নোয়াখালীর প্রধান পর্যটন কেন্দ্র নিঝুম দ্বীপে জনভোগান্তি
সুমন ভৌমিক । সূত্র : বণিক বার্তা, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

দেশে যে কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ। পর্যটকদের কাছেও ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেয়েছে দ্বীপটি। কয়েক বছর আগে নোয়াখালী জেলার ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে নিঝুম দ্বীপের নামে। সেই থেকে নোয়াখালীকে ‘নিঝুম দ্বীপের দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। মূলত নভেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। দ্বীপের প্রধান বাহন মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা। তবে অনুন্নত সড়ক অবকাঠামোর কারণে চালক, স্থানীয় যাত্রী ও পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, দ্বীপে মূল সড়ক একটি। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে নামারবাজার সি-বিচ পর্যন্ত সড়কটি ১১ কিলোমিটার। যার ৯০ শতাংশই খানাখন্দে ভরা। সড়কজুড়ে অন্তত ১২টি কালভার্ট রয়েছে। এর মধ্যে আটটিই ভাঙা। সংযোগ সড়কগুলোর সবই কাঁচা। অবশ্য সড়ক উন্নয়নে নতুন প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা জানিয়েছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে এসেছেন নাবিল হোসেন। দ্বীপটির কথা তিনি শুনছেন অনেকবার। যদিও আগে কখনো আসেননি। দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তিনি মুগ্ধ। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা অনুন্নত সেটা বুঝতে পারেননি। ঢাকা থেকে লঞ্চে আসতে কষ্ট না হলেও ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ পর্যন্ত আসতে তার অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
লাবিবা সুলতানাও এসেছেন ঢাকা থেকে। তার মতে, নিঝুম দ্বীপ যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে। তবে মোক্তারিয়া ঘাট থেকে সড়কপথে আসতে পর্যটকদের ভোগান্তির অন্ত নেই। তাছাড়া এখানে মোটরসাইকেল ছাড়া আর কোনো যানবাহন নেই।
দ্বীপ ঘুরে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ সড়কে যাতায়াতের প্রধান বাহন মোটরসাইকেল। হাতেগোনা কয়েকটি অটোরিকশা চোখে পড়ে। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে নামারবাজার বিচ পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার প্রধান সড়ক। যার ৯০ শতাংশই খানাখন্দে ভরা। পুরো সড়কে ১২টি কালভার্টের মধ্যে আটটি ভেঙে গেছে। বাকি চারটিও জরাজীর্ণ। ভেঙে যাওয়া কালভার্টের ওপর নিজেদের খরচে মাটির রাস্তা কিংবা কাঠের পুল করেছেন মোটরসাইকেল ও অটোরিকশাচালকরা। এছাড়া দ্বীপের অন্যান্য সংযোগ সড়কের বেশির ভাগ এখনো কাঁচা। হাতেগোনা দুই-তিনটি সড়ক ইটের সলিং হলেও সেগুলোও চলাচলের অনুপযোগী।
রাব্বি নামে এক মোটরসাইকেল চালক জানান, কয়েক বছর পর্যটকের যাতায়াত কমে গেছে। এর প্রধান কারণ অনুন্নত সড়ক ব্যবস্থা। যারা একবার আসে তারা তো আসেই না, বরং পরিচিতদের নিষেধ করেন এখানে আসতে। ভাঙা সড়কের কারণে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলগুলো মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে যায়। সারা দিনে ৭০০-৮০০ টাকা আয় করলেও প্রতিদিন মোটরসাইকেল মেরামত করতে হয়। মেরামত করতে হলেও তাদের যেতে হয় হাতিয়া সদরে। ঘাট থেকে হাতিয়া যাওয়ার রাস্তাটাও বেহাল। অনুন্নত সড়কের কারণে পর্যটক কমছে নিঝুম দ্বীপে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৫ বছর আগে মূল সড়কে আরসিসি ঢালাই দেয়া হয়। তবে বেশির ভাগ অংশেই ব্যবহার করা হয়নি রড। দুই-তিন বছর না যেতেই গর্ত তৈরি হয়েছে। নির্মাণের পর থেকে একবারও সংস্কার করা হয়নি সড়কটি। বর্তমানে পুরো সড়কই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে এলজিইডি নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে নতুন প্রকল্প পাস হয়েছে। দ্রুতই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ঘাট থেকে নামারবাজার বিচ পর্যন্ত পুরো সড়ক আরো প্রশস্ত করা হবে। আরসিসি করা হবে সড়ক। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে বৈঠকখানা নির্মাণ করা হবে। বিশেষ বিশেষ স্থানে পর্যটকদের বিশ্রামাগার করারও পরিকল্পনা রয়েছে।’ তবে কবে নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে সেটা নিশ্চিত করতে পারেননি এ কর্মকর্তা।