রোহিঙ্গা সঙ্কট : আরাকান আর্মির কৌশলগত ভূমিকা
বাংলাদেশের আর অলস কূটনীতি বা শুধু মানবিক সাহায্য-নির্ভর নীতির বিলাসিতার সুযোগ নেই। এখন সময় এসেছে দৃঢ়, বাস্তববাদী ও স্বার্থভিত্তিক কূটনীতি গ্রহণের, যা বিশ্বাসযোগ্য সামরিক শক্তি বৃদ্ধি দ্বারা সমর্থিত হবে। আরাকান আর্মির সাথে কৌশলগত যোগাযোগ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মিত্রতার বহুমুখীকরণ এবং একটি সংগঠিত রোহিঙ্গা প্রতিরোধ বাহিনী গঠনের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য দৃঢ়, উদ্ভাবনী এবং কৌশলগত নীতিনির্ধারণ এখন অত্যন্ত জরুরি-ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) রুকন উদ্দিন। সূত্র : নয়া দিগন্ত, ১০ এপ্রিল ২০২৫

২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ বিপুল বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে, যারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর (তাতমাদাও) অত্যাচার, জাতিগত নিধন ও পরিকল্পিত সহিংসতার মুখে নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, আইসিজেতে আইনি পদক্ষেপ ও নানামুখী কূটনৈতিক তৎপরতা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে আছে। দীর্ঘস্থায়ী এই অচলাবস্থা বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশল ও শুধু প্রচলিত কূটনীতি ও নরম শক্তির ওপর নির্ভর করার কার্যকারিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, যারা মূলত মুসলিম, শত শত বছর ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করছে। কিন্তু কয়েক দশক ধরে তারা মিয়ানমার সরকারের পরিকল্পিত বৈষম্য, প্রান্তিকীকরণ এবং নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। দীর্ঘকাল ধরে রাখাইনে বসবাস করলেও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের একটি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি; বরং প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তাদের আখ্যায়িত করেছে। ১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে তাদের রাষ্ট্রহীন করা হয় এবং শিক্ষাগ্রহণ, চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা, চলাচলের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
২০১২ সালে রাখাইনে আন্তঃসাম্প্রদায়িক উত্তেজনা মারাত্মক আকার ধারণ করে, যার সূত্রপাত হয় কথিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে কিন্তু খুব দ্রুতই এটি ব্যাপক আকারে রোহিঙ্গাবিরোধী সহিংসতায় পরিণত হয়। বহু বাড়িঘর ও গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়, হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে নিজ ঘর থেকে তাড়ানো হয় এবং তাদের অনেকেই অমানবিক পরিস্থিতিতে গাদাগাদি করে বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের রক্ষা না করে, নিষ্ক্রিয় থেকেছে অথবা সরাসরি রোহিঙ্গাবিরোধী সহিংসতায় অংশ নিয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার অভিযোগ তুলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এক ব্যাপক ও ভয়াবহ সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানটি গণহত্যা, ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও জোর করে বাস্তুচ্যুতির মতো ব্যাপক মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। এই বর্বর সামরিক অভিযানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘জাতিগত নিধন’ এবং ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন রাষ্ট্র তীব্র নিন্দা জানায়।
যদিও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তদন্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট প্রমাণ উঠে এসেছে, ভূরাজনৈতিক জটিলতা এবং প্রভাবশালী দেশগুলোর কৌশলগত স্বার্থের কারণে মিয়ানমার এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতা এড়িয়ে যাচ্ছে। কূটনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে, মিয়ানমার তার দায়িত্ব অস্বীকার অব্যাহত রেখেছে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অস্বীকার করে যাচ্ছে। ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও মৌলিক অধিকার বঞ্চিত অবস্থায় শরণার্থী শিবিরে আটকে আছে।
প্রত্যাবাসনে প্রধান বাধাসমূহ মিয়ানমারের স্থায়ী বৈরিতা : রাখাইন রাজ্যে এখনো নিয়মিত মানবাধিকার লঙ্ঘন, সহিংস নিপীড়ন এবং অবাধ গ্রেফতার ও নির্যাতন চলছে। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া প্রায় অসম্ভব। মিয়ানমার সরকার এবং সেনাবাহিনী উভয়ই রোহিঙ্গাদের বৈধ অধিকার ও স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে, যা শরণার্থীদের মনে গভীর আতঙ্ক তৈরি করেছে। ফলে, প্রত্যাবাসন চুক্তি যতবারই স্বাক্ষরিত হয়েছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। মিয়ানমারের এই স্থায়ী বৈরিতা কেবল প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে না; বরং এটি ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ আকারের আঞ্চলিক অস্থিরতার আশঙ্কাও সৃষ্টি করছে।
মিয়ানমারের ওপর কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ভূরাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তিগুলোর নিজস্ব অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ। চীন ও ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো নিজেদের ব্যবসায়িক বিনিয়োগ, অবকাঠামো প্রকল্প এবং সামরিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানবিক ও নৈতিক বিষয়গুলোকে প্রায়ই উপেক্ষা করছে। চীন মিয়ানমারের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অংশীদার এবং তাদের রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরপেক্ষ ভূমিকা মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা থেকে রক্ষা করছে। একইভাবে, ভারত তার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় মিয়ানমারকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই দুই বৃহৎ শক্তির অনীহা বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে জাতিসঙ্ঘ বা পশ্চিমা দেশগুলো কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোও তেমন কার্যকর হয়নি। এর ফলে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে প্রকৃত অর্থে কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে না।
প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় দেয়ার ফলে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর উপস্থিতি স্থানীয় সম্পদের ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করেছে, যেমন বনভূমি ধ্বংস, পানি ও খাদ্য সঙ্কট এবং কর্মসংস্থানের অভাব। স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও সামাজিক উত্তেজনা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে, যা ভবিষ্যতে সঙ্ঘাতের সম্ভাবনাও সৃষ্টি করতে পারে। নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো শরণার্থী শিবিরগুলোতে উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের ঝুঁকি। হতাশা ও অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়ে এসব সংগঠন শরণার্থীদের মধ্যে উগ্রবাদী চিন্তাভাবনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি, মানবপাচার, মাদক এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির প্রতিরোধ রাখাইন রাজ্যের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করেছে। প্রায় ৩০ হাজার সদস্য নিয়ে গঠিত আরাকান আর্মি বর্তমানে রাখাইনের উল্লেখযোগ্য এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন কৌশলগত সুযোগ তৈরি করেছে।
আঞ্চলিক চাপ বিশেষ করে ভারতের কূটনৈতিক প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত আরাকান আর্মির সাথে সক্রিয় যোগাযোগ স্থাপন থেকে বিরত রয়েছে। আরাকান আর্মির প্রমাণিত শক্তিশালী প্রতিরোধের ফলে বাংলাদেশের এই অবস্থান পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। আরাকান আর্মির সাথে কৌশলগত সহযোগিতা রাখাইনে একটি স্থিতিশীল ও স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে, যা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পথ খুলে দিতে পারে।
মাত্র ৩০ হাজার যোদ্ধা নিয়ে গঠিত আরাকান আর্মি যদি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে উল্লেখযোগ্যভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মধ্য থেকে ৫০ হাজার সদস্যের একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলা কি বাংলাদেশের জন্য সম্ভব নয়?
বাংলাদেশ কেন কেবল ঐতিহ্যগত নরম শক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে? রোহিঙ্গা সঙ্কট একটি মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের উচিত এখন থেকে বিশ্বাসযোগ্য সামরিক শক্তি (যধৎফ ঢ়ড়বিৎ) তৈরির দিকে কৌশলগতভাবে এগিয়ে যাওয়া। রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও সমর্থন প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক দর-কষাকষির ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যাবে।
ড. ইউনূস সরকারের অধীনে নতুন পররাষ্ট্রনীতির সম্ভাবনা
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ঐতিহ্যগত নরম শক্তির ওপর নির্ভরশীলতার পরিবর্তে একটি অধিকতর সক্রিয় ও স্বার্থভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের পথে হাঁটছে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের উচিত এখন তার জাতীয় নিরাপত্তা, মানবিক স্বার্থ এবং ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রাধান্য দিয়ে একটি সক্রিয় পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা।
এটি অর্জনের জন্য প্রয়োজন কৌশলগত জোটবদ্ধতা : ভারত ও চীনের ওপর একক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহানুভূতিশীল অন্যান্য আসিয়ান দেশগুলোর সাথে দৃঢ় ও সক্রিয় অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।
সক্রিয় ও দৃঢ় কূটনীতি : ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করা এবং আঞ্চলিক প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করা।
অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা : আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, যাতে বাস্তবসম্মত প্রত্যাবাসন চুক্তির জন্য চাপ তৈরি হয়।
সামরিক সক্ষমতা তৈরি : রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংগঠিত প্রতিরোধ গঠনের মাধ্যমে মিয়ানমারকে কার্যকর আলোচনায় বাধ্য করার সম্ভাবনা সাহসের সাথে খতিয়ে দেখা।
বাংলাদেশের আর অলস কূটনীতি বা শুধু মানবিক সাহায্য-নির্ভর নীতির বিলাসিতার সুযোগ নেই। এখন সময় এসেছে দৃঢ়, বাস্তববাদী ও স্বার্থভিত্তিক কূটনীতি গ্রহণের, যা বিশ্বাসযোগ্য সামরিক শক্তি বৃদ্ধি দ্বারা সমর্থিত হবে। আরাকান আর্মির সাথে কৌশলগত যোগাযোগ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মিত্রতার বহুমুখীকরণ এবং একটি সংগঠিত রোহিঙ্গা প্রতিরোধ বাহিনী গঠনের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য দৃঢ়, উদ্ভাবনী এবং কৌশলগত নীতিনির্ধারণ এখন অত্যন্ত জরুরি।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক