ হোসেন ও বাবর আলী। তালিকার সপ্তম নাম এখন ইকরামুল হাসান শাকিল, যার জয় শুধু উঁচু শৃঙ্গ নয়, হৃদয়ও ছুঁয়ে যাওয়া এক লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। ইকরামুল হাসান শাকিল বলেন, ‘এই যাত্রা শুধু পাহাড়ের নয়, নিজেকে জয় করার। আর কোনো স্বপ্নই দূর নয়, যদি পদক্ষেপ নেওয়া যায়।’