কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

নির্বাচিত জার্মান নেতার নতুন আত্মপ্রত্যয়

গাজীউল হাসান খান । সূত্র : কালের কণ্ঠ, ০২ মার্চ ২০২৫

নির্বাচিত জার্মান নেতার নতুন আত্মপ্রত্যয়

জার্মানির সদ্যঃসমাপ্ত সাড়া-জাগানো নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক সংগঠন অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) গগনস্পর্শী আস্ফাালন আপাতত বন্ধ হয়েছে। বিরাট ব্যবধানে তারা পরাজিত হয়েছে দেশের প্রাচীন ও রক্ষণশীল দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) কাছে। সিডিইউ এই নির্বাচনে বেভারিয়ায় তাদের সহযোগী সংগঠন ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়নের (সিএসইউ) সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠন করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্ক ও রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরোক্ষ সমর্থনে নির্বাচনের আগে জার্মানিজুড়ে মাঠ গরম করেছিল নিউ নািস নামে অভিযুক্ত এএফডি।

 

 

 

তখন এক পর্যায়ে মনে হয়েছিল, এবার হয়তো উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান ঠেকানো সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষণশীল গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট নেতা ফ্রেডরিশ ম্যারেৎসই এই তোলপাড় করা নির্বাচনে শেষ হাসি হাসলেন। অর্থনৈতিক দিক থেকে বিপর্যস্ত জার্মানরা আবার আশায় বুক বাঁধল ফ্রেডরিশ ম্যারেেসর সুযোগ্য নেতৃত্বে এক ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য।

 

 

 

ম্যারেৎস বলেছিলেন, তাঁর দল নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে তিনি দলনেতা হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। বেকার সমস্যা সমাধানসহ জ্বালানিসংকট মোকাবেলা ও রপ্তানি বাণিজ্যে গতি ফেরাবেন। জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দেশকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করবেন। প্রয়োজনে গতিহীন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ম্যারেৎস।

 

 

 

ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিয়ে প্রকৃত অর্থে জার্মানির কোনো লাভ হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তা ছাড়া অভিবাসন ও বহিরাগত শ্রমজীবী মানুষের ক্ষেত্রে একটি বাস্তবভিত্তিক সমন্বয় সাধন করে বর্তমান অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাবেন। বর্তমানে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিটি পদক্ষেপ জার্মান নেতা ফ্রেডরিশ ম্যারেৎস অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে গণমাধ্যমের বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ। ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য থেকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, নতুন করারোপ থেকে ইউরোপের প্রতি ট্রাম্পের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ম্যারেৎস গভীরভাবে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি ‘ফ্যাসিস্ট রেজিম’ বলে আখ্যায়িত করেন।

 

 

তাঁর মতে, আগের বিশ্বব্যবস্থায় যথেষ্ট পরিবর্তন আসতে পারে এবং তার জন্য জার্মানিকে সর্বতোভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তা ছাড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তার জটিল বিষয়টিতে অনতিক্রমনীয় দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ইউরোপকে তার নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলেও এই জার্মান নেতা সতর্ক করেন।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বর্তমান পরিমণ্ডলে দ্রুত বেরিয়ে আসতে চায় জার্মানি। সদ্যঃসমাপ্ত জার্মানির বুন্ডেসটাগের (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে বিজয়ী জার্মান রক্ষণশীল দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের নেতা ফ্রেডরিশ ম্যারেৎস অতি দ্রুত জার্মানির পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বব্যাপী প্রচেষ্টা (আন্দোলন) চালাবেন বলে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছেন। বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ম্যারেৎস বলেছেন, দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে তিনি জার্মানি থেকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি সারিয়ে নেবেন।

 

 

তা ছাড়া জার্মানিতে স্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়ারও পক্ষপাতী নবনিযুক্ত জার্মান চ্যান্সেলর ম্যারেৎস। ফ্রেডরিশ ম্যারেৎস বৈদেশিক সামরিক ঘাঁটিমুক্ত একটি পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম জার্মান রাষ্ট্র গঠনে আগ্রহী। তাত্ত্বিক দিক থেকে এটি হবে বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি নতুন ইউরোপীয় দেশ। জার্মানির পূর্ণ স্বাধীনতা বাস্তবায়নে ম্যারেৎস দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। 

 

 

বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারির প্রকোপ এবং পর্যায়ক্রমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধারাবাহিকতার কারণে জার্মানিতে চরম জ্বালানি, উৎপাদন ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক চরম সংকট দেখা দিয়েছিল। এতে জার্মান অর্থনীতি বিশাল অঙ্কের ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে, যা কাটিয়ে ওঠা মোটেও সম্ভব হয়নি। এতে জার্মানিতে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, তার ফলে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে যায়। এর ফলে একদিকে যেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দেশটির বহির্বাণিজ্য কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে বেকারত্ব ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্যগত ঊর্ধ্বগতি। এমন একটি অবস্থায় গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রক্ষমতায় দ্বিতীয়বারের মতো অধিষ্ঠিত হওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন পন্থায় করারোপ করার হুমকিতে জার্মানিসহ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখন বিচলিত হয়ে উঠেছে।

 

 

রাশিয়া-ইউক্রেনের বিগত তিন বছরের চলমান যুদ্ধে ইইউয়ের অন্যতম প্রধান সদস্য দেশ জার্মানি সবচেয়ে বেশি অর্থ সাহায্য ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করেছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। জার্মানির সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসপিডি) সদ্যঃসাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ ইউরোপীয় প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধকে একটি অত্যন্ত অন্যায় সামরিক আগ্রাসন বলে মনে করতেন। ইউক্রেনের ওপর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সশস্ত্র হামলাকে শোলজ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যদের ওপর আক্রমণ বলে মনে করতেন। তিনি এটিও আশঙ্কা করতেন যে রাশিয়ার পরবর্তী আক্রমণের টার্গেট হতে পারে ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া কিংবা মলদোভা। শোলজের ধারণা মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারব্যবস্থা, রপ্তানি বাণিজ্য, শিল্পায়ন কিংবা অবকাঠামোগত বিনির্মাণকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছেন পুতিন।

 

 

এ ক্ষেত্রে অবশ্য রাশিয়া কিংবা ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষী অঞ্চলগুলোর দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমস্যার কথাই ভাবেননি শোলজ কিংবা পশ্চিমা নেতারা। এই অভিযোগ গণমাধ্যমের তথ্যাভিজ্ঞমহলের। তাদের সমালোচনার মধ্যে ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি কিংবা তাঁর পূর্ববর্তী শাসকদের উগ্র জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণাও কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউক্রেনের নেতারা রাশিয়ার জর্জিয়া আক্রমণ কিংবা ইউক্রেনের সমুদ্রবন্দর ক্রিমিয়াসহ অন্যান্য প্রতিবেশী ইউরোপীয় অঞ্চলের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাব কিংবা সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনাকে দোষারোপ করে চলেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক নেতা মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটি অবশ্যম্ভাবী ছিল।

 

 

এখন সে যুদ্ধ হয়তো দীর্ঘদিনের বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে পারে। এখানে আর যা-ই হোক, একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বনেতারা বিভিন্ন অঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে আন্তরিক হলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে তথ্যাভিজ্ঞমহলের বিশ্বাস। জার্মানি নিজ স্বার্থেই এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে ভিন্ন জায়গায়, পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে পরাশক্তিগত আধিপত্য ও স্বার্থ বজায় রাখার ক্ষেত্রে।

 

 

নবনির্বাচিত জার্মান ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের নেতা ফ্রেডরিশ ম্যারেৎস উপরোল্লিখিত বিভিন্ন কারণেই জার্মানিকে বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণ কিংবা আধিপত্যের শৃঙ্খলমুক্ত করে তার পূর্ণ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে চান। কিন্তু সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রশক্তির অংশীদাররা পরাজিত শক্তির দেশগুলোর সম্পূর্ণ মুক্তির প্রশ্নে যেসব শর্ত আরোপ করেছিল, সেগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি, ইতালি, জাপান ও অন্য যারা পরাজিত হয়েছিল, তাদের প্রতিরক্ষা ও অপরাপর কিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত এবং সময় দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থাৎ ১৯৪৫ থেকে এখন পর্যন্ত বিগত ৮০ বছরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সে হিসেবে জার্মানি এখন কিভাবে সম্পূর্ণ মুক্ত হবে তা তাদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করতে হবে।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জার্মানি থেকে তাঁদের সেনাঘাঁটি গুটিয়ে ফেলতে আগ্রহী হয়েছেন। তা ছাড়া সম্প্রতি তুরস্কের পাশে অর্থাৎ ইজিয়ান সাগরের গ্রিসসংলগ্ন দ্বীপ থেকেও সেনাঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে তুরস্ক ও রাশিয়া সন্তোষ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র (ট্রাম্প প্রশাসন) তাদের সামরিক বাজেট সমন্বয় করতে গিয়ে বিদেশে নিয়োজিত তাদের সেনাদের অনেক জায়গা থেকে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় জার্মানি তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা বাহিনী ঢেলে সাজানোর নতুন পরিকল্পনার কথা চিন্তা-ভাবনা করছে। ন্যাটোর অন্যতম প্রধান শক্তি যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা সামরিক জোটের সদস্যদের সামরিক ব্যয় বছরে ২ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার জন্য ক্রমাগতভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহু আগে থেকেই এই প্রস্তাব কার্যকর করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ন্যাটো জোটের বিভিন্ন সদস্য এ ব্যাপারে তাদের অপারগতার কথা জানিয়েছে। এতে ট্রাম্প তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কিংবা তার সামরিক ব্যয় বহন করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র আর নিতে পারবে না। প্রয়োজন হলে বর্তমান পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ভেঙে দিয়ে ইউরোপকে তার নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এই কথাটি বর্তমান ন্যাটো সদস্য ফ্রান্স বহু আগে থেকেই বলে এসেছে। ফ্রান্সের সে ধরনের উদ্যোগের প্রতি জার্মানি সমর্থন জানালেও সমর্থন করেনি রাশিয়ার প্রতিবেশী পোল্যান্ড ও অন্য ছোট ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো। রাশিয়া চায় তার সীমানার ওপারে স্থাপিত ন্যাটো ভেঙে যাক। সেটি যত দ্রুত হয়, ততই রাশিয়ার জন্য মঙ্গল।

 

 

উপরোল্লিখিত পরিস্থিতিতে জার্মানি সম্পূর্ণ বিষয়টিকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করছে। জার্মানির বর্তমান ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ও তার নেতারা এবং এমনকি অন্য প্রথম সারির দলগুলোও ইউরোপের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া আর যে বিষয়টি নিয়ে তারা ক্রমে ক্রমে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে, তা হচ্ছে ইইউয়ের ভবিষ্যৎ বাণিজ্যব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইইউয়ের পণ্যসামগ্রীর ওপর আনুপাতিক হারে বর্ধিত করারোপ করার ট্রাম্পের যে সাম্প্রতিক ঘোষণা, তাতে জার্মানি, ফ্রান্স ও পোল্যান্ড বেশ কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। কারণ বর্তমান মন্দার বাজারে এই বর্ধিত কর তাদের জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্যও এ ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। ইইউয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারে সম্প্রতি ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ।

 

 

 

কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রাম্প তাঁর অবস্থানে অনড় রয়েছেন। এই বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছেন জার্মানির নবনির্বাচিত নেতা ফ্রেডরিশ ম্যারেৎস। তিনি জার্মানি এবং সামগ্রিকভাবে ইউরোপের জন্য একটি অবস্থানগত পরিকল্পনা নিতে চান, যা বর্তমান আর্থ-রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করতে পারে। ইউরোপীয় তথ্যাভিজ্ঞমহলের মতে, জার্মানির সামনে এখন একের পর এক বহু চ্যালেঞ্জ আসবে, যা দেশটিকে ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। যে ভেঙে যাওয়া দেশটিকে জার্মান জাতি একদিন সুউচ্চ প্রাচীর ধ্বংস করে আবার সংযুক্ত করেছে, তাদের দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং কঠিন সংকল্পের কাছে কিছুই অসম্ভব নয়। ফ্রেডরিশ ম্যারেেসর নেতৃত্বে জার্মানি আবার ঐক্যবদ্ধভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবে, অর্জন করবে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধি—সেটিই তাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।

 

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক