কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

ক্রান্তিকালীন বিধানাবলি অসাংবিধানিক শাসন রোধ করতে পারেনি

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানবিষয়ক যেকোনো সংশোধনী আনতে চাইলে তাকে অবশ্যই আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন তাদের সাথে সমঝোতায় উপনীত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সাংবিধানিক সঙ্কট দেখার সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়-ইকতেদার আহমেদ। সূত্র : নয়া দিগন্ত, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

ক্রান্তিকালীন বিধানাবলি অসাংবিধানিক শাসন রোধ করতে পারেনি

সংবিধান যে কোনো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। একটি রাষ্ট্রের মূলনীতি কী হবে, জাতীয়তা ও ভাষা কী হবে, নাগরিকরা কোন্ কোন্ মৌলিক অধিকার ভোগ করবেন, রাষ্ট্রের শাসনপদ্ধতি কী হবে, আইনসভা কীভাবে গঠিত হবে, সাংবিধানিক পদসমূহে কীভাবে নিয়োগ দেয়া হবে, নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে, কখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব কে পালন করবে, শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা করা হবে, প্রজাতন্ত্রের পদস্থ সামরিক-বেসামরিক পদসমূহ পূরণে কী পদ্ধতি অনুসৃত হবে, রাষ্ট্রের সরকারি হিসাব-নিরীক্ষার দায়িত্ব কার ওপর থাকবে প্রভৃতি সবিস্তারে সংবিধানে উল্লেখ থাকে।

 

 

কোনো রাষ্ট্রের শাসন কার্যসহ অপরাপর কর্মকাণ্ড সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হলে তাকে সাংবিধানিক শাসন বলা হয়। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এমন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক শাসনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনায় কোনোরূপ ব্যাঘাত ঘটতে দেখা যায় না। যে কোনো কারণে গণতান্ত্রিক শাসনে ব্যাঘাত ঘটলে সেটি অতিক্রমের জন্য কোনো কোনো দেশের সংবিধানে ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়; তবে আমাদের সংবিধানে এ বিধানটিতে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়ে উক্ত সময়সীমাবহিভর্ূত কোনো অসাংবিধানিক শাসনকে ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি দ্বারা বৈধতা দেয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।

 

 

আমাদের দেশের উচ্চাদালত কর্তৃক সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণাসংক্রান্ত রায়কে অবলম্বন করে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনয়নের সূত্রপাত ঘটানো হয়। উক্ত রায়ে ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলির ব্যাপ্তি কতটুকু হবে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। তাই ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলির ব্যাপ্তি নির্ধারণে রায়ের দিকনির্দেশনা যে মুখ্য নিয়ামক সে বিষয়ে কারো মধ্যে সংশয় থাকার কথা নয়। এখন দেখা যাক ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি বিষয়ে ৭২’র সংবিধানে কী বলা ছিল এবং দেশের দীর্ঘ পরিক্রমায় এ বিধানাবলিতে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

 

 

 

সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি সংক্রান্ত। ৭২’র সংবিধানে বলা ছিল- এ সংবিধানের অন্য কোনো বিধান সত্তে¡ও চতুর্থ তফসিলে বর্ণিত ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি কার্যকর হবে। ৭২’র সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি হিসেবে ১৭টি বিষয়ের উল্লেখ ছিল। এ বিষয়গুলো হলো- ১. গণপরিষদ ভঙ্গকরণ ২. প্রথম নির্বাচন ৩. ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাবলি ৪. রাষ্ট্রপতি ৫. প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী ৬. বিচার বিভাগ ৭. আপিলের অধিকার ৮. নির্বাচন কমিশন ৯. সরকারি কর্ম কমিশন ১০. সরকারি কর্ম ১১. পদে বহাল থাকার জন্য শপথ ১২. স্থানীয় শাসন ১৩. কর আরোপ ১৪. অন্তর্বর্তী আর্থিক ব্যবস্থাসমূহ ১৫. অতীত হিসাবের নিরীক্ষা ১৬. সরকারের সম্পত্তি পরিসম্পৎ, স্বত্ব, দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা এবং ১৭. আইনের উপযোগীকরণ ও অসুবিধা দূরীকরণ। মূলত এ ১৭টি বিষয়ের মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন পূর্ববর্তী এসব বিষয়ে যেসব বিধানাবলি ছিল তার কার্যকারিতা কোন কোন ক্ষেত্রে কীভাবে অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং সংবিধানের বিধানাবলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য কী সময়সীমা দেয়া থাকবে তার উল্লেখ রয়েছে।

 

 

 

সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে চতুর্থ তফসিল হতে ১২ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত ‘স্থানীয় সরকার’ বিষয়টি অবলুপ্ত করা হয়, যা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পুনঃ একই অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হয়।

 

 

 

পরবর্তীতে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন আইন, ১৯৭৯ এর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখের মধ্যে প্রণীত সব সামরিক ফরমান এবং ফরমান বলে সংবিধানে আনীত সংশোধনী ও প্রণীত আইন এবং কৃত সব ধরনের কর্মকাণ্ডকে বৈধতাদান করে আদালতে এসব বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের পথ রুদ্ধ করে এটি চতুর্থ তফসিলের ১৮ অনুচ্ছেদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

 

 

অতঃপর ১৯৮২ সালে দেশ পুনঃসামরিক শাসনের কবলে পড়লে সংবিধানের ৭ম সংশোধন আইন, ১৯৮৬ এর দ্বারা ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের সামরিক ফরমান এবং উক্ত ফরমান বলে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর অবধি সম্পাদিত সব কার্যক্রমকে বৈধতা দান করে আদালতে যে কোনো ধরনের প্রশ্ন উত্থাপনের পথ রুদ্ধ করে চতুর্থ তফসিলে ১৯ অনুচ্ছেদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

 

 

এরপর সংবিধান নবম সংশোধন আইন, ১৯৮৯ এর মাধ্যমে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ২০ অনুচ্ছেদে উপরাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করে বলা হয়, এ সংশোধনীটি আনয়নের পূর্বে যিনি উপরাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি উক্ত পদে বহাল থাকবেন এবং উক্ত সময়কালে যিনি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তার পদের মেয়াদ যে তারিখে শেষ হবে উক্ত তারিখে উপরাষ্ট্রপতির মেয়াদও শেষ হবে।

 

 

 

সংবিধানের নবম সংশোধনীর মাধ্যমে আনীত উপরাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত এ বিধানটি সংবিধান দ্বাদশ সংশোধন আইন, ১৯৯১ এর দ্বারা অবলুপ্ত করা হয়।

নবম সংশোধন পরবর্তী সংবিধান একাদশ সংশোধন আইন, ১৯৯১ এর মাধ্যমে চতুর্থ তফসিলে অনুচ্ছেদ ২১ ও ২২ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

 

অনুচ্ছেদ ২১ এর মাধ্যমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তারিখে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ ও শপথ প্রদান এবং তার কাছে পদত্যাগ প্রদান এবং ৬ ডিসেম্বর হতে সংবিধান একাদশ সংশোধন আইন, ১৯৯১ প্রবর্তনের তারিখে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে কার্যভার গ্রহণ করা অবধি সময়কালের মধ্যে উক্ত উপরাষ্ট্রপতি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে যেসব কার্য সম্পন্ন করেছেন তার অনুমোদন ও সমর্থন দেয়া হয় এবং আইন অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়েছে মর্মে ঘোষিত হয়। তা ছাড়া উক্ত উপরাষ্ট্রপতিকে পুনঃপ্রধান বিচারপতি পদে প্রত্যাবর্তনের অনুমোদন দেয়া হয়।

 

 

 

অনুচ্ছেদ ২২ এ বলা হয়- সংবিধান দ্বাদশ সংশোধন আইন, ১৯৯১ প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে যে সংসদ কর্মরত ছিল অর্থাৎ পঞ্চম সংসদ তা সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে নির্বাচিত ও গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং তা সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী বহাল থাকবে।

 

 

 

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে মহিলা সদস্য সম্পর্কিত অস্থায়ী বিশেষ বিধান প্রণয়ন করে বলা হয় সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধন আইন, ২০০৪ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য ৫০টি আসন কেবল মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তারা আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। উক্ত অনুচ্ছেদে আরো উল্লেখ করা হয় প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত ৩০০ সদস্য এবং তাদের ভোটে নির্বাচিত ৫০ মহিলা সদস্য সমন্বয়ে সংসদ গঠিত হবে। অতঃপর ২০১৮ সালে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে একাদশ সংসদে উক্ত সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়া পরবর্তী ২৫ বছরের জন্য এ সময় বর্ধিত করা হয়।

 

 

 

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে চতুর্থ তফসিল হতে অনুচ্ছেদ ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২ ও ২৩ অবলুপ্ত করে পূর্বের ১৫০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে দু’টি দফা সমন্বয়ে গঠিত ১৫০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন পূর্বক (১) দফায় বলা হয়- এ সংবিধানের অন্য কোনো বিধান সত্তে¡ও ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে এ সংবিধান প্রণয়নকালে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে বর্ণিত বিধানাবলি ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি হিসেবে কার্যকর থাকবে।

 

 

 

একই অনুচ্ছেদে দফা (২) এ বলা হয়- ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর অবধি এ সংবিধান প্রবর্তন হওয়ার অব্যবহিত সময়কালের মধ্যে সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ষষ্ঠ তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম এবং ৭ম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক ভাষণ ও দলিল যা উক্ত সময়কালের জন্য ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি বলে গণ্য হবে।

 

 

 

১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন হতে পঞ্চদশ সংশোধনী প্রবর্তন পূর্ববর্তী সংবিধানে চারটি তফসিলের বিষয়ে উল্লেখ ছিল। এ চারটি তফসিলের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসংক্রান্ত দ্বিতীয় তফসিল সংবিধান চতুর্থ সংশোধন আইন, ১৯৭৫ এর মাধ্যমে অবলুপ্ত করা হয়। সংবিধানে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজিত, বিয়োজিত ও প্রতিস্থাপিত হয়।

 

 

 

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন পরবর্তী অনুচ্ছেদ ১৫০ এর বিধানাবলি, চতুর্থ তফসিল হতে অনুচ্ছেদ ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২ ও ২৩ এর অবলুপ্তি এবং পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম হিসেবে তিনটি নতুন তফসিলের অন্তর্ভুক্তি পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি বলতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর অবধি ও সংবিধান প্রবর্তনকালে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যেসব বিষয়ের উল্লেখ ছিল উক্ত বিষয়াবলিসহ পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিলে উল্লিখিত বিষয়গুলো গণ্য হবে।

 

 

 

স্পষ্টত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত ১৫০ অনুচ্ছেদে যে সীমারেখা দেয়া হয়েছে উক্ত সীমারেখায় যে তারিখে সংবিধান প্রণীত হয়েছে সে তারিখের পরবর্তী কোনো অসাংবিধানিক শাসনকে ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি দ্বারা অনুমোদন সমর্থন করে না। উল্লেখ্য যে, যদিও উচ্চাদালতের সিদ্ধান্তের অনুবলে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে অনুমোদিত ৭৫’র সামরিক শাসন এবং সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে অনুমোদিত ৮২’র সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সে অবৈধ ঘোষণা চতুর্থ তফসিল হতে ৫ম ও ৭ম সংশোধনীর অনুবলে সংযোজিত অনুচ্ছেদ ১৮ ও ১৯ অবলুপ্তির কারণের উদ্ভব ঘটিয়েছে কিন্তু একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সন্নিবেশিত অনুচ্ছেদ ২১ ও ২২ বিষয়ে আদালতে কোনো মামলা না হলেও সংসদ তা স্বীয় এখতিয়ার বলে চতুর্থ তফসিল হতে অবলুপ্ত করে।

 

 

 

এ কথাটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আদালত কর্তৃক পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হলেও উভয় সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চাদালতের বিচারকদের জন্য যেসব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছিল তা অজানা আকাক্সক্ষায় অক্ষুণ্ণ রাখা হয়। এ অক্ষুণ্ণ রাখা হতে ধারণা করা যায় পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত ১৫০ অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি দ্বারা বেসামরিক বা সামরিক ব্যক্তি কর্তৃক অসাংবিধানিক শাসনের পথ রুদ্ধ করা গেলেও তা কি সাংবিধানিক পদধারী কর্তৃক অসাংবিধানিক শাসনের পথ রুদ্ধ করতে পারবে? আর রুদ্ধ করতে পারবে না বলেই দেখা গেল ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হতে ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনের বিষয়টি তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ সংক্রান্ত মামলার বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া সত্তে¡ও আদালত অযাচিতভাবে উক্ত সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং সংসদকে পাশ কাটিয়ে উক্ত সরকারের কার্যকলাপের বৈধতা দান করে। এ বৈধতা দ্বারা অনুমিত হয় সংসদও ক্ষেত্রবিশেষে অজানা আকাক্সক্ষার কাছে অসহায়।

 

 

 

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানবিষয়ক যেকোনো সংশোধনী আনতে চাইলে তাকে অবশ্যই আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন তাদের সাথে সমঝোতায় উপনীত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সাংবিধানিক সঙ্কট দেখার সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়।

 

 

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক