কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নীতির ক্ষেত্রে দৃষ্টি রাখতে হবে

এম হুমায়ুন কবির । সূত্র : কালের কণ্ঠ, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নীতির ক্ষেত্রে দৃষ্টি রাখতে হবে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরের অনেক নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। অভিবাসন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যেসব অবৈধ অভিবাসী রয়েছে তাদের বের করে দেবেন। অর্থনীতির প্রশ্নে তিনি বলেছেন, অন্য দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য রপ্তানি হয় সেগুলোর ওপর তিনি শুল্ক আরোপ করবেন। তাঁর মিত্র দেশ কানাডা-মেক্সিকোর মতো দেশগুলো আছে।

 


তাদের ওপরও শুল্ক দেবেন। যদিও তারা সাবেক নাফতা-পরবর্তী সময়ে ইউএস-মেক্সিকো কানাডা চুক্তির আওতায় শুল্কমুক্ত এলাকার সদস্য। তার পরও ট্রাম্প সেটা করবেন। চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ করবেন।

 


এর প্রতিক্রিয়া বাইরে থেকে যাবে। অর্থনীতিতে সাধারণত যেসব নিয়ম-কানুন রয়েছে সেগুলো তিনি তুলে নেবেন। তারপর তিনি বলছেন, দায়িত্ব নিয়েই তিনি আবার তেল উৎপাদন করা শুরু করবেন। এর ফলে জলবায়ুসংক্রান্ত চুক্তি এবং বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানির যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, এখন তিনি আবার সেখান থেকে সরে যাবেন।

 

 

তিনি আবার সেই পুরনো জ্বালানির ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। এই সব কিছু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। আর যে শুল্ক আরোপের কথা বলছেন, সেটা যদি করেন সেটা তো অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ শুল্ক যেটা আরোপ করবেন সেই শুল্ক পরিশোধ করবে মার্কিন জনগণ। এতে অনেকেই বলছে, এখানে আবার একটা অস্বস্তি বাড়ার আশঙ্কা থাকবে।

 

 

অভ্যন্তরীণ কি বৈদেশিক, দুই বিষয়েই কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন অন্যদের চেয়ে অনেক ভিন্ন নীতিতে বা ভিন্ন পথে চলবে। তার একটি মোটামুটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এখন সেটার ফলাফল কী হবে, তা এখনই বলা যাবে না। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি নতুন কিছু উদ্যোগ নেবেন।

 

 

অভিবাসন ক্ষেত্রে বেআইনি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তখন হয়তো আমাদের কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। সেটার একটা আশঙ্কার জায়গা রয়েছে। সব দেশের ওপরে তিনি যেটা বলছেন, সব দেশের পণ্যের ওপরে তিনি যদি ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে দেন, সেটা আমাদের জন্য ভালো খবর হবে না। এ ছাড়া জলবায়ুসংক্রান্ত ব্যাপার থেকে তিনি যদি সরে আসেন তাহলে সেখানে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যে আর্থিক সহায়তা আমরা পাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না থাকলে সেই সহায়তার মধ্যে একটা ঘাটতি পড়বে। এটা বলাই যায়।

 

 

পুরো বিশ্বের ব্যাপারে বলা মুশকিল। পুরো বিশ্বে তো একটি ইস্যু নয়, অনেক ইস্যু রয়েছে। যেমন—মধ্যপ্রাচ্যে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ, তা বন্ধ হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন। এমন একটি কথাবার্তা বলছেন। এগুলো ইতিবাচক আছে। কিন্তু তিনি যদি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ করা শুরু করেন, তাহলে আবার নতুন করে জটিলতা তৈরি হবে। অন্য দেশগুলোর অভিবাসী কর্মীদের ফেরত পাঠিয়ে দিলে তাতেও আমার ধারণা, বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে রেমিট্যান্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

 

 

আমাদের রাষ্ট্রদূত, যিনি ওয়াশিংটনে আছেন, তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাঁকে অভিনন্দন জানাবে, যেটা কূটনৈতিক রীতির মধ্যে পড়ে। আর আমরা পর্যবেক্ষণ করব ট্রাম্পের নীতিগত অবস্থান কী। কারণ আমাদের সঙ্গে তো ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক আছে, কূটনৈতিক যোগাযোগ আছে, বিনিয়োগ আছে। আমরা বহুপক্ষীয় ক্ষেত্রেও তাদের সঙ্গে কাজ করি।

 

কাজেই তিনি কী নীতি গ্রহণ করবেন বা এখানে পরিবর্তন কী কী হবে, সেগুলো আরেকটু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব যে আমরা এই প্রেক্ষাপটে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে পারি। তবে আমি সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্কের খুব বড় ধরনের পরিবর্তন আশা করি না।

 

লেখক : যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত