কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক কূটনীতি

ট্রাম্পের ২০২৫ সালের মধ্যপ্রাচ্য সফর ছিল অর্থনৈতিক ও বাস্তববাদী কূটনীতির একটি উচ্চপর্যায়ের মহড়া। এটি বিশাল বিনিয়োগ চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন-উপসাগরীয় সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে এবং এই অঞ্চলে একটি নতুন, কম হস্তক্ষেপবাদী পদ্ধতির ইঙ্গিত দিয়েছে। মো: বজলুর রশীদ [প্রকাশ : নয়া দিগন্ত, ২৫ মে ২০২৫]

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক কূটনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১৩ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত চার দিন মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার প্রথম বিদেশ সফর। এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর জোর দেয়া হয়েছে যাতে বিনিয়োগ বাড়ে। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে নতুন বিনিয়োগ বিশেষ করে তাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম সম্পদ তহবিল থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি মেয়াদের প্রথম বড় আন্তর্জাতিক ব্যস্ততার ছাপ রাখেন সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে। এ সফরে তিনি অর্থনৈতিক চুক্তির দিকে বেশি মনোনিবেশ করেন।

 

 


ট্রাম্পের সফর স্পষ্টতই লেনদেনমূলক, প্রথাগত আদর্শিক বা মূল্যবোধভিত্তিক কূটনীতির চেয়ে এতে ব্যবসায়িক চুক্তি ও বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বিমান চলাচল, প্রতিরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জ্বালানি অবকাঠামোর মতো খাতে মার্কিন প্রশাসন যুগান্তকারী চুক্তিসহ চার ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত চুক্তির কথা বলেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি মধ্যপ্রাচ্যের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে একটি বৃহত্তর পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। হস্তক্ষেপ এবং গণতান্ত্রিক প্রচারণা থেকে বিরত থেকে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুবিধাভিত্তিক বাস্তববাদী অংশীদারিত্বের বিষয় টেনে আনা হয়েছে। বিশেষভাবে, ট্রাম্প হস্তক্ষেপ না করার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে শাসনের বিষয়ে ‘বক্তৃতা’ দেয়া বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিও দেন, পরিবর্তে ‘শান্তি ও মুনাফা’ বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেন। এটি উপসাগরীয় নেতারা ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন।

 

 

সফরে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে : সৌদি আরব ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে সামরিক ক্রয়ের জন্য ১৪২ বিলিয়ন ডলার, এনভিডিয়া ও এএমডির মতো মার্কিন সংস্থাগুলোর সাথে জড়িত এআই এবং শক্তি প্রকল্পগুলোর জন্য ২০ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। কাতার ২৪৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে, যার মধ্যে রেকর্ড ব্রেকিং ৯৬ বিলিয়ন ডলারের বোয়িং অর্ডার এবং উল্লেখযোগ্য প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৪.৫ বিলিয়ন ডলারের বোয়িং বিমানের অর্ডার এবং আবুধাবিতে একটি বড় এআই ডাটা সেন্টার প্রকল্প ঘোষণা দিয়েছে। এই চুক্তিগুলো মার্কিন-উপসাগরীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর করার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সর্বাগ্রে থাকছে। ট্রাম্পের প্রশাসন সিরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণাও দিয়েছে, যা দেশটির পুনর্গঠন এবং আঞ্চলিক সংহতকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

এই চুক্তিগুলো কেবল একটি শক্তিশালী সামরিক অংশীদারত্বই তুলে ধরেনি; বরং প্রযুক্তি, জ্বালানি ও অবকাঠামোর মতো খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যও অর্জিত হয়েছে। এই কৌশলগত অবস্থান উপসাগরীয় দেশগুলোর উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের সাথে মার্কিন স্বার্থকে একীভূত করার চেষ্টা। বিশেষত তাদের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার এবং তেলের রাজস্বের উপর নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টায়। তদুপরি, এই সফরটি একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক পুনর্বিবেচনার প্রতিফলন ঘটায়, কারণ ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের প্রতি সঙ্ঘাতমূলক নীতি থেকে সরে আসার ইচ্ছার ইঙ্গিত দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি ইরানের ঐতিহ্যবাহী প্রতিদ্ব›দ্বীদের উত্তেজনা প্রশমনের ইচ্ছা প্রকাশ করতে প্ররোচিত করেছিল, প্রশাসনের লক্ষ্য ছিল উপসাগরীয় দেশগুলোর পক্ষে সমর্থন জোরদার করা। তবে এই সফর বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মার্কিন শাসনের ওপর এর প্রভাব নিয়ে। সমালোচকরা সম্ভাব্য নির্বাহী বাড়াবাড়ি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চুক্তির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত ইরানের সাথে চলমান উত্তেজনা এবং মধ্যপ্রাচ্যের জটিল গতিশীলতার আলোকে। যুক্তরাষ্ট্র যখন পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অগ্রসর হচ্ছে, তখন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মূল খেলোয়াড় হিসেবে উপসাগরীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে।

 

 

সিরিয়ার সাথে ট্রাম্পের সম্পৃক্ততা এবং ইরানের প্রতি নরম সুর আগের মার্কিন নীতি থেকে উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতি বা সরে আসা। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সাথে বৈঠকের মাধ্যমে ট্রাম্প একটি নতুন আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা মেনে নেয়ার এবং বছরের পর বছর ধরে চলা সঙ্ঘাতের পরে সিরিয়াকে স্থিতিশীল করার ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইরানের সাথে পরমাণু আলোচনার বিষয়ে তার সতর্ক আশাবাদ অবশ্য তেহরানের পক্ষ থেকে সংশয়ের মুখে পড়ে, যা অব্যাহত উত্তেজনা জোরদার করে। ভ্রমণপথ থেকে ইসরাইলের বাদপড়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটিকে ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার পরিবর্তনের লক্ষণ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতির প্রতি ঐতিহ্যবাহী মার্কিন-ইসরাইলকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসার লক্ষণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। পরিবর্তে, ট্রাম্পকে হামাসের মতো গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ এবং দামেস্ক ও তেহরানের কূটনৈতিক তৎপরতাসহ আঞ্চলিক অভিনেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

 

 

এই সফর বিতর্কহীন ছিল না। ট্রাম্পের প্রতিনিধি দলে এই অঞ্চলে চলমান ব্যবসায়িক স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক নির্বাহী এবং তার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। এতে সম্ভাব্য স্বার্থের দ্ব›দ্ব এবং সরকারি ও বেসরকারি স্বার্থের অস্পষ্টতা সম্পর্কে উদ্বেগ উঠে এসেছে। ট্রাম্প কাতার থেকে একটি বিলাসবহুল বিমান গ্রহণ করতে চেয়েছেন। মার্কিন প্রতিবেদনগুলো আইন প্রণেতাদের মধ্যে নৈতিক বিতর্ক এবং জাতীয় সুরক্ষা উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

 

 

পুরো সফরজুড়ে, ট্রাম্পকে উপসাগরীয় নেতারা উষ্ণভাবে স্বাগত জানিয়েছেন, যারা তার বাস্তববাদী পদ্ধতি এবং শর্তে জড়িত হওয়ার ইচ্ছার প্রশংসা করেছিলেন। সাংস্কৃতিক কূটনীতি প্রদর্শনের জন্য এই সফরটি যতœ সহকারে সাজানো হয়েছিল, ট্রাম্প ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এই প্রশংসা মার্কিন নেতারা অন্যত্র প্রায়শ যে বিতর্কিত অভ্যর্থনার মুখোমুখি হন তার সাথে একেবারেই বিপরীত।

 

 

ধুমধাম এবং বিশাল চুক্তি সত্তে¡ও এই অঞ্চলের সবচেয়ে জটিল ইস্যু, গাজা সঙ্ঘাতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন, এই সফর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে দৃঢ় করলেও চলমান যুদ্ধ বা বৃহত্তর ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সঙ্ঘাতের বাস্তব সমাধানের ক্ষেত্রে খুব কমই এগিয়েছে। লেনদেনের ফোকাস, স্বল্পমেয়াদে কার্যকর হলেও এই অঞ্চলে গভীর সুরক্ষা এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলা করা যায়নি।

 

 

উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে, কিছু আরব দেশ গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। গাজায় মানবিক বিপর্যয় চলছে। লাখ লাখ গাজাবাসী চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে মরছে। সিরিয়া অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানো নিয়ে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। লেবানন একাধিক সঙ্কটে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন, উচ্চ বেকারত্ব, যুবকদের মধ্যে হিজবুল্লাহর প্রভাব দুর্বল হলেও সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা অব্যাহত। বিদ্যুতের ঘাটতি, অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ইয়েমেন বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়গুলোর অন্যতম। ১০ বছরের গৃহযুদ্ধের আশু সমাধান দেখা যাচ্ছে না। দুই কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষের (জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ) মানবিক সহায়তা দরকার, তারা তীব্র খাদ্যসঙ্কট ও অপুষ্টিতে ভুগছে। এর মধ্যে সুদানে মানবিক জরুরি অবস্থা দেখা দিয়েছে। চলমান গৃহযুদ্ধে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এক কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্ভিক্ষে।

 

 

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর ইরানের সঙ্ঘাতময় মনোভাব আরো জোরালো করেছে। সফরের সময় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইরানকে এই অঞ্চলে ‘সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক শক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন; অব্যবস্থাপনা ও অস্থিতিশীলতার জন্য ইরানি নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। তিনি ইরানকে ‘যুদ্ধ ও সহিংসতা’ অথবা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তির মধ্যে একটি বেছে নেয়ার আহ্বান জানান। সফরের আগে এবং সফর চলাকালীন উভয়পক্ষ হুমকি বিনিময় করে আলোচনা বাতিল করে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি প্রকাশ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে আলোচনার ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। এই উত্তেজনা গভীর অবিশ্বাস এবং প্রতিকূলতা অব্যাহত থাকার বিষয়টি তুলে ধরে।

 

 

ট্রাম্পের সফর বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›দ্বী বিশেষ করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের জোটবদ্ধতা জোরদার করেছে। এটি ইরানকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আরো বিচ্ছিন্ন করে তোলে, কারণ এই উপসাগরীয় দেশগুলো ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানায়। এদিকে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে যে, ইরান কখনোই ইসরাইলকে ধ্বংস করার সক্ষমতা অর্জন করবে না, যা তেহরানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের আরেকটি স্তর যোগ করেছে। ট্রাম্পের এবারের মধ্যপ্রাচ্য সফর কঠোর বাগাড়ম্বর, নতুন করে চাপ এবং ইরানের প্রতিপক্ষের সাথে জোটবদ্ধতার মাধ্যমে মার্কিন-ইরান উত্তেজনা আরো এক স্তরে উন্নীত হয়েছে। উভয়পক্ষের কঠোর অবস্থানের কারণে, সম্ভাব্য কোনো কূটনৈতিক সাফল্য অনিশ্চিত করে তুলেছে।

 

 

ইরানি কর্মকর্তারা এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ট্রাম্পের সফরের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নিন্দা ও হুঁশিয়ারির মধ্য দিয়ে। খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো চুক্তির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ট্রাম্পের প্রচারকে কপট ও শত্রুভাবাপন্ন বলে অভিহিত করেন। ইরান বা তার মিত্রদের ওপর যেকোনো হামলা হলে কঠোর ও তাৎক্ষণিক জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আরো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখলে পরমাণু কর্মসূচি আরো জোরদার করবে। ইরানের পার্লামেন্টে এ অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব মোকাবেলার পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বানও রয়েছে। আঞ্চলিক কূটনৈতিক কৌশল বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের প্রতি ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় ইরান প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার কথা বলেছে। ইরানি কর্মকর্তারা ট্রাম্পের সফরকে ইরানকে বিচ্ছিন্ন করার এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ণ করার প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন।

 

 

কূটনৈতিক পালাবদল সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারার সাথে বৈঠক বড় প্রাপ্তি। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করাও এক বড় পাওয়া উভয়ের জন্য। হামাসের হাত থেকে আমেরিকান জিম্মি এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করায় ট্রাম্পের ভাবমর্যাদা বেড়েছে। এই সফরে ইসরাইল কোণঠাসা হয়েছে এবং নেতানিয়াহুর সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যকে কেবল ইসরাইলি দৃষ্টিকোণ থেকে দূরে সরিয়ে আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করায় ইরানের সাথে উত্তাপ কিছুটা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

 

ট্রাম্পের ২০২৫ সালের মধ্যপ্রাচ্য সফর ছিল অর্থনৈতিক ও বাস্তববাদী কূটনীতির একটি উচ্চপর্যায়ের মহড়া। এটি বিশাল বিনিয়োগ চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন-উপসাগরীয় সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে এবং এই অঞ্চলে একটি নতুন, কম হস্তক্ষেপবাদী পদ্ধতির ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে, এই সফরটি নৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করেছে। কারণ মধ্য প্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুতর দ্ব›দ্বগুলোর অনেকগুলোই অমীমাংসিত থেকে গেছে। লেনদেনের এই মডেলটি স্থায়ী স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে নাকি কেবল বিদ্যমান শক্তি কাঠামোকে দৃঢ় করবে সেটিই দেখার বিষয়।

 

 

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার