কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

পররাষ্ট্রনীতির গলদ ও উত্তরণ

শাকিল রিয়াজ । সূত্র : দেশ রূপান্তর, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পররাষ্ট্রনীতির গলদ ও উত্তরণ

৫ আগস্টের বিপ্লব শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশেই নতুন বন্দোবস্তের বাতাস লাগায়নি, বিদেশনীতির পালেও লেগেছে নতুন বন্দোবস্তের হাওয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের নানান পদক্ষেপে কিছু কিছু দৃষ্টিগোচরও হয়েছে। ছাত্র-জনতার তীব্র ও রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে কর্র্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র মেরামতের এক বিরল সুযোগ এসেছে। রাষ্ট্র মেরামত মানে পুরনো আইনকানুন, রীতিনীতির সংস্কার ও বদল করে যুগোপযোগী ও কল্যাণকর একটি রাষ্ট্রে রূপ দেওয়া। রাষ্ট্রকে জনগণের মালিকানায় হস্তান্তর করা।

 

 

একটি রাষ্ট্রকে গতিশীল, উচ্চাকাক্সক্ষী ও কার্যকর করতে পদ্ধতিগতভাবে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন যেমন জরুরি তেমনি জরুরি বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে তা নির্ধারণের ওপর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বপ্ন ও ভিশন বারবার ভূ-লুণ্ঠিত হয়েছে। স্বদেশনীতি ও বিদেশনীতি দুই ক্ষেত্রেই। শাসকরা দেশের জনগণকে যেমন ‘দাস’ বানিয়ে শোষণ করেছে, তেমনি বিদেশিদের ‘প্রভু’ বানিয়ে নতজানু থেকেছে। হাসিনা রেজিমে এই প্রবণতা চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছিল। নাগরিকের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের বিলোপ ঘটেছিল পুরোপুরি। ফ্যাসিবাদের যে মূলনীতি ব্যক্তিমানুষের চাহিদার চেয়ে শাসকগোষ্ঠী তথা রাষ্ট্রের চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া, জনগণকে আলাদা আলাদা করে না দেখে একটি গ্রুপ হিসেবে বিবেচনা করা, ইতিহাসের একটি সুবিধাজনক ইস্যুকে বাছাই করে জনগণকে দমিয়ে রাখতে তার যথেচ্ছ ব্যবহার পতিত আওয়ামী লীগ সরকার এর সবকিছুই করেছে।

 

উন্নয়নের নামে সাধারণ মানুষকে পপুলারিজমের গোলকধাঁধায় রেখে স্বজনতন্ত্র কায়েম ও লুটপাট, দুর্নীতি আর বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের মহোৎসবে লিপ্ত ছিল বিগত দখলদারি সরকার। নিজেদের শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য দেশে গুম, খুন, জেল-জুলুম, দখল, বিরোধী মতামত দমন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগকে দলীয়করণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় পেটোয়া বাহিনীতে রূপান্তর, নির্বাচনের নামে প্রহসন ও ভোট ডাকাতি, রাতের অন্ধকারে ব্যালট বাক্স ভরা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় চরমভাবে হস্তক্ষেপসহ এমন হীন কাজ নেই যা হাসিনা সরকার করেনি। বাংলাদেশ পৌঁছে যায় নৈরাজ্যের চরম শিখরে। আর এসব ঢাকতে বেছে নেওয়া হয়েছিল গোয়েবলসীয় কায়দায় প্রোপাগান্ডা। দেশের নৈরাজ্য ধামাচাপা দিতে বিদেশিদের কাছে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। মূলত শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রনীতি ছিল, প্রোপাগা-া-নির্ভর।

 

 

শত কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করে তাদের দিয়ে সরকারের গুণকীর্তন গাওয়ানো, বিরোধীদলহীন নির্বাচন, রাতের ভোট কিংবা ভোটারবিহীন নির্বাচনের সমর্থন আদায়ের জন্য গোটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিয়োজিত করা, প্রি-প্ল্যানড ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিদেশি শক্তির আগাম সমর্থন আদায়ে দূতাবাসগুলোকে ব্যবহার করা, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে হেনস্তা করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিপরীতে ডিফেন্ডিং বয়ান রপ্তানি, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে মিথ্যা ডকুমেন্টেশন তৈরি করে প্রভাবশালী দেশগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী গ্রুপগুলোর কাছে পাঠানো কিংবা আওয়ামী লীগের প্রবাসী শাখাগুলোর পরিচর্যা করা একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে না। অথচ এটাই হয়েছে এতকাল। এই নীতিতে দেশ ছিল না, দেশের মানুষ ছিল না। একটি কর্র্তৃত্ববাদী রেজিমকে বহির্বিশ্বে গ্রহণীয় করার চেষ্টাই ছিল আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সারবত্তা। আর ছিল একমাত্র ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারত। বন্ধুরাষ্ট্র এ জন্য যে, ভারত শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছে। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের স্বার্থ ভারতের কাছে বিকিয়ে দেওয়া ছাড়া নিজেদের জন্য কোনো ফায়দা ঘরে তুলতে পারেনি আওয়ামী সরকার। শেখ হাসিনার বিদেশনীতি মূলত ছিল, নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা এবং তার অধিকাংশ সাঙ্গপাঙ্গ পালিয়ে গিয়ে অবশেষে সেই ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন।

 

 

২৪-এর ৫ আগস্ট একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই শান্তিতে নোবেলজয়ী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস দিল্লি থেকে মুখ ঘুরিয়ে বিশ্বের দিকে হাত বাড়িয়েছেন। বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোর প্রতি। একটি মাত্র দেশের সঙ্গে নয়, বরং আমাদের পররাষ্ট্রনীতির যে মূল লক্ষ্য অর্থাৎ সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক, সেদিকেই তিনি রওনা দিয়েছেন বলে মনে হয়। লক্ষ্যটি নির্ধারণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। পিতার নীতি থেকে কন্যা বিচ্যুত হলেও আমাদের মতো দুর্বল দেশগুলোর জন্য সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রেখেই যে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হয়, অর্জন কুড়াতে হয়, লাভ ঘরে নিয়ে আসতে হয় তা ডক্টর ইউনূস গোড়া থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

 

 

অর্থনৈতিক কূটনীতি বলব কিনা জানি না, নিজের বিশ্বপরিচিতি ও প্রভাব খাটিয়ে দেশ থেকে পাচার হওয়া লাখো কোটি টাকা ফেরত নিয়ে আসতে ধরনা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে। চোরাই টাকার উৎস ও তথ্য পেতে সফল আলোচনা হয়েছে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে। সম্পর্কের দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে। পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সার্ক পুনরুজ্জীবনের। ভারতের চোখ রাঙানোর জবাবে চোখ রাঙানো হচ্ছে। সীমান্তে পিঠ না দেখানোর অঙ্গীকার এসেছে। নতজানু নয় বরং ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভারসাম্যের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

 

হাসিনার পতনে ক্ষিপ্ত ভারতের ক্ষমতাধররা ও মিডিয়া বাংলাদেশ ও ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমেছে। হুমকি দিচ্ছে বাংলাদেশ কিংবা দেশের কিছু অংশ দখল করে নেওয়ার। ইউনূস সরকারকে জঙ্গি সরকার আখ্যা দিয়ে বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমেরিকা গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ দিয়ে এসেছেন। কিন্তু ডক্টর ইউনূসের ঔজ্জ্বল্য ও ক্যারিশমেটিক কূটনৈতিক মুভের কাছে এসব পাত্তা পায়নি। উল্টো মোদি যখন আমেরিকায় তখন ডক্টর ইউনূস মিটিং করেছেন, ইলন মাস্কের সঙ্গে। শোনা কথা, মাস্কের পাশে বসে আলাপ শুনছিলেন স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

 

 

গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর ইউনূস। সফরটি কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক। জাতিসংঘ মহাসচিব, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে এশিয়া, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি থেকে স্পষ্ট হয়, ইউনূস সরকারের বিদেশনীতি কার্যকর হতে শুরু করেছে। বিষয়টি পানির মতো পরিষ্কার। হাসিনার আমলে ভারতের ছত্রছায়ায় থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল তা থেকে ইতিবাচক উত্তরণ ঘটেছে। অন্যদিকে চীন ও পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশের জন্য ঋণের দুয়ার উন্মুক্ত করতে। জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উত্তরণ ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি আদায় করে এনেছেন এই সফর থেকে। মাত্র অল্প কয়েক মাসে এত এত সাফল্য ও অর্জনে আমাদের গর্ব হয়। বিশ্বের মনোযোগ আমরা পেয়ে গেছি।

 

 

আন্দাজ করা যায় আগামী ডিসেম্বরে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতায় আসবে একটি রাজনৈতিক সরকার। সেই সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে হাসিনা আমলে বাংলাদেশের প্রতি নিস্পৃহ হয়ে পড়া আন্তর্জাতিক মহলকে সক্রিয় করা। ভারতের প্রতি অত্যধিক নির্ভরশীলতার কারণে যেসব দেশ দূরে সরে গিয়েছিল তাদের কাছে টানা। ইউনূস সরকার এই কাজটি শুরু করেছে এবং দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ডক্টর ইউনূসের প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা কাজে লাগিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সাফল্য ঘরে আনা যাবে মনে হচ্ছে। তবে সেই সুযোগ এই সরকারকে দিতে হবে। সীমান্তবর্তী দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য নিয়ে আসা জরুরি। ভারতকে প্রভুর আসন থেকে নামিয়ে উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুরাষ্ট্রের সমান্তরালে নিয়ে আসতে হবে।

 

 

আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের তদারকি ও হস্তক্ষেপ শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বোঝাপড়া করে ফেলতে হবে। দশ লক্ষাধিক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফেরানোর কূটনীতিতে জয়ী হতে হবে। এক্ষেত্রে চীনকে কাজে লাগানো যেতে পারে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। তখন থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে রেখেছে আরাকান আর্মি। অঞ্চলগুলোর মধ্যে রাখাইন রাজ্যও রয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরাকান আর্মির সঙ্গে বৃহত্তর পরিসরে সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন। এটি বাংলাদেশের মিয়ানমার-সংক্রান্ত নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

 

 

 

আমাদের আসিয়ানে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও প্রধান প্রতিবন্ধক এই দুটি দেশ। ভারত কখনোই চায় না, আমরা তাদের মুঠোর বাইরে চলে যাই। ভারত সার্ককেও সক্রিয় করতে নারাজ আবার আসিয়ানে আমাদের অন্তর্ভুক্তিরও বিরোধী। এক্ষেত্রে মিয়ানমারকে কাজে লাগাবে ভারত। অন্যদিকে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোও আসিয়ানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি চায় না। এক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেইয়ের মতো বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরকে ম্যানেজ করা ডক্টর ইউনূসের জন্য কঠিন হবে না। ফিরতে হবে পশ্চিমেও। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা জরুরি। আমাদের পোশাক শিল্পের বড় দুই ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। এই খাত থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে। সর্বোপরি বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের কাজ শুধু পাসপোর্ট-ভিসা আর দিবস পালন নয়।

 

 

 বিগত সরকারের আমলে দূতাবাসগুলো দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। অথচ দূতাবাসের কাজ নতুন বাণিজ্য সম্প্রসারণে দূতিয়ালি করা। নতুন নতুন শ্রমবাজার বিকাশে, শিক্ষা, গবেষণা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-জনিত ছাড় আদায়ে, প্রযুক্তি হস্তান্তরে, প্রতিপক্ষ দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে কৌশলগত অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরিতে, নতুন রপ্তানি গন্তব্য তৈরিতে, রপ্তানি বহুমুখীকরণে, দক্ষিণ এশিয়াসহ আসিয়ান ও আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল তৈরিতে, শুল্কমুক্ত সুবিধা আনয়নে, ইউরোপীয় জিএসপি প্লাস, মার্কিন জিএসপি নেগোসিয়েশনের কাজে, ভারতের সঙ্গে পানির হিস্যা আদায়ে, পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষার মতো বহুবিধ সেক্টরে দূতিয়ালি করা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের দূতাবাসগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। একটি লাভজনক ও টেকসই পররাষ্ট্রনীতির জন্য বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলোকে কার্যকর ও সক্রিয় করা এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে দক্ষতা ও পেশাজীবিতার উন্মেষ ঘটানো ছাড়া লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে না।

 
 
 
 
লেখক: কবি ও সাংবাদিক স্টকহোম, সুইডেন