নির্ভুল ভোটার তালিকার চ্যালেঞ্জ
গোলাম রাব্বানী । সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির টার্গেট নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করতে সারা দেশে নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
ভোটার তালিকায় ত্রুটি থাকলে তা দূর করে নির্ভুল করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। সিইসি বলেছেন, ভোটার তালিকার বিদ্যমান ত্রুটি দূর করে ও ভোটারযোগ্য সব নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সারা দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটার সংগ্রহে ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হচ্ছে আজ ২০ জানুয়ারি। চলবে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আজ সাভারে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন সিইসি।
২ জানুয়ারি ইসি প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী- নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন। সব মিলে সারা দেশে ভোটার সংখ্যা এখন ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। এ হালনাগাদে নতুন করে ১৯ লাখ ভোটার যুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্যদের তথ্য সংগ্রহ ও কর্তনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে কোনোভাবেই যেন রোহিঙ্গা বা ভিনদেশি কোনো নাগরিক অন্তর্ভুক্ত না হন, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে আরও ১৫টি নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য বলেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মাঠ পর্যায়ে সাতটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে কমিশন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ইমাম, পুরোহিতসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ের সহায়তা নিতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
অন্যদিকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে বয়স্ক, অদক্ষ এবং অপারদর্শীদেরও এ কার্যক্রমে নিয়োজিত না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ‘ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে একটি ‘নির্ভেজাল’ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ১৮ কোটি মানুষের আমানত। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ খুব সতর্কতার সঙ্গে নির্ভুলভাবে তৈরি করতে সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। হালনাগাদের বিষয়ে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, আমরা ছয় মাসের জন্য প্ল্যান করেছি।
কিছু কমবেশি হতে পারে। টার্গেট হচ্ছে- ছয় মাসে যাতে শেষ করতে পারি। ইসির কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করা হবে। যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে, এবার তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সেজন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওই সিদ্ধান্ত দিয়েছে সংস্থাটি। ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ এবং সুপারভাইজারদের মাধ্যমে যাচাই কার্যক্রম ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সম্পন্ন করা হবে।
এক্ষেত্রে ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি অথবা তার আগে যাদের জন্ম, তাদের এবং বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন, তাদের নিবন্ধনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ কর্মসূচিতে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া এবং আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলবে।