রাষ্ট্র সংস্কারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়
মু. আবদুল হাকিম । সূত্র : বণিক বার্তা, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাষ্ট্র সংস্কারের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে যথার্থ উপলব্ধি না থাকলে রাষ্ট্র সংস্কারে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। রাষ্ট্র সংস্কারকাজে মাঠে নামার আগে জানতে হবে কারা রাষ্ট্র সংস্কারের শত্রু এবং কারা রাষ্ট্র সংস্কারের মিত্র।
রাষ্ট্র সংস্কারের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে যথার্থ উপলব্ধি না থাকলে রাষ্ট্র সংস্কারে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। রাষ্ট্র সংস্কারকাজে মাঠে নামার আগে জানতে হবে কারা রাষ্ট্র সংস্কারের শত্রু এবং কারা রাষ্ট্র সংস্কারের মিত্র। না জেনে মাঠে নামলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ৫৩ বছর ধরে বিদ্যমান রাষ্ট্রের সুবিধাভোগীরা কোনোদিন রাষ্ট্র সংস্কার চায় না। কেননা রাষ্ট্র সংস্কার হলে তাদের সুবিধাগুলো থেকে তারা বঞ্চিত হবে।
এজন্য তারা রাষ্ট্র যেভাবে আছে সেভাবে রাখতে চায়। কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল চিরদিন রাষ্ট্র সংস্কারবিরোধী। অপরাধীরা চায় না রাষ্ট্র সংস্কার হোক। দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা চায় না রাষ্ট্র সংস্কার হোক। সন্ত্রাসীরা চায় না রাষ্ট্র সংস্কার হোক। উন্নয়ন বাজেট, ব্যাংক ও শেয়ার মার্কেট লোপাটকারীরা চায় না রাষ্ট্র সংস্কার হোক। টাকা পাচারকারীরা চায় না রাষ্ট্র সংস্কার হোক। কিন্তু তারা সরাসরি রাষ্ট্র সংস্কারের বিরোধিতা করবে না। তারা অন্যদিক দিয়ে আক্রমণ করে রাষ্ট্র সংস্কারকে ভণ্ডুল করে দেবে। রাষ্ট্র সংস্কারে যারা লাভবান হবে তারা বেখবর ও নির্লিপ্ত।
সংবিধানসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি আইনের সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহলের লাভ-ক্ষতির হিসাব জড়িত। সংবিধানসহ এ-জাতীয় আইনের মোট সংখ্যা বর্তমানে ৯৮০। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের সংখ্যা হাজার হাজার। কাজেই কোনো আইন সংস্কারে তারা কাউকে হাত দিতে দেবে না। অনেক মানুষ বলবে রাষ্ট্র ও সমাজ সংস্কারের কোনো দরকার নেই। শুধু নিজেকে সংস্কার করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমজনতা এ-জাতীয় জনতুষ্টিমূলক বাণী শুনতে বেশি পছন্দ করে।
এ দেশে হাজার হাজার অপকর্ম করেও হাত তালি পাওয়া যায়। ব্যক্তি সংস্কার করলে সমাজ বা রাষ্ট্র এমনি এমনি সংস্কার হয়ে যায়। ব্যক্তি সংস্কার করার জন্য তো এত এত মসজিদ মাদ্রাসা, মক্তব, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, সিনাগগ এবং স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। এত এত জলসা, মিলাদ ও মজলিশ। এছাড়া আছে হাজার রকম মেডিটেশন ও নীতিবাক্য। এতে হাতেগোনা কিছু মানুষের সংস্কার হয়। অধিকাংশ মানুষের কোনো সংস্কার হয় না। ব্যক্তি সংস্কার একটি অসম্ভব এজেন্ডা। সুতরাং আমাদের মন দিতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কারে। এটা ব্যক্তি সংস্কারের চেয়ে অনেক সহজ ও সম্ভব।
একাডেমিক সুবিধাবাদ: সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে গোপন পরামর্শ দিয়ে তার অনুগত অধ্যাপকদের ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার, প্রভোস্ট, প্রক্টর ইত্যাদি নিয়োগ করতে পারেন। একইভাবে কলেজগুলোর অধ্যাপকদের মধ্য থেকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ করতে পারেন। সরকারি-বেসরকারি মিলে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কলেজের সংখ্যা অনেক। অথচ এগুলোয় নেই কোনো রাষ্ট্র সংস্কারের ঢেউ। এছাড়া আছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
এসব স্থানের লোভনীয় পদের টোপ দেখিয়ে অধ্যাপকদের অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখার সুযোগ আছে। ফলে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য একটি বিশাল অধ্যাপক বাহিনীকে জ্ঞানপাপী হিসেবে লালন-পালন করার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর আছে। দলদাস ও পদলোভী অধ্যাপকরা এসব পদের জন্য একাডেমিক স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন এবং নিজস্ব বিবেক ও মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দিতে কখনো কসুর করেন না। আমরা দেখেছি কীভাবে মাফিয়া সরকার এদের দিয়ে পত্রিকায় কলাম লিখিয়ে নেয় এবং টকশো করাত। এরাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত এবং অসাংবিধানিক বলে হাজার হাজার উপসম্পাদকীয় লিখে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সরকারের সব অপকর্মকে বৈধতা দান করেছিলেন।
আমলাতান্ত্রিক সুবিধাবাদ: পিরামিড আকৃতির সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রে সব সময় একটি সুবিধাবাদী কোটারি গ্রুপ সৃষ্টি করে আসছে। তারা উচ্চ পদগুলো দখলের জন্য হেন কোনো কাজ নেই যা করতে প্রস্তুত নন। দলদাসত্ব, পদলেহন, চাটুকারিতা ও চামচাগিরি করে লক্ষ্য অর্জনে তারা কখনো পিছপা হন না। তারা ভালো করে জানেন, এসব বড় পদে নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা নীতিমালা নেই।
দক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা, সততা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম এসব যাচাইয়ের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এগুলো অর্জন করতে প্রয়োজন ছিল শুধু প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পা। এরাও কখনো রাষ্ট্রের সংস্কার চায় না। বরং বাগড়া দিতে চায়। এটা মোকাবেলা করতে হলে বিগত সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত সব আমলাকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সংস্কার কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কার ভালো না মন্দ তা বোঝানোর জন্য সংস্কার মন্ত্রে দীক্ষিত করে তাদের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পাঠানো যেতে পারে।
সুবিধাবাদী গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম: রাষ্ট্রের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সুবিধাভোগী এক দল সাংবাদিকও আছেন। তারাই দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের ‘ল্যাস্পেন্সার’ হিসেবে ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। যারা বিগত সরকারের সব অপকর্ম ধামাচাপায় নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং ভুলভাল খবর দিয়ে জনগণকে তালকানা করেন। রাষ্ট্রে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস না থাকলে তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সংস্কারের কথা শুনলে তারা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। তারা সব সংস্কার কার্যক্রমকে দিন-রাত ইউরোপ-আমেরিকার চক্রান্ত বলে প্রচার করে স্বার্থান্বেষী মহল ও লুটেরা শ্রেণীকে রাষ্ট্রে চিরস্থায়ী করতে চায়। কাজেই যেকোনো মূল্যে সংস্কার ঠেকাতে তারাও বদ্ধপরিকর। এক দল নিবেদিতপ্রাণ বিপ্লবী সাংবাদিক এবং বিপ্লবী গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম ছাড়া রাষ্ট্র মেরামত অসম্ভব।
বিগত সরকারের আমলে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে অথবা বিদেশে অবস্থান করে সরকারের সব অপকর্ম জনগণকে জানিয়েছে তাদেরও সংস্কার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। দলীয়করণের অক্টোপাস থেকে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমাজকে উদ্ধার করতে হবে। সাংবিধানিক তথ্য কমিশনের আওতায় সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠন করার জন্য জনগণের কাছ থেকে পুঁজি আহ্বান করতে হবে। সংবাদ ব্যবসার করপোরেট করহার ৫ শতাংশ করতে হবে। এ ব্যবসা করার জন্য পেশাদার সাংবাদিকরা কমিশন থেকে বিনা সুদে ঋণ নিয়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে কোম্পানি গঠন করবেন। রাষ্ট্র সংস্কারকে উপলব্ধি ও আত্মস্থ করার জন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক দলে এক বা একাধিক থিংক ট্যাংক থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে যারা সংশোধিত সংবিধানের আলোকে নিজ নিজ দলের গঠনতন্ত্র ও দলীয় নীতিমালা হালনাগাদ করার জন্য অবিরাম কাজ করবেন।
সুবিধাবাদী ঠিকাদার: টেন্ডারবাজির মাধ্যমে লাভবান ঠিকাদাররা কোনোদিন রাষ্ট্র সংস্কারে আগ্রহী হবেন না। বরং বাগড়া দেয়ার সুযোগ পেলে হাত ছাড়া করবেন না। আলাদা উন্নয়ন বাজেট পৃথিবীর অনেক দেশে নেই। এ বাজেটে উন্নয়নের নামে লুটপাট করা খুব সুবিধাজনক ও নিরাপদ। এতে মোটা অংকের কমিশনের পাশাপাশি জনগণকে চমকও দেখানো যায়। শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য আগামী বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের আকার যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নের মচ্ছব বন্ধ করে শিক্ষিত বেকারদের উন্নয়নে অধিক মনোযোগী হতে হবে।
সুবিধাবাদী বিচার বিভাগ: প্রধানমন্ত্রীকে সংবিধান দলীয় কোটায় উচ্চ আদালতে কিছু বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা দিয়েছে। এ ক্ষমতা দিয়ে তিনি অনুগত ও সুবিধাবাদী উকিলদের দিয়ে কিছু বিচারক হাইকোর্টে নিয়োগ দিতে পারেন। এখানে নির্ধারিত যোগ্যতার মাপকাঠি নেই। যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, নৈতিকতা, মেধা, দেশপ্রেম ইত্যাদি যাচাইয়ের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় যথেষ্ট এবং যা তারা অর্জনে সিদ্ধহস্ত। রাষ্ট্র মেরামতে তাদেরও তীব্র অনীহা। সুতরাং এক্ষেত্রে বাধাদানে তাদের কোনো কার্পণ্য থাকবে না। বিচারহীনতা, গণতন্ত্রহীনতা, অস্বচ্ছতা ও অজবাবদিহিতা থাকলে লুটেরা ও স্বার্থান্বেষী মহল রাষ্ট্রে যা খুশি তাই করতে পারে।
রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো দুরভিসন্ধি আছে কিনা এবং রাষ্ট্র সংস্কার মার্কিন ষড়যন্ত্র কিনা তা নিয়ে কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও অপতথ্য ছড়ায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা কোনোক্রমেই দীর্ঘায়িত করবে না। সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যতটুকু সময় দরকার ততটুকু নেবে। এ সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আর কোনোদিন ফিরবে না। এ সরকার আগামী দিনের রাজনীতিতেও জড়াবে না। কাজেই নিঃস্বার্থে রাষ্ট্র সংস্কার তাদের পক্ষেই সম্ভব।
রাষ্ট্র সংস্কার হবে জনস্বার্থে এবং জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য; সরকারের ক্ষমতার কাঠামো ও পরিধি বাড়িয়ে নেয়ার জন্য নয়। রাষ্ট্র সংস্কার হবে মাফিয়া তন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও ফ্যাসিবাদকে ঠেকানোর জন্য। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অনিয়ম, অত্যাচার, অনাচার, দুরাচার, দুঃশাসন ও উৎপীড়ন নির্মূল করার জন্য। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে আইনের শাসন, ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার, ইনসাফ ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য। রাষ্ট্র সংস্কারে আমজনতা লাভবান হবে এবং স্বার্থান্বেষী মহল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই জনগণকে জানাতে হবে কীভাবে তারা লাভবান হবে। না জানালে স্বার্থান্বেষী মহল জনগণকে ভুল বুঝিয়ে সংস্কার বানচাল করে দেবে। জানালে নিজ গরজে সংস্কারকে তারা এগিয়ে নেবে। এজন্য সবার আগে দরকার একটি সংস্কারবান্ধব গণমাধ্যম।
রাষ্ট্র সংস্কারকে স্বল্পমেয়াদে সফল করতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য একটি কর্মসংস্থান অধিদপ্তর খুলতে হবে। সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে সব শিক্ষিত বেকারকে এ সংগঠনের ছাতার নিচে আনতে হবে। না আনতে পারলে লুটেরা শক্তি তাদের আবার হেলমেট বাহিনী বানাবে। শিক্ষিত বেকারদের দিয়ে সারা দেশে এসএসসি থেকে পিএইচডি গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের একটি শুমারি করতে হবে। ভোটের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকারদের উপজেলা কমিটি, জেলা কমিটি, বিভাগীয় কমিটি এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি হবে।
তারা দেশের ধনী অনুসন্ধানে আয়কর বিভাগকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে। এরপর এ শিক্ষিত বেকারদের দিয়ে দেশে শতকোটি টাকার মালিক কতজন তার একটা শুমারি করতে হবে। কালো টাকার মালিক কতজন তার একটা শুমারি করতে হবে। এ তালিকাভুক্ত ধনবানদের কাছ থেকে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান পরিকল্পনা চাইতে হবে। তাদের দাখিলকৃত পরিকল্পনাগুলোর ভিত্তিতে একটি কমিটি একটি কর্মসংস্থান মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করবে। এক্ষেত্রে তারা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনগণের মতামত সংগ্রহ করতে পারে। কমিটিতে থাকবে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধন পরিদপ্তরের নিবন্ধক ইত্যাদি।
দেশের শিক্ষিত বেকার জনগণকে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন সংশোধন করে ১০ কোটি টাকা এবং তদূর্ধ্ব মূল্যের সব ব্যবসা ও বিনিয়োগকে কোম্পানি আইনের আওতায় আনতে হবে। করপোরেট করহার করতে হবে ন্যূনতম ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। আইন করে সব ব্যাংককে কমার্শিয়াল বন্ড ইস্যু করে পুঁজি সম্প্রসারণের ক্ষমতা এবং মিউচুয়াল ফান্ড ও অ্যাসেট ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা ন্যস্ত করতে হবে। বাংলাদেশের সব ব্যাংককে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।
ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হতে পারে। করপোরেট সুশাসন বাড়ালে এবং করহার কমালে শেয়ারবাজার এমনি এমনি চাঙ্গা হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোকে কোনো না কোনো ব্যাংকের সঙ্গে ট্যাগ করতে হবে যাতে তারা যৌথভাবে শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করতে পারে। প্রত্যেকটি ব্যাংক হবে ওই এলাকার জব ব্যাংক। ১০০ কোটি টাকার বেশি মূলধন হলে ক্যাপিটাল মার্কেটে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করতে হবে। তা না হলে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সম্ভব নয়।
মু. আবদুল হাকিম: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব