কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

মেক্সিকো কানাডা ও চীনের উপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ

সূত্র : বণিক বার্তা, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মেক্সিকো কানাডা ও চীনের উপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ

শুল্ক ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণা এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বারবার দেয়া হুমকিই বাস্তবায়ন করলেন। শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা তাকে সতর্ক করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য যুদ্ধ মার্কিন ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং ভোক্তা ও কোম্পানিগুলোর জন্য দাম বাড়িয়ে দেবে।

 

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) কানাডা ও মেক্সিকোর আমদানির উপর ২৫ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে তৈরি হয়েছে নতুন বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির গতিকে মন্থর এবং মুদ্রাস্ফীতিকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে এ সিদ্ধান্ত। খবর রয়টার্স।

 


ফ্লোরিডায় গল্ফ খেলার পর ট্রাম্প শুল্ক সংক্রান্ত তিনটি পৃথক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। তিনি বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল মাদক পাচার ও অবৈধ অভিবাসন সংক্রান্ত জাতীয় জরুরি অবস্থা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই শুল্ক বহাল থাকবে।

 

 


তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান এবং মিডওয়েস্টার্ন রাজ্যগুলোর উদ্বেগের প্রতি সাড়া দিয়ে ট্রাম্প কানাডার জ্বালানি পণ্যের উপর মাত্র ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে মেক্সিকোর জ্বালানি পণ্যের উপর সম্পূর্ণ ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে। মার্কিন সেন্সাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের কাঁচা তেল আমদানি করা হয়েছে, যা কানাডা থেকে মার্কিন আমদানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

 

 

কানাডা এবং মেক্সিকোতে নির্মিত যানবাহনের উপর নতুন করে উচ্চ মাত্রার শুল্ক আরোপ করা হওয়ায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অটোমেকাররা। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কানাডা এবং মেক্সিকো তৎক্ষণাৎ পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে চীন এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। হোয়াইট হাউসের এক ফ্যাক্ট শিটে বলা হয়েছে যে, যতক্ষণ না সংকট প্রশমিত হয় ততক্ষণ শুল্ক বহাল থাকবে। কিন্তু এই তিনটি দেশকে কী করতে হবে তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

 

 

শুল্ক ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণা এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বারবার দেয়া হুমকিই বাস্তবায়ন করলেন। শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা তাকে সতর্ক করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য যুদ্ধ মার্কিন ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং ভোক্তা ও কোম্পানিগুলোর জন্য দাম বাড়িয়ে দেবে।

 

 

কানাডার প্রাদেশিক কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়িক নির্বাহীরা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের উপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। মেক্সিকো এবং কানাডার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তাদের দেশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক দিয়ে জবাব দেবে।

ট্রাম্পের শুল্কের সমর্থনে ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট এবং ন্যাশনাল ইমার্জেন্সিজ অ্যাক্টের অধীনে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন, যা রাষ্ট্রপতিকে সংকট মোকাবেলায় নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপক ক্ষমতা দেয়।

 

 

হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা বলেছেন, শুল্কের ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম হবে না এবং কানাডা, মেক্সিকো বা চীন যদি মার্কিন রফতানির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়, তবে ট্রাম্প মার্কিন শুল্ক বাড়াতে পারেন। অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে বলেছেন যে, কানাডার এখন আর কোনো বিকল্প নেই, কঠোরভাবে জবাব দিতে হবে। তিনি বলেন, অন্টারিওর প্রিমিয়ার হিসেবে মার্কিন শুল্কের বিপরীতে শক্তিশালী ও জোরালো প্রতিক্রিয়া জানাতে ফেডারেল সরকারের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

 

 

নোভা স্কটিয়ার প্রিমিয়ার টিম হিউস্টন বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সকল অ্যালকোহল প্রদেশটির দোকান থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, মেক্সিকোর অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে যে, তাদের কোনো তাৎক্ষণিক মন্তব্য নেই। তবে মেক্সিকোর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, মেক্সিকো শনিবারের পর প্রতিশোধমূলক শুল্ক দিয়ে জবাব দেবে।

 

 

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের অন্যতম চীন, কানাডা ও মেক্সিকো। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ৪০ শতাংশ গেছে এ তিন দেশে থেকে। আর তিনটি দেশ থেকেই পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।