কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

পানামা খালে কেন ট্রাম্পের চোখ

সূত্র : দেশ রূপান্তর, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

পানামা খালে কেন ট্রাম্পের চোখ

এখনো তিনি ক্ষমতায় বসেননি। তার আগেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন বিভিন্ন বিষয়ে। সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখ পড়েছে পানামা খালে। বিস্তারিত লিখেছেন সুমাইয়া খান

পানামা খাল থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি পানামা খাল ব্যবহারের ফি কমাতে কিংবা একে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তার অভিযোগ, মধ্য আমেরিকান দেশ পানামা যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ ও অন্য নৌযান থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। ট্রাম্প বলেছেন, পানামা যে ফি আদায় করছে, তা হাস্যকর, একেবারেই অন্যায্য। আমাদের দেশের সঙ্গে এই প্রতারণা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। ডয়চে ভেলে জানাচ্ছে, রবিবার ট্রাম্প অ্যারিজোনায় সমর্থকদের কাছে বলেছেন, ‘পানামা এ খালে যাতায়াতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোর কাছ থেকে অত্যধিক অর্থ নিচ্ছে।’ তিনি এ খালকে ভুল হাতে যেতে দেবেন না। ট্রাম্প চীনের কাছ থেকে সম্ভাব্য বিপদের কথাও মনে করিয়ে দেন। অ্যারিজোনার ইভেন্টের পর তিনি তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার ছবিসহ পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের খালে আপনাকে স্বাগত।’ সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেছেন, কেউ কি পানামা খালের কথা শুনেছেন? আমরা এই খালকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছি। ট্রাম্পের এ ধরনের মন্তব্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য বিরল। কারণ তিনি অন্য একটি সার্বভৌম দেশকে তাদের একটা অংশ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে বলছেন। এ মন্তব্যের ফলে এটাও বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্পের আমলে কূটনীতির আমূল পরিবর্তন হতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, পানামা খাল একসময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ছিল। কয়েক দশক আগে তা পানামা ও ওই দেশের মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে বেশ কিছু শর্ত ছিল। যদি নৈতিক ও আইনগত দিক থেকে এ সিদ্ধান্তের মর্যাদা রাখা না হয়, তাহলে আমরা দাবি করব, পানামা খাল দ্রুত এবং কোনো প্রশ্ন না তুলে আমাদের দিয়ে দেওয়া হোক।

পানামার প্রতিক্রিয়া

পানামার প্রেসিডেন্ট জোস রাউল মুলিনো এক ধারণকৃত বক্তৃতায় ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পানামার স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না। আর এই খালের নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে চীনের কোনো প্রভাব নেই। ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে এক্সে দেওয়া পোস্টে মুলিনো বলেন, খালে চলাচলকারী জাহাজ থেকে অতিরিক্ত শুল্ক নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে পানামা সরকারের কোনো হাত নেই, কারণ এই শুল্ক নির্ধারণ করেন বিশেষজ্ঞরা। পরিচালন খরচ ও সরবরাহ-চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এই শুল্ক নির্ধারিত হয়ে থাকে। তিনি জানান, পানামা খালে জাহাজ চলাচল আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এসব বর্ধিত জাহাজ যাতে সহজে চলাচল করতে পারে, এ জন্য খালকে আরও প্রসারিত করতে কয়েক বছর ধরে কাজ করছে তার সরকার। এই প্রকল্পের অর্থ শুল্ক সমন্বয়ের মাধ্যমে জোগান দেওয়া হবে। পানামার প্রেসিডেন্ট মুলিনো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে পানামার জনগণের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। কিন্তু পানামা খাল ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তারা এক পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ। ট্রাম্প তার জবাবে বলেছেন, ‘সেটা এবার আমরা দেখব’।

ট্রাম্পের ইচ্ছা

ট্রাম্প আসলে কী করতে চান, তা এখনই বুঝে ওঠা মুশকিল। বিবিসি জানাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প পানামার মতো মেক্সিকো ও কানাডাকে উদ্দেশ্য করেও মন্তব্য করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ও অভিবাসী আসার জন্য দেশ দুটিকে অভিযুক্ত করেন। যদিও তিনি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবমকে একজন ‘চমৎকার নারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প টার্নিং পয়েন্টের বার্ষিক সমাবেশে হাজারো মানুষের সামনে তার ওই মন্তব্য করেন। এটিকে রক্ষণশীলদের অন্যতম বড় সমাবেশ বলে মনে করা হয়। এবারের নির্বাচন দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টির প্রচারে তারা ব্যাপক কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ‘শাটডাউন’ এড়াতে শুক্রবার বিল পাস হওয়ার পর মি. ট্রাম্পের এটাই প্রথম বক্তৃতা। যদিও তিনি তার বক্তৃতায় সেই প্রসঙ্গ আনেননি। বরং তিনি কথা বলেছেন অভিবাসী, অপরাধ ও বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ে। এগুলো তার নির্বাচনী প্রচারণায় মূল ইস্যু ছিল। তবে চীন যে ট্রাম্পের মনোযোগের বড় একটি অংশ দখল করে রাখছে, তা নিশ্চিত। বিবিসি জানাচ্ছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল, চীনকে একটি প্রযুক্তিগত পরাশক্তিতে পরিণত করা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিজয় এখন তার ওই পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে হচ্ছে। এটি স্পষ্ট যে তার এই বিজয় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির সম্পর্কের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। সম্পত্তির দামে মন্দা, সরকারের ঋণ ও বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং নিম্ন ভোগ চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করে দিয়েছে। মূলত, করোনাভাইরাস মহামারীর পর থেকেই এটি হয়েছে। এরপর ট্রাম্প তার দেশে চীনা পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এখন টান দিয়েছেন পানামা খালে। এর পরিণতিতে চীনের ভাগ্যে কী ঘটে তা দেখার বিষয়। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনে নির্মিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। মুডি’স অ্যানালিটিক্সের রিসার্চ ডিরেক্টর ক্যাটরিনা এল বলেন, এখনকার সমস্যা হলো, সেই পণ্যগুলোর বড় গ্রাহকরা, যার মধ্যে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে, সেগুলো গ্রহণ করতে ক্রমশ অনিচ্ছুক হয়ে উঠছে। যখন ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতা ও দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং চীনা রপ্তানিকে কোণঠাসা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তখন বেইজিংকে নিজেদের কাছে প্রশ্ন করতে হবে যে তার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করার জন্য সম্প্রতি গৃহীত পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট হবে কি না।