কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাষ্ট্রের দায় কী

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাষ্ট্রের কী দায়, সে সম্পর্কে লিখেছেন- ফারহানা হাফিজ, শাম্মিন সুলতানা, সাবিনা পারভীন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও সাদিক মোহাম্মদ আলম [সূত্র : প্রথম আলো, ১৯ মে ২০২৫]

নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাষ্ট্রের দায় কী

 

২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের রাজপথে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের সাহসী ও সংগঠিত অংশগ্রহণ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। দেশের মোট  জনসংখ্যার প্রায় ৫১ শতাংশ নারী হওয়ায় এই অংশগ্রহণ শুধু প্রতিবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও অধিকার পুনর্নির্ধারণের ঐতিহাসিক দাবি হয়ে ওঠে।

এই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে। এই কমিশনের লক্ষ্য ছিল আইনি, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য পর্যালোচনা করে প্রাসঙ্গিক সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়ন।

 

 

 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ। নারীরা দৈনিক গড়ে ৬ দশমিক ২ ঘণ্টা গৃহস্থালি কাজ করেন, যেখানে পুরুষেরা করেন মাত্র ১ দশমিক ৪ ঘণ্টা। প্রায় ৭০ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর দ্বারা কোনো না কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হন। ৫৪ শতাংশ নারী শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার এবং উত্তরাধিকার আইনে নারীরা এখনো সমান অংশ পান না।

নারীর সম-অধিকার অর্জন শুধু সামাজিক ন্যায়ের বিষয় নয়, এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের অংশ। তাই নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার প্রতিফলন এবং এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা সমতা, মর্যাদা ও অন্তর্ভুক্তির ভিত্তিতে টেকসই সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

 
 

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে কী আছে

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০২৫ সালের ১৯ এপ্রিল। ১৭টি অধ্যায়ে বিভক্ত এই প্রতিবেদনে ৩ ধাপে মোট ৪৩৩টি সুপারিশ উপস্থাপিত হয়েছে। ধাপ তিনটি হলো, ক. অন্তর্বর্তী সরকারের আওতায় তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ; খ. নির্বাচিত সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে সম্পাদনযোগ্য কার্যক্রম এবং গ. ভবিষ্যৎ নারীবান্ধব রাষ্ট্র গঠনে কৌশলগত স্বপ্ন ও প্রস্তাবনা।

 

 

 

উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হচ্ছে সংসদে সমানসংখ্যক নারী প্রতিনিধি সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করা; সব কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়ন ও অভিযোগ কমিটি গঠন; বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ; উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে আইনের সংশোধন; ঐচ্ছিক অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন; ছয় মাসের পূর্ণ বেতনের বাধ্যতামূলক প্রসূতি ও দত্তকজনিত ছুটি; বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি; যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি; গণমাধ্যমে ৫০ শতাংশ নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ; স্থায়ী নারী কমিশন প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

কমিশন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রজুড়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে স্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করেছে। উত্তরাধিকার আইনে সমতার বিধান ঐচ্ছিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। কিন্তু রক্ষণশীল গোষ্ঠী ‘সমতা’র প্রশ্নে ধর্মীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে পুরো কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

 

 

 

 

কমিশন কি নতুন কিছু বলছে

বৈশ্বিক নারী অধিকার আন্দোলনের মতো বাংলাদেশের নারী অধিকার আন্দোলনকেও অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তবু দাবি থেমে থাকেনি, থেমে থাকেনি অগ্রগতিও। বাংলাদেশ নারী অগ্রগতিকে মানবাধিকার ও সামগ্রিক উন্নয়নের মূল স্রোতে নিয়ে এসেছে। এর অংশ হিসেবে সরকার ১৯৯৫ সালের বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন অনুমোদন করে ১৯৯৭ সালে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি’ প্রণয়ন করে, যা ২০১১ সালে হালনাগাদ হয়। ২০১৩ সালে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট ভূমিকা প্রদান করে।

 

 

 

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো এই নীতিমালারই সম্প্রসারিত রূপ। তবে এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযোজিত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী নীতিমালায় অস্পষ্ট ছিল। যেমন সম্পত্তিতে সমান অধিকার, বিয়ে ও পারিবারিক জীবনে সমতা, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর অংশগ্রহণ এবং বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি। এই দাবিগুলো নতুন নয়, নব্বইয়ের দশক থেকেই এগুলো নারী অধিকার আন্দোলনের অংশ।

দুঃখজনকভাবে নারী অধিকারের প্রশ্নে প্রতিরোধ ও আপসের রাজনীতি সব সময়ই দৃশ্যমান। উদাহরণ হিসেবে সিডও সনদের কথা বলা যায়। এর পূর্ণ অনুমোদন গত ৪১ বছরেও হয়নি। তবে সম্প্রতি প্রতিবাদের নামে যে বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, তা ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। অনেকের মতে, এই প্রতিক্রিয়া নারী অধিকার আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে, থামাতে পারবে না।

 

 

 

অভিন্ন পারিবারিক আইন

অভিন্ন পারিবারিক আইন এমন একটি নীতিগত কাঠামো, যা ধর্ম, জাতি বা সম্প্রদায়নির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এটি বিয়ে, তালাক, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার ও সন্তানের হেফাজতের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করে। এটি ধর্মীয় বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ না করে নাগরিক অধিকার ও ন্যায়ের ভিত্তিতে সামাজিক বৈষম্য হ্রাসে সহায়ক।

 

 

 

বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টধর্মের জন্য আলাদা পারিবারিক আইন আছে, যা ঔপনিবেশিক শাসন ও ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তিতে গঠিত। তবে বৌদ্ধদের কোনো পারিবারিক আইন না থাকায় হিন্দুধর্মের পারিবারিক আইন দ্বারা তাঁরা পরিচালিত হন এবং এতে অনেক ক্ষেত্রে প্রায়োগিক জটিলতা তৈরি হয়। এসব আইনে নারীরা বিশেষভাবে বৈষম্যের শিকার।

 

 

 

উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম নারীরা উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তিতে পুরুষের সমান ভাগ পান না। মুসলিম পুরুষেরা সহজেই তালাক দিতে পারেন, কিন্তু কাবিননামার ১৮ নম্বর ধারা ফাঁকা রেখে বা ‘না’ লিখে নারীদের তালাকের অধিকার সীমিত করে ফেলা হয়। হিন্দু নারীদের তালাকের কোনো আইন নেই, ফলে তাঁরা পরিত্যক্ত হয়েও বিচ্ছেদ পান না। খ্রিষ্টান নারীদের তালাকের জন্য স্বামীর ব্যভিচার প্রমাণ করতে হয়।

 

 

 

সন্তানের হেফাজতের বিষয়েও নারীরা পিছিয়ে। মুসলিম আইনে ছেলেসন্তান সাত বছর বয়স পর্যন্ত এবং কন্যাসন্তান বয়ঃসন্ধি বা বিয়ে—যেটি আগে ঘটে, সে পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে রাখার বিধান রয়েছে। তবে সন্তানের হেফাজত বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত ধর্মীয় বিধানের পরিবর্তে সন্তানের কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। হিন্দু ও খ্রিষ্টধর্মীয় আইনে স্পষ্ট বিধান না থাকায় হেফাজতের জন্য নারীদের দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু হলে সব ধর্মের নারীরা সমানভাবে সম্পত্তি, তালাক ও সন্তানের হেফাজতের অধিকার পাবেন। এটি নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার সহজ করবে এবং সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের সমান অধিকার বাস্তবায়ন করবে।

 

 

 

মুসলিমপ্রধান দেশে অভিন্ন পারিবারিক আইন কি সম্ভব

অন্যান্য মুসলিমপ্রধান দেশের দিকে তাকালে দুই ধরনের উদাহরণ পাওয়া যায়। তিউনিসিয়া (১৯৫৬), তুরস্ক (১৯২৬), সেনেগাল (১৯৭২), তুর্কমেনিস্তান (১৯৯২), আজারবাইজান (২০০০) ও কাজাখস্তানে (১৯৯৫) অভিন্ন পারিবারিক আইনের প্রয়োগ দেখা যায়। অন্যদিকে মালয়েশিয়া ও মরক্কোতে সিভিল ও শরিয়াহভিত্তিক আইনের সহাবস্থান রয়েছে। আবার ইন্দোনেশিয়ায় মুসলিমদের জন্য শরিয়াহ এবং অমুসলিমদের জন্য সিভিল আইন প্রযোজ্য।

 

 

 

অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রয়োগে সফল মুসলিম দেশগুলোয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সংস্কারপন্থী মনোভাব ও সামাজিক সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নারীবান্ধব সামাজিক আন্দোলন ও নাগরিক সচেতনতা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার চুক্তির প্রতি রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিও এ ক্ষেত্রে সহায়ক। অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে মুসলিম ও অমুসলিম নারীদের আইনি সমতা নিশ্চিত হবে, অধিকার সংরক্ষিত হবে এবং বিচারপ্রাপ্তি সহজ হবে।

 
 
 

সম্পত্তিতে সমান অধিকার

বাংলাদেশে নারীরা প্রায়ই বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এটি ধর্মীয় বিধিনিষেধ নয়, বরং সামাজিক বৈষম্যের ফল। ইসলাম নারীদের সম্পত্তিতে অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে (সুরা নিসা ৪: ১১-১২)। কিন্তু সমাজ তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ। প্রায়ই ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীর অধিকার খর্ব করা হয়।

সম্পত্তিতে সমান অধিকারের প্রশ্নে পবিত্র কোরআনের দিকে তাকালে দেখা যায়, ‘অছিয়ত’ বা উইল করার মাধ্যমে উত্তরাধিকার বণ্টনের বিষয়ে একধরনের ন্যায্যতা ও প্রসারতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সুরা বাকারা ২: ১৮০-১৮২, ২: ২৪০; সুরা মায়েদা ৫: ১০৬-১০৮ ও সুরা নিসায় ৪: ১১-১২ এই বিধানের উল্লেখ রয়েছে।  

 

 

এ ব্যবস্থায় পারিবারিক প্রেক্ষাপট, সন্তানদের বয়স, আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় নির্দিষ্ট কাউকে বেশি সম্পদ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে কোনো অছিয়ত না থাকলেই পবিত্র কোরআনের নির্ধারিত বণ্টন প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ইসলামে সম্পত্তি বণ্টনে যে মানবিক বিবেচনার জায়গা রয়েছে, তা আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নারীর সমান অধিকারের জন্য আইনি সংস্কারের সুযোগ তৈরি করে।

 

 

এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ইসলামে নারীকে তাঁর প্রাপ্য অধিকার দিতে কোনো বাধা নেই; বরং সেখানে একটি ন্যায়ের নীতি বিদ্যমান। রাষ্ট্র নাগরিকের অভিভাবক হিসেবে পবিত্র কোরআনের এই বিধানের আলোকে এমন একটি আইন প্রণয়ন করতে পারে, যা অছিয়তের সুযোগ ব্যবহার করে নারী ও পুরুষের সমান সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করবে।

 

 

ইসলামি ফিকাহ সময়োপযোগী এবং বিভিন্ন মাজহাবে পরিবর্তনের নজির রয়েছে। তাই ইসলামি মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রেখে সংবিধান, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের আলোকে প্রগতিশীল আইন সংস্কার সম্ভব, যার মাধ্যমে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত সম্ভব।

 

 

অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয়

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুপরিকল্পিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত, অন্তর্বর্তীকালীন মেয়াদের জন্য প্রস্তাবিত তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশ জারি, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

 

দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকার একটি নীতিগত রূপরেখা প্রণয়ন করতে পারে। এই রূপরেখায় অভিন্ন পারিবারিক আইনের মতো নতুন আইন প্রণয়নের নৈতিক, সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। এ লক্ষ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যেখানে আইনজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী, ধর্মীয় স্কলার, নারী অধিকার কর্মী এবং মানবাধিকার–বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই কমিটি খসড়া আইন প্রস্তুত করার পাশাপাশি জনগণের মতামত সংগ্রহের প্রক্রিয়া তদারক করবে।

 

 

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সুপারিশ নিয়ে মতবিনিময় করে তাদের সমর্থন ও প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পারে সরকার। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পরামর্শ সভা আয়োজনের মাধ্যমে ইতিবাচকভাবে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করতে পারে, যাতে প্রস্তাবিত আইনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আইনের উদ্দেশ্য, প্রাসঙ্গিকতা এবং নারীর অধিকারে এর ভূমিকা তুলে ধরে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে পারে।

 

 

 

এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সরকার কেবল একটি ন্যায়সংগত ও সমতাভিত্তিক আইন প্রণয়নই করবে না, বরং এর বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী সামাজিক ভিত্তিও তৈরি করতে পারবে। ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান ছিল সমতার আহ্বান। নারী কমিশনের সুপারিশ এই আহ্বানের সাড়া। এখনই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এই কমিশন শুধু নারীর জন্য নয়, রাষ্ট্রের সামগ্রিক ন্যায় ও সমতার ভবিষ্যৎ গঠনের ভিত্তি। বাংলাদেশ যদি এই মুহূর্তে সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়, তবে ইতিহাস এই সময়কে একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রের সূচনা হিসেবে স্মরণ করবে।

 

 

  • ফারহানা হাফিজশাম্মিন সুলতানা ও সাবিনা পারভীন জেন্ডারবিষয়ক বিশ্লেষক

  • জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

  • সাদিক মোহাম্মদ আলম লেখক