কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

পরিবেশ দূষণ রোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই

সাইদুল কবির স্বাধীন । সূত্র : সময়ের আলো, ৫ মার্চ ২০২৫

পরিবেশ দূষণ রোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই
পরিবেশ বলতে আমরা বুঝি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আশপাশে যা কিছু আছে তাই হলো পরিবেশ। যেমন- আলো, বাতাস, পানি, শব্দ, মাটি, গাছপালা, নদীনালা ইত্যাদি। আর দূষণ বলতে আমরা বুঝি-যখন কোনো কিছু মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায় তখন সেটা যে কারণে মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে সেটাকেই আমরা বলে থাকি দূষণ। পরিবেশ দূষণ বলতে বোঝায়, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আশপাশের নানা জিনিস যখন বেঁচে থাকার মাধ্যম থেকে ক্ষতিকারক উপাদানে পরিণত হয়, ঠিক তখনই আমরা সেটাকে পরিবেশ দূষণ বলে থাকি। পরিবেশ দূষণের গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে পরিচিত মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে-বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, মাটিদূষণ, শব্দদূষণ।
 
 


মানুষের জীবনযাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অক্সিজেন, যা আমরা বাতাস থেকে পেয়ে থাকি কিন্তু যখন সে বাতাস বা বায়ু দূষিত রূপ নেয় এবং মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠে তখন সেটা আমাদের পরিবেশের জন্য অনেক বড় হুমকিস্বরূপ। এ বায়ুদূষণে বিশ্বের বড় বড় শহরকে পেছনে ফেলে আমাদের রাজধানী ঢাকা তালিকার উপরে রয়েছে, যা প্রমাণ করে আমরা আমাদের নিজেদের কর্ম দিয়ে কীভাবে বাতাস দূষিত করছি এবং মানুষের জন্য অক্সিজেনকে ব্যবহারের অনুপযোগী করে তুলছি। প্রশ্ন হলো কীভাবে বা কোন কোন কর্ম দিয়ে আমরা বায়ুদূষণ বৃদ্ধি করছি? যার প্রধান প্রধান কারণের মধ্যে রয়েছে ইটের ভাটার কালো ধোঁয়া, বড় বড় দালানকোঠা, রাস্তা-ঘাট নির্মাণকাজ এবং যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ তৈরি করা। যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা, যা উৎপাদন করছে কালো ধোঁয়া। এ ধোঁয়া বাতাসে মিশে পরিবেশ অনুপযোগী করে তুলছে, আবার শহরে বায়ুদূষণের কথা চিন্তা করলে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে দুর্গন্ধ বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ করছে। দূষণরোধে প্রতিকারস্বরূপ একটি পদক্ষেপই যথেষ্ট, সেটা হলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। হয়তোবা পুরোপুরি বায়ুদূষণ রোধ সম্ভব নয় কিন্তু জনসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে কিছুটা হলেও বায়ুদূষণ কমিয়ে এনে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। 
 
 


 পানিদূষণও পরিবেশের ক্ষতিকারক দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ, যেমন- শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য, পয়োনিষ্কাশন, রাসায়নিক সারসহ এ ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ যখন পানিতে মিশে মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী করে তোলে তখন তাকে পানিদূষণ বলে। পানিদূষণের ফলে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ ছড়ায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক বড় বড় শিল্প-কলকারখানা রয়েছে, যার থেকে নির্গত বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্কাশন না করার ফলে সেসব বর্জ্য নদীর বা খাল-বিলের পানির সঙ্গে মিশে দূষিত করছে, যার ফলে পানিতে থাকা মাছসহ জীববৈচিত্র্য বড় হুমকির মুখে পড়ছে। আবার সেসব পানি মানুষ ব্যবহার করে নানাবিধ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে পয়োনিষ্কাশনের ফলেও নানাভাবে পানিদূষিত হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সঠিক এবং আধুনিক পদ্ধতিতে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সেসব বর্জ্য পানিতে মিশে দূষিত করছে যা আমাদের জন্য পানি ব্যবহার অনুপযোগী করে তোলে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় চাষাবাদের জন্য চাষের জমিতে উর্বরতা ধরে রাখতে কৃষকরা জমিতে নানারকম রাসায়নিক সার ব্যবহার করে থাকে। এ স্যার মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে যায়, যার ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করলেও পানির সঙ্গে মিশে পানি দূষিত করে তোলে। বিভিন্ন কারণে তৈরি হওয়া পানিদূষণ রোধ করতে হলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে করে মানুষ আরও বেশি সচেতন হতে পারে এবং পানিদূষণ রোধে কাজ করতে পারে।
 
 


বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, তাই চাষাবাদ করার জন্য উর্বর মাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু মাটি যখন দূষিত হয়ে যায় তখন আর সেটা উর্বর থাকে না। মাটি দূষণের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা, প্লাস্টিক জাতীয় সরঞ্জাম মাটিতে ফেলাসহ অনেক কিছু। মানুষ যখন একই জায়গায় দিনের পরপর ময়লা ফেলতে থাকে তখন তা মাটির সঙ্গে মিশে উর্বরতা কমিয়ে আনে বা মাটি দূষিত করে তোলে। মাটিদূষণের সবচেয়ে প্রধান কারণ হলো-প্লাস্টিক জাতীয় জিনিসপত্র বা সেসব জিনিস সহজেই মাটির সঙ্গে মিশে বিলীন হয়ে যাবে না এ ধরনের জিনিসপত্র মাটিতে ফেলা বা এ জাতীয় জিনিস মাটিতে সহজে মিশে বিলীন হতে পারে না, যার ফলে দীর্ঘদিন মাটির সঙ্গে লেগে থেকে দূষিত করে তোলে, যা মাটি দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। মাটিদূষণ রোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। মানুষকে যখন বুঝানো যাবে মাটির গুরুত্ব কতটুকু এবং কীভাবে এটি আমাদের জীবনযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তখন মানুষ আরও বেশি সচেতন হতে পারবে এবং মাটিদূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখতে পারবে। যদি মাটিদূষণ আরও রোধ বা কমিয়ে আনা যায় তা হলে মাটিকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব। 
 
 


মানুষের সারা দিনের সব রকমের কর্ম সম্পাদনে যে কাজ অবশ্যই করা লাগে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো শোনা। আর এ শোনার জন্য প্রয়োজন শব্দ কিন্তু যখন এটি প্রয়োজনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত বা বিকট শব্দে কানে আসে তখন তাকে বলা হয় শব্দদূষণ। এটি নানাভাবে হতে পারে গাড়ি বা যানবাহনের হর্ন, মাইকের আওয়াজ, উচ্চ শব্দে বক্স বাজানো ইত্যাদি। আমরা যখন বাইরে বের হই তখন অবশ্যই আশপাশের নানা শব্দ আমাদের কানে আসে কিন্তু অনেক সময় কিছু শব্দ আমাদের শ্রবণশক্তির চেয়ে জোরে আসে এবং আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়। অনেক ড্রাইভার আছে যারা বিনা কারণেই গাড়ি বা যানবাহনের হর্ন বাজায় যা গাড়িতে থাকা যাত্রী এবং রাস্তার পাশের পথচারীর জন্য শব্দদূষণের কারণ হয়। অনেকেই আছে নিজেদের বিভিন্ন রকম প্রচারের স্বার্থে রাস্তায় বা পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করে কিন্তু অনেক সময় সে আওয়াজ অনেক রোগী বা সাধারণ মানুষের জন্যও শ্রবণশক্তির বাইরে থাকে, যা মানুষের জন্য শব্দদূষণের কারণ। অনেক বিয়েবাড়ি বা অন্য যেকোনো অনুষ্ঠানে উচ্চ আওয়াজে বক্সে গান বাজানো হয় যেটি মানুষের শব্দদূষণের কারণ হয়। এতসব জিনিস থেকে মুক্তির একটাই মাধ্যম সেটা হলো-মানুষের মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। যাতে করে মানুষ বুঝতে পারে যে তারা যা করছে সেটা অন্যের জন্য ক্ষতিকর এবং আমাদের সবার এসব থেকে বিরত থাকা জরুরি।
 
 
 
 
সর্বোপরি বলা যায়, পরিবেশ নানা সময় নানা কারণে আমাদের জন্য বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ে, সেটা হতে পারে বায়ুদূষণ, হতে পারে পানিদূষণ, হতে পারে মাটিদূষণ, হতে পারে শব্দদূষণের কারণে। তাই একই সঙ্গে সব ধরনের দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জনসচেতনতার বিকল্প নেই, যত বেশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা যাবে ততবেশি বা তত দ্রুত পরিবেশ থেকে দূষণ রোধ করা সম্ভব এবং পরিবেশ মানুষের বসবাস উপযোগী করা সম্ভব।