কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ক্ষমতায়ন

আবদুল লতিফ মাসুম [সূত্র : আমার দেশ, ২৪ জুন ২০২৫]

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ক্ষমতায়ন

প্রেসিডেন্ট পদটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা, মর্যাদা, সম্মান ও সার্বভৌমত্বের নির্দেশক। পৃথিবীর রাষ্ট্রব্যবস্থায় এটি তিন ধরনের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি আলংকারিক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রতিনিধি এবং কতিপয় ক্ষেত্রে মিশ্র ধরনের। গণতান্ত্রিক অথবা অগণতান্ত্রিকÑউভয় ক্ষেত্রেই প্রেসিডেন্ট বা সর্বোচ্চ পদাধিকারীর অস্তিত্ব রয়েছে। প্রেসিডেন্ট সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং সবচেয়ে কম ক্ষমতার অধিকারীÑএ রকম নমুনা বিশ্ব ব্যবস্থায় বিস্তৃত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং লাতিন আমেরিকায় প্রেসিডেন্টরা ‘একনায়ক’-এর মতো। আবার বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এটি শুধুই ক্ষমতার প্রতীক। নামেমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বলা হয় সাম্রাজ্যিক রাষ্ট্রপতি (Emperor Presidency)। ইউরোপে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বেশ ক্ষমতাধর। অন্যত্র মিশ্রব্যবস্থার নমুনা রয়েছে। অবশ্য সর্বত্রই ‘Check and Balance’ বা ক্ষমতার ভারসাম্য রয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় আলংকারিক প্রেসিডেন্টরা শুধু আলংকারিক কাজ করে বেড়ান। রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় অংশগ্রহণ, কবর জিয়ারত এবং দ্বার উদঘাটনের মতো প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করে বেড়ান প্রেসিডেন্টরা। এসব নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রেসিডেন্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীকÑএতে কোনো সন্দেহ নেই। কখনো কখনো এসব আলংকারিক প্রেসিডেন্টরা বিশেষ অবস্থায় বা জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে অনেক ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন।

বিশ্বে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে নানা ধরনের রকমফের। কখনো তিনি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। আবার কখনো বা পরোক্ষ ভোটে। যখন তারা সরাসরি নির্বাচিত হন, তখন ক্ষমতাও সরাসরি প্রয়োগ করেন। মিশ্র ধরনের ব্যবস্থাও বহাল রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় একজন রাষ্ট্রপতি রয়েছেন। সংবিধানের চতুর্থ ভাগের ৪৮তম অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিবিষয়ক বিধানাবলি রয়েছে। ৪৮ অনুচ্ছেদের ২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপ্রধান রূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্যসব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা তাহাকে প্রদত্ত ও তাহার উপর অর্পিত সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করিবেন।’ এই ধারায় যেভাবে তাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করা হয়েছে, তার পরের ধারাতেই তাকে ক্ষমতা প্রয়োগে প্রধানমন্ত্রীর একরকম অধীন করা হয়েছে। ৪৮-এর ৩ ধারায় বলা হয়েছেÑ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন : তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দান করিয়াছেন কি না এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করিবেন না।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রধান নির্বাহীর আদেশ-নিষেধ মোতাবেক তাকে ৩৯ ধারায় ক্ষমা প্রদর্শনের একক অধিকার দেওয়া হয়েছে। ৫১-এর ১ ধারায় রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫২ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন (Impeachment) করা যাবে। ৫৩ ধারা অনুযায়ী অসামর্থ্যের কারণে তাকে অপসারণ করা যাবে।


তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতিকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হয়েছে। আলংকারিক পদ হিসেবে যে উচ্চমর্যাদা ও সম্মান রাষ্ট্রপতির প্রাপ্য ছিল, তা বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ জিরোতে পরিণত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে সর্বেসর্বা বা হিরো হতে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এমন কোনো হেন কাজ নেই যে তা করাননি। দাগি আসামির মুক্তি, ফাঁসির আসামির বেকসুর খালাস এবং দায়মুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি করিয়ে অবিতর্কিত পদকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু করা হয়েছে। Theory and Practice যে কথাটি আছে, তা দ্বারাও আমরা রাষ্ট্রপতি পদের নিম্নায়ন লক্ষ করি। সংবিধানে যে সীমিত ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে, প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তা তিনি হয়তো প্রয়োগ করতে পারেননি। এমনিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতি পদের ব্যক্তিরা তাদের একান্তই অনুগত ছিলেন। তারপর প্র্যাকটিসেও বেহাল অবস্থা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সচেতন নাগরিক সমাজে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তার লাগাম টেনে ধরার জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর চিন্তা-চেষ্টা চলছে। রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায়নের সঙ্গে সঙ্গে তার নির্বাচনকে আরো অর্থবহ করার প্রস্তাবনা বিবেচনাধীন রয়েছে।

 

 

আগেই বলা হয়েছে, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। যে দল সরকার গঠন করে, তারাই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাদের প্রার্থী নিশ্চিতভাবেই নির্বাচিত হন। সরকারি দল রাষ্ট্রপতির সু-উচ্চ মর্যাদা, সুনাম ও সু-খ্যাতির গুরুত্ব না দিয়ে নিরঙ্কুশ আনুগত্যকেই গুরুত্ব দেন। ক্ষমতাসীন দলই অতীতের এ বাস্তবতার কথা বলে। একজন রাষ্ট্রপতি একটু-আতটু বিপরীত আনুষ্ঠানিকতার কারণে পদত্যাগে বাধ্য হন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ আমলে নামিদামি প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও নাম নেহাত কাউকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়ে দেওয়া হয়।

 

 

রাষ্ট্রপতির রাষ্ট্রিক মর্যাদা লক্ষ করে এমন সব ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত করা দরকার, যারা পুরো জাতির সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র হবেন। স্বাধীন ও বিবেকবান মানুষ হিসেবে যাদের পরিচিতি আছে, তাদেরই রাষ্ট্রপতি পদে বিবেচিত হওয়া উচিত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভাজন তীব্র হওয়া সত্ত্বেও এমন মানুষও আছেন, যারা রাজনৈতিক পরিচয় সত্ত্বেও ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠতে পারেন। এখন যখন জাতীয় সংস্কার কমিশনে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে, তখন সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির গুণাবলি নির্ধারক বাক্যাবলি সংযোজিত হতে পারে। এতে করে রাষ্ট্রপতি পদের শ্রী বৃদ্ধি ঘটবে। রাষ্ট্রপতিকে জনগণ শ্রদ্ধা করতে পারবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। সংস্কার কমিশন তথা রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা অনুরোধ করতে পারি রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা নিরূপক কিছু শর্তাবলি সংবিধানে সংযোজিত হোক।

 

 

জন-আকাঙ্ক্ষার কারণে সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। পদ্ধতিগত বিরোধ থাকলেও নীতিগতভাবে রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে আরো সম্প্রসারিত দেখতে চান। প্রথম ও প্রধান প্রস্তাবটি এ রকম যেÑক. যদি উচ্চকক্ষ গঠিত হয়, তাহলে উভয় কক্ষের সদস্যদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইলেকট্রয়েড বা নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যা হবে ৫০০। বিদ্যমান সংসদের ৩০০ সদস্য, প্রস্তাবিত ১০০ নারী সদস্য এবং কাঙ্ক্ষিত উচ্চ পরিষদের ১০০ সদস্যের সমন্বয় এই নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের কথা রয়েছে। তাহলে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। খ. আরেকটি প্রস্তাব রয়েছে এ রকম, যেখানে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি জেলা সমন্বয় পরিষদ গঠিত হবে। তাদের ভোটে প্রতিটি জেলার জন্য এক ভোট ধরে নির্বাচকমণ্ডলী গঠন করা হবে। এই প্রস্তাবে সিটি করপোরেশনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে উভয় কক্ষের ৫০০টি, জেলা সমন্বয় পরিষদের ৬৪টি এবং ১২টি সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ভোটার সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৭৬টি। গ. আরেকটি প্রস্তাবে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদেরও নির্বাচকমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যসংখ্যা হয়ে দাঁড়াবে ৭০ হাজার। এটা অবশ্য আইয়ুব আমলের মৌলিক গণতন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। সে কারণে এটি বাস্তবায়ন জন-অনুমোদন পাবে না।

 

 

রাষ্ট্রপতিকে ঘিরে বর্তমান সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনার একটি বিষয় হচ্ছে সাংবিধানিক পরিষদ গঠন করা। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সরকারপ্রধান নিয়োগ দিয়ে থাকেন। দলীয় মনোভাবের কারণে অযোগ্য ও বিতর্কিত লোকরা এতে স্থান পান। উত্থাপিত প্রস্তাবে এসব পদে মনোনয়নের জন্য সাংবিধানিক পরিষদ নামে একটি সংস্থা গঠিত হবে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি হবেন এর প্রধান। কমিশনের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, বিরোধী দল এই পরিষদের সদস্য থাকবেন। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে যেসব পদ বা ব্যক্তি ক্ষমতাসীন বলয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত ও বিবর্তিত হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও স্পিকার একই বলয়ের বা একই ধরনের হওয়ার কথা। বিরোধীদলীয় নেতা সেখানে ‘সবে ধন নীলমণি’ হিসেবে অসহায় হয়ে পড়তে পারেন। তাই পরিষদে বিরোধীদলীয় সংশ্লিষ্টতা আরো বাড়ানো যায় কি না, সেটা চিন্তা করা যেতে পারে। ডেপুটি স্পিকার যদি বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত হন, তাহলে তাকেও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি পরিষদে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করছে। তাদের কথায় যৌক্তিকতা আছে। রাষ্ট্রপতিকে সর্বোচ্চ বিতর্কের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হয়। প্রধান বিচারপতিকে বিচারের আসনে বসতে হবে। সুতরাং তাদের বাদ দিয়ে সিভিল সোসাইটি থেকে আরো দু-একজনকে নেওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের এবং শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতিকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

 

 

এবার রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায়নের অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা যাক। আমরা সবাই জানি যে, রাষ্ট্রপতি আলংকারিকভাবে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর। তাই এই দুটো বিষয় রাষ্ট্রপতিকে সার্বিকভাবে অর্পণ করা যায় কি না, বিবেচনা করা হোক। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির যেহেতু তেমন কোনো কাজ নেই, তাই এই দুটো বিষয় উচ্চশিক্ষা ও প্রতিরক্ষা তাদের কাছে ন্যস্ত হলে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় কাজ পাবে। অতীতে এই দুটো মন্ত্রণালয় বিতর্কিত হয়েছে। দুটো মন্ত্রণালয়ই সংবেদনশীল। উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে বেহাল অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা নানাভাবে বিতর্কিত হচ্ছেন। তাই তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য এককভাবে রাষ্ট্রপতির অধীনে নিয়োগ ন্যস্ত হলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের ক্ষেত্রে যেমন বলা হয়েছেÑদুবারের বেশি নয়, ঠিক তেমনটিই প্রয়োগ করা যেতে পারে রাষ্ট্রপতির মেয়াদকালের ক্ষেত্রেও।

 

 

বাংলাদেশের বিগত ৫০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তত্ত্ব ও বাস্তবতায় হাজার ফারাক রয়েছে। আমরা ভালো ভালো কথা সংবিধানে এভাবে লিখে দিলামÑসবাই যার প্রশংসা করছে, বাস্তব ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ না ঘটলে সব নীতিকথা অবাস্তব ও অকার্যকর হয়ে পড়বে। বর্তমান সংবিধানের প্রণেতা ড. কামাল হোসেন একবার দুঃখ করে বলেছিলেন, তিনি তো সংবিধানে জেল-জুলুমের কথা লেখেননি। আয়নাঘরের কথা লেখেননি। অর্থাৎ ব্যক্তির মন-মানস, আচার-আচরণ, শিক্ষা-সংস্কৃতি ইত্যাদির ওপর বহুলাংশে সংবিধানের প্রায়োগিকতা নির্ভর করে। সে জন্যই সিভিল সোসাইটির লোকরা রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা বলছেন। জীবনব্যবস্থায় গণতন্ত্রের কথা বলছেন। আমরা সবাই বুঝি যে গণতন্ত্র শুধু একটি শাসনব্যবস্থা নয়। এটি একটি আদর্শ, মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার বিষয়। সুতরাং আমাদের রাজনীতিবিদরা যেদিন কথায় বড় না হয়ে, কাজে বড় হবেÑবাস্তবে গণতন্ত্রের বাস্তবায়ন ঘটবে, সেদিনই জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হওয়ার আশা করা যাবে।

 

 

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাবেক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাবি