কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

নারীবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ

ড. মো. কামরুজ্জামান [ইনকিলাব, ১৭ মে ২০২৫]

নারীবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাতে আবহমান বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিধানকে অবজ্ঞা ও অস্বীকার করা হয়েছে। বিশেষত ইসলামের বিভিন্ন বিধানকে অবমাননা করা হয়েছে। বিবাহ ও তালাকের মতো ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বিধানকে নারী উন্নয়নের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খোলাসা করে বলতে গেলে বলতে হয় যে, কমিশন বাংলাদেশে প্রচলিত সামাজিক ও ধর্মীয় বিবাহের উচ্ছেদ চেয়েছে। বিবাহের পরিবর্তে তারা কি ওপেন সেক্সের স্বাধীনতা চেয়েছে? দেশে প্রায় দুই লাখ যৌনকর্মী রয়েছে। এই দুই লাখ যৌনকর্মী নিজেদের শ্রমিক মনে করে? তারা দেশে অন্যান্য পেশার মতো নিজেদেরকে বৈধ পেশাদার শ্রমিক হিসেবে সাংবিধানিক অধিকার দাবি করেছে।

 

 

 

কমিশনের সদস্যবৃন্দের সবাই নারীপক্ষ ও নারীবাদ নিয়ে কাজ করছেন বহুদিন ধরে। তারা বাংলাদেশের ঐসব যৌনকর্মীর প্রতিনিধির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তারা দেশের ৬৮ হাজার গ্রামকে বাইপাস করে শুধু ঢাকা শহরকে প্রাধান্য দিয়েই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। শহরের কতিপয় যৌনকর্মী ও নাস্তিকদের সাথে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। মূলত এসব নারীবাদীরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের সবাই তাদের মনমগজে পশ্চিমা দর্শন লালন করেন। তাদের প্রস্তাবিত প্রতিবেদন পশ্চিমা সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। এটা সত্য যে, পশ্চিমা সংস্কৃতির সবটাই খারাপ নয়। তাদের দেশে বস্তুনিষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চা আছে। তাদের দেশের আইনব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা ও ভোটিং ব্যবস্থা অনন্য ও অনুকরণীয়। তারা আমাদের দেশের নেতাদের মতো চোর নয়। তারা নিজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে বেগম পাড়া তৈরি করে না।

 

 

 

 তাদের মধ্যে আছে দেশপ্রেম ও জাতীয় দায়বোধ। যে কারণে সরকারের পরিবর্তন হলেও তাদের পররাষ্ট্র নীতির কোনো পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো পরিবারহীনতা। পরিবারহীনতা এখন পশ্চিমা সভ্যতার এক মারাত্মক ব্যাধি। এটির কারণে পশ্চিমা সভ্যতা এক ভঙ্গুর দশায় উপনীত হয়েছে। কারণ, পশ্চিমা পরিবারগুলোতে এখন শিশু, কিশোর ও যুবতী সংকট চরমে। স্বভাবতই যে দেশে কিশোর-কিশোরী থাকে না সে দেশটিকে আর দেশ বলা যায় না। এ কারণে মানবিক বিপর্যয়ের মহাদেশ এখন ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া। যে মহাদেশগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণ, ওপেন সেক্স ও সমকামিতা সরকারি আইনে বৈধ। আর যদিও বা বাচ্চার জন্ম হয় তাদের সাথে পিতামাতার কোনো পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের সম্পর্ক থাকে না বা নেই। পারিবারিক কোনো বন্ধনও সেখানে গড়ে ওঠে না। কোনো পরিবারের একটি সন্তান যখন ১৮ বছরে পৌঁছে তখন সে পরিবার ছেড়ে চলে যায়। ঐ সন্তানটি পুনরায় পরিবারে ফিরে আসার আর প্রয়োজন মনে করে না।

 

 

 

সন্তানের স্থানে পিতামাতার কোলে শোভা পায় কুকুর আর বিড়াল! মূলত পশ্চিমা সভ্যতা ক্রমান্বয়ে এক মহা বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পশ্চিমা ধার্মিক বুদ্ধিজীবীরা ইতিমধ্যেই ভয়ানক এই দশা থেকে বাঁচবার জন্য আকুতি জানিয়েছেন। রাষ্ট্রনায়কদের সাথে তারা কথা বলছেন। প্রজন্ম ধ্বংসের পরিণতি সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ করছেন। সরকার ইতোমধ্যেই মানবিক বিপর্যয় এড়াতে সতর্ক হয়ে নড়েচড়ে বসেছে। নতুন সন্তান জন্মদানের ব্যাপারে সরকার উৎসাহ যোগাচ্ছে। সন্তান জন্মদানকারীকে পুরস্কৃত করছে। অর্থাৎ পরিবারহীনতা পশ্চিমাদের একটা অনৈতিক দর্শন, যা থেকে ফিরে আসতে শুরু করেছে পশ্চিমা জনগণ। কিন্তু আমাদের দেশের কয়জন নারী জোটবদ্ধ হয়েছেন ওটাকে প্রতিষ্ঠা করতে!

 

 

 

নারী কমিশনের প্রস্তাবিত এ সুপারিশ পশ্চিমাদের সুদূরপ্রসারী এক মহাষড়যন্ত্রের অংশ। এ বিষয়ে কয়েক বছর আগে আমার ধারাবাহিক লেখা কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। ওই লেখায় আমি বলেছিলাম, সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) আমেরিকার কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা। এটি পৃথিবীর সেরা চৌকস একটি গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে পরিচিত। গোটা দুনিয়ার তথ্য সবসময় তাদের কাছে আপডেট থাকে। এটির মাধ্যমে মুসলিমবিশ্ব এক ধরনের জালে বন্দি হয়ে আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পরিবারটির নাম হলো রূপাঞ্জন গোস্বামী রথচাইল্ড। পরিবারটির নাম শুনলেই অভিজ্ঞমহলের সবাই চমকে ওঠেন। কারণ, এই পরিবারটিই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ইহুদি পরিবার।

 

 

 

বিশ্বের অর্ধেক সম্পদের মালিক তারাই। বিশ্বের সকল অর্থনীতি এ পরিবারটিই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রথচাইল্ডের মতো আরেকটি শক্তিশালী ফাউন্ডেশনের নাম হলো ‘রকফেলার ফাউন্ডেশন’। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন জন ডেভিসন রকফেলার। তিনি একজন আমেরিকান ইহুদি। তিনি ১৮৭০ সালে এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান হলেও মানববিধ্বংসী কাজে নিয়োজিত। সিআইএ, রথচাইল্ড এবং রকফেলার ফাউন্ডেশনের মতো অসংখ্য সংঘ গোটা দুনিয়াকে জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে। এ সমস্ত সংঘ মূলত ‘লুসিফারিজম’ নামে এক নতুন মতাদর্শে বিশ্বাসী। লুসিফারিজম একটি পথভ্রষ্ট শয়তানী মতাদর্শ, যার লক্ষ্যই হলো পরিবারহীনতা সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন এক ভবন গড়ে তোলা।

 

 

 

সিআইএ, রকফেলার ও রথসচাইল্ড ফাউন্ডেশনের মতো সংঘগুলো একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং কার্টেলের আয়ত্ত্বাধীন। এর কর্তাব্যক্তিগণ শয়তানের পূজারী। তাদের সকলের মতাদর্শই হলো এই লুসিফারিজম। এ লুসিফারিজম মা, বোন ও স্ত্রীদেরকে ক্রমান্বয়ে পরিবারে ভূমিকা পালনের অযোগ্য করে তোলে। এ মতাদর্শের ভিত্তিতেই পাশ্চাত্যে একজন নারী নারী হিসেবে সমাদৃত হয় না। তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে নিজ সত্ত্বাকে বদলে ফেলে পুরুষের বেশ ধারণ করেছে। অথচ, ইসলামে নারীর যাবতীয় অধিকার নারীবেশেই সুরক্ষিত ও সুনিশ্চিত। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবার।

 

 

পরিবারবান্ধব বাংলাদেশের কোটি কোটি পরিবারে আজও মা সকলের মধ্যমনি হিসেবে বিবেচিত। এমনও অনেক পরিবার আছে যেখানে মা-ই পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। বর্তমানে এমনও পরিবার আছে যেখানে মায়ের নির্দেশনা ছাড়া শুধু বাবার কর্তৃত্বে পরিবারের কার্যাদি সম্পন্ন হয় না। মা-ই সেখানে মুখ্য গার্ডিয়ান। মাকে ঘিরেই ওইসব পরিবারে ভালোবাসা ও মায়া-মমতার প্রকৃত বন্ধন গড়ে উঠেছে। সেখানে প্রকৃত চরিত্র, ব্যক্তিত্ব, ভালোবাসা ও বন্ধন মাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। বাবার উপস্থিতিতেও সেই পরিবারের মা-ই থাকে সর্বেসর্বা। বলতে গেলে প্রতিটি পরিবার মা ছাড়া একেবারেই অচল। মা সত্যিই আল্লাহ প্রদত্ত এক বড়ো নেআমত। কিন্তু ব্যাংকিং কার্টেল এ নেআমতকে ধ্বংস করতে চায়। তারা এই মাতৃত্বকে নষ্ট করে তদস্থলে যৌনতাকে সহজ ও স্বাভাবিক করতে চায়। তাদেরকে স্বধীনচেতা হিসেবে জাগিয়ে তুলে পুরুষের মতো জীবনযাপনে উৎসাহ দেয়। তাদের এ স্বাধিকারের অন্তরালে বর্তমানের যৌন সহজলভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা ব্যাংকিং কার্টেলরই ফল। 

 

 

 

এসব মতাদর্শীর তাই বিয়ে করার দরকার হয় না। আর বিয়ে করলেও একজনের প্রতি সন্তুষ্ট ও বিশ্বস্ত থাকার প্রয়োজন পড়ে না। আধুনিক কিশোরী, তরুণীদের এ ব্যাপারে ব্রেইন ওয়াশ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তারা খাবার খাওয়ার মতো সেক্সকেও স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এটা সত্য যে, খাদ্যের মতো সেক্সও একটি প্রয়োজনীয় দৈহিক চাহিদা। মানুষের দেহজগত বস্তু দিয়ে তৈরি। আর এ বস্তুসমগ্র অস্থায়ী উপাদানের সমগ্র। তাই অস্থায়ী উপাদানের আবেদনও অস্থায়ী। বস্তুর তৈরি দেহের চাহিদা চিরস্থায়ী হয় না। ক্ষুধা লাগলে খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই খাদ্যের চাহিদা পূর্ণ হয়ে যায়। খাদ্যের মতো যৌনতাও একটি দৈহিক চাহিদা। শারীরিক এ চাহিদা একটি সাময়িক উত্তাপের ব্যাপার। এটিও স্থায়ী কোনো চাহিদা নয়, খুবই সাময়িক। যৌবনের এ উত্তাপ সময়ের সাথে সাথে শীতল হয়ে যায়। এ উত্তাপ মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার। অথচ, ব্রেইনওয়াশড মেয়েরা কেবল এ বিষয়টি সামনে এনে নিজেদের শারীরিক সৌন্দর্য্যের দাপট দেখিয়ে চলেছে। আর ইন্দ্রিয়পরায়ণ পুরুষরা একজনকে নিয়ে তৃপ্ত থাকতে পারছে না। তারা ইন্টারনেটে বিনামূল্যে হাজার হাজার নগ্ন তরুণীর দেহসৌষ্ঠব উপভোগ করছে। 

 

 

 

এর ফলে অবাধ শারীরিক সম্পর্কের জন্য নারী সহজলভ্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না যে, ছোট্ট এ জীবনে চমৎকার, আনন্দদায়ক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক কিছুই করার আছে। ব্যাংকিং কার্টেল বলতে গেলে পুরো পৃথিবীকে কব্জা করে ফেলেছে। ফেমিনিজম বা নারীবাদ আমাদের মা, বোন ও স্ত্রীদের ঘরের বাইরে টেনে নিয়ে কর্পোরেশনের দাসী বানিয়ে নিয়েছে। যে স্বামী তাকে পরম ভালোবাসায় আগলে রাখে, স্ত্রী তার কথা শুনতে নারাজ! কিন্তু অফিসের বসের আদেশ শুনতে সে যেন এক পরিপূর্ণ দাসী! সংসারের দায়িত্ব পালন করলে নারী পরজীবী, পরাধীন, মূর্খ, নির্যাতিত! কিন্তু কর্পোরেটের গোলামির ভূমিকায় নারী স্মার্ট, আধুনিক, স্বনির্ভর ও স্বাধীন! মিলিয়ন মিলিয়ন আধুনিক নারী যেন এক একটা মানসিক দাসিতে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে চটকদার বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রদর্শনকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা মিডিয়াতে পণ্য হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে। পণ্য বিক্রি বাড়াতে তাদের কোম্পানির বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে শরীর দেখাতে বাধ্য করা হচ্ছে।

সমকামিতা (হোমোসেক্সুয়ালিটি) হচ্ছে একটি বর্ধনশীল দুরারোগ্য ব্যাধি। এ ব্যাধি বিপরীত লিঙ্গের সাথে স্থায়ী বন্ধন তৈরিতে পরিপূর্ণভাবে অক্ষম। ফেমিনিস্ট ও সমকামী এক্টিভিস্টরা একত্র হয়ে সমাজ বিধ্বংসী এ কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে। তারা পুরুষত্ব, নারীত্ব, বিবাহ ইত্যাদি ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলতে বদ্ধ পরিকর। অথচ, পারস্পারিক বিপরীত লিঙ্গের বৈবাহিক মিলনে একটি চমৎকার নৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এ নৈতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো সেক্স। এ সেক্স দুজনের মানসিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানসিক সুস্থতা ও মনুষত্ব। সামাজিকভাবে অনুষ্ঠিত বিবাহের মাধ্যমেই সেটি অর্জিত হতে পারে। বিবাহ হলো অন্তরঙ্গ দৈহিক আচরণের বৈধ আবেগময় এক অনুভূতি। এখানে দুটি বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক আবেগময় আধ্যাত্মিক সংযোগ নিশ্চিত করা হয়। ফলে বিবাহের পর মানুষ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ করতে পারে। বৈবাহিক জীবন নৈকট্য, বিশ্বাস এবং সন্তান জন্মদানের মতো নৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।

 

 

 

সমকামীরা নৈতিক সেক্সকে অগ্রাধিকার দেয় না। তারা অনৈতিক সেক্সের অবিনাসি পশ্চিমা দাসিতে রূপান্তরিত হয়েছে! নৈতিক সেক্স হচ্ছে প্রাকৃতিক জীবনচক্র। এটাকে তারা অস্বীকার ও অবজ্ঞা করে সমাজ বিধ্বংসী কাজে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তদস্থলে সমকামীর মতো অনৈতিক সেক্সকে চটকদার হিসেবে সামনে উপস্থাপন করছেন। আধুনিক শক্তিশালী মিডিয়াগুলো সমকামী জীবনের নেতিবাচক দিকসমূহকে গোপন রেখেছে। এসব এলিটশ্রেণি ক্ষতিকর সমকামিতার তথ্য ও বাস্তবতাকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। এসব মতাদর্শী চায়, মানুষ পুরোজীবন ভরে সেক্সসম্পর্কিত অস্থিরতায় সময় পার করুক! তারা চায়, মানুষ সেক্স অস্থিরতায় ভুগুক এবং এটি অপব্যয় করুক! তাদের এ আন্তর্জাতিক মিশন মানবতার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সংগঠিত করেছে। দিনে দিনে তারা তাদের আক্রমণাভিযান তীব্র থেকে তীব্রতর করেছে। অথচ, আমরা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি যে, আমরা তাদের বিশ্বময় বিস্তৃত অবিনাশী বিজনেস দ্বারা অবরুদ্ধ। প্রকৃতিগতভাবে মেয়েরা একগামী এবং একান্ত গোপনীয়তা রক্ষাকারিণী। নারীবাদীরা অতি জোরেশোরে প্রচার করে যে, চাকরি ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ ও পরাধীন।

 

 

 

কিন্তু সত্যিটা হলো, একটি নারীর জীবন পূর্ণতা পায় স্বামীর ঘরে। জীবনের পরিপূর্ণতা পায় নিজের পরিবারে। একজন স্ত্রী পরিবারে সকল সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে স্বামী-সন্তানের সাথে জীবন পার করে দেয়। দুরাবস্থায় একে অপরের পাশে দাঁড়ানো প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচায়ক। আবহমানকাল ধরে এ দেশের একজন বধু দুরাবস্থার সময় স্বামীর পাশে থাকে। স্বামীর ব্যর্থতার সময় আশ্বাসবাণী শোনায়। এমন জীবনসঙ্গীকেই তো মানুষ প্রকৃত অর্থে ভালোবাসে। এমন জনকে মানুষ সারাজীবনের জন্য পেতে চায়। অবশ্য স্বামী বাছাই করার ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। কিন্তু নারীবাদ জেন্ডার কনফিউশন তৈরি করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করে। তারা মানুষকে শারীরিকভাবে উপবাসী করে রাখতে চায়। দৈহিক উপবাসী মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। নারীরা আল্লাহপ্রদত্ত চক্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু রকফেলার ও রথসচাইল্ডের চামচারা নারীজাতিকে সেটা ভুলিয়ে দিচ্ছে। পর্ন ও ফ্রি সেক্স মানুষকে সমকামিতা ও ধ্বজভঙ্গের দিকে ঠেলে দেয়। আধুনিক হলিউড, বলিউড, নেটফ্লিক্স ইত্যাদির প্রতি মানুষ ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছে। বর্তমান প্রজন্ম এসব মুভি থেকে জীবনের আদর্শ ও মানদ- গ্রহণ করে! এগুলো নারী-পুরুষদের কুকুরের পর্যায়ে টেনে এনেছে। পর্নগ্রাফি মিলিয়ন মিলিয়ন পরিবারকে ধ্বংস করছে। বর্তমানে ইন্টারনেটে ৪ মিলিয়নের অধিক পর্নসাইট বিদ্যমান! 

 

 

 

পর্নগ্রাফি তরুণীদের অবচেতন মনে এ ধারণা প্রবেশ করায় যে, তারা শুধুমাত্র দেহের সৌন্দর্য মেলে ধরলেই অসংখ্য পুরুষ তাকে ভালোবাসবে! ফলে মেয়েরা নিজেদের উন্মুক্ত, আরো খোলামেলা করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন স্বামীর জন্য স্ত্রীর প্রেম দরকার। তেমনি একজন স্ত্রীর জন্য স্বামীর প্রেমের পাশাপাশি অভিভাবকত্ব দরকার। আবার সন্তানদের জন্য তাদের মায়ের অকৃত্রিম-অমায়িক ভালোবাসা প্রয়োজন। নারীর কোমনীয়তা নারী জাতির এক গূঢ় শক্তি। প্রকৃত নারী নিজেকে স্বামীর কাছে সমর্পণ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। নারী প্রেমময়ী। এ স্বীকৃতি পেলে একজন নারী পরিবারের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে মোটেই দ্বিধা করে না। কিন্তু এ জাতীয় সমিতিগুলো চায়, নারী পরিবার ছেড়ে খোলামেলাভাবে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসুক। অতঃপর তারা জীবনঘনিষ্ঠ দক্ষতা, মূল্যবোধ, আত্মমর্যাদা ইত্যাদি অর্জন করুক। তারা চায়, নারীরা এসব যোগ্যতা অর্জন করার পর বিয়ে না করে ক্ষমতাবান পুরুষদের মন জয় করুক! তারা স্বেচ্ছাচারী হোক এবং ঘরসংসার না করুক। সংসার করার বিপরীতে নারীরা নিজের যৌনতার উপর আত্মবিশ্বাস রেখে সমাজকে কলুষিত করুক।

 

 

এসব সমিতির সপ্নদ্রষ্টাগণ বিশ্বময় সমাজ ও পরিবার বিধ্বংসী এ যুদ্ধে বিপুল অর্থব্যয় করে চলেছেন। আর এটি মানুষের নৈতিক, সামাজিক, শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি ধ্বংস করে ফেলেছে। দেশের-বিদেশের কোমলমতি মেয়েরা ফাঁদে পড়ে গেছে। একটা সুখী জীবন পাওয়ার স্বপ্নে তছনছ হয়ে গেছে তাদের জীবন। মিউজিক ভিডিও, মুভি আর সেক্সযুক্ত ক্লাসগুলো টিনএজ মেয়েদের বিবাহ ও মাতৃত্বের অযোগ্য করে ফেলার জন্য তৈরি হয়।

 

 

যুবতীর সৌন্দর্য তার দৈহিক ও আধ্যাত্মিক সরলতার বহিঃপ্রকাশ। চরিত্রবান পুরুষের কাছে এই সরলতা অত্যন্ত আকর্ষণীয়, আবেদনময় এবং বহু মূল্যবান। কটমটে ও রূঢ় প্রকৃতির মেয়ে দীর্ঘমেয়াদে আকর্ষণীয় হয় না। তরুণী মা তার বাচ্চাদের নিয়ে হাস্যোজ্বলভাবে খেলা করছে, এরচেয়ে সুন্দর পার্থিব দৃশ্য আর দ্বিতীয়টি হতে পারে না। দেশে ৯০ ভাগ বিবাহবিচ্ছেদের নেপথ্যের মূল কারণ একটাই। আর তাহলো স্বামীর সাথে ব্রেইনওয়াশড মেয়েদের সমঅধিকার নিয়ে তর্ক-বিবাদে জড়িয়ে পড়া। পুরুষ চায় ক্ষমতা আর নারী চায় প্রেম। প্রেমময় নারী স্বামীত্বে বিশ্বাস রেখে নিজেকে তার কাছে সমর্পণ করে। যদি পুরুষ বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সম্পর্ক ভেঙে যায়। তখন পুরুষ ক্ষমতা হারায়। ঘরের বাইরে বেরিয়ে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া নারীরা হয় নারীত্বহীন।

 

 

পুরুষ সত্যিকারভাবে এদের ভালোবাসতে পারে না। আবার নিজের সমপর্যায়ের পুরুষকে মেয়েরা চায় না। মেয়েরা নিজের চেয়ে উচ্চতর অবস্থান ও পদমর্যাদার ব্যক্তিকে পেতে চায়। আর প্রাকৃতিকভাবেই পুরুষ নারীর ঊর্ধ্বে। এখন যেহেতু চারদিকে বিশৃঙ্খলার জোয়ার, তাই পুরুষেরা আদর্শহীন, হীনমন্য, আত্মমর্যাদাহীন এবং অধঃপতিত শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, নারী কমিশন দেশের নারীসমাজকে সহজলভ্য যৌনতার উপাদান হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এটি আন্তর্জাতিক মিশনের একটি অংশ, যা বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম জাতি-রাষ্ট্রে কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

 

 

লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া