কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

নির্বাচনী আচরণবিধির আধুনিকায়ন কেন জরুরি

ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত বিবর্তনের কারণে নির্বাচনসংক্রান্ত বিধিমালা ও এর প্রয়োগের কৌশলগুলোকে নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে হালনাগাদ করতে হবে। নির্বাচনী আচরণবিধির আধুনিকায়ন কেন জরুরি, তা নিয়ে লিখেছেন সুবাইল বিন আলম সুবাইল বিন আলম [সূত্র : প্রথম আলো, ১২ আগস্ট ২০২৫]

নির্বাচনী আচরণবিধির আধুনিকায়ন কেন জরুরি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন যেন এক অদ্ভুত খেলায় পরিণত হয়েছে, যেখানে মাঠ আছে, বল আছে, খেলোয়াড়ও আছে, কিন্তু নিয়ম মানার সংস্কৃতি নেই। এ রকম অবস্থায় ২০২৫ সালের নির্বাচনী আচরণবিধি শুধু একটি আইন হবে না, এটি হবে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ পরীক্ষার একটি ‘প্রশ্নপত্র’।

 

 

নির্বাচনী আচরণবিধিতে আগের তুলনায় এবার কিছু নতুন বিষয় সন্নিবেশিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নতুন বাস্তবতায় আরও অনেক বিষয় আমাদের চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমাদের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ড্রাফট (খসড়া) আচরণবিধিমালার ব্যাপারে মতামত দেওয়া হয়েছে। এখনো যা সময় আছে, তার মধ্যে সব কটিরই বাস্তবায়ন খুবই সম্ভব। 

 

 


নির্বাচন কমিশনের অধীন নির্বাচনী সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট গঠন জরুরি, এর সঙ্গে থাকবে ফ্যাক্ট চেকিং ও মনিটরিং সেল। 

 

 

‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর জন্য নির্বাচনের আগেই মনিটরিং সেল গঠন জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আলাদা আচরণবিধি থাকা উচিত। 

 

 

নির্বাচন পরিচালনার জন্য মূল যে তিনটি প্রতিষ্ঠান—প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক দল, এগুলোর সংস্কার নিয়ে কোনো দৃশ্যমান কাজই হয়নি। 

 

 

২.
এখনকার দিনে নির্বাচন শুধু মাঠে হয় না, হয় টেলিভিশন, কম্পিউটার, এমনকি মুঠোফোনের স্ক্রিনেও। যুক্তরাজ্যের ‘ডিজিটাল ইম্প্রিন্ট ল’ যেমন বলে, অনলাইনে যে বিজ্ঞাপন দেবে, তার পরিচয় অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। একইভাবে আমাদের এখানেও ফেসবুক বুস্ট, স্পনসরড পোস্ট বা ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের খরচ নির্বাচনী ব্যয়ের মধ্যে গণনা বাধ্যতামূলক করা উচিত। নইলে বিদেশি অর্থায়ন, গোপন প্রচার আর মিথ্যা বা অপতথ্যের বন্যা ভোটের স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছাশক্তিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

 

 

এ দেশে বিদেশি চ্যানেল দেদার চলছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ যে ডিজইনফরমেশন ছড়ায়, গত কয়েক মাসে তা ভালোভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনের সময় তাদের ছড়ানো মিস/ডিজইনফরমেশনের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের নির্বাচনে যখন বাইরের দেশের হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে আমাদের দেশের নির্বাচনে তা কোনভাবেই হবে না—এটা চিন্তা করলে ভুল হবে।

 

 

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) বা আই জেনারেটেড ছবি ও ভিডিওর ব্যাপকতা দেখা যাচ্ছে। এই ছবি ও ভিডিও বেশির ভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এগুলোর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ও ভুল ন্যারেটিভ প্রচার করা হচ্ছে। এআই জেনারেটেড এসব ছবি–ভিডিও অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে।

 

 

এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো নির্বাচন কমিশনের অধীন নির্বাচনী সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট গঠন জরুরি, এর সঙ্গে থাকবে ফ্যাক্ট চেকিং ও মনিটরিং সেল। পাশাপাশি প্রধান প্রধান সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) বা সমঝোতা স্বাক্ষর করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কনটেন্ট ব্লক ও রিপোর্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকা দরকার।

 

 

ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ব্যক্তিগত তথ্য রাজনৈতিক প্রচারে ব্যবহার করা আইনত অপরাধ, বাংলাদেশেও এ ধরনের সুনির্দিষ্ট বিধান জরুরি।


৩.
প্রতিটি নির্বাচনের আগে আমরা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ কথাটা শুনি। কিন্তু গত কয়েকটি নির্বাচনের সময় দেখা গেছে, প্রশাসন, পুলিশ, সরকারি সুযোগ-সুবিধা—সবকিছুই একটি পক্ষের হস্তগত ছিল। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরি।

 

 

ক্ষমতাসীন দলের কোনো মন্ত্রী বা নেতাও যদি নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙেন, ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রকাশ্যে তাঁকে তিরস্কার ও শাস্তি দেয়। আমাদের নির্বাচনের কমিশনেরও একই রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানদেরও এই বিধির আওতায় আনা দরকার। কোনো দল যদি সমন্বিতভাবে অপপ্রচার চালায়, তবে তাদের প্রতীক বাতিলের মতো কঠোর শাস্তি থাকা উচিত।

 

 

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য নির্বাচনের আগেই মনিটরিং সেল গঠন জরুরি। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আলাদা আচরণবিধি থাকা উচিত। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদেরও কীভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি মানানো যেতে পারে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।

 

 

কেনিয়ায় নির্বাচনের সময় ইলেকশন মনিটরিং অ্যাপ বা সফটওয়্যার ব্যাবহার করা হয়। এর মাধ্যমে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারে আর সেটি রিয়েল টাইমে ট্র্যাক হয়। 

 

 

আমাদের এখানেও দরকার এমন ‘ই-ট্রেকার’ চালু করা, যেখানে ভোটার, নাগরিক, সাংবাদিক বা পর্যবেক্ষকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। এর ফলে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন আপডেট হবে কে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, কতবার করেছে, কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

 

 


৪.
বাংলাদেশের নির্বাচনে সহিংসতা একধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখানেও কেনিয়ার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। কেনিয়ায় নির্বাচনের সময় সহিংসতার আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়। আমাদের এখানেও একই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যাতে আগাম তথ্য পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নিতে পারে।

 

 

কোনো প্রার্থী বা দলের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হলে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রাখতে হবে। নারী প্রার্থীদের প্রতি অনলাইন বা অফলাইনে হয়রানি করা হলে তা নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। এ ছাড়া সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের জন্য অবশ্যই বিশেষ সুরক্ষা থাকতে হবে।

 

 

বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়, যাতে সব প্রার্থী সমানভাবে সীমার মধ্যে খরচ করতে পারেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ব্যয়সীমা মেনে চলা হয় না। বাস্তবে বড় দলগুলো এবং তাদের মনোনীত প্রার্থীরা কোটি কোটি টাকা খরচ করেন। 

 

 

এ ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়ার মতো ‘রিয়েল টাইম অনলাইন এক্সপেন্স ট্রেকার’ চালু করে সব প্রার্থীর খরচ জনসমক্ষে প্রকাশ করার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষার জন্য ‘অডিট নিরীক্ষা সেল’ গঠন করা উচিত। 

 

 

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনে জরিমানা করা হলে সেটা যেন নির্দিষ্ট অঙ্ক নয়, নির্বাচনী ব্যয়ের শতকরা হারে হয়। এমনটা হলে তা বড় দলগুলোকে প্রভাবিত করবে। বর্তমান আইনে ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এতে বড় দলগুলোর কোনো গাত্রদাহ হয় না। 

 

 

২০১৮ সালের নির্বাচনে ৭০০টির বেশি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছিল ভোটের আগে। তাই সিদ্ধান্ত যেন সাত দিনের মধ্যে হয়, সেভাবেই আইন প্রণয়ন করা উচিত। 

 


৫.
নির্বাচনী প্রচার–প্রচরণায় পোস্টার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব শুনতে ভালো, কিন্তু বাস্তবে গ্রামীণ অঞ্চলে এখনো পোস্টার ভোটার সংযোগের একটি বড় মাধ্যম। তাই সীমিতসংখ্যক ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ (পরিবেশবান্ধব) পোস্টারের অনুমতি দিয়ে প্রার্থীদের জন্য সমানসংখ্যক কোটার নিয়ম করা উচিত। 

 

 

পোস্টার লাগানোর জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। নির্বাচনের পর এগুলো পরিষ্কারের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদেরই নিতে হবে। কোনো প্রার্থী পোস্টার সরিয়ে না নিলে বা পরিষ্কার না করলে জেল–জরিমানার বিধান থাকতে পারে।

 

 

প্রতিটি আসনে নির্দিষ্টসংখ্যক জনসভা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এসব জনসভা হবে ছুটির দিনে। সব দলের জন্য সমানভাবে জনসভার সংখ্যা নির্ধারণ করা হলে অযথা সংঘাত–সংঘর্ষ কমবে। 

 

 

এর পাশাপাশি কানাডার মতো আসনভিত্তিক বাধ্যতামূলক নির্বাচনী বিতর্ক চালু করা উচিত। নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে এসব বিতর্কে সংবাদমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এসব বিতর্কে প্রার্থীরা সরাসরি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এসব বিতর্কে প্রার্থীর হলফনামাও উপস্থাপন করা যেতে পারে। 

 

 

কোনো প্রার্থী যদি সরকারি প্রটোকল পান, তাহলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জন্যও তা প্রযোজ্য হতে হবে। আচরণবিধিতে ‘ভিআইপি’ সুবিধার স্পষ্ট তালিকা থাকতে হবে, যাতে নির্বাচনী সুবিধা একতরফা না হয়।

 

 

নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে প্রার্থীর আপিল শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা উচিত। আচরণবিধি এখন শুধু নির্বাচনী প্রক্রিয়াকেই দেখে; অন্য দলের অবাধ প্রচারে বাধা দিলে তেমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা স্পষ্ট করা উচিত।

 

 

একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, কিছু সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা ভবিষ্যতে সুবিধা পাওয়ার জন্য দলীয় কর্মীদের মতো আচরণ করেন। এ ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও তা মানা হয় না। এসবের জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় কাউকেই শাস্তি পেতে দেখা যায় না। নির্বাচনকালে সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধির বিচার ইসির দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের নিয়ন্ত্রণাধীন রাখা উচিত। 

 

 

আমরা উৎসবমুখর নির্বাচনের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছি। অনেক দিন পর দেশে উৎসবমুখর একটি নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তাই এবার নির্বাচনী প্রচারণার জন্য অন্তত ২৮ দিন সময় দেওয়া প্রয়োজন। ভোট গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য ২৪ ঘণ্টা আগে প্রচারণা নিষিদ্ধের যে বিধান, তা ৪৮ ঘণ্টা করা উচিত। ভারতের মতো কেন্দ্রভিত্তিক লাইভ আপডেটের জন্য পোর্টাল চালু করা যেতে পারে।

 

 

৬.  নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সক্ষমতার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি বিষয়। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নজরদারি, অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং আইন প্রয়োগের জন্য পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত ও মানবসম্পদ সরবরাহ করতে হবে। ইসির কর্মকর্তাদের ডিজিটাল ফরেনসিকস, ডেটা অ্যানালিসিস ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। নিয়মিত পর্যালোচনা ও অভিযোজনের প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখতে হবে।

 

 

ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত বিবর্তনের কারণে নির্বাচনসংক্রান্ত বিধিমালা এবং এর প্রয়োগের কৌশলগুলোকে নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে হালনাগাদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি নমনীয় কাঠামো তৈরি করা উচিত, যা ভবিষ্যতের নতুন চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে।

 

 

আইন দিয়ে কি মানুষের আচরণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়? বাংলাদেশে অনেক আইনই ‘কাজীর গরুর’ মতো, কেতাবে আছে, বাস্তবে নেই। আমাদের আসলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে হবে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। 

 

 

রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে হলে প্রতিটি দলকে নিজস্ব ‘এথিকস অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স সেল’ গঠন করা উচিত। নাগরিক সমাজের উদ্যোগে একটি ‘পলিটিক্যাল এথিকস চার্টার’ প্রণয়ন করা যেতে পারে, যাতে দলগুলো শুধু নির্বাচনের সময় নয়, সারা বছর নৈতিকতার মান বজায় রাখে।

 


৭.
দেশের সংস্কার নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কে আমরা অনেক সময় ব্যয় করেছি। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনার জন্য মূল যে তিনটি প্রতিষ্ঠান—প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক দল, এগুলোর সংস্কার নিয়ে কোনো দৃশ্যমান কাজই হয়নি।

 

 

এ দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা–কর্মীর মধ্যে যেকোনো উপায়ে মাঠ দখলের প্রবণতা রয়েছে। এ রকম বাস্তবতায় প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিনজন সদস্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন ব্যাপার। এ কারণে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার এখন জরুরি। 

 

 

নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে প্রবেশের আগে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আমরা দলগুলোর মধ্যেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন চাই। আমাদের প্রস্তাবনা ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছি। 

 

 

দেশ এখন অনেকটাই নির্বাচনী রাস্তায় উঠে গেছে। আমাদের হাতে খুব বেশি সময়ও নেই। অনেক বছর পর আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছি। আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন কমিশন বা সরকারের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর এবং নাগরিক সমাজেরও বটে।

 

 

আমাদের মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র শুধু ব্যালটে নয়, আচরণেও প্রকাশ পায়। 

● সুবাইল বিন আলম সদস্য, বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালিসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক