কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

নতুন বছরে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা

ড. মো. মোরশেদুল আলম । সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫

নতুন বছরে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা

নতুন বছর সকলের নিকট নতুন আশা, নতুন লক্ষ্য ও সম্ভাবনার প্রতীক। বরাবরের মতো এবারও নতুন বছরে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা একটি অতীব জরুরি বিষয়। তবে তা নির্ভর করছে সমকালীন বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত বিষয়ের ওপর। সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি এবং প্রয়োজনীয় টিকা বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান বৈষম্য ও অসমতার মোকাবিলাসহ মানবাধিকার রক্ষা করা। বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার এ সকল বিষয়ে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বর্তমান বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ বন্যা, খরা, দাবানল ও অতিবৃষ্টির কবলে পড়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। বৈশ্বিক যুদ্ধ ও সংঘাতে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে বহু মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উদ্ভাবন বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করে। পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা, বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে পরিবেশগত নানা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ আশা করে বিশ্ববাসী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বৃদ্ধির প্রভাব হ্রাসকল্পে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্বের দেশগুলো অত্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে বেকারত্বের অবসান, চাকরির বাজার সৃষ্টি, খাদ্যদ্রব্যের সাশ্রয়ী মূল্য ও প্রয়োজনীয় পরিষেবা নতুন বছরে বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে বিশ^ব্যাপী ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া নতুন বছরে খুবই জরুরি। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব হলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে চলমান সংঘাত অনেকটা কমে আসবে আশা করা যায়।

 


আমরা প্রত্যাশা করি, নতুন বছরে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। সৌর, বায়ু ও পানিসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস থেকে উৎপাদন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরিতে পরিবেশবিজ্ঞানীরা এগিয়ে আসবেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন বছরে শিল্পক্ষেত্র এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন, উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। রোগ নির্ণয়, রোগ ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সম্পর্কিত গবেষণা এবং চিকিৎসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নতুন বছরে বৃদ্ধি পাবে। জাতিসংঘের ৭৯তম সম্মেলনের মূল আহ্বান ছিল একযোগে সহযোগিতা। কেবল সাময়িকভাবে সমস্যা সমাধান করতেই নয়। বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকীকরণ করতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতের বৈশ্বিক হুমকির মোকাবিলা করা যায়। এবারের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল গাজা-ইসরাইল-লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত চরমে পৌঁছেছে। গাজা-ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে হুতি বিদ্রোহীদের ছায়াযুদ্ধে প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাণিজ্যে। ওই সম্মেলনে বৈশ্বিক সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, ঋণ বৃদ্ধি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উদীয়মান প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণকে ‘উদ্বেগজনক বিষয়’ হিসেবে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস তুলে ধরেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের তিনি এই বলে সতর্ক করেছিলেন যে, বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি ‘অস্থির’ এবং বিশ্বে দায়মুক্তির মাত্রা ‘অসহনীয়’। তিনি বলেছিলেন, কিভাবে শেষ হবে তার কোনো ধারণা ছাড়াই যুদ্ধগুলো জোরদার হচ্ছে এবং পারমাণবিক অবস্থান ও নতুন অস্ত্রগুলো এর ওপর একটি অন্ধকার ছায়া ফেলছে। আমরা অকল্পনীয় এক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। একটি অস্থির পরিস্থিতি, যা সারাবিশ্বকে গ্রাস করার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেছিলেন যে, কিছু নেতা জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনকে এই বলে পদদলিত করছেন যে, তারা নিজেদের কোনোরকম প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ‘এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার’ যোগ্য বলে মনে করছেন। তিনি ইউক্রেনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছিলেন। এর পাশাপাশি গাজার লড়াইকে তিনি ‘অন্তহীন দুঃস্বপ্ন’ বলে অভিহিত করে এটি পুরো অঞ্চলকে প্রভাবিত করার হুমকির সৃষ্টি করেছে বলেও উল্লেখ করেছিলেন। এছাড়া তিনি লেবানন এবং ইসরাইলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে লড়াইয়ের দিকেও ইঙ্গিত করেছিলেন।

 


২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের অন্যতম স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরাইলের অভ্যন্তরে যে আকস্মিক ও দুঃসাহসী অভিযান চালিয়েছে, তার জবাবে ইসরাইল গাজার অভ্যন্তরে নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাতকে নিন্দা জানায় এবং স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা করে। ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রশ্নে মধ্যস্থতা করতে বর্তমানে চীন, রাশিয়া, তুরস্ক ও সৌদি আরব প্রস্তত রয়েছে। দ্বিরাষ্ট্রের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই হোক নতুন বছরে বাস্তব উদ্যোগ। বর্তমান সময়ে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে ইতোমধ্যে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের পছন্দ হওয়ার কথা নয়। চীনের মধ্যপ্রাচ্যে প্রবেশ এবং সৌদি আরবের সঙ্গে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর যেমনÑ সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চিন্তিত করেছিল। ফিলিস্তিন-ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘাতে ফিলিস্তিনের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা স্পষ্ট করেছেন বিশ্বের অন্যতম দুই পরাশক্তি চীন ও রাশিয়া। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনই হচ্ছে এ সংকট সমাধানের একমাত্র পথ। একই সঙ্গে বর্তমান বিশ্বে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্য যে সংকটগুলো আছে, তার ওপরও প্রভাব পড়বে। সেই বাস্তবতায় বৃহৎ শক্তিগুলো কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের যে সম্ভাবনা, সেটিকে অবাস্তব করে দেওয়া কতটা ভয়ংকর ও নির্মম হতে পারে, তা ভাবতে হবে। এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পশ্চিমা বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ যুদ্ধ বা সংঘাতের অবসান ঘটবে না। এক্ষেত্রে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই একমাত্র পথ। যদিও এ বিষয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব লীগ কিংবা ওআইসির গুরুত্ব ও কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের আধিপত্যের কারণে চলমান এই সংঘাত এখন সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে অবিলম্বে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে, এটা নতুন বছরে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা।
বর্তমান সময়ে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনাও চরমে। এতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত থাকায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। উত্তর কোরিয়া ক্রমাগত নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে। চীনও তাদের সমর্থন দিচ্ছে। এদিকে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনাও ক্রমশ সংঘাতের রূপ নিচ্ছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজিত করছে। আবার দক্ষিণ চীন সাগরের কর্তৃত্ব নিতে চীন ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিরোধ চলমান। এই বিরোধে আবার ইন্ধন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যু রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে বিশ^ আজ বিভক্ত। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ইসরাইলের পক্ষে কথা বললেও তুরস্ক, রাশিয়া এবং চীন, গাজা ও তেহরানের প্রতিই সমর্থন বাড়িয়েছে। এদিকে লেবানন ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে গত ২৭ নভেম্বর ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। ঠিক একই দিনে সিরিয়ার ইদলিব থেকে বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। মধ্যপ্রাচ্যের সর্বশেষ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। বিদ্রোহীদের মাত্র ১২ দিনের বিদ্যুৎগতির অগ্রাভিযানের মুখে বাশারের সামরিক বাহিনীর অবিশ্বাস্য পরাজয় পশ্চিমা বিশ^সহ আন্তর্জাতিক সব মহলকে বিস্মিত করেছে। গত ১ অক্টোবর ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ব্যাপক আকারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছিল ইরান। এর জবাবেই এ হামলা চালিয়েছে বলে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে। ইরানের ওপর ইসরাইলের এই হামলাকে জোরালো সমর্থন জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পশ্চিমা মিত্ররা। ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীর, লেবানন ও সিরিয়ার পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইয়েমেনে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি বলেন, হুতি বিদ্রোহীদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী সানা, বন্দর ও জ্বালানি অবকাঠামো রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না গাজা এবং বৃহত্তর ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হচ্ছে, যেকোনো সময় আরও বড় কোনো যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে ইরান-ইসরাইলের মধ্যে। আর তার ধাক্কা সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পড়বে। নতুন বছরে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানোর কোনো বিকল্প নেই।

 


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নানামুখী সংকটের মুখে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ পড়েছে। তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে এখনো কোনো সমাধান আসেনি। যুক্তরাষ্ট্রসহ তার পশ্চিমা মিত্র রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনের জন্য তাদের সহায়তার হাত আরও প্রসারিত করেছে। এই যুদ্ধের প্রভাব রাশিয়া-ইউক্রেনকে ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ওপর পড়ছে। নতুন বছরে যুদ্ধের যাবতীয় কৌশল ও সামরিক নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উভয় দেশ যেকোনো সময় শান্তি আলোচনায়ও বসতে পারে। তবে এটি নির্ভর করবে অনেকটা যুদ্ধের পরিস্থিতি কীভাবে পরিবর্তিত হয় এবং কোন্ ধরনের সমঝোতা সম্ভব সেটির ওপর। পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের অস্ত্র সরবরাহ এবং যাবতীয় সমর্থন অব্যাহত রাখতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচন অভিবাসীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল। ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধী কড়া বক্তব্য দিয়েছিলেন। নির্বাচনে জয়লাভ করে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পর প্রথমদিন থেকেই অভিবাসী বিতাড়নে কাজ শুরু করবেন এবং ‘অভিবাসী আক্রমণের’ ধারা উল্টে দেবেন বলে তিনি নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এমন একটি বিশ^ অপেক্ষা করছে, যেখানে শান্তির চেয়ে সংঘাত বেশি। এই যুদ্ধ মোকাবিলা করেই তাকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো ইউক্রেনের মোটেও উচিত হয়নি এমন মন্তব্যও করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের একদিনের মধ্যে এই যুদ্ধের সমাধান করবেন। তিনি সম্ভাব্য সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসানের জন্য আহ্বান জানাবেন, যাতে দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তির জন্যও কূটনৈতিক উদ্যোগের পক্ষে অবস্থান নেবেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছিলেন, দুই পক্ষের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপনে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন। ট্রাম্পের এই বক্তব্যগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা এবং আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সমাধানকল্পে কূটনীতির গুরুত্বের ইঙ্গিত বহন করে। বৈশ্বিক সংঘাত ও অনিশ্চয়তার এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্বশীল ও নীতিবাদ নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ নিয়ে উঠে দাঁড়াক সেটিই বিশ্ববাসী কামনা করে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক উষ্ণ নয়। তবুও পারমাণবিক সমঝোতা ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পারস্পরিক সমঝোতার বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন বছরেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে। দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ানসহ মানবাধিকার বিপর্যয়ের প্রতি মনোযোগ অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের আধিপত্য খর্ব করার জন্য মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে সমস্যার সমাধানকল্পে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার যদিও সম্ভাবনা রয়েছে, তবে দেশ দুটির মধ্যকার কৌশলগত বিরোধ বিদ্যমান থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ রোধের নামে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমাগত প্রভাব রোধকল্পে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
বিশ্বব্যাপী চলমান সংঘাত ও যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নতুন বছর তথা ২০২৫ সালে সকলেরই প্রত্যাশা যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী। এটি সমগ্র মানবজাতির জন্যই যাবতীয় শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক। যাবতীয় যুদ্ধ ও সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের সকল জাতি ও দেশের মধ্যে পারস্পরিক সংহতি ও সহযোগিতার প্রসার ঘটলে পৃথিবী শান্তির পথে অগ্রসর হবে। বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সংলাপকে উৎসাহিত করতে পারলে সংঘাত অনেকটা কমে আসবে এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করতে সংগঠনগুলোকে কাজ করতে হবে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত, যুদ্ধ-সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক বিভাজন নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করবে। রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য রাষ্ট্রগুলোকে সদয় হতে হবে। নতুন বছরে সকলের মানবাধিকার রক্ষার জন্য অঙ্গীকার নেওয়া হোক। তাহলে একটি ন্যায়সংগত, সহিষ্ণু ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে। মানবিক সমাজ বিনির্মাণ হলে মানবিক রাষ্ট্র তথা মানবিক বিশ^ও নির্মিত হবে।
লেখক :  শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়