রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন : সবার আগে চাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া [সূত্র : বণিক বার্তা, ২৩ জুন ২০২৫]

জুলাই অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার, গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কথিত নানা অনিয়ম, যেমন প্রতিপক্ষকে গুম, খুন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসকরণ, আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির বিচার ও একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন।
সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১১ সেপ্টেম্বর দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংশোধনের সুপারিশের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ছয়টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করেন। পরবর্তী সময়ে সরকার রাজস্ব ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম প্রভৃতি সংস্কারের জন্য আরো কয়েকটি কমিশন গঠন করেন। জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যেই কমিশনগুলো এদের রিপোর্ট জমা দেয়। বিগত সরকারের আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করার জন্য একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিও যথারীতি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠন, আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা কার্যক্রম চালু ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সচেষ্ট হয়। সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় খাদের কিনারে যাওয়া অর্থনীতির উন্নয়নে কতিপয় ইতিবাচক অগ্রগতি লক্ষ করা যায়। মূল্যস্ফীতি প্রায় ১১ শতাংশ থেকে নেমে কয়েক মাস ধরে ৯ শতাংশের কাছাকাছি ঘুরপাক খাচ্ছে, যদিও সরকারের লক্ষ্য ছিল জুনের মধ্যে ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনা। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারত কর্তৃক আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রণ ও কতিপয় ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ, দেশে বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদির সরবরাহ অনিশ্চয়তায় উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়া এবং কোনো কোনো শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশকিছু শ্রমিকের চাকরি হারানো, বিনিয়োগ হ্রাস ইত্যাদি কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয় দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যা বাড়ছে। আশার কথা হলো, দেশের প্রবাসী আয় বা বৈদেশিক রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী, রফতানিতেও প্রায় ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি রয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিগত সরকারের আমলের শেষ বর্ষের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে গ্রস রিজার্ভ ২৬ বিলিয়নের ঊর্ধ্বে এবং নিট রিজার্ভ ২০-২১ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নতুনভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার প্রায় বন্ধ হয়েছে।
আগের তুলনায় বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও স্বস্তিদায়ক নয়। পুলিশ বাহিনী ও র্যাবের কাজকর্মে এখনো শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপর থাকলেও সেনাপ্রধানের বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়, তিনি যথাশিগগিরই সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে চান। দেশে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মবসন্ত্রাস এখনো দমন করে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সরকার হয়রানিমূলক ও গায়েবি মামলা তদন্তপূর্বক নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত কোনো মামলাই নিষ্পত্তি হয়নি। অন্যদিকে কোথাও কোথাও পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য এখনো চলমান। এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাকর্মী কর্তৃক চাঁদাবাজি, হাটবাজার, বাস-ট্রাক টার্মিনাল, বালুমহাল, জলমহাল, অটোরিকশা ও টেম্পু স্ট্যান্ড এমনকি ময়লা পরিষ্কারের ইজারার কাজগুলোও দখল ও কব্জা করে ফেলা হয়েছে। আইন-আদালত ও বিচার বিভাগও চলছে আগের মতোই।
এ অবস্থায় দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুর্নীতি দমন কার্যক্রম, বিচার বিভাগ ইত্যাদির সংস্কার অপরিহার্য। তবে যেকোনো সংস্কারের প্রধান উপকরণ হচ্ছে মানুষ। আমাদের দেশের মানুষের স্বভাব, মনমানসিকতা, নৈতিক চরিত্র, আগ্রহ ইত্যাদি পরিবর্তন ও সংস্কারের অনুকূল নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিহিংসামূলক ও দুর্বৃত্তায়িত হয়ে গেছে। তাড়াহুড়া করে কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন করলেও তা টেকসই হবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে।
যেকোনো সংস্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কাগজে-কলমে লিপিবদ্ধ সংস্কার স্থায়ী হবে না। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর ওপর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও ভিন্নমুখী চিন্তাভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সম্প্রতি ঈদুল আজহার পূর্বদিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে তিনি এপ্রিল ২০২৬ মাসে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করেন। এ ঘোষণায় রাজনৈতিক দলগুলো, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন মিডিয়ার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কেউ নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার অনেকে এপ্রিল নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয় মর্মে মত প্রকাশ করেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঘোষণা করেছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাদের মতে, এ নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট। আগস্ট ’২৪-পূর্ববর্তী সরকারের দীর্ঘ অপশাসন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। দিনক্ষণ নির্ধারণ করে কোনো সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন করা যায় না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিচার বিভাগ। কাজেই বিচার বিভাগকে চাপ প্রয়োগ ও দলবাজি করে পক্ষপাতদুষ্ট রায় প্রদান করানো আত্মঘাতী কাজের পর্যায়ভুক্ত। কাজেই প্রথমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান সরকার এরই মধ্যে ১০ মাস দেশ শাসন করেছে। সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া ও বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। রাজস্ব সংস্কারের একটি অধ্যাদেশ জারি করা হলেও এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনে তা মুখ থুবরে পড়েছে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, সব সেক্টরের সংস্কারে হাত দিলে তা বাস্তবায়ন দুরূহ হবে। বরং নির্বাচন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও বিচার বিভাগের সংস্কার শুরু করে একটা সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার তা শেষ করতে পারবে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কারে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচিত সরকারের সংসদের উপর তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার সততা ও সাহসের সঙ্গে অনেক ভালো কাজ সম্পন্ন করেছে। ২০০৭-০৮-এর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত অন্য তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালিত নির্বাচনগুলোই সুষ্ঠু হয়েছে বলে অধিকাংশ মানুষের অভিমত। ২০০৭-০৮-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনাবাহিনী কর্তৃক ১০ মাস সময়ের মধ্যে ভোটার আইডি কার্ড করা সম্ভব হয়েছে। বিগত সরকারগুলোর দুর্নীতি প্রতিরোধে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রচেষ্টা ও প্রতিশ্রুতি উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। অর্থনীতির ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে বয়স্ক মহিলা ও বিধবা, প্রতিবন্ধী ও দুস্থদের সহায়তা করায় ২০০৭-০৯-এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। তবে অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন থাকার ফলে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, সরকারের শেষের দিকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং দেশের গণতন্ত্রহীনতার কারণে জনগণের মধ্যে চাপা অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯-এর জানুয়ারিতে নতুন সরকার গঠন হলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে, যদিও পরবর্তী সময়ে ওই সরকার জাতীয় নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করে দীর্ঘ সময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে অজনপ্রিয় হয়ে যায়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সর্বজনগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হলেও ছাত্রদেরকে নিজের ‘নিয়োগকর্তা’ এবং তাদের গঠিত দল এনসিপিকে নির্বাচনের জন্য সংগঠিত হওয়ার সময় দিতে আগ্রহী মর্মে অভিমত ব্যক্ত করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু্টা অস্বস্তি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া কয়েকজন উপদেষ্টা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনেও জনতুষ্টি অর্জন করতে পারেননি মর্মে অনেকে মনে করেন। গত ১০ মাসে সংস্কার ও বিচার কাজেও তেমন অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। বাস্তবিক পক্ষে এসব কাজ দ্রুত সম্পন্ন করাও সম্ভব নয়। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এরই মধ্যে জুলাই হত্যাকাণ্ডের পর দায়ের করা মামলার অধিকাংশেই এমনসব ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে, মামলায় যাদের সবার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করা কঠিন হবে। এক একটি মামলায় দুই-তিনশ জনকে আসামি করায় মামলাগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ক্ষেত্র বিশেষে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব মামলার তদন্ত ও বিচার বছরের পর বছর চলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকটি কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন, গণপরিষদ গঠন, নারী সংস্কার রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিতর্কে জনগণের মধ্যে বিভক্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে বিরোধ ও স্বাভাবিক সম্পর্কের অবনতি, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য পর্যন্ত মানবিক করিডোর প্রদান, রোহিঙ্গা শরণার্থী বৃদ্ধি প্রভৃতি স্পর্শকাতর বিষয়ে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ যুক্তিযুক্ত হবে বলে অনেকে মনে করেন।
সংস্কার ও নির্বাচন একটি অন্যটির বিকল্প নয়, বরং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সংস্কার এজেন্ডা জনসাধারণের সামনে তুলে ধরে নির্বাচনের জন্য ভোট চাওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে বড় সংস্কার হবে জনগণকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, রাজনৈতিক দল ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে শৃঙ্খলা, সততা, পেশাদারত্ব ও বিশ্বস্ততা ফিরিয়ে আনা, দেশে সুশাসনের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কার্যকর করা, তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও সততা প্রতিষ্ঠা করা। সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে ঐকমত্য কমিটি আলোচনা করে যেসব বিষয়ে সমঝোতায় আসতে পেরেছে সেসব বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে, যাতে নির্বাচিত সরকার সেগুলো সংসদের মাধ্যমে আইনে পরিণত করে।
প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনের তারিখ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যা আগেই উল্লেখ করেছি। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পবিত্র রমজান মাস, এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা, ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা ইত্যাদি বিবেচনায় রমজান শুরুর আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সবদিক দিয়ে মঙ্গলজনক হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনসমর্থন বিবেচনা করতে গেলে ফেব্রুয়ারি কিংবা জুনের মধ্যে কোনো ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন নিয়ে যে দল বা গোষ্ঠী গোলযোগ সৃষ্টি করবে তারা জনগণের বিরাগভাজন হবে এবং জনসমর্থন হারানোর ফাঁদে পড়তে পারে মর্মে অনেকের ধারণা।
গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ফেব্রুয়ারি নির্ধারণে সমঝোতাকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের মতামতকে সরকার কর্তৃক প্রধান্য দেয়া হয়েছে মনে করছে। এটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়, বরং বিএনপি ডিসেম্বর থেকে সরে এসে জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাবিত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান মেনে নিয়েছে ভাবতে অসুবিধা কোথায়? ছাত্রসমাজ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাত করে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, তার ইমেজ ধরে রাখার জন্য জনতুষ্টিমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে, তাদের কোনো আচরণে জনগণ যাতে বিরক্ত না হয় এবং জনগণের ভোগান্তি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আজ না হোক কাল জনগণ কর্তৃক তারা অবশ্যই মূল্যায়িত হবেন।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: সাবেক সিনিয়র সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান