পার্বত্য চট্টগ্রামে হাসিনার তথাকথিত শান্তিচুক্তি
হাসিনা সরকার জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কিছু শর্ত মেনে নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা অন্য কোনো অঞ্চলে হলে ‘বিশেষ সুবিধার দাবি’ বৈধ হয়ে উঠতে পারে। এতে ‘প্রথমে ব্যতিক্রম, পরে নিয়মে পরিণত’ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়, যা রাষ্ট্রের এককতা ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব ক্ষয় করে-প্রফেসর এম এ রশীদ। সূত্র : নয়া দিগন্ত, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের (আদিবাসী জনগোষ্ঠী) চাঁদাবাজির বিষয়টি বাংলাদেশে একটি সংবেদনশীল ও জটিল বিষয়। এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা দ্ব›দ্ব ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা বিদ্যমান। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হলো :
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি) অঞ্চলটি বহু জাতিগোষ্ঠীর আবাসস্থল। ভারতীয় মদদে তথাকথিত শান্তিবাহিনী গঠিত হয় : স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জমি, অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে উপজাতিদের সাথে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের ফলে সরকারের দ্ব›দ্ব শুরু হয়। এর ফলেই শান্তিবাহিনী গঠিত হয়, যারা দীর্ঘদিন অস্ত্রধারণ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় সহযোগিতায় লড়াই করে।
চুক্তি পরবর্তী অবস্থা : ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা শান্তিচুক্তি নামে দেশ বিরোধী ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষরিত করে। কিছু উপজাতীয় গোষ্ঠী ও সশস্ত্র দল এখনো চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে তাদের সংগঠন চালায়।
চাঁদাবাজির অভিযোগ : পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদাবাজির অভিযোগ একটি বড় সমস্যা হিসেবে উঠে আসছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, পরিবহন মালিক ও এমনকি সাধারণ মানুষও অভিযোগ করে থাকেন যে বিভিন্ন উপজাতি সশস্ত্র গোষ্ঠী- যারা কখনো রাজনৈতিক দলের নামে, কখনো আঞ্চলিক সংগঠনের নামে নিয়মিতভাবে চাঁদা দাবি করে।
এই চাঁদার আওতায় পড়ে
ক্স সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ
ক্স বাজারে পণ্য আনা-নেয়া
ক্স পরিবহন চলাচল (যেমন- ট্রাক, পিকআপ, নৌযান ইত্যাদি)
ক্স দোকান বা ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিচালনা
চাঁদার অঙ্ক অনেক সময় প্রকল্পের আকারের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় এবং তা না দিলে কাজ বন্ধ করে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের চাঁদা আদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত নয় এবং এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে নিরাপত্তাহীনতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক জটিলতার কারণে অনেক সময় এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যায় না। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কিছু পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা বা মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করে এবং সেখান থেকে অস্ত্র বা প্রশিক্ষণ লাভ করে থাকতে পারে। এ ঘটনার বেশ কিছু দিক আছে, যা দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে :
অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের সরবরাহ
কিছু সংগঠন ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলো থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ লাভ করে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি সাধারণত সীমান্ত এলাকায় বিদ্যমান দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
সীমান্ত নিরাপত্তা
এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ সরাসরি বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর কার্যক্রমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, কারণ সীমান্তে অবৈধ অস্ত্র প্রবাহ ও অনাকাক্সিক্ষত সশস্ত্র কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক
ভারতের সাথে এ বিষয়গুলোতে সরাসরি ও পরোক্ষ সম্পর্ক থাকায়, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক মতবিরোধ এবং বিশ্বাসের অভাব সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। উভয় দেশের উচ্চতর পর্যায়ের আলোচনা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কিত সম্মেলনে এ ঘটনা একটি গুরুতর ইস্যু হিসেবে আলোচিত হয়।
প্রধান সন্ত্রাসী বা সশস্ত্র গোষ্ঠীসমূহ
১. জেএসএস (ঔঝঝ-ঔধহধ ঝধসযধঃর ঝধসরঃর)
জেএসএস ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত একটি রাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনেরই সশস্ত্র শাখা ছিল ‘শান্তি বাহিনী’ (ঝযধহঃর ইধযরহর), যারা ১৯৭০-৯০ দশকে সরকারবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত ছিল।
১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তির পর জেএসএস ভেঙে যায় দু’টি ভাগে- এক অংশ জেএসএস (সন্তু লারমা) সংগঠনের সভাপতির নামেই পরিচিত। তারা শান্তিচুক্তিকে সমর্থন করে। এটি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করে, তবে এর বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে চাঁদাবাজি ও সহিংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠে
২. জেএসএস (মূলধারা/সংস্কারপন্থী) : এরা চুক্তি মানে না এবং নিজেদেরকে মূল আদর্শের ধারক বলে দাবি করে। বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র তৎপরতা চালায়। অপহরণ, চাঁদাবাজি, গেরিলা আক্রমণের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।
৩.ইউপিডিএফ (টচউঋ - টহরঃবফ চবড়ঢ়ষব’ং উবসড়পৎধঃরপ ঋৎড়হঃ) : ১৯৯৮ সালে গঠিত। শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে এবং নিজস্ব রাজনৈতিক ও সশস্ত্র শাখা চালায়।
এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রায়ই পারস্পরিক সংঘর্ষ ঘটে। তারা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদার দখল, নিয়ন্ত্রণ এলাকা নিয়ে লড়াই করে, যার ফলে অনেক নিরীহ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হন।
অতীত কার্যকলাপ ও সীমান্ত পরিস্থিতি : পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সঙ্ঘাতের সময়ে এবং পরবর্তীতেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শান্তিবাহিনীর অনেক সদস্য ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল। বিশেষ করে মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম অঞ্চলে তারা আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সেখান থেকেই সংগঠিত হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে হামলা চালাত বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশী নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে, অস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি অংশ এখনো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়েই প্রবেশ করে, যা দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া : এ পরিস্থিতি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে একটি স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ভারত সরকার বরাবরই দাবি করে, তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয় না, তবুও সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর দুর্গম ভূপ্রকৃতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা ভারতীয় প্রশাসনের ওপরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে একাধিকবার। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (ইএই-ইঝঋ) পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। আন্তঃরাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সম্মেলন ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান জোরদার করা হয়। বাংলাদেশ ভারতের কাছে অবৈধ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আশ্রয়স্থল রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায়
তথাকথিত পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী, সার্বভৌমত্ববিরোধী এবং সংবিধানবিরোধী বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ও ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি নিয়ে চুক্তিবিরোধী মহলের অন্যতম প্রধান আশঙ্কা হলো- এটি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে খর্ব করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলেছে।
ভারতীয় প্রভাব ও আন্তর্জাতিক চাপের অভিযোগ
এই চুক্তি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়; বরং এর পেছনে ভারতের কৌশলগত চাপ এবং আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থান ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মেঘালয় সীমান্তবর্তী, যা এই অঞ্চলে ভারতীয় স্বার্থের প্রশ্নে স্পর্শকাতর করে তোলে। অভিযোগ রয়েছে, ভারত চাইছিল একটি (তাদের অনুকূলে থাকা) রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে চুক্তির মাধ্যমে শক্তিশালী করা হোক, যাতে এই অঞ্চল থেকে ভারতবিরোধী তৎপরতা না হয়।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ঝুঁকি
চুক্তির পরও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্তিত্ব, চাঁদাবাজি ও সহিংসতা বন্ধ হয়নি; বরং তারা ‘শান্তি’র নামে বৈধতা পেয়ে ভিন্নভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। এ ছাড়া ভারত সীমান্তঘেঁষা এলাকা থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের অভিযোগ এবং সশস্ত্র গ্রুপগুলোর ভারতীয় আশ্রয়- এ সমস্ত বিষয়কে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা
পাহাড়ে একটি বিশেষ জাতিগোষ্ঠী কেন্দ্রিক স্বায়ত্তশাসন প্রবণ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা হলে, ভবিষ্যতে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী চেতনা আরো উৎসাহিত হতে পারে- এমন শঙ্কাও রয়েছে বিশ্লেষকদের মধ্যে। এ ধরনের দৃষ্টান্ত দেশের অন্যান্য সংখ্যালঘু বা সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও প্রভাব ফেলতে পারে, যা জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতার প্রশ্নে উদ্বেগজনক।
সংবিধানবিরোধিতার প্রশ্ন
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সমান এবং কোনো অঞ্চল বা গোষ্ঠীর ভিত্তিতে বৈষম্য করা যাবে না। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির কয়েকটি ধারাকে সংবিধানের এই মূলনীতি ও চেতনাবিরুদ্ধ বলে সমালোচনা করা হয়।
সাংবিধানিক চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক উপাদান
চুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো- সরকারি নিয়োগ, ভূমি মালিকানা বা স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচনে পাহাড়িদের ‘অগ্রাধিকার’ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি ‘সমানাধিকারের’ সংবিধানিক নীতিমালার পরিপন্থী এবং বাঙালি বা অন্য নৃগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক।
‘বহিরাগতদের স্থায়ী বসবাসে বাধা’ নীতি
চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালিদের ‘বহিরাগত’ আখ্যা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমতি ছাড়া ভূমি কেনাবেচা বা বসবাস নিষিদ্ধ, যা অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের অধিকার খর্ব করে।
সংবিধানের ধারা ২৭ : ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ ধারা ২৮ (১) : ‘রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের প্রতি কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, জন্মস্থান বা নারী-পুরুষভেদে বৈষম্য করবে না।’ এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, চুক্তির কয়েকটি দিক এই ধারাগুলোর মৌলিক চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। একটি জাতিগোষ্ঠী ভিত্তিক ‘সুরক্ষিত অঞ্চল’ গঠনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে জাতিগত বিচ্ছিন্নতা বা বিশেষাধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে পারে, যা সংবিধানের জাতীয় সংহতির নীতি ক্ষুণœ করে।
সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন : পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির সবচেয়ে বিতর্কিত দিকগুলোর একটি হলো- এতে আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদগুলোকে যে পরিমাণ নির্বাহী, প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানিক কাঠামোর প্রশ্ন উঠে এসেছে।
স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামোর আশঙ্কা
চুক্তি অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক পরিষদ (ঐরষষ উরংঃৎরপঃ ঈড়ঁহপরষ) ও আঞ্চলিক শাসনকাঠামো গঠিত হয়, যার অনেক ক্ষমতা প্রশাসন, ভূমি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বন ইত্যাদি বিষয়ে স্বায়ত্তশাসনের মতো কার্যকর হয়ে থাকে। এসব ক্ষমতা জাতীয় প্রশাসনের কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে পাশ কাটিয়ে চলে, যা কার্যত একটি আলাদা প্রশাসনিক অঞ্চলের ইঙ্গিত দেয়।
একক ও অবিভাজ্য রাষ্ট্রকাঠামোর পরিপন্থী? :
বাংলাদেশের সংবিধানের ১ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে : ‘বাংলাদেশ একটি একক, অবিভাজ্য ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র।’ অথচ পার্বত্য শান্তিচুক্তিতে ‘আদিবাসী স্বত্ব’ ‘পার্বত্য জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয়’ এবং স্থানীয় জাতিসত্তার রাজনৈতিক অধিকার স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে অনেকেই মনে করেন- এটি জাতীয় একত্বের বিরুদ্ধে যায়।
এতে ভবিষ্যতে আলাদা জাতিসত্তা বা স্বায়ত্তশাসনের দাবি আরো জোরদার হতে পারে, যা দেশের ভৌগোলিক ও সাংবিধানিক ঐক্যের জন্য হুমকি। হাসিনা সরকার জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কিছু শর্ত মেনে নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা অন্য কোনো অঞ্চলে হলে ‘বিশেষ সুবিধার দাবি’ বৈধ হয়ে উঠতে পারে। এতে ‘প্রথমে ব্যতিক্রম, পরে নিয়মে পরিণত’ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়, যা রাষ্ট্রের এককতা ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব ক্ষয় করে।
লেখক : সিনিয়র ফেলো, এসআইপিজি, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি