পতাকা উত্তোলন দিবস আজ
সূত্র : দৈনিক বাংলা, ০২ মার্চ ২০২৫

২ মার্চ, ১৯৭১। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিলের প্রতিবাদে ঢাকায় সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। রাজাধানীজুড়ে ছিল স্থবিরতা, নিস্তব্ধতা। সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ থাকে। হাটবাজার, অফিস-আদালত ও কলকারখানায় পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। আগের রাতেই (১ মার্চ) ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছাত্রনেতারা বৈঠক করে পরের দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। কর্মসূচি অনুযায়ী ২ মার্চ সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসভা হওয়ার কথা।
বটতলায় নির্ধারিত সময়ের আগেই অভূতপূর্ব জনসমাগম ঘটে। ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভার শুরুতেই তিনি সমবেত ছাত্রদের স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ বাক্য পাঠ করান।
একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের এ দিনে সমবেত সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে তদানীন্তন ছাত্রলীগ নেতা ও ডাকসুর ভিপি আ স ম আব্দুর রব প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মানচিত্র-খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম প্রধান নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ, ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ডাকসুর জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন প্রমুখ।
তৎকালীন ছাত্রনেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে জানা যায়, পতাকা ওড়ানোর বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। এটি ছিল একটি তাৎক্ষণিক ঘটনা। সভাশেষে বায়তুল মোকাররম অভিমুখে এক বিশাল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে পল্টন ময়দানে অনির্ধারিত এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জনতার ঢল নামে। সন্ধ্যা ৭টায় কারফিউ জারি করে পাকিস্তান সরকার। কারফিউর প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। মিছিলের শহরে পরিণত হয় সমগ্র ঢাকা শহর।
তাদের স্লোগান ছিল- ‘মানি না মানি না, সান্ধ্য আইন মানি না’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘জয় বাংলা’। স্বৈরাচার পাকিস্তান সরকারের বাহিনী মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সাধারণ মানুষের ওপর সরকারের এ গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরদিন ৩ মার্চকে জাতীয় শোকদিবস এবং ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল ঘোষণা করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলার স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণ সারা বিশ্বের সামনে প্রমাণ করবে যে বাঙালিরা আর উৎপীড়িত হতে চায় না, তারা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বাঁচতে চায়, বাংলা আর কারও উপনিবেশ বা বাজার হয়ে থাকবে না।’